জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলাম এ বিষয়ে জোর দেয় যে,মানুষ তার জীবনের প্রতিটি মূহূর্ত এমন কাজে ব্যয় করবে যাতে দুনিয়া ও আখেরাতের নিশ্চিত কল্যাণ রয়েছে।কমপক্ষে যেন দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো ক্ষতি না হয়।এ জন্যই কোরআনে কারীমে মু'মিনদের উত্তম ও প্রশংসনীয় গুনাবলীর আলোচনা করতে যেয়ে বলা হয়,
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫُﻢْ ﻋَﻦِ ﺍﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻣُﻌْﺮِﺿُﻮﻥَ
যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত,(মু'মিনুন-৩)
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮُّﻭﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻣَﺮُّﻭﺍ ﻛِﺮَﺍﻣًﺎ
এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।(ফুরকান-৭৩)
লাহব কাকে বলে?
اللهو: ما يشغل الإنسان عما يعنيه و يهمه (مفردات القرآن للإمام الراغب)
অর্থাৎ-যে সকল বস্তু মানুষকে লক্ষণীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী থেকে অমনোযোগী করে দেয় তা হলো "লাহব"।
اللعب :لعب فلان اذا كان فعله غير قاصد به مقصدا صحيحا
অর্থাৎ- খেলাধুলা ঐ সকল কাজ যাতে সঠিক কোন উদ্দেশ্য থাকে না।
اللغو: وهو كل سقط من قول او فعل فيدخل فيه الغناء واللهو و غير ذلك مما قاربه
অর্থাৎ- লাগু ঐ সকল অনর্থক কথাবার্তা ও কাজ-কর্ম যাতে গান-বাদ্য রং তামাশা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।(কুরতুবি:১৩/৮০)
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস সমূহ থেকে বুঝা গেল যে, ইসলামী শরীয়তে সময়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া ও লক্ষস্থির জীবন গঠন করা জরুরী।
সুতরাং বিনা মিউজিকে গান শোনা/গাওয়া জায়েজ নেই।
,
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ
★শরীয়তের বিধান হলো নাচানাচি করা, নাচ শেখা কোনোটিই জায়েজ নেই,এ সবই কবিরা গুনাহ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে যারা অজ্ঞতায় লোকেদেরকে আল্লাহ্র পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসাড় বাক্য বেছে নেয় এবং আল্লাহ্র প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। ওদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা লুকমান ৬ আয়াত)
ইবনে মাসঊদ রাযি. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, واللهِ الذي لا إله إلا هو إن لهو الحديث لهو الغناء ‘সেই আল্লাহ্র কসম যিনি ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই! নিশ্চয় তা (অসার বাক্য) হচ্ছে গান।’ (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৮/৩,৪)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. একই কথা বলেন। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)
কোরআন মজীদের অন্য আয়াতে আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে সম্বোধন করে বলেন,
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِم بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِي الأَمْوَالِ وَالأَوْلادِ وَعِدْهُمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُورًا
তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ত তিতে শরীক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতি দেয় না। (সূরা ইসরা ৬৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ. বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
لَيَشْرَبَنَّ أُنَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا وَتُضْرَبُ عَلَى رُءُوسِهِمُ الْمَعَازِفُ يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০২০ সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮)
সাহল বিন্ সা’দ্ রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
سَيَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَمَسْخٌ ، قِيْلَ: وَمَتَى ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْمَعَازِفُ وَالْقَيْنَاتُ
অচিরেই শেষ যুগে দেখা দিবে ভূমি ধস, নিক্ষেপ ও বিকৃতি। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহ্’র রাসূল! তা কখন? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকারা বেশি হারে প্রকাশ পাবে। (ইবনু মাজাহ্ ২/১৩৫০)
আরো জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
ঘরের দরজা লাগিয়ে নাচ করলে যদি স্বামী ব্যাতিত অন্য কোনো পুরুষ না দেখে এবং অন্য কোনো মহিলাও যদি না দেখে,এবং কোনো গান যদি না গাওয়া হয়,এমনিতেই নাচা হয়,সেক্ষেত্রে স্বামীকে খুশী করতে মাঝে মধ্যে যদি কেউ এভাবে নাচে,তাহলে উলামায়ে কেরামদের মতে সেটার রুখসত থাকবে।
তবে অন্য কোনো পুরুষ বা অন্য কোনো মহিলার সামনে নাচা বা স্বামীর সামনে এভাবে নিয়মিত নাচা কখনো অনুমোদনযোগ্য হবে না।
খালি গলায় গান গাওয়া নাজায়েজ,তাই খালি গলায় গানের সাথে একা বা স্বামীর সামনে নাচাও জায়েজ নেই।
নাচের মাধ্যমে ব্যায়াম করা হলে সেভাবে ব্যায়াম করাও নাজায়েজ হবে।
তবে নিজ ঘরের মধ্যে একাকী বা শুধুমাত্র স্বামীর সামনে উপরোক্ত পদ্ধতিতে নাচের মাধ্যমে ব্যায়াম করলে সেটি নাজায়েজ হবেনা।
তবে এমনটি নিয়মিত করা যাবেনা।
উল্লেখ্য, নাচ-গান মূলত শয়তানের কাজ।এগুলো শয়তানের প্ররোচনা।নাচ গানের কারণে অন্তর ইবাদত থেকে অনেক দূরে সরে যায়।সুতরাং নাচ গান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখাই একজন মুত্তাকির উচিৎ ও কর্তব্য।
আরো জানুনঃ-