আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
26 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লহি ওয়াবারকাতুহ উস্তাদ।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে ইসলামের বিধি নিষেধ একটু বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি। আমার শশুর বাড়িতে দাওয়াত নিয়ে একেবারে রেওয়াজ চলে। আজকে এর বাসায়, তো কালকে তার বাসায়, দুই দিন পর পর নিজেদের বাসায় এভাবে কিছুদিন পরপরই দাওয়াতের সিলসিলা চলতেই থাকে। এতে করে নিজের একান্ত সময় বের করে আমল করা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়। একটু আমল করবো বা হিফয করবো, ইলম অর্জন করাও যেন দুসাধ্য ব্যাপার এখানে। সব সময় কে আসবে, কোথায় যাবো, কি নিয়ে যাবো, কি খাওয়াবো এগুলোই ঘুরে মাথায়। অবশ্যই মেহমানদারি করা অনেক ভালো , আত্মীয়ের খোঁজ খবর রাখা ভালো , কিন্তু মানুষের এই মজলিস যদি হয় শুধুই দুনিয়াবি খাবারের আয়োজন আর গিবতের বৈঠক... তাহলে তা কতটুকু যুক্তিসম্মত ?
আমাকে দয়া করে বলবেন আত্মীয়দের হক কতটুকু। তাদের জন্যে কতটুকু করতে বা কিভাবে খোঁজ খবর নিতে বলা হয়েছে ইসলামে? আমি এরকম পরিবেশে কিভাবে দ্বীন ঠিক রাখবো? আমার পর্দারও লংঘন হয় এভাবে। আমি খেয়াল করেছি আমার পর্দায় আগের মত আর ইখলাস নেই। আগে বোরখা নিকাব পড়েও কোন ছেলে মানুষের সামনে যেতে বাধতো আমার। এখন অহরহ যাওয়া পরে। হুজুর আমাকে দয়া করে বলবেন আমার এখানে দায়িত্ব কতটুকু। কতটুকু করলে আমাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। আমার হাসব্যান্ড এর আমাকে নিয়ে আলাদা থাকাও সম্ভব না, তার ইনকাম সীমিত। শশুর বাড়িতে থেকে আমি এই পরিস্থিতিতে কি করবো? কিভাবে নিজের আমল আখলাক হিফাজত করবো?

1 Answer

0 votes
by (671,280 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنِ ابْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «لَيْسَ الواصِلُ بالمكافىء وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا» . رَوَاهُ البُخَارِيّ 

ইবনু ’আমর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয়, যার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা হচ্ছে; বরং আত্মীয়তা রক্ষাকারী সে, যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে, আর সে সেই সম্পর্ককে যোজন করে আত্মীয়তার বন্ধন বহাল রেখেছে। 

(বুখারী ৫৯৯১, আবূ দাঊদ ১৬৯৭, তিরমিযী ১৯০৮, ইবনু হিব্বান ৪৪৫, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৩৩, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৯, শু‘আবুল ঈমান ৩৪২৮, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৩/৩০২।)

আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

.(বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫), আবূ দাঊদ ১৬৯৬, তিরমিযী ১৯০৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০ সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪, মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫, আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭।)
.
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، وَنَصْرُ بْنُ عَلِيٍّ، وَسَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمَخْزُومِيُّ، قَالُوا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ " . قَالَ ابْنُ أَبِي عُمَرَ قَالَ سُفْيَانُ يَعْنِي قَاطِعَ رَحِمٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .

