আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ উস্তায।
আমার এক নিকট আত্নীয়ার ঘটনা।তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো।পরবর্তীতে পাত্রপক্ষ দেখে যাওয়ার পর ভ্যালিড রিজনেই আমার সেই আত্নীয়া কে রিজেক্ট করে দেন।তাদের মতে,তাদের পরিবারের জন্য গোছানো মেয়ে দরকার।কারণ,পাত্র হচ্ছে পরিবারের বড় ছেলে।তারা এমন মেয়ে চায় যে মেয়ে পরিবারমুখী হবে এবং একটি পরিবারকে ধরে রাখা গুছিয়ে রাখার মতো এবিলিটি থাকবে।বলে রাখা ভালো,পাত্রকে দ্বীনদার বলেই জানি।এবং পাত্র নিজেও খুব পরিবারমুখী ছেলে বলেই জানি।আর আমার আত্নীয়া কিছুটা ক্যারিয়ার মুখী এবং সত্যি বলতে সে খুব বেশি গোছানো বা একটি পরিবার এর বড় বউ হওয়ার মতো দক্ষতা তার এখন অব্দি নেই।ভবিষ্যতে কি হবে তা বলতে পারিনা।তবে বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় সে আসোলেই পরিবার ধরে রাখা গুছায়ে রাখা স্বভাবের মেয়ে নয়।তবে মেয়ে দ্বীনদার।বোরকা, নিকাব পরে।কিন্তু কিছুটা ক্যারিয়ার মুখী।পাত্রপক্ষের না বলার কারণ হিসেবে ও তারা কেবল এটাই বলেছে যে, তাদের দ্বীনদার এবং ঘরোয়া মেয়ে চাই।আমার আত্নীয়া দেখতে মা শা আল্লাহ বেশ সুন্দরী।তার সৌন্দর্য নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো কম্পলেইন ছিলো না।তারা যেই গুণ চেয়েছিলো তা পাত্রীর মধ্যে অনুপস্থিত থাকায় তারা আর এগোয় নি।
এরপর,পাত্রপক্ষ না বলে দেওয়ার পর,আমার আত্নীয়া নিজ থেকে পাত্রের সাথে যোগাযোগ করে।পাত্রকে কনভিন্স করে।কারণ,পাত্রীর পাত্র কে পছন্দ হয়েছিলো।আর ইসলামে যেহেতু বিয়ের আগে একে অপরকে জেনে নেওয়ার সুযোগ আছে তাই পাত্রী পাত্রের সাথে যোগাযোগ করে।পাত্র এর পাশাপাশি পাত্রের পরিবারকেও কনভিন্স করার চেষ্টা করে।কিন্তু, পাত্রের পরিবার আগেই না বলে দেওয়ায় তাদের আগ্রহ আর অবশিষ্ট ছিলো না।আমার আত্নীয়া যিনি তিনি আর পাত্র দিনের পর দিন কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক হয়ে যায়।ফোনালাপের কারণে।যা এখনো চলমান।কিন্তু এর মাঝে দুই পরিবারের গার্ডিয়ান ই ক্লিয়ারলি জানিয়ে দেয় যে তারা এখানে আত্নীয়তা করবে না।
এখন উস্তায সমস্যা হচ্ছে,পাত্র পাত্রী উভয়ের ই অবস্থা এমন যে তারা একে অপরকে ছাড়া বাঁচবে না।সারাজীবন বিয়ে করবে না যদি এই পাত্রকেই/পাত্রীকেই বিয়ে করতে না পারে।অবস্থা এমন যে পাত্রীর বাবা মা উপায় না পেয়ে এই পাত্রের কাছেই বিয়ে দিতে রাজী হয়েছে।কিন্তু পাত্রের বাবা মা কোনোমতেই রাজী না।তাদের কথা হচ্ছে শরীয়া যেহেতু পাত্রকেই পাত্রের ওয়ালী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তাহলে পাত্র পাত্র'র নিজের বিয়ে নিজে করুক কিন্তু পাত্রের বাবা-মা কোনো অবস্থাতেই এই মেয়েকে গ্রহণ করবে না।আবার পাত্রীর বাবা মা, গার্ডিয়ান ছাড়া পাত্রীকে পাত্রের কাছে বিবাহ দিতে রাজি না।তাহলে এমন অবস্থায় পাত্রের বাবা মা কি গূনাহগার হবেন না?তারা কি কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জবাব্দিহি করবেন না?যদিও তারা পাত্রকে বলে দিয়েছে যে পাত্র বিয়ে করে নিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই কিন্তু তারা এই বিয়েতে থাকবে না।আর পাত্রের অবস্থা ও এমন যে সে এই পাত্রীকেই বিয়ে করবে এবং বিয়ে করে তিনি আলাদা রাখবেন পরিবার থেকে দূরে।কিন্তু ইতোপূর্বে পাত্রের মনোভাব এমন ছিলো না।
সে যাই হোক,এসব যেহেতু আমার অনেক নিকট আত্নীয়ার ক্ষেত্রে ঘটেছে।এবং এই ঘটনা এখনো চলমান।তাই আমি এই বিষয়গুলো মোটামুটি ভালোভাবে জানি।দুই পক্ষের ঘটনা সম্পর্কেই অবগত।আর এসব নিয়ে শয়তান আমাকে প্রতিনিয়ত ওয়াসওয়াসা দেয়।
আমার একবার মনে হয় পাত্রের বাবা-মা রাজী হয়ে গেলেই তো হয়।পাত্র তো এম্নিও আলাদা ই থাকবে আমার আত্নীয়া কে নিয়ে।আর আমার আত্নীয়া ও এমন মেয়ে যে কিনা স্বামী সংসার ভালো ভাবে করতে পারবে এমন।শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি,ননদ নিয়ে সংসার করার বা করতে পারার মতো মেয়ে সে না।
আবার মনে হয়,পাত্রের বাবা-মা'র নিজ ছেলের প্রতি,ছেলের বউ নিয়ে একটা আশা থাকতেই পারে।তারা যেহেতু ছেলে পেলে বড় করেছেন তাহলে তাদের আশা থাকাটাই স্বাভাবিক। আর ইতোপূর্বে পাত্র নিজেও পরিবার মুখী মেয়েই চেয়েছে এবং বউ বাবা মা নিয়ে একসাথে সংসার করবে এমন মানসিকতা ই ছিলো তার।কিন্তু পরবর্তীতে পাত্রীর সাথে কথা বলতে বলতে পাত্রের মনোভাব ই সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে।পাত্র সব ছেড়ে দিবে পাত্রীর জন্য।আর এক্ষেত্রে পাত্রের মনোভাব হচ্ছে-ইসলাম তাকে অধিকার দিয়েছে নিজের বিয়ে নিজে করার।ইসলাম স্ত্রী কে স্বামীর বাবা-মা'র সাথে বাধ্য করেনা,সেবা কর‍তে বাধ্য করেনা।তাই পাত্র পাত্রীকে বিয়ে করে আলাদা থাকবে।একমাত্র বাধা হচ্ছে পাত্রের বাবা-মা।তারা না আসলে পাত্রীর বাবা মা পাত্রের কাছে বিয়ে দিবে না।আর পাত্রীর বাবা মা যে খুব খুশিমনে রাজী হয়েছে তা না।তারা ও উপায় না পেয়েই এই পাত্রের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছে।
আবার মনে হয়, দোষটা এখানে পাত্রীর।কারণ তারা না বলে দেওয়া সত্ত্বেও তার পাত্রের সাথে যোগাযোগ করাটাই ছিলো বেমানান।পাত্রের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্নভাবে পাত্রকে কনভিন্স করতে চাওয়াটা আমার মতে সম্মানিত নারীদের সাথে যায় না।আর যদি সে যোগাযোগ না করতো তাহলে এখন যেই হারামে(কন্টিনিউয়াস কন্টাক)তারা লিপ্ত হয়েছে সেই দরজা উন্মোচন হতো না।যেহেতু নারীরা পুরুষদের জন্য ফিতনা তাই নারী হিসেবে তার নিজের সীমানায় থাকাটা উচিত ছিলো।আর আমি বিভিন্ন আলেম দের বয়ানে শুনেছি বিয়ের পূর্বে নারী পুরুষের মধ্যে শয়তান আরো বেশি ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে তাই বিবাহের পূর্বে অনর্থক কথাবার্তা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে।কারণ,বিয়ে ঠিক হওয়া আর বিয়ে হয়ে যাওয়া একই জিনিস নয়।বিয়ে হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পাত্র পাত্রী একে অপরের জন্য হারাম।
পাত্রের বাবা মা'র আরেকটি লজিক এমন যে,তাদের কাছে তাদের ছেলের জন্য আরো ভালো দ্বীনদার এবং সংসারী মেয়ে আছে।যেখানে কুফু,রিকোয়ার্মেন্টস সব ই মিলে যায়।আর পাত্র ও সেখানে মত দিয়েছিলো।কারণ,পাত্র বেশ পরিবারমুখী ছেলেই ছিলো ইতোপূর্বে। কিন্তু আমার আত্নীয়ার যোগাযোগ এর পর সবকিছু চ্যাঞ্জ হয়ে যায়।আর শরীয়া অনুযায়ী বাবা মা তো পাত্রকে বাধ্য করতে পারবে না যদিও তারা যেই পাত্রী পছন্দ করেছে সে তাদের ছেলের পছন্দের পাত্রী তুলনায় বেশি দ্বীন্দার ই হোক।
এই হলো পুরো ঘটনা।
এখন আমার প্রশ্ন মূলত দুটো-
১.পাত্র পাত্রীর একে অপরকে ছাড়া বাঁচবো না,তাকে যদি না পাই তাহলে চিরকাল বিয়েই করবো না।যতদিন বেচে আছি বিবাহহীন থাকবো,মৃত্যু অব্ধি।এই চিন্তাটা ইসলামের সাথে যায়?প্রসংগত বলে রাখি,পাত্র পাত্রী দুজনই যথেষ্ট ভালো বয়স হয়েছে। দুজন ই গ্র‍্যাজুয়েটেড।তাই এখানে কম বয়সী আবেগ হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না।
২.পাত্রের বাবা মা রাজী না হওয়ার কারণে যে পাত্র বিয়ে করতে পারছে না এতে কি পাত্রের বাবা মা আসোলেই গুণাহগার হবে?বান্দার হক্ব নষ্ট হবে?যদিও তারা পাত্রকে বলে দিয়েছে যে তিনি তার মতো করে বিয়ে করে নিলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু তারা এই বিয়েতে থাকবেন না।(আর এটাই মূল সমস্যা, তারা না আসলে পাত্রী বাবা মা বিয়ে দিবেন না)।আরেকটি বিষয়,পাত্র যথেষ্ট সচ্ছল।আর্থিকভাবে বাবা মা'র উপর নির্ভরশীল না।তাই,এমন না যে পাত্রের বাবা মা আর্থিক ভাবে সাহায্য না করলে তিনি বিয়ে করতে পারবেন না।কিন্তু তাদের উপস্থিতি ছাড়া তিনি বিয়ে করতে পারছেন না।সেই সূত্রে তাদের ছেলের এই হারামে লিপ্ত থাকার দরুণ এবং হারাম কে হালাল করতে দিতে বাধা দেওয়ার দরুন তারা কি গূনাহগার নন?
প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে আমাকে সাহায্য করুন উস্তায।শয়তান আমাকে দিনরাত ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।