আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
25 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (5 points)

১। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের কন্যা সন্তান দিচ্ছেন বলে আমরা জেনেছি। এখন নাম নির্ধারণের সময়। আল্লাহ চাইলে আর ৩০ দিনেরও কম সময়ে সে পৃথিবীতে আসবে। আমরা নিচের নামগুলো ঠিক করেছিঃ

- Tajiun Nusaiba (তাজিউন নুসাইবা)

- Tajiun Nusaiba Binte Kuddus

এখানে আমরা কনফিউজড, আমার নাম মোঃ আবদুল কুদ্দুছ ভুঁইয়া, তাহলে মেয়ের নামে শুধু কুদ্দুছ যোগ হবে নাকি আবদুল কুদ্দুছ যোগ হবে? Tajiun Nusaiba Binte Kuddus নাকি Tajiun Nusaiba Binte Abdul Kuddus হবে?

এখান থেকে কোন নামটি অর্থবহ হয়, কোন নাম রাখলে শরিয়াহ লঙ্ঘন হচ্ছে না আমাকে জানাবেন, সম্মানিত মুফতী সাহেব, আপনি আমার কন্যার জন্যে কিছু ইসলামি অর্থবহ নামও সাজেশন দিতে পারেন।

২। সুন্নাহ আমি যতদূর জেনেছি, আকীকাতে আমাদের ১টি বকরী জবেহ করতে হবে। কিন্তু আমরা যা বুঝতে পারছি, আমার ও আমার স্ত্রীর,দুই পক্ষের আত্মীয় মিলিয়ে যে পরিমাণ মানুষ আসবেন, তাতে ১টি বকরীতে হবে না। তাহলে কি আরেকটি বকরী বা আমাদের সাধ্যমতন আরেকটি গরূ জবেহ করব? নাকি শুধু ১টি বকরীই ফিক্সড, মাসায়ালাটি একটু বুঝিয়ে দিবেন।

৩। আমার স্ত্রীর ডেলিভারি আমি যেখানে থাকি সেখানেই হবে ইনশাল্লাহ, এখানে আমি চাকরিসূত্রে থাকি, তেমন পরিচিত নেই আমার। সন্তান যখন পৃথিবীতে আসবে, তখন আরেকটি সুন্নাহ হল তাহনিক করা, আমি এখানে বুজুর্গ / আল্লাহওয়ালা মানুষ খুজে পাওয়া আমার জন্যে একটু চাপের। আমি নিয়ত করেছি আল্লাহ আমাকে হায়াতে রাখলে আমিই তাহনিক করাব, এক্ষেত্রে আমাকে সাজেশন দিন। বিঃদ্রঃ আযান ও ইকামত আমিই দিব বলে নিয়ত করেছি।

1 Answer

0 votes
ago by (654,990 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
ভালো নাম রাখা পিতা-মাতার সর্বপ্রথম দায়িত্ব। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
من حق الولد على الوالد أن يحسن اسمه ويحسن أدبه.
অর্থ : সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক। (মুসনাদে বাযযার,আলবাহরুয যাখখার-৮৫৪০)

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّكُمْ تُدْعَوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَسْمَائِكُمْ، وَأَسْمَاءِ آبَائِكُمْ، فَأَحْسِنُوا أَسْمَاءَكُمْ

আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে, তোমাদের ও তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা তোমাদের সুন্দর নামকরণ করো। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৪৮, সুনানে দারিমী, হাদীস নং-২৭৩৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮২৭]

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
★তাযয়ীন (Tazeen / تزيين) শব্দের অর্থ:
শোভা, সৌন্দর্য বা অলংকরণ।

সজ্জা / সাজসজ্জা
এটি এমন কিছুকে বোঝায় যা সুন্দরভাবে সাজানো বা অলংকৃত হয়েছে।

আভিজাত্য ও রুচিশীলতা
রূপক অর্থে, কারও ভেতরের বা বাহ্যিক সৌন্দর্য, রুচি ও শালীনতার দিক বোঝাতেও এটি ব্যবহৃত হয়।

তাযিউন শব্দটি আরবি تزيين (তাযইয়ীন) থেকে এসেছে, যার অর্থ অলংকরণ, সাজসজ্জা করা, সৌন্দর্যমণ্ডিত করা।

ইসলামি সাহিত্য বা নামের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত ইতিবাচক অর্থ বহন করে, যেমন নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।

★নুসাইবা নামের অর্থ উপযুক্ত, ভদ্রমহিলা বা আভিজাত্য। 

"নুসাইবা" নামটি এমন একজন মহিলাকে বোঝায় যিনি সম্মানিত, মর্যাদাবান ও সাহসী।

উজ্জ্বল ও সুবিন্যস্ত বংশের নারী
নামটি উত্কৃষ্ট বংশ / সুপরিচিত গোত্র থেকে আগত একজন মহিলার পরিচায়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

এ নামের অর্থ: যার বংশ পরিচয় উত্তম, সম্মানিত নারী, উচ্চ মর্যাদার অধিকারিণী।

ব্যুৎপত্তি: এটি নুসাইব শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ, যেখানে মূল অর্থ হলো “ভালো গোত্র বা পরিবারে জন্ম নেওয়া”।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত সাহাবিয়া নুসাইবা বিনতে কা‘ব আল-মাযনিয়া (رضي الله عنها) ছিলেন উহুদের যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য প্রসিদ্ধ। তিনি নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর সাহচর্যে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নিয়েছিলেন এবং মুসলিম নারীদের মধ্যে সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নারী সাহাবিয়া নুসাইবা বিনতে কাব (رضي الله عنها) তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসে এক মহান নারী সাহাবি।

তিনি ছিলেন একজন যোদ্ধা ও রক্ষাকারী, যিনি উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে রক্ষা করেন।

তাঁকে বলা হয়: "মুহাম্মদের রক্ষাকারী" (The defender of Muhammad ﷺ)।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,

প্রশ্নে উল্লেখিত নামটি ভালো,আলহামদুলিল্লাহ। 

আপনি এ নামটি রাখতে পারেন।

তবে দুটি পদ্ধতির যেকোন এক পদ্ধতিতে নামটি রাখবেন।

- Tajiun Nusaiba (তাজিউন নুসাইবা)

- Tajiun Nusaiba Binte Abdul Kuddus

মেয়ের নামে শুধু কুদ্দুছ যোগ হবেনা,বরং আবদুল কুদ্দুছ যোগ করতে হবে।

(০২)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনারা আরেকটি বকরী বা আপনাদের সাধ্যমতো আরেকটি গরু জবেহ করতে পারবেন।
এতে কোনো সমস্যা নেই।

(০৩)
খেজুর দিয়ে তাহনিক করানো উত্তম। যদি খেজুর না থাকে তাহলে মধু দেওয়া যাবে।

 তাহনিক করানো সুন্নাহ, অর্থাৎ নবজাতকের মুখে খেজুর চিবিয়ে নরম করে দেওয়া। খেজুর না থাকলে মিষ্টি দ্রব্যের মধ্যে মধু দেওয়া উত্তম। (সহিহ বুখারি, ২/৮২১)

হজরত আবু মুসা আশআরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার একটি ছেলে জন্ম নিল, আমি তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে এলাম, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নাম রাখেন ইবরাহীম এবং তাকে তাহনীক করান খেজুর দিয়ে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস, ৫৭৩৯, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস, -২৩৯৪৮)

আপনি নিজে যদি তাহনিক করান,সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেনঃ-

প্রথমে খেজুর প্রস্তুত করা:

পাকা ও নরম খেজুর নিতে হবে।

যদি শক্ত হয়, তবে ভালোভাবে চিবিয়ে বা মিহি করে নরম করতে হবে।

খেজুর না থাকলে মধু বা অন্য মিষ্টি খাবার ব্যবহার করা যেতে পারে (তবে খেজুরই উত্তম)।

★নরম করা খেজুর আঙুলের ডগায় নিয়ে শিশুর মুখের তালুতে (উপরের ভেতরের অংশে) হালকাভাবে ঘষে দেওয়া হবে।

খুব অল্প পরিমাণ দেওয়া হবে যাতে শিশু সহজে গিলতে পারে।

শিশুর জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব করা ভালো।

অনেক সময় এটি আযানের আগে বা পরে করা হয়, তবে তাহনিকের জন্য আযান দেওয়া শর্ত নয়।

তাহনিকের পর শিশুর জন্য কল্যাণ, ঈমান, দীর্ঘ জীবন ও নেককার হওয়ার দোয়া করা সুন্নাহ।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
আসবা বিনতে আবি বকর (রাঃ) বলেন:

"আমি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ)-কে জন্ম দেওয়ার পর তাকে নবী ﷺ-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি খেজুর চাইলেন, চিবিয়ে তার মুখে দিলেন এবং শিশুর জন্য দোয়া করলেন।"
(সহীহ বুখারী: ৫৪৬৭)

বিঃদ্রঃ শিশুর কানে আযান ইকামত আপনিই দিতে পারবেন,এতে কোনো সমস্যা নেই। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...