বিসমিহি তা'আলা
করোনা ভাইরাসে জুম্মার নামায।
করোনা ভাইরাসের দরুণ বিশ্বে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে,যার দরুণ বিভিন্ন দেশ বা শহরকে লকডাউন করা হয়েছে।এমন পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রেখে মসজিদ এবং মসজিদ ব্যতীত অন্যান্য স্থানে জুম্মার নামায আদায় সম্পর্কে বিজ্ঞজন নিম্নোক্ত ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ করে থাকেন ।
(ক)
যে সমস্ত শহর,শহরতলি এবং গ্রামে জুম্মা আদায়ের শর্ত বিদ্যমান।যার দরুণ সে সকল স্থানে এতদিন যাবৎ জুম্মা চলে আসতেছে।সেই সমস্ত এলাকার মসজিদ সমূহে সরকার নির্ধারিত সংখ্যা নিয়ে জুম্মা আদায় করা যাবে,জায়েয রয়েছে।।তবে শর্ত হল,ইমাম ব্যতীত সংখ্যা তিনের কম না হওয়া।
যদি কোনো শহর বা শহরতলী কিংবা গ্রামের কিছু সংখ্যক মসজিদে শর্ত বিদ্যমান থাকায় ইতিপূর্বে জুম্মা হয়ে আসছিলো আর কিছু সংখ্যকে জুম্মা আদায় না হতো, তাহলে বর্তমান পরিস্থিতে জুম্মা আদায় না হওয়া সেইসব মসজিদ সমূহে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চার/পাঁচ জন মিলে জুম্মার নামায আদায় করা যাবে।যাতে করে এখানেও কিছু সংখ্যক জুম্মার নামায পড়তে পারেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মসজিদ সমূহে যে পাঁচ-ছয় জনের অধিক সংখ্যক লোককে মসজিদে আসতে বারণ করা হচ্ছে,এটা মূলত জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।এমন বিধিনিষেধ জুম্মা শর্ত সমূহের একটি শর্ত 'ইযনে আম' তথা (সাধারণ অনুমতি) এর সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা এই বিধিনিষেধ জনগণকে জুম্মা থেকে বিরত রাখতে নয়,বরং অদ্ভুত পরিস্থিতে জনস্বার্থের নিমিত্তেই প্রণিত।
সুতরা তা জুম্মার বিশুদ্ধতাকে প্রশ্নবোধক করবে না?
যেমন বর্ণিত রয়েছে,
اما اذا كان لمنع عدو يخشى دخوله وهو في الصلاة فالظاهر وجوب الغلق اه حلبى
( حاشية الطحطاوى على الدر،- ١ ; ٣٤٤ط مكتبة الاتحاد ،ديوبند )
قوله " لم ينعقد " يحمل على ما اذا منع الناس لا ما اذا كان لمنع عدو او لقديم عادة ، و قد مر (المصدر السابق )
তাছাড়া ইমদাদুল ফাতাওয়া(১/৬১৪-যাকারিয়া) এ বর্ণিত রয়েছে,
ইযনে আম তথা সাধারণ অনুমতি এর অর্থ এমনিতেই কোনো কারণ ব্যতীত মুসাল্লি কে নামায পড়তে বাধা প্রদাণ করা।কিন্তু যদি বাধা প্রদাণ কোনো জরুরতের বিত্তিতে হয়ে থাকে তাহলে অবশ্য সেটা ইযনে আম এর সাথে সাংঘর্ষিক হবে না।
ইমদাদুল আহকাম(১/৭৫১-করাছি)এ বর্ণিত রয়েছে, ছাউনি বা প্রসাদ কিংবা দুর্গে যদি জুম্মার নামায পড়া হয় তাহলে সেটা জায়েয আছে।যদিও উক্ত ছাউনি,দুর্গে বা প্রসাদে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। তারপরও উক্ত স্থান সমূহে জুম্মার নামায বিশুদ্ধ হবে।কেননা এখানে উদ্দেশ্য নামায থেকে বাধা প্রদাণ নয়।বরং উদ্দেশ্য হলো, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাকে বাস্তবায়