আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
9 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
edited ago by
আসসালামু আলাইকুম,
আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক খুব ভাল আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু বিষয়ে মনোমালিন্য হয়।

আমার স্ত্রী বাবার বাড়ি যাওয়ার পর আমাকে না বলেই নানীর বাড়ি, খালার বাড়ি বেড়াতে যায়। এর আগেও না বলে যাওয়ার কারণে খুব কড়া ভাষায় সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু তারপরেও আবার যায়।

এজন্য আমি খুব রেগে যাই। এই কাজটা আমার চরম অপছন্দের। এবং মনে মনে ভাবতে থাকি যে, স্ত্রী বাড়ি আসলে ওকে আমি বলবো "এই কাজটা আমার কত অপছন্দের জানো? আমি যদি এখন এমন শর্ত দেই যে তুমি আমার বিনা অনুমতিতে দরকার ছাড়া কোথাও বেড়াতে গেলে অটো তালাক হয়ে যাবে। তাহলে কেমন লাগবে?"

অর্থাৎ শর্ত আরোপ করবো না কিন্তু ওকে বোঝাবো যে, এমন শর্ত আরোপ করলে কেমন লাগবে! আমার মেইন উদ্দেশ্য ওকে বোঝানো এই কাজটা আমার চরমতম অপছন্দের। কোনভাবেই তালাক দেওয়া উদ্দেশ্য না। তালাকের কোনই নিয়ত ছিল না। ওকে শুধু ভয় দেখানো উদ্দেশ্য যে এমন কাজ যেন পরবর্তীতে আর কখনোই না করে।

কিন্তু স্ত্রী যখন বাড়ি আসে তখন আমি ওকে বলি "তুমি আর কখনো আমার অনুমতি ছাড়া কোথাও বেড়াতে গেলে অটো তালাক হয়ে যাবে।" এবং তাৎক্ষণিকভাবেই একটু পড়ে বলি আচ্ছা এই শর্ত আমি তুলে নিলাম। এবং বলি এটা বলার দ্বারা আমার উদ্দেশ্য এটা কতটা অপছন্দের কাজ সেটা ওকে বোঝানো। ওকে কঠোরভাবে সতর্ক করা। কোনভাবেই তালাক উদ্দেশ্য ছিল না। নিয়তে কখনোই তালাক ছিল না।

১. যদি নিয়তে তালাক উদ্দেশ্য না থাকে আর শাসন বা ভয় দেখানোই উদ্দেশ্য হয় তাহলেও কি এভাবে শর্তযুক্তে "তালাক" শব্দ বলার কারণে তালাক হবে?

২. ওকে যেহেতু এই বিষয়টা শাসনের নিয়তে সতর্ক করে বলা সেজন্য তাৎক্ষণিকভাবে সেই শর্ত উঠিয়ে নিলে কি আর সেই শর্ত কার্যকর থাকবে?

৩. এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি খুব অশান্তিতে আছি। যখনই মনে হয় তখনই মনটা বিষাদে ভরে যায়। এজন্য আমরা আলোচনা করে এই বিষয়টা থেকে নিরাপদে থাকার জন্য আমার স্ত্রীকে সকল জায়গায় যাওয়ার অনুমতি আগেই অগ্রিম দিয়ে রেখেছি যেন কখনোই এই শর্ত পূরণ না হয়। এটার দ্বারা কি আমরা আসলেই নিরাপদ হয়েছি?

তালাকের মাসআলার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতাম। কিন্তু এই শর্তযুক্ত তালাকের মাসয়ালার বিষয়ে আগে কিছুই জানা ছিল না। জানা থাকলে কখনোই এমন ভয়ঙ্কর বিষয় নিয়ে এমন কিছু বলতাম না। আমি জানতাম এমন ভাবে কথা বললে কোন তালাকই হবে না। এজন্য আমার নিয়তে তালাকের কিছু ছিলই না যদিও শর্তে "তালাক" শব্দ এসে গেছে।

আমার শেষের তিনটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার বিনীত অনুরোধ করছি। জাযাকাল্লাহু খইরণ।

1 Answer

0 votes
ago by (651,720 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

তালাক এটি খুবই মারাত্মক একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

এ শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর এমনিতেই বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}
   
তালাককে শর্তের সাথে সংযুক্ত করলে শর্ত পাওয়া গেলেই বক্তব্য অনুপাতে তালাক পতিত হয়ে যাবে।


