আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
14 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (37 points)
প্রশ্ন ১: হিন্দু শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় কার্যক্রমে সহায়তা করার কারণে ঈমানের কোনো ক্ষতি হবে কি?

আমি একটি স্কুলে শিক্ষকতা করি। এখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীও রয়েছে। ইসলাম শিক্ষা ক্লাস চলাকালে তারা তাদের হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষকের কাছে যাওয়ার অনুমতি চায়। তখন আমরা তাদের বলি:
“আচ্ছা, যাও।”

কখনো হিন্দু শিক্ষক ক্লাসে এসে তাদের কিছু পড়িয়ে দিয়ে যান। তখন আমরা তাদের বলি:
“তোমাদের পড়া পড়ো।”

এছাড়াও, আমরা যেসব কাজ করে থাকি তা হলো—

অন্যরা (সম্ভবত হিন্দু শিক্ষক) হিন্দু ধর্মের প্রশ্ন তৈরি করে,

আমরা শুধু সেই প্রশ্নপত্র হিন্দু ছাত্রদের হাতে পৌঁছে দিই,

তাদের খাতা পরীক্ষার সময় স্বাক্ষর করি,

রিচেক বা পুনর্মূল্যায়নের জন্য এলে তাদের মার্ক গণনা করি।

আমার প্রশ্ন:
এইসব কাজ করার কারণে কি আমাদের গুনাহ হচ্ছে? কিংবা ঈমানের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি? এতে কি কুফরের কোনো শংকা আছে?

প্রশ্ন ২: স্ত্রীর বক্তব্য কুফরের অন্তর্ভুক্ত কি না?

একদিন স্ত্রীর সাথে ধর্মীয় আলোচনা হচ্ছিল। সে বলল:
“ধর্ম-কর্ম তো ধনীদের কাজ।”
আমি তখন বললাম—এভাবে বলা ঠিক নয়।
এরপর সে ব্যাখ্যা করে বলল:
“আমার মানে হলো, ধনী মানুষরা বেশি ইবাদত করতে পারে, গরিব মানুষরা পেটের দায়ে ব্যস্ত থাকে। তাই তারা তেমন সময় বা সুযোগ পায় না। যারা জন্ম থেকেই গরিব, তারা ওই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেয়।”

এই বক্তব্যে কি কোনো কুফরি কথা হয়েছে? ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে কি?

উল্লেখ্য, আমি একটি হাদীসে পড়েছি:
“দারিদ্র্য কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে।” (যদিও সূত্র নিশ্চিত নই)

1 Answer

0 votes
ago by (651,930 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
https://ifatwa.info/4662/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
এক ধর্মের সাথে অপর ধর্মের অনুসারীদের সহাবস্থান এবং অন্য ধর্মের অনুসারীদের আপন আপন পূজা-আরাধনা নির্বিঘ্নে পালন করতে সহযোগিতার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার।
ইসলাম এতে পূর্ণ সমর্থন দেয় ও দায়িত্ব গ্রহণ করে। 

ইসলামের স্পষ্ট নীতি হচ্ছে, যে কোনো ধর্মাবলম্বী নিজস্ব গণ্ডির মধ্যে তার ধর্ম পালন করুক। নিজস্ব পরিধির মধ্যে তার ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা তার রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বরং তাদের নিজস্ব গণ্ডির ভেতরে থেকে এগুলো পালন করার জন্য ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেয়া হয়েছে ইসলামী খেলাফতের সময়গুলোতে। হযরত উমর রা. তাঁর শাসনামলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের كنيسة  (কানীসা) বানানোর সুযোগও দিয়েছেন। 

সুতরাং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার এবং ধর্মীয় আচার-আচরণকে এক করে দেখার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব। এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব ও আনন্দও তাদের নিজস্ব। 

তবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অন্যদের ধর্মীয় কাজে যোগ দেওয়া, সেগুলোকে পছন্দ করা, সে উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করার কোনো একটি বিষয়ই শরীয়ত কর্তৃক সমর্থিত নয়।

মূলত অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস্থান, নিজস্ব পরিধির মধ্যে তাদের ধর্মপালন ও পালনের অধিকার একটি সমর্থিত ও স্বীকৃত বিষয়। এটি ইসলামেরই নীতি। কিন্তু অপর ধর্মের ধর্মীয় আচার এবং ধর্মভিত্তিক উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করা কিংবা সে উৎসবে স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে অংশ নেয়া সম্পূর্ণ অসমর্থিত, অযৌক্তিক ও বাস্তবতাবহিভর্‚ত। মূর্তিপূজা সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান-উৎসবে কোনো মুসলমানের পক্ষে এভাবে একাত্মবোধ করার কোনো অবকাশই নেই। এটা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা এবং ভিত্তিগত চেতনারও বিরোধী।
,
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করছেন,
من تشبه بقوم فهو منهم
‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভ‚ক্ত বলে গণ্য হবে।’ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১

অন্য একটি বর্ণনায় খলীফা হযরত উমর রা. বলেছেন, اجتنبوا أعداء الله في عيدهم তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাক। আস সুনানুল কুবরা, হাদীস ১৮৮৬২

অন্য বর্ণনায় তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছেন ‘কারণ এক্ষেত্রে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নাযিল হয়ে থাকে।’ আরেকটি বর্ণনায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেছেন
من بنى ببلاد الأعاجم وصنع نيروزهم ومهرجانهم وتشبه بهم حتى يموت وهو كذلك، حشر معهم يوم القيامة.
অর্থাৎ যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে। আস সুনানুল কুবরা, হাদীস ১৫৫৬৩
,
★ হিন্দু ধর্ম অবলম্বন কারীদের জন্য ক্লাশের ছুটি,অগ্রীম ক্লাশ,ইত্যাদির দ্বারা তাদেরকে পূজার কাজ নির্বিঘ্নে করার সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। 
তবে এক্ষেত্রে আমাদের জন্য তাদের পূজায় সহযোগিতা করা,আনন্দ উৎসব করা জায়েজ হবেনা। 

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢] 

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। {সূরা মায়িদা-২}

ফাতাওয়ায়ে শা'মী তে বর্ণিত রয়েছে,

ﻭﻟﻮ ﺁﺟﺮ ﻧﻔﺴﻪ ﻟﻴﻌﻤﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﻨﻴﺴﺔ ﻭﻳﻌﻤﺮﻫﺎ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ ﻷﻧﻪ ﻻ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﻓﻲ ﻋﻴﻦ ﺍﻟﻌﻤﻞ(ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﻈﺮ ﻭﺍﻹﺑﺎﺣﺔ » ﻓﺼﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻴﻊ)

যদি কেউ কোনো গির্জায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে,অথবা টাকার বিনিময়ে গির্জা নির্মাণ করে দেয়, তাহলে এতে তার কোনো গুনাহ হবে না। কেননা এখানে মূল কাজে কোনো প্রকার গোনাহ নেই।(রদ্দুল মুহতার,৬/৩৯২)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নের বিবরন মতে এইসব কাজ করার কারণে আপনার গুনাহ হচ্ছেনা। কিংবা ঈমানের কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা। এতে  কুফরের কোনো শংকা নেই।

(০২)
প্রশ্নের বিবরণ মতে এক্ষেত্রে কুফরি হবেনা।
আপনার স্ত্রীর ঈমান নষ্ট হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...