মুহাম্মাদ ইবনু জুবাইর (রাহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (জুবাইর) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ  কর্তনকারী (আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী) জান্নাতে যেতে পারবে না।
(সহীহ, গাইয়াতুল মারাম (৪০৮), সহীহ আবূ দাউদ (১৪৮৮), বুখারী, মুসলিম।
ইবনু আবী উমার বলেন, সুফিয়ান বলেছেন, অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
(তিরমিজি ১৯০৯) 

★আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার মূল কথা হলো-‘পরস্পরের সঙ্গে মেহেরবানী করা ও অনুগ্রহ করা।’
আত্মীয়তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেহেরবাণী ও অনুগ্রহ সম্পর্কে আল্লামা কুরতবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি যথার্থই বলেছেন, রাহেম বা আত্মীয়তার সর্ম্পক দুই ধরনের হয়-
>> সাধারণ সম্পর্কএ সম্পর্কটি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যাকে বলা হয় দ্বীনি সম্পর্ক। একজন মানুষের সঙ্গে ঈমানি বন্ধনের কারণে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা। ঈমানদারদের সঙ্গে ভালবাসা রাখা। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা। সব সময় তাদের কল্যাণে কাজ করা।

তাদের ক্ষতি হয় এমন কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করা। তাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করা এবং তাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের হকগুলো আদায় করা।
যেমন- অসুস্থদের দেখতে যাওয়া; তাদের হকসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা; তাদের গোসল দেয়া; জানাযার নামাজ আদায় করা; দাফন-কাফন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা।
,
>> বিশেষ সম্পর্কমাতা-পিতা উভয় দিক থেকে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়তা রক্ষা করা। তাদের হক বা অধিকারসমূহ এবং তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব বা আবশ্যক।
যেমন- পিতামাতার খরচ বহন করা; তাদের খোঁজ-খবর নেয়া; প্রয়োজনের সময় বিশেষ করে বার্ধক্যে তাদের পাশে থাকা।
আর যখন অনেক আত্মীয়ের অধিকার একত্রিত হয়; তখন নিকটাত্মীয় হওয়ার ক্ষেত্রে অধিকার বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে। পর্যায়ক্রমে তারপর যেটি তুলনামূলক কাছের সেটি অগ্রাধিকার পাবে।
,
নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার ধরন আল্লাম ইবনু আবি জামরাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
>> আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা অনেক সময় মালামাল ও ধন-সম্পদ দ্বারা হয়;
>> প্রয়োজনের সময় সাহায্য করার দ্বারা হয়;
>> ক্ষতিকে প্রতিহত করার মাধ্যমে হয়;
>> পরস্পরের সঙ্গে হাসি-খুশি ও ব্যবহারের মাধ্যমে হয়;
>> দোয়া করার দ্বারাও হয়;
>> সাধ্যানুযায়ী কারো কাছে কল্যাণকর কিছু পৌঁছানো দ্বারাও হয়;
>> সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী ক্ষতি থেকে বাঁচানোর দ্বারাও হয় এবং তাদের উপকার করার দ্বারাও হয়।
,
সুতরাং সময় সুযোগ তেমন না মিললে শুধু ফোনে কথা বলেও আত্মীয়তা সম্পর্ক ঠিক রাখা যাবে।
তবে সময় সুযোগ হলে মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য হলেও নিকটতম আত্মীয়দের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা দরকার।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
যেহেতু এভাবে মাসের পর মাস,বছরের পর বছর আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার দরুন একনিষ্ঠতার সহিত ইবাদত বান্দেগী করা সম্ভব হয়না,ইলম অর্জন করাও যেন দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়,পাশাপাশি এতে আপনার পর্দারও লংঘন হয়,পূর্ণ শরীয়তের উপর থাকা যায়না,সুতরাং এরকম পরিবেশে দ্বীন ঠিক রাখার জন্য পরামর্শ হলো আপনি এ ধরনের দাওয়াতে প্রতিনিয়ত যাবেননা।

মাসে সর্বোচ্চ একবার বা বছরে কয়েকবার (৫-৭ বার) আত্মীয়ের বাসায় যেতে পারেন।
এবং পূর্ণ শরীয়তের উপর থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। 

পূর্ণ শরীয়তের উপর থাকতে না পারলে যাওয়া জায়েজ হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...