আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহি ওয়াবারকাতুহ উস্তাদ।

আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়শোনা করেছি। আমার সেক্টরের কম বেশি সব কাজই ঘুষের সাথে জড়িত। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে ঘুষের লেনদেন সংক্রান্ত কাজে জড়িয়ে পরতে হয়। এক একটা প্রজেক্ট ঘুষ ছাড়া পাস হয় না। এই বিল সবার একাউন্টে যায়। আর চাটুকারিতা ছাড়া চাকরিতে টিকে থাকা কষ্টের এটাও উপলব্ধি করেছি। আমি ২টা চাকরি এভাবে কিছুদিন করে করে বাদ দিয়েছি, বর্তমানে শিক্ষকতা করছি। কিন্তু এই পেশায় কোনো নিশ্চয়তা নেই। একটা স্টুডেন্ট আজ আছে তো কাল নেই। আমি পারিবারিক ভাবে উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। কিন্তু আমার এই হালাল হারাম বেছে চলায় আমার ইনকামের রাস্তা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। আমি পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। যেই জবেই যাই না কেনো, দুই নাম্বারি আর ঘুষের ব্যাপার আছেই। আমার বেদ্বীন পরিবার এসব ব্যাপারে আমাকে মানসিক চাপের সম্মুখীন করছে যাতে আমার হতাশা বেড়ে আমি দ্বীন থেকে গাফেল হয়ে যাচ্ছি। আমি বাইরের দেশে যেতে চাচ্ছি। আমার কিছু আত্মীয় আছে বিদেশে, তারা আমাকে সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন । সেখানে অন্তত এই ঘুষের ব্যাপারটা নেই। আর আমি আমার পারিবারিক অবস্থান অনুযায়ী বাংলাদেশে যে কোনো জবে ঢুকতে পারি না,যেটা বাইরের দেশে করা সম্ভব । বাইরে কেউ দোকানে ক্যাশ কাউন্টারে বা ক্যাব চালিয়েও ভালো ইনকাম করতে পারে, বাইরে এগুলো আত্মসম্মানে আঘাত হানে না, যেটা আমি এখানে করলে মানসিক ভাবে ভেংে পড়বো পারিবারিক চাপে। আমি বিবাহিত, স্ত্রীও দ্বীনদার। আমি বাইরে যাওয়ার কথা বললে আমাকে বাধা দেয়। বলে কাফের দেশে যাওয়া হারাম। তবে আমার দেশও তো নামে মাত্র মুসলিম দেশ, অথচ এটাও সেকুলার রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। সব আইনকানুন সেকুলার নিয়ম অনুযায়ী হয়। এক্ষেত্রে আমার দেশে বসে ভালো আর হালাল আয় রোজগারের পথ সংকীর্ণ লাগে। আমি কি স্ত্রীকে নিয়ে বাইরের দেশে জীবিকার উদ্দেশ্যে যেতে পারবো? আমার পরিস্থিতি অনুযায়ী কি সেটা হারাম হবে? আর আমি যদি স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যে না যাই, প্রথমে কিছু আয়রোজগার করে পরবর্তীতে কোনো মুসলিম দেশে শিফট হওয়ার নিয়ত রেখে যাই তবে কি তা জায়েজ হবে? আর কোনো  অমুসলিম দেশে গিয়ে যদি আমার মৃত্যু হয়.. এতে কি আমি গুনাহগার হবো? সবদিক বিবেচনা করে আমার জন্য কোন জিনিসটা করা ঠিক হবে?

1 Answer

0 votes
by (672,210 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

কাফির রাষ্ট্রে বসবাসের জন্য অবশ্যই দুটো প্রধান শর্ত পূরণ হতে হবে। যথা:
প্রথম শর্ত: বসবাসকারীকে স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে আশঙ্কামুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ তার এমন ‘ইলম, ঈমান ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে, যা তাকে দ্বীনের ওপর অটল থাকার মতো এবং বক্রতা ও বিপথগামিতা থেকে বেঁচে থাকার মতো আত্মবিশ্বাসের জোগান দেয়। আর কাফিরদের প্রতি তার অন্তরে শত্রুতা ও বিদ্বেষ থাকতে হবে। অনুরূপভাবে কাফিরদের সাথে মিত্রতা ও তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে। কেননা তাদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করা এবং তাদেরকে ভালোবাসা ঈমানের পরিপন্থি।
,

মহান আল্লাহ বলেছেন,

 لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ 

“তুমি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোনো জাতিকে পাবে না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে; যদিও তারা তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, কিংবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়।” [সূরাহ মুজাদালাহ: ২২]

মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ. فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَنْ تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ ۚ فَعَسَى اللَّهُ أَنْ يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِنْ عِنْدِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنْفُسِهِمْ نَادِمِينَ 

“হে মু’মিনগণ, ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে অবশ্যই তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না। সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মধ্যে (বন্ধুত্বের জন্য) ছুটছে। তারা বলে, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে, কোনো বিপদ আমাদেরকে আক্রান্ত করবে।’ অতঃপর হতে পারে আল্লাহ দান করবেন বিজয় কিংবা তাঁর পক্ষ থেকে এমন কিছু, যার ফলে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছে, তাতে লজ্জিত হবে।” [সূরাহ মা’ইদাহ: ৫১-৫২]

নাবী ﷺ বলেছেন, الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ “মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে (পরকালে) তার সাথেই থাকবে।” [সাহীহ বুখারী, হা/৬১৬৯; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৪০]

আল্লাহ’র শত্রুদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা মুসলিমের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ। কেননা তাদেরকে ভালোবাসলে তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করা এবং তাদের অনুসরণ করা, কিংবা কমপক্ষে তাদের কর্মের বিরোধিতা না করা—জরুরি হয়ে যায়। একারণে নাবী ﷺ বলেছেন, “মানুষ যাকে ভালোবাসে, সে (পরকালে) তার সাথেই থাকবে।”

দ্বিতীয় শর্ত: নিজের দ্বীনকে প্রকাশ করার মতো সক্ষমতা থাকতে হবে। অর্থাৎ, বসবাসকারী ব্যক্তি কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ইসলামের নিদর্শনাবলি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন। নামাজ, জুমু‘আহ ও জামা‘আত—যদি তার সাথে জামা‘আতে নামাজ ও জুমু‘আহ প্রতিষ্ঠা করার মতো কেউ থেকে থাকেন—প্রতিষ্ঠা করতে বাধাগ্রস্ত হবেন না। অনুরূপভাবে জাকাত, রোজা, হজ ও অন্যান্য শার‘ঈ নিদর্শন প্রতিষ্ঠা করতে বাধাগ্রস্ত হবেন না। যদি এসব কাজ করার সক্ষমতা না থাকে, তাহলে তখন হিজরত ওয়াজিব হয়ে যাওয়ার কারণে সেখানে বসবাস করা জায়েজ হবে না।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উপরোক্ত দুটি শর্ত পূর্ণ ভাবে মেনে আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে অমুসলিম দেশে জীবিকার উদ্দেশ্যে যেতে পারবেন।

যদি সেই দেশে থাকতে পারে,তাহলে সেখানে তিনি থাকতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যদি না যান,সেক্ষেত্রে করনীয় জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...