আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
45 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (14 points)
আসালামু আলাইকুম। হুজুর, আমি একজন প্রাক্টিসিং মুসলিমা ছিলাম। মোটামুটি আমার সাধ্যের মধ্যে দ্বীনের সবকিছুই মানার চেষ্টা করতাম, বেশি বেশি দু'আ করতাম। নিজের জন্য দু'আ করার আগে অন্যদের জন্য দু'আ করতাম। হঠাত করে আমি খেয়াল করি আমি অন্যদের জন্য কোনো দু'আ করলে সেই দু'আ আমার রব ফিরিয়ে দেন না কখনো। কিন্তু আমি নিজের জন্য কোনো দু'আ করলে কিংবা নিজের জন্য কোনো কিছু খুব করে চাইলে সেটা আমার থেকে এমনভাবে দূরে সরে যায় যে সেটা স্পর্শ করার সাধ্য আর আমার থাকে না। গত ৫ বছরে আমি যে জিনিসটাই খুব করে চেয়েছি, সেটাই হারিয়েছি। আমার এখন মনে হয় আমি হয়তো দ্বীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। হয়তো এভাবে আমার কাছ থেকে আমি জান্নাত টাও হারিয়ে ফেলবো ! এই চিন্তা আমাকে কুরে খাচ্ছে। এডমিশন পরীক্ষায় কৃতকারয না হতে পারায় আব্বু আম্মু বলেছে আব্বু আম্মুর মুখে চুন কালি মেখে এই নামাজ রোজা নিয়ে আমি কখনো জান্নাতে যেতে পারবো না। এটা শোনার পর থেকে আরো টেনশন হচ্ছে। আমি কি এভাবেই দুনিয়ার সাথে সাথে আমার আখিরাতকেও হারিয়ে ফেলবো ! নাকি হাজার দু'আ করার পরও দুনিয়ার না পাওয়াটাকে আল্লাহর একটা পরীক্ষা মনে করবো? মাঝে মাঝে মনে হয় এগুলো আমার গুনাহ আর কর্মফল। একারণে কারো কাছে তো কিছু বলিই না, আল্লাহর সাথে আমার খারাপ লাগার বিষয়টা শেয়ার করতে পারি না। মনে হয়, আল্লাহর কোনো সিদ্ধান্তে আমি কষ্ট পেয়েছি এটা আল্লাহর কাছে কীভাবে বলবো? আল্লাহ কী তাহলে আমার উপর আরো নারাজ হবেন না... এসব মনে করে দিন দিন সুইসাইডাল থট আস্তে শুরু করেছে। আমাকে একটু সাহায্য করুন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। জাজাকুমুল্লাহ খইর।

1 Answer

0 votes
by (629,460 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

দোয়া করার সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এগুলোকে আলেমরা দোয়া কবুলের শর্ত ও আদব বলে অভিহিত করেছেন।

★পবিত্রতা অর্জন: পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা সেই দোয়া কবুল করবেন।

★বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা: বিনয়ের সঙ্গে দু’হাত তুলে দোয়া করা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ الْفَضْلِ الْحَرَّانِيُّ، حَدَّثَنَا عِيسَى، - يَعْنِي ابْنَ يُونُسَ حَدَّثَنَا جَعْفَرٌ، - يَعْنِي ابْنَ مَيْمُونٍ صَاحِبَ الأَنْمَاطِ حَدَّثَنِي أَبُو عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ رَبَّكُمْ تَبَارَكَ وَتَعَالَى حَيِيٌّ كَرِيمٌ يَسْتَحْيِي مِنْ عَبْدِهِ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَيْهِ أَنْ يَرُدَّهُمَا صِفْرًا "

সালমান ফারসী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় তোমাদের রবব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দাহ দু’ হাত তুলে তাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি হাত ফেরত দিতে লজ্জবোধ করেন।
(আবু দাউদ ১৪৮৮.ইবনু মাজাহ (অধ্যায় : দু‘আ, অনুঃ দু‘আতে দু’ হাত উত্তোলন করা, হাঃ ৩৮৬৫)

★মিনতিভরা কন্ঠে দোয়া করা: মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করলে তা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، - يَعْنِي ابْنَ خَالِدٍ حَدَّثَنِي الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدِ بْنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ : الْمَسْأَلَةُ أَنْ تَرْفَعَ يَدَيْكَ حَذْوَ مَنْكِبَيْكَ أَوْ نَحْوَهُمَا، وَالاِسْتِغْفَارُ أَنْ تُشِيرَ بِأُصْبُعٍ وَاحِدَةٍ وَالاِبْتِهَالُ أَنْ تَمُدَّ يَدَيْكَ جَمِيعًا 

ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুমি উভয় হাতকে তোমার কাঁধ বরাবর বা অনুরূপ উঁচু করে দু‘আ করবে এবং ইস্তিগফারের সময় এক আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে এবং দু‘আতে কাকুতি মিনতির সময় দু’ হাত প্রসারিত করবে।
(আবু দাউদ ১৪৮৯)

★দু’হাত তুলে দোয়া করা: বিনয়, নম্রতা ও দাসত্ব প্রকাশ করার জন্য দোয়ার সময় দু’হাতের তালু আসমানের দিকে রাখতে হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ حَفْصِ بْنِ هَاشِمِ بْنِ عُتْبَةَ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم كَانَ إِذَا دَعَا فَرَفَعَ يَدَيْهِ مَسَحَ وَجْهَهُ بِيَدَيْهِ .

আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আর সময় দু’ হাত উপরে উঠাতেন এবং দু’ হাত দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডল মুছতেন।
(আবু দাউদ ১৪৯২)

★হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাওয়া। অতঃপর দু‘আ শেষে হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَيْمَنَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَعْقُوبَ بْنِ إِسْحَاقَ، عَمَّنْ حَدَّثَهُ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ الْقُرَظِيِّ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لَا تَسْتُرُوا الْجُدُرَ، مَنْ نَظَرَ فِي كِتَابِ أَخِيهِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ فَإِنَّمَا يَنْظُرُ فِي النَّارِ، سَلُوا اللهَ بِبُطُونِ أَكُفِّكُمْ وَلَا تَسْأَلُوهُ بِظُهُورِهَا، فَإِذَا فَرَغْتُمْ فَامْسَحُوا بِهَا وُجُوهَكُمْ "
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরের দেয়ালগুলো পর্দায় আবৃত করো না। যে ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে তার ভাইয়ের চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাকালো। তোমরা হাতের পৃষ্ঠের দ্বারা নয় বরং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইবে। অতঃপর দু‘আ শেষে তোমাদের হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে।
(আবু দাউদ ১৪৮৫.বায়হাক্বী ‘সুনান’ (২/২১২), হাকিম (৪/২৭০)।)

★আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা : আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা। আল্লাহর প্রশংসা যেমন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’ দোয়ার শুরুতে বলা। এছাড়া ইসমে আজমের সহিত দোয়া করা উত্তম। 

ইসমে আজম সম্পর্কে  তিরমিজি, আবু দাউদ শরীফের একটি হাদীসে এসেছেঃ  
হযরত বুরাইদা রাযি থেকে বর্ণিত
وَعَنْ بُرَيْدَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ -: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ، الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ فَقَالَ: " دَعَا اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ» " رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ، وَأَبُو دَاوُدَ.

রাসূলুল্লাহ সাঃ এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، الْأَحَدُ، الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ، وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد
তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, ঐ ব্যক্তি ইসমে আ'জম দ্বারা ডাকছে।যে নাম দ্বারা ডাকলে,দেয়া হবে,এবং দু'আ করলে জবাব দেয়া হবে।(মিরকাত-২২৮৯)

এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ  

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
বিষয়টিকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। আপনি জান্নাত হারিয়ে ফেলবেন না ইনশাআল্লাহ। 

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার প্রতি পরামর্শ থাকবে আপনি কোনভাবেই হীনমন্যতায় না ভুগে উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করে যাবেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনার দোয়া কবুল করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...