জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)
কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন, নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখা ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময় তারা ওড়নাটা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পরপুরুষ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরুষরাও তাদের থেকে দূরে থাকবে। (আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/৫৬)
হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।-সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৭৯
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০; ইবনে মাজাহ,হাদীস: ২৯৩৫
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যক।
আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত করে রাখতাম। ...-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
ফাতিমা বিনতে মুনযির রাহ. বলেন, আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রা.-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
বিস্তারিত জানুনঃ
,
★যদি উক্ত চাদর দ্বারা পরিপূর্ণ শরয়ী পর্দা হয়,তাহলে তার ব্যবহার জায়েজ আছে।
এটি এখন শুধু ইরানিরাই নয়,বরং অন্যান্য অনেক দেশের মুসলিম মহিলারা ব্যবহার করছেন।
সুতরাং এটার দ্বারা তাদের সাদৃশ্যতা হবেনা।
,
(০২)
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে বিনম্র হয়ে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে পৌরষত্ব আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে। {সূরা আহযাব-৩২}
★পরপুরুষের (গায়রে মাহরামের) সঙ্গে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর কঠোর রাখবে, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে নয়l হযরত আয়েশা (রা) এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীগণ আসলে, তিনি মুখের ওপর হাত রেখে কণ্ঠ বিকৃত করে পর্দার আড়ালে থেকে কথা বলতেন যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয় l -তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬
আরো জানুনঃ
নারীদের চাকুরি যেখানে গায়রে মাহরাম পুরুষদের সাথে কথা বলতে হয়,সেখানে যদি পরিপূর্ণ পর্দা করে, এবং নরম ভাষা ব্যবহার না করে বরং কর্কষ এর মতো আওয়াজ করে কথা বলে ফিতনার আশংকা না থাকলে কিছু ইসলামী স্কলারগন সেই চাকরিকে জায়েজ বলেন।
,
তবে মেয়েদের কন্ঠ যেহেতু ছতর,তাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামগন এ ধরনের যেকোনো চাকরিকে নাজায়েজ বলেন।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে কথা বলতে হয়,তাহলে এ ধরনের চাকুরী না করাই সতর্কতা।
অন্যথায় কোনো সমস্যা নেই।