আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
33 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (7 points)

খুবই জরুরী প্রশ্নঃ- 

খুব ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যখন আমি জাহান্নামের ভয়ে সবসময় মায়ের আচল ধরে থাকতাম, এতটাই জাহান্নামের ভয়ে আতঙ্কতি ছিলাম। এরপর বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি জীবনে যত দোয়া করেছি ৯০% ছিলো এরকম “আমাকে হেদায়াত দাও, আমাকে হেদায়াতের উপর অটল রাখো, জান্নাতের উপযোগী না বানিয়ে মৃত্যু দিও না, তোমার অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত না করে মৃত্যু দিও না।“ এই টাইপের আখিরাত কেন্দ্রিক দোয়া। দুনিয়াবি দোয়া আমি খুব কমই করেছি।

কিন্তু আমি হেদায়াতের উপর আমি খুব কম সময় ধরেই অটল থাকতে পেরেছি। ২-৪মাস ঠিক ছিলাম আবার পথভ্রষ্ট হয়ে গেছি। আবার ফিরে আবার এসেছি, আবার পথভ্রষ্ট হয়ে গেছি। এভাবে চলছে, এখন আমার বয়স ৩২বছর।

এমনও সময় গেছে যে আমার পুরো শীতের সিজনে একদিনও ফরজের জামাত মিস হয়নি। এমনও রমজান মাসে একদিনও ঘুমাইনি পুরো রাত জেগে ইবাদত করেছি।
আবার সেই আমিই, কোন বিশেষ কারন ছাড়া ফরজ নামাজ ছেড়ে দিয়েছি, দিনের পর দিন এক ওয়াক্ত নামাজ ও পড়িনি।

আমি যদি নিজের কোন বিশেষ গুনাহের কথা বলি তাহলে আমি দুটি বড় গুনাহে লিপ্ত হতাম প্রায়শই তা হচ্ছে পর্নগ্রাফি ও হস্তমৈথুন।   

যদি পর্নগ্রাফি বা হস্তমৈথুনের কারনেই এমনটা হয় তাহলে বিয়ের পর স্ত্রী থাকা অবস্থাতেও পথভ্রষ্ট কেনো হয়েছিলাম? সেই সময় যৌনতা সংক্তান্ত কোন গুনাহ তো হয়নি।

কিন্তু কেনো এমনটা হয়?  

আল্লাহ্‌ তো শেষ রাতের দোয়া, কদরের রাতের দোয়া কবুল করেন। আমি তো সারাজীবনের দোয়া কবুলের বিশেষ মুহুর্তে কেবল হেদায়াতের উপর অটল থাকার দোয়াই করেছি তাহলে কেনো আল্লাহ্‌ আমার দোয়া কবুল করছেন না?   


সমস্যা আসলে কোন জায়গায়? আমার কী ঈমানে কোন বড় ধরনের ত্রুটি আছে? যেকারনে এরকম হচ্ছে? যদি থেকে থাকে তাহলে সেটা কিভাবে খুঁজে বের করবো?

1 Answer

0 votes
by (632,370 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)
সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।
পুরুষ হলে তাদের  মজলিসে আসা যাওয়া করুন।

★দাওয়াত তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হতে পারেন। শুরুতে সুযোগ হলে তিন চিল্লা দেয়ার চেষ্টা করবেন। এরপর প্রতি বছরে নুন্যতম এক চিল্লা দিবেন, প্রতি মাসে তিন দিনের জন্য বের হবেন, প্রতি সপ্তাহে নিজ মহল্লার মসজিদে গাশত করবেন, প্রতিদিন নিজ মহল্লার মসজিদে তালিম মাশওয়ারাতে যুক্ত থাকবেন এবং তাবলীগের অন্যান্য কার্যক্রম গুলো সঠিকভাবে আদায় করবেন।

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। 

★কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন।

আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...