ألفاظ الشرط إن … ومتی ومتی ما ففي ہٰذہٖ الألفاظ إذا وجد الشرط انحلت الیمین وانتہت؛ لأنہا لا تقتضي العموم والتکرار، فبوجود الفعل مرۃ تم الشرط وانحلت الیمین فلا یتحقق الحنث بعدہ۔ (الفتاویٰ الہندیۃ ۱؍۴۱۵) 
সারমর্মঃ
শর্তের কিছু বাক্য আছে,যখন শর্ত পাওয়া যাবে,কসম ভেঙ্গে যাবে এবং শেষ হয়ে যাবে।
সেই শর্ত অনুপাতে হুকুম ফিরে আসবেনা।
কেননা এটি বারংবার কে চায়না।  

وشرط الحنث في قولہ إن خرجت مثلاً فأنت طالق أو إن ضربت عبدک فعبدي حر لمرید الخروج والضرب فعلیہ فورًا؛ لأن قصدہ المنع عن ذٰلک الفعل عرفًا ومدار الأیمان علیہ، وہٰذہ تسمی یمین الفور۔ (درمختار، الأیمان / باب الیمین في الدخول والخروج والسکنیٰ، مطلب في یمین الفور ۵؍۵۵۳-۵۵۴ زکریا، ۳؍۷۶۱-۷۶۲ دار الفکر بیروت، وکذا في البحر الرائق / باب الیمین في الدخول ۴؍۳۱۵ کوئٹہ)
সারমর্মঃ
কেহ যদি বলে তুমি যদি বের হও,,তাহলে তুমি তালাক, অথবা তুমি যদি তোমার গোলামকে প্রহার করো,তাহলে আমার গোলাম আযাদ,তাহলে এটির বিধান তাৎক্ষনিক হবে।
কেননা তার উদ্দেশ্য ছিলো ঐ কাজ থেকে সেই সময়েই বিরত রাখা,( সারাজীবন এর জন্য নয়)।

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে এক্ষেত্রে শর্ত যুক্ত তালাক হবে।

(০২)
সেই শর্ত উঠিয়ে নিলেও সেই শর্ত কার্যকর থাকবে।

ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে আছে

فی الھندیۃ : و اذا اضافہ الی الشرط وقع عقیب الشرط اتفاقاً مثل ان یقول لأمرأتہ ان دخلت الدار فأنت طالق الخ ( فصل فی تعلیق الطلاق الخ ، ج 1 ، ص 420 ، ط : ماجدیہ ) ۔

সারমর্মঃ-
আর যদি কেহ তালাককে শর্তের সাথে যোগ করে, তাহলে শর্তযুক্ত কাজটি পাওয়া গেলে তালাক পতিত হয়ে যাবে। যেমন যদি সে তার স্ত্রীকে বলে, "যদি তুমি ঘরে প্রবেশ করো, তাহলে তুমি তালাক," ইত্যাদি।

و فیہ ایضاً : و لو قال لھا اذا دخلت الدار أو کلمت فلانا أو صلیت الظھر اذا جاء رأس الشھر فانت طالق ثنتین ( الی قولہ ٰ) لان الرجوع عن التعلیق لا یصح فلا یمکنہ التدارک الخ ( باب فی الاقرار بالنکاح ، ج 4 ، ص 209 ) ۔

সারমর্মঃ-
আর যদি সে তার স্ত্রীকে বলে, "যদি তুমি ঘরে প্রবেশ করো, অথবা অমুকের সাথে কথা বলো, অথবা মাসের শুরুতে দুপুরের নামায পড়ো, তাহলে তুমি দুই তালাক,"এক্ষেত্রে শর্তটি প্রত্যাহার করা সহীহ নেই। কারণ এটি প্রতিকার করতে পারে না।

(০৩)
যেহেতু শর্ত যুক্ত তালাক আপনি দিয়েছেন, সুতরাং আপনার স্ত্রী এরপর আপনার অনুমতি ছাড়া কোথাও গেলে এক তালাক পতিত হয়ে যাবে।

তবে আপনি যেহেতু এখন সকল জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রিম অনুমতি প্রদান করে দিয়েছেন, সুতরাং আপনার স্ত্রী যদি আলাদাভাবে আর অনুমতি না নেয়, সেক্ষেত্রে তালাক পতিত হবে না, কেননা শর্ত পাওয়া যায়নি।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...