জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۱۵﴾
কিন্তু কেউ অবাধ্য বা সীমালংঘনকারী না হয়ে অনন্যোপায় হলে আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা নাহাল ১১৫)
فَمَنِ اضۡطُرَّ فِیۡ مَخۡمَصَۃٍ غَیۡرَ مُتَجَانِفٍ لِّاِثۡمٍ ۙ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۳﴾
অতঃপর কেউ পাপের দিকে না ঝুঁকে ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হলে তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা মায়েদা ০৩)
সুদের আদান-প্রদাণ হারাম।তবে অবস্থাবেধে হুকুমে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।মানুষের প্রয়োজন তিন প্রকারের হতে পারে।যথা-
জরুরত (এমন প্রয়োজন যা না হলে নয়) : এমন এক ধরনের প্রয়োজন, যা ছাড়া জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়। যেমন, মরুভূমিতে ক্ষুধার্ত একজন মানুষ, যার কাছে কোনো খাবার নেই। (এই পরিস্থিতিতে মানুষটি জীবন বাঁচানোর তাগিদে হারাম বস্তুও ভক্ষণ করতে পারবে)।
হাজত (এমন প্রয়োজন যা না হলে অত্যাধিক কষ্ট হবে) : কষ্ট বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে যা করা হয়ে থাকে। (এখানে কষ্ট বা যন্ত্রণা বলতে জীবনের জন্যে হুমকিস্বরূপ বোঝাচ্ছে না) যেমন- একজন সাওম পালনকারী ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। ফরজ সাওম হলেও এ ক্ষেত্রে তা ঐ ব্যক্তির জন্যে ভাঙার অনুমোদন রয়েছে।বা মেয়ের বিয়েতে টাকার প্রয়োজন।
তাহসিন (পছন্দনীয় ও সুশোভিতকরণ) : এ ধরনের প্রয়োজনীয়তাগুলো মানুষের পোশাক-আশাক ও আচার-আচরণের পরিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতার জন্যে এবং জীবনের মান উন্নয়নের জন্যে দরকারি। যেমন, একজন মানুষের শারীরিক অবস্থা ঠিক রাখার জন্যে মাছ, মাংস ও ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। (এই তিন প্রকার একজন দ্বীনী বোনের গবেষনা থেকে কপিকৃত)
হুকুমঃ
প্রথম অবস্থায় সুদ গ্রহণ জায়েয।এবং তৃতীয় অবস্থায় সুদ গ্রহণ জায়েয হবে না। আর দ্বিতীয় অবস্থার ব্যাখ্যা এরূপ যে,অভাব অনটনের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ের যে,খানাপিনা এবং চিকিৎসা ইত্যাদি মত মৌলিক প্রয়োজনাদিকে পূর্ণ করা সুদ ব্যতীত প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সুদ গ্রহণ করা বৈধ হবে।(জাদীদ ফেকহী মাসাঈল-৪/৫২)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনাদের যদি খুব অভাব হয়।
অভাব অনটনের পরিস্থিতি যদি এমন পর্যায়ে পৌছে যে,খানাপিনা এবং চিকিৎসা ইত্যাদি মত মৌলিক প্রয়োজনাদিকে পূর্ণ করা উক্ত লোন নেয়া ব্যতীত প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আপনার স্বামীর জন্য সুদি লোন গ্রহণ করা বৈধ হবে।
এক্ষেত্রে লোন গ্রহণ করতে সাহায্য করায় আপনার গুনাহ হবেনা।
,
অভাব অনটন যদি এমন না হয়,সেক্ষেত্রে আপনার স্বামীর জন্য সুদি লোন গ্রহণ করা বৈধ হবেনা।
এক্ষেত্রে লোন গ্রহণ করতে সাহায্য করায় আপনার গুনাহ হবে।
★সর্ব ছুরতে হালাল টাকায় সেই লোন পরিশোধ করলে সেক্ষেত্রে আপনার দোয়া কবুল হবে।
(০২)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনি যদি আপনার বাবার বাড়ি থেকে বা কোন নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা এনে সন্তানকে ডাক্তার দেখান,খাবার খাওয়ান,পোশাক কিনে দেন, তাহলে সেটা জায়েজ হবে।
(০৩)
আপনি তার দেয়া টাকা গ্রহণ করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে আপনি যদি সেই আত্মীয়কে বলেন যে তুমি আমার সন্তানের জন্য টাকা বা হাদিয়া দিলে তোমার মূল বেতন (সেটা হালাল) থেকে দিও বা খরচ করো তাহলে সেটা আরো ভালো হবে।
প্রশ্নের বিবরণ মতে সর্বাবস্থায় তার দেয়া টাকা নেয়া আপনার জন্য জায়েজ হবে,হালাল হবে।
(০৪)
জায়েজ হবে।
(০৫)
এভাবে আচরণ না করতে আপনি আপনার বাবা মাকে বুঝাবেন।
প্রয়োজনে আপনার স্বামীকে আপনার বাবা মা হতে দূরে রাখবেন,যাতে এসব কথাবার্তা আপনার স্বামীকে আর শুনতে না হয়।
(০৬)
তিনি হালাল টাকায় সেই লোন পরিশোধ করলে তার আয় হালাল বলে বিবেচিত হবে।
তবে সর্বাবস্থায় স্বামীর এই আয় থেকে খাবার খেলে আপনার আর আপনার সন্তানের জন্য সেটা হালাল হবে।
এক্ষেত্রে তার আয় হতে প্রয়োজনীয় খরচ করতে পারবেন।
প্রয়োজন অতিরিক্ত খরচ করবেননা।
(০৭)
এক্ষেত্রে স্ত্রী তার নিকট পাওনা থাকবে।
মোহরানা যেভাবেই হোক,আদায় করতেই হবে।
স্ত্রী যদি স্বামীকে মোহরানা ক্ষমা না করে দেয়,সেক্ষেত্রে কিয়ামতের ময়দানে স্বামী তার স্ত্রীর সামনে ঋণী হিসেবেই উঠবে।
(০৮)
এক্ষেত্রে আপনার করনীয়ঃ-
★খোলামেলা ও বিনয়ী আলোচনা করুন
অনেক সময় মানসিক দূরত্ব, মানসিক চাপ, অসুস্থতা বা কাজের ক্লান্তি এসব কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই প্রথম করণীয় হলো শান্তভাবে বিষয়টি আলোচনায় আনা।
★পারিবারিক মধ্যস্থতা করুন
কুরআনের নির্দেশ:
“...তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধের আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পক্ষ থেকে একজন সালিশ ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে একজন সালিশ নিয়োগ করো...”
— সূরা আন-নিসা: ৩৫
দুই পরিবারের জ্ঞানী ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ দিয়ে সালিশ করলে অনেক সময় সমস্যা মিটে যায়।
★স্বামীর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে উৎসাহ দিন
শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা থাকলে চিকিৎসা, থেরাপি ইসলামে অনুমোদিত।
★দীর্ঘস্থায়ী অপারগতা হলে বিচ্ছেদ বৈধ।
যদি স্বামী স্থায়ীভাবে স্ত্রীর হক আদায় করতে ব্যর্থ হয়, আর স্ত্রী কষ্ট পাচ্ছে, তবে তালাক চাওয়া জায়েজ, বিশেষ করে:
যৌন অসক্ষমতা (স্থায়ী)
মানসিক নির্যাতন
অর্থনৈতিক দায়িত্বহীনতা
হাদীস: “কোনো নারী যদি তার স্বামীর চরিত্রে বা ধর্মে ত্রুটি দেখে, সে তালাক চাইলে তা গুনাহ নয়।”
— (সুনান ইবন মাজাহ)
(০৯)
এক্ষেত্রে পূর্ণ ভাবে শরীয়তের উপর চলার পাশাপাশি স্ত্রীর হক সমূহ আদায় করতে হবে।
এ সংক্রান্ত জানুনঃ-
সন্তানকে ভালো একটি কওমী মাদ্রাসায় লেখাপড়া করানোর পরামর্শ থাকবে।
(১০)
এমতাবস্থায় আপনাদের উপর যাকাত ফরজ হবেনা।