যেহেতু ইসলামে অমুসলিমদের সাথে উদারতা ও সদ্ব্যবহারের শিক্ষা রয়েছে। তাদের সাথে যদিও বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতার সম্পর্ক স্থাপন করতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু সহানুভূতি, সৌজন্য, আতিথেয়তা, ব্যবসা-বানিজ্য ও লেন-দেনমূলক আচরণ করতে নিষেধ করা হয় নি। সেহেতু কোন মুসলিম কোনো অমুসলিমের সাথে ব্যবসা করলেও তার নামাজ, রোজা, কুরবানি ইত্যাদি ইবাদতের কোনো ক্ষতি হয় না।
তবে যদি এই লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে মুসলমানদের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তবে তা জায়েয থাকে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ খোলাফায়ে রাশেদীন ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক গৃহীত কর্মপন্থা থেকে এটি প্রমাণিত হয়। (মাআ’রিফুল কুরআন-২/৫, জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/ ১৭৯)
★★ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিমদের সাথে ক্রয়-বিক্রয় এবং দুনিয়াবি লেনদেন করায় শরী‘আতে কোনো আপত্তি নেই। সুতরাং নিম্নে অমুসলিমদের সাথে কেনাবেচা শরিকানায় ব্যবসা অর্থের বিনিময়ে শ্রমিক হিসাবে তাদের কাজ করা ও সাধারন দুনিয়াবি সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে কুরআনের আয়াত, হাদীস এবং আলেমদের উক্তি তুলে ধরা হলো,
আল্লাহ তা‘আলা বলেন আল্লাহ তা‘আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।(সুরা বাক্বারাহ আয়াত নং ২৭৫)।
এখানে আল্লাহ তা‘আলা ব্যবসা করার জন্য মুসলিম ও কাফির আলাদা করেননি বরং সাধারণভাবে ব্যবসাকে বৈধতা দিয়েছেন। সুতরাং তা জায়িয মুসলিম-অমুসলিম সবার সাথে যদি এ ক্ষেত্রে অন্য হারাম বিষয় জড়িত না হয়।
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণীত তিনি বলেন রসুল (সাঃ) যবের বিনিময়ে তাঁর বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। (বুখারি-ইঃফাঃবাঃ) ৪০ বন্ধক হাঃ১৫৭৬)।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ وَمُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ - وَاللَّفْظُ لِيَحْيَى قَالَ يَحْيَى أَخْبَرَنَا وَقَالَ الآخَرَانِ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، - عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتِ اشْتَرَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ يَهُودِيٍّ طَعَامًا بِنَسِيئَةٍ فَأَعْطَاهُ دِرْعًا لَهُ رَهْنًا .
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণীত তিনি বলেন, রসুল (সাঃ) জনৈক ইহুদির নিকট থেকে নিদির্ষ্ট মেয়াদে খাদ্য শস্য খরিদ করেন এবং নিজের বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন। (বুখারী হাঃ৪৮/বন্ধক) পরিচ্ছে ৪৮/২যে ব্যক্তি নিজ বর্ম বন্ধক রাখে,হাঃ২৫০৯)।
ইমাম নববী এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, মুসলিমমগণ এ ব্যাপারে একমত যে জিম্মি (মুসলিম দেমে মুসলিম সরকারের জিম্মিা বা নিরাপত্তায় থাকা অমুসলিম) এবং অন্যান্য কাফিরের সাথে পারস্পারিক লেনদেন ও আদান-প্রদান বৈধ যদিদ এর সাথে সাথে এমন কিছু না থাকে যা হারাম হওয়া সুনিশ্চিত। কিন্তু হারবি (মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কাফির)-এর নিকট অস্ত্র এবং যুদ্ধের সরন্জাম বিক্রয় করা নাজায়িয।
অতঃপর দীর্ঘ দেহী এলামেলো চুলওয়ালা এক মুসরিক এক পাল বকরী হাঁকিয়ে নিয়ে এলো। রসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,বিক্রি করবে, না উপহার দিবে? সে বলল না বরং বিক্রি করব। অতঃপর রসুল (সাঃ) তার নিকট হতে একটা বকরী কিনে নিলেন।(সহীহ বুখারী-৫২/হিব্বা ও এর ফযীলত,পরিচ্ছেদ:৫১/২৮,মুশরিকদের দেয়া উপহার গ্রহণ করা, হাঃ১২৬১,৮হিবা ও এর ফযিলত।
তাছাড়া রসুল (সাঃ)-এর সাহাবীগণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে বছরে দু‘বার (শীতে ও গ্রীষ্মকালে) দামেস্ক সিরিয় যেতেন যা সুরা কুরাইশে উল্লেখিত হয়েছে। সেখানে তারা অবশ্যই মুসলিম-অমুসলিম সবার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন।
অমুসলিমদের সাথে শরীকানায় ব্যবসা করাঃ
কোনো অমুসলিমকে বিশ্বস্ত আমানতদার ও অভিজ্ঞ মনে হলে তার সাথে শরীকানায় ব্যবসা করাও কোনো আপত্তি নেই- যদি শরী‘আহ বিরোধি কার্যক্রম যেমন অবৈধ ব্যবসা হারাম পণ্য বিক্রয়, মানুষের সাথে প্রতারণা ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ততা না থাকে। তাদের সাথে ধর্মীয় দিক দিয়ে আন্তরিক ভালবাসা রাখা হারাম হলেও কিন্তু দুনীয়াবি সম্পর্ক ও লেনদেন কোনো বাধা নেই-ইনশাআল্লাহ।
অমুসলিমদের ঘর-বাড়ি কল-কারখানা ও দোকানে কাজ করার বিধানঃ মুসলিমদের জন্য অমুসলিমদের ঘর-বাড়িবা তাদের পরিচালিত কল-কারখানা ও দোকানে চাকুরী করাও দোষণীয় নয়। তবে শর্ত হলো কোনো হারাম কাজে যুক্ত হওয়া যাবে না বা হারাম কাজে সহায়তা করা যাবে না। যেমন- মদ,শুকুরের গোস্ত,বিড়ি-সিগারেট, বাদ্যযন্ত্র, বিধর্মীয় উপকরণ, বেপর্দা নারীদের সংশ্রব,মন্দির,গির্জা,প্যাগোডা নির্মাণ বা সংস্কার ইত্যাদি। কেননা মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন।
তিনি বলেন, সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।(সুরা আল মায়িদা আয়াত নং ২)।
(সংগৃহীত)
সৌদি আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া এবং গবেষনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি ফাতাওয়াঃ বৈধ ব্যবসায়িক কাজে কাফিরদের সাথে অংশগ্রহণ করা জায়িয আছে মুসলিমদের মধ্যে যে অংশগ্রহণ করবে সে যদি মানুষকে ঠকানো বা নিজ প্রতারিত হওয়া অথবা মহান আল্লাহর হারামকৃত যে সকল কার্যক্রম রয়েছে যেমন- সুদ,জুয়া, ধোঁকা ইত্যাদি থেকে নিরাপদে থাকে। তবে সংশয়-সন্দেহ, মানুষের অভিযোগ আপত্তি এবং বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির আশস্কা থেকে দূরে থাকার স্বার্থে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ না করাই ভালো। (ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাঃ ৬৫পৃঃ)।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তার থেকে হালাল ব্যবসায় সুদমুক্ত ঋন নেয়া জায়েজ হবে।
ইসলাম অনুমোদন দেয়।
তবে যদি এই লেন-দেনের কারণে আপনার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে,বা দ্বীনআনতে সমস্যা হয়, তবে তার থেকে ঋন নেয়া যাবেনা।