জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রয়োজন, অপরাগতা কিংবা ঠেকায় পড়ার পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণ অবস্থায় নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়ত তাদের ওপর এমন দায়িত্ব আরোপ করে নি, যার কারণে তাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব ৩৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ ، وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ، وَإِنَّهَا لا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا
‘নারী গোপন জিনিস, যখন সে ঘর থেকে বের হয় শয়তান তাকে তাড়া করে। আর সে আল্লাহ তাআলার সবচে’ নিকটতম তখন হয় যখন সে নিজের ঘরের মাঝে লুকিয়ে থাকে।’ (তাবরানী ২৯৭৪)
নারী মসজিদে যাওয়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ ‘তাদের জন্য তাদের ঘর উত্তম।’ (আবু দাউদ ৫৬৭)
নারী চাকরির খাতিরে ঘর থেকে বের হতে পারবে। তবে এর জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। নিয়ম ও শর্তগুলো মেনে চললে নারীর জন্য ঘর থেকে বের হওয়া জায়েয হবে; অন্যথায় নয়।
যেমন,
– যদি সত্যিকারে তার চাকরি করার প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে।
– চাকরিটা তার দৈহিক, মানসিক স্বভাব ও রুচির সঙ্গে সামন্জস্যশীল হতে হবে। যেমন, ডাক্তারি, নার্সিং, শিক্ষা, সেলাই কিংবা এ জাতীয় পেশা হতে হবে।
– কর্মক্ষেত্রে পর্দার পরিপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। অন্যথায় জায়েয হবে না।
– চাকরির কারণে যাতে পরপুরুষের সঙ্গে সফর করতে না হয়।
– কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে যাতে কোন হারাম কাজ করতে না হয়। যেমন, ড্রাইভারের সঙ্গে একাকী যাওয়া, পারফিউম ব্যবহার করা ইত্যাদি।
– নারীর প্রধান কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে স্বামীর খেদমত করা, তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা ও মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করা। যদি চাকরি করতে গিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে ব্যাপক অসুবিধা হয় তাহলে তার জন্য চাকরি করা জায়েয হবে না। (ফাতাওয়াল মারআতিল মুসলিমাহ ২/৯৮১ ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/৩৫৯)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করতে পারেন।
অথবা শুধু মেয়েরা পড়াশোনা করে এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন, এক্ষেত্রে গায়রে মাহরাম শিক্ষকদের সামনে হাত খোলা রাখা পা খোলা রাখা জায়েজ হবে না,এমতাবস্থায় আপনার গুনাহ হবে।
বিস্তারিত জানুনঃ-
(০২)
সেখানে গায়রে মাহরাম পুরুষ থাকলে এটি জায়েজ হবেনা।
(০৩)
না,আপনি আল্লাহর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হবেননা।
তবে আপনি সারা জীবন দ্বীনের উপর থাকবেন। গুনাহ মুক্ত জীবন যাপনের চেষ্টা করবেন।
(০৪)
হ্যাঁ,এক্ষেত্রে তারও গুনাহ হবে,আপনি আল্লাহর কাছে উনার নামে বিচার চাইতে পারবেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه
তোমাদের মাঝে যার কোনো (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোনো পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বাইহাকি ৮১৪৫)
(০৫)
এক্ষেত্রে আপনি আল্লাহর কাছে এর জন্য নিজ পরিবারকে দায়ী করে পাপ মুক্ত হতে পারবেননা।
আপনারও অবশ্যই গুনাহ হবে।
(০৬)
আপনি এই হারাম কাজের জন্য আল্লাহর কাছে সে ছেলের জন্য বিচার চাইতে পারবেন।
(০৭)
আপনি শরীয়তের নীতিমালা মেনে চাকরি করতে পারলে সেক্ষেত্রে আপনার ইনকাম বৈধ হবে। অন্যথায় নয়।
(০৮)
এমনটি ধরে না নেয়ার পরামর্শ থাকবে।
(০৯)
আপনার কষ্টটা খুবই গভীর—আল্লাহ আপনার এই দুঃখকে সহজ করে দিন। ১২ বছর ধরে চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া সত্যিই অনেক কঠিন পরীক্ষা।
এমন অবস্থায় মানুষের মনে আল্লাহর উপর অভিমান, রাগ, কিংবা হতাশা আসতে পারে—এটা স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া।
তবে মনে রাখবেন, আল্লাহ আপনার অন্তরের কথাও জানেন, এমনকি আপনার এই অভিমানও তিনি দেখছেন।
কিছু বিষয় আপনাকে একটু মানসিক শান্তি ও আল্লাহর প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে—
★আল্লাহর পরিকল্পনার প্রতি বিশ্বাস।
আমরা সবসময় যা চাই, তা হয়তো আমাদের জন্য ভালো নয়। আল্লাহ বলেন: “সম্ভবত তোমরা কোনো জিনিসকে অপছন্দ কর, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; আর কোনো জিনিসকে ভালোবাসো, অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।” (সূরা বাকারা: ২১৬)।
হয়তো আপনার জন্য আরও ভালো কিছু সংরক্ষিত আছে, যেটি এখনো সময় হয়নি।
★ইবাদতকে শুধু ফলাফলের সাথে না জড়িয়ে করা।
ইবাদত মানে শুধু দুনিয়ার ফায়দা পাওয়ার জন্য নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য।
যখন আমলকে আল্লাহর কাছে ঘনিষ্ঠ হওয়ার উপায় মনে করবেন, তখন ধীরে ধীরে তাঁর প্রতি ভালোবাসা ফিরে আসবে।
★আল্লাহর কাছে খোলাখুলি মোনাজাত করা
নিজের কষ্ট, রাগ, হতাশা—সব খুলে বলুন। রাসূল ﷺ বলেছেন: “দোয়া হলো ইবাদতের আসল।”
আপনি বলতে পারেন: “হে আল্লাহ, আমি দুর্বল, আমি ক্লান্ত, আমার অন্তর শক্ত করুন, আমার আস্থা ফিরিয়ে দিন।”
★কৃতজ্ঞতার অনুশীলন।
যদিও বড় কিছু (যেমন বিয়ে) হয়নি, কিন্তু ছোট ছোট নেয়ার্মতগুলো গুনুন—স্বাস্থ্য, ইমান, খাবার, পরিবার ইত্যাদি। এগুলোর প্রতি সচেতন হলে মনে শান্তি আসতে শুরু করে।
★ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি।
আল্লাহ বলেন: “ধৈর্যশীলদেরকে তাদের প্রতিদান অগণিত হিসাব ছাড়াই দেওয়া হবে।” (সূরা যুমার: ১০)।
আপনার ধৈর্য একদিন আল্লাহর কাছে বড় পুরস্কারে রূপ নেবে, এটাই নিশ্চিত।
★মানসিক স্বস্তির জন্য ব্যবহারিক পদক্ষেপ
নফল ইবাদত (তাহাজ্জুদ, কুরআন তিলাওয়াত) শুরু করুন সামান্য করে।
ভালো বই পড়ুন বা এমন পরিবেশে থাকুন যেখানে মানুষ আল্লাহর কথা সুন্দরভাবে বলে।