ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
জীন জাতির মধ্যে নবী-রাসুল প্রেরিত হওয়ার সপক্ষে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-
অর্থ-"হে জীন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য থেকে কি রাসুলগণ তোমাদের কাছে আসেনি, যারা আমার নিদর্শন তোমাদের কাছে বর্ণনা করতো ও তোমাদের এ দিনের ব্যাপারে সতর্ক করতো ?" (সূরা- আনআম, আয়াত- ১৩০) ।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা জীন ও মানব উভয় সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে বলেছেন- তোমাদের মধ্য থেকে আমার পয়গম্বর কি তোমাদের কাছে পৌঁছেনি? এতে বোঝা যায় যে, মানবজাতির পয়গম্বররূপে যেমন মানব প্রেরিত হয়েছেন, তেমনি মানব সৃষ্টির পূর্বে জীনজাতির পয়গম্বররূপে জীন প্রেরিত হয়েছেন ।
কিছু সংখ্যক তাফসীরকারকের মতে- মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর আগমনের পূর্বে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নবী সে সম্প্রদায় থেকে প্রেরিত হতেন । মানব সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রের জন্য যেমন মানব নবী তদ্রূপ জীন জাতির বিভিন্ন গোত্রের জন্য জীন নবী আগমন করতেন । কেননা, পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির হাজার হাজার বছর পূর্বে জীন জাতির অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল । তাহলে তাদের মধ্যে নবী-রাসুল না থাকলে তারা কিভাবে হেদায়েত লাভ করতো?
বিখ্যাত তাফসীরবিদ কাজি সানাউল্লাহ্ পানিপথী (রহঃ) তাফসীরে মাযহারীতে বলেছেন, ভারতবর্ষের হিন্দুরা তাদের বেদের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো বলে উল্লেখ করে এবং তাদের অনুসৃত অবতারকে সে যুগেরই লোক বলে উল্লেখ করে । এটা অসম্ভব নয় যে, তারা এ জীন জাতিরই পয়গম্বর ছিলেন এবং তাদেরই আনীত নির্দেশাবলী পুস্তকাকারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে । হিন্দু সম্প্রদায়ের অবতারদের যে সব চিত্র ও মূর্তি পাওয়া যায়, সেগুলির দেহাকৃতিও অনেকটা এমনি ধরণের । কারো অনেকগুলো মুখমণ্ডল, অনেক হাত পা, কারো হাতির মত শুঁড় । এগুলো সাধারণ মানবাকৃতি থেকে ভিন্ন । জীনের পক্ষে এহেন আকৃতি ধারণ মোটেও অসম্ভব নয় । তাই এটা সম্ভব যে, তারা জাতির রাসুল কিংবা তাদের প্রতিনিধি ছিলেন এবং এ সকল প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ তাদের নির্দেশাবলীর সমষ্টি ছিল । এরপর আস্তে আস্তে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের ন্যায় একেও পরিবর্তিত করে তাতে শিরক ও মূর্তিপূজার অনুপ্রবেশ ঘটেছে । (তাফসীরে মারেফুল কুরআন, ৩য় খণ্ড, ৫১৩ পৃঃ) ।
মানব ও জীনদের মধ্যে রাসুল প্রেরণ করা আল্লাহ্ তায়ালার ন্যায় বিচার ও অনুগ্রহের প্রতীক । তিনি কোন জাতির প্রতি এমনিতেই শাস্তি প্রেরণ করেন না, যে পর্যন্ত না তাদেরকে পূর্বাহ্ণে পয়গম্বরদের মাধ্যমে জাগ্রত (সতর্ক) করা হয় এবং তাদের নিকট হেদায়েতের আলো প্রেরণ করা হয় । (তাফসীরে মারেফুল কুরআন, ৩য় খণ্ড, ৫১৪ পৃঃ) ।
কোন কোন পণ্ডিতের মতে- হযরত আদম (আঃ)-কে দুনিয়ায় প্রেরণের পর থেকে একমাত্র মানব জাতির মধ্য থেকেই নবী-রাসুল প্রেরিত হয়েছেন । জীন জাতির মধ্যে কেউ প্রত্যক্ষভাবে রাসুল হননি এবং মানবকুলে প্রেরিত রাসুলের বাণী স্বজাতির কাছে পৌঁছানর জন্য জীনদের মধ্য থেকে কাউকে না কাউকে নিযুক্ত করা হয়েছে । তারা প্রকৃতপক্ষে মানবকুলে প্রেরিত রাসুলের বার্তাবাহক ছিল ।
এরূপ বার্তাবাহক হিসেবে জীন ক কর্তৃক আল্লাহ্র বাণী রাসুল (সঃ)-এর নিকট থেকে শ্রবন করে স্বজাতির কাছে পৌঁছানোর ঘটনা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে- "জীনেরা হযরত রাসুল (সঃ)-এর বাণী এবং কুরআন শ্রবণ করে স্বজাতির কাছে পৌঁছিয়েছে।" রাসুল (সঃ)-ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী । মানুষের মত জীন সম্প্রদায়ও কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুক্তি লাভ করবে
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
কুরআন মাজিদ শুধু মানবজাতির জন্য নয়, বরং জ্বীনদের জন্যও । জ্বীনদের নিজস্ব কোনো আসমানী কিতাব নাই। তাদের কি নবী - রাসূল বলতে আমাদের নবী রাসূলই তাদের নবী রাসূল। তাদের মৃত্যু, কেয়ামত, জান্নাত, জাহান্নাম সবকিছুই রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে।