আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
18 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
edited ago by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাহতুহ।
বলে রাখা ভালো আমি  একজন অবিবাহিত মেয়ে।নিচে উল্লেখিত ৪টি স্বপ্ন  আমি আমার মাথা থেকে  কিছুতেই নামাতে পারছিনা আর কারো সাথে শেয়ার করতে দ্বিধাবোধ হচ্ছে  তাই বাধ্য হয়ে সঠিক ব্যখ্যা পাবার আশায় এখানে প্রশ্ন করা।

১)দুই তিন মাস আগে স্বপ্নে আমার মামা বাড়ির রান্না ঘরের সামনে একজন অপরিচিত পুরুষকে সম্ভব নীল পাঞ্জাবী পরিহিত অবস্থায় বসে থাকতে দেখি আমার জন্য  যদিও আমি তার মুখ দেখিনি তার নাম ছিলো "মুহাম্মাদ বিন আহমদ" যে নামে আমি কাউকে চিনিনা।

২)উপরের স্বপ্নটা দেখার বেশ  কিছুদিন পরে স্বপ্নে আমি আমার  একমাত্র ভাই এর মৃত্যুর সংবাদ পাই বাড়িতে হাঁটাচলা করছি এমন সময় অথচ হেলদোল বা কষ্ট অনুভব কিংবা কান্নাকাটি কোনো বিষয় ছিলোনা যেন বিষয়টা আমার জন্য স্বাভাবিক এমন।-এই স্বপ্নের অর্থ কি?

৩)গত সপ্তাহে আমি স্বপ্নে দেখি আমি আমাদের রুমের মধ্যে হাঁটছি এমব সময় মা আর ভাইয়া এসে বলছে আমার বিয়ে হয়ে গেছে আমি কথাটা শুনে যতটা না আশ্চর্য হয়েছি তার থেকে বেশি চিন্তিত হয়ে বলছি কার সাথে হলো? না আমি তাকে দেখেছি না সে আমাকে।তার পরে তা একটু পাশ ফিরতেই দেখি মা আর ভাইয়া দুইজন একসাথে একটা ছবি হাতে নিয়ে দেখছে তারপর আমার দিকে ছবিটা ঘুরিয়ে ধরতেই দেখি অপরিচিত একটা পুরুষ যা গাল ভর্তি ঘন কালো  দাঁড়ি যা সচরাচল দেখা যায় না। মনে হলো ছবিটা দেখে আমি মৃদু হাসলাম এবং (মনে মনে বলছি এইলোকে আমাকে না দেখে বিয়ে করেছে!!) আর তারা ঐ লোকের  নাম বললো "আল্লামা মুবারক শাহ পালনপুরি,ফরিদপুর "--এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি হবে?আর এই নামের কেউ কি বাস্তবে  সত্যি আছে??

৪)দুই একদিন আগে স্বপ্নে আমি আমার কলেজে ঘনিষ্ঠ নয় এমন এক বান্ধবীর মৃত্যর সংবাদ শুনে তার লাশ দেখতে যেয়ে দেখি তাকে একটা আকাশের নীচে একটা টেবিলে উপর শুয়িয়ে রেখেছে  তার শরীরে কোনো  সাদা কাফন ছিলো না ছিলো নরমাল একটা নীলচে সবুজ রংয়ের একটা থ্রি/পিস তার মুখে কোনো ক্লান্তি ছিলো না যেন স্বাভাবিক ঘুমিয়ে আছে এমন।  তার  এমন হটাত  মৃত্যুর সংবাদ এখনো অতটা জানাজানি হয়নি। সম্ভব একটু দূরে তার হাসবেন্ড দাঁড়িয়ে ছিলো স্বাভাবিক যেন কিছু হয়নি। আমি সামান্য আশ্চর্য হলাম ওর মৃত্যু ও লাশ দেখে  যে এতোতাড়াতারি ওর মৃত্যু হলো।ঐ পরিস্থিতিতেও কোনো কান্নাকাটি কিংবা শোকের মাতন কিছু চোখে পরেনি।
এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি??

1 Answer

0 votes
ago by (634,530 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামী দৃষ্টিতে স্বপ্ন তিন প্রকার। 
,
১. যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাহকে দেখানো হয় যা কল্যানকর হয়।

২. শয়তানের পক্ষ হতে দেখানো হয় যাতে মানুষ খারাপ, মন্দ ভয়ংকর কিছু দেখে থাকে।

তবে শয়তান স্বপ্ন দেখানোর দ্বারা মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
,
 ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলে দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই। শয়তান মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলার জন্যই এমন সব আজব আজব জিনিস দেখায়। এমনটা দেখলে ঘুম থেকে জেগে বাম দিকে থুথু ফেলে আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে হয়। 

৩. মানুষের কল্পনা। অর্থাৎ মানুষ যা কল্পনা করে স্বপ্নে তা দেখতে পায়। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عُمَرَ الْمَكِّيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ الثَّقَفِيُّ، عَنْ أَيُّوبَ السَّخْتِيَانِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا اقْتَرَبَ الزَّمَانُ لَمْ تَكَدْ رُؤْيَا الْمُسْلِمِ تَكْذِبُ وَأَصْدَقُكُمْ رُؤْيَا أَصْدَقُكُمْ حَدِيثًا وَرُؤْيَا الْمُسْلِمِ جُزْءٌ مِنْ خَمْسٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ وَالرُّؤْيَا ثَلاَثَةٌ فَرُؤْيَا الصَّالِحَةِ بُشْرَى مِنَ اللَّهِ وَرُؤْيَا تَحْزِينٌ مِنَ الشَّيْطَانِ وَرُؤْيَا مِمَّا يُحَدِّثُ الْمَرْءُ نَفْسَهُ فَإِنْ رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يَكْرَهُ فَلْيَقُمْ فَلْيُصَلِّ وَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا النَّاسَ "
মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমার আল-মাক্কী (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যুগ ও সময় (কিয়ামাতের) সন্নিকটে হয়ে আসবে তখন প্রায়শ (খাঁটি) মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা ও ভ্রান্ত হবে না। তোমাদের (মাঝে) অধিক সত্যভাষী লোক সর্বাধিক সত্য (ও বাস্তব) স্বপ্নদ্রষ্টা হবে। আর মুসলিমের স্বপ্ন নুবুওয়াতের পয়তাল্লিশ ভাগের এক ভাগ। আর স্বপ্ন তিন (প্রকার)- ভাল স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হতে সুসংবাদ (বাহক)। আর (এক ধরনের) স্বপ্ন শাইতানের পক্ষ হতে দুর্ভাবনা তৈরি করে। আর (এক ধরনের) স্বপ্ন যা মানুষ তার মনের সাথে কথা বলে (এবং ভাবনা-চিন্তা করে) তা থেকে (উদ্ভূত)।

অতএব তোমাদের কেউ যদি এমন কিছু (স্বপ্ন) দর্শন করে- যা সে পছন্দ করে না, তাহলে সে যেন (ঘুম থেকে) উঠে দাঁড়ায় এবং সলাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করে আর মানুষের নিকট সে (স্বপ্নের) কথা গোপন রাখে।
(মুসলিম ৫৭৯৮, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭০৮, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৪০)

خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَلَمَةَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا قَتَادَةَ يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلميَقُوْلُ الرُّؤْيَا مِنْ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنْ الشَّيْطَانِ فَإِذَا رَأٰى أَحَدُكُمْ شَيْئًا يَكْرَهُه“فَلْيَنْفِثْ حِينَ يَسْتَيْقِظُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ وَيَتَعَوَّذْ مِنْ شَرِّهَا فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّه“وَقَالَ أَبُو سَلَمَةَ وَإِنْ كُنْتُ لأَرَى الرُّؤْيَا أَثْقَلَ عَلَيَّ مِنَ الْجَبَلِ فَمَا هُوَ إِلاَّ أَنْ سَمِعْتُ هٰذَا الْحَدِيثَ فَمَا أُبَالِيهَا.

আবূ ক্বাতাদাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, আর মন্দ স্বপ্ন হয় শয়তানের তরফ থেকে। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে যা তার কাছে খারাপ লাগে, তা হলে সে যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন সে যেন তিনবার থুথু ফেলে এবং এর ক্ষতি থেকে আশ্রয় চায়। কেননা, তা হলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। 

আবূ সালামাহ বলেনঃ আমি যখন এমন স্বপ্ন দেখি যা আমার কাছে পাহাড়ের চেয়ে ভারি মনে হয়, তখন এ হাদীস শোনার ফলে আমি তার কোন পরোয়াই করি না। [বুখারী ৫৭৪৭ মুসলিম পর্ব ৪২/হাঃ ২২৬১, আহমাদ ২২৭০৭] 
,
ومن رای انہ مات…………ان رای شیئا من ہیئۃ الاموات کالغسل والکفن فذالک زیادۃ فی نقص دینہ (تعطیر الانام ۲۹۱؍ج۲؍باب المیم،موت،مطبوعہ مصر)

যার সারমর্ম হলো কেহ স্বপ্নে দেখে যে সে মারা গিয়েছে,,বা মৃতদের হালত,কাফন গোসল ইত্যাদি  দেখে,তাহলে সেটি নিজের দ্বীনের কমতি মনে করতে হবে।
,
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ তে এসেছে যে স্বপ্নে মৃত মানুষ দেখা এটি কবরের কথা স্বরন করে দেওয়ার জন্য।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ ২৯/১৬০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(১-৪)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার আমল বাড়িয়ে দিতে হবে,দ্বীনদার লোকদের সাথে উঠাবসা করতে হবে,পবিত্র হালতে থাকতে হবে,অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। 
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার,ফরজ সহ নফল নামাজ পড়তে হবে। 
,
স্বপ্নের কথা কাউকে বলা যাবেনা।

চাইলে কিছু টাকা দান ছদকাহ করতে পারেন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন স্বপ্নে বিবাহ হতে দেখলে নিজের সম্মান ইজ্জত বৃদ্ধি পাওয়া বুঝায়।
,
কেহ কেহ বলেছেন যে স্বপ্নে কেউ বিয়ে করতে দেখে, তার দ্বারা আসন্ন বিবাহ বুঝায়। স্বপ্নের সময় যদি বিয়ের পরিকল্পনা না থাকে তাহলে হয়তো যার যঙ্গে বিয়ে হতে দেখেছে তাদের বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে। নিম্নোক্ত হাদীসটি ইহা নির্দেশ করে:

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أُرِيتُكِ فِى الْمَنَامِ ثَلاَثَ لَيَالٍ جَاءَنِى بِكِ الْمَلَكُ فِى سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ فَيَقُوْلُ هَذِهِ امْرَأَتُكَ فَأَكْشِفُ عَنْ وَجْهِكِ فَإِذَا أَنْتِ هِىَ فَأَقُولُ إِنْ يَكُ هٰذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ يُمْضِهِ 

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বলেছেন, ‘‘আমি (বিবাহের পূর্বে) তোমাকে দু-দুবার স্বপ্নে দেখেছি। দেখলাম তুমি এক খণ্ড রেশমবস্ত্রের মধ্যে রয়েছ। আর আমাকে কেউ বলছে, ‘এ হল তোমার স্ত্রী।’ আমি কাপড় সরিয়ে দেখি, সে তো তুমিই। তারপর ভাবলাম, যদি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, তাহলে তিনি তা বাস্তবায়ন করবেন।
(বুখারী ৩৮৯৫, মুসলিম ৬৪৩৬)

আরো জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনার বিবাহ আসন্ন ইনশাআল্লাহ।

যার সাথে আপনার বিবাহ হবে,আশা করা যায় তিনি দ্বীনদার হবেন,ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...