কোরআন ও হাদীসে দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে অনেক স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে আল্লাহ্ তাআলা মমতা, দয়া ও ভালোবাসার সম্পর্ক বলেছেন।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
অনুবাদঃ
“আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি হলো— তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন।”
(সূরা রূম, ৩০:২১)
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .
সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)
এখন আপনারর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে কয়েকটি ইসলামী দিকনির্দেশনা:
★স্বামীর দায়িত্ব।
স্বামীকে কোরআনে “কওয়াম” বলা হয়েছে (নেতৃত্বদানকারী, রক্ষক)। এর মানে হলো স্ত্রীকে সুরক্ষা দেওয়া, সম্মান করা, অপমান নয়।
হযরত রাসূল ﷺ বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম।”
(তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
অতএব স্ত্রীর বাবা-মাকে গালি দেওয়া বা ছোট করা ইসলামের আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
★স্ত্রীর করণীয়ঃ
প্রথমত ধৈর্য ধারণ করা (সবর করা), তবে চুপচাপ সবকিছু সহ্য করা নয়।
শান্ত সময়ে স্বামীকে ভালোভাবে বোঝানো উচিত যে, ইসলামে অন্যকে গালি দেওয়া, বিশেষ করে শ্বশুর-শাশুড়িকে অপমান করা গুনাহ।
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“একজন মুসলিমের গালি দেওয়া ফিসক (অপরাধ) আর তার সাথে যুদ্ধ করা কুফর।”
(বুখারি, মুসলিম)
★পারিবারিক সমাধান
যদি কথা বলে সমাধান না হয়, তবে ইসলামে নির্দেশ আছে, দু’পক্ষের পরিবার থেকে একজন ন্যায্য প্রতিনিধি বসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করবে।
“যদি তোমরা উভয়ের মধ্যে কলহ আশঙ্কা কর, তবে একজন প্রতিনিধি স্বামীর পরিবার থেকে এবং একজন প্রতিনিধি স্ত্রীর পরিবার থেকে পাঠাও; তারা যদি মিল করাতে চায়, আল্লাহ তাদের মিলিয়ে দেবেন।”
(সূরা নিসা, ৪:৩৫)
★যদি নির্যাতন চলতে থাকে,,
ইসলাম স্ত্রীকে নির্যাতন সহ্য করতে বাধ্য করেনি।
ধারাবাহিক গালাগালি, অপমান বা মারধর হলে স্ত্রীর অধিকার আছে আদালতের কাছে বিচার চাইতে, এমনকি প্রয়োজনে খুলা (বিচ্ছেদ) পর্যন্ত যাওয়ার।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
ইসলামের আলোকে, স্বামীকে বোঝাতে হবে যে এ আচরণ গুনাহ এবং দাম্পত্য জীবনের মূল লক্ষ্য নষ্ট করে। শান্তভাবে কথা বলা, পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং প্রয়োজনে আলেম বা সালিশের সহায়তা নেওয়া উচিত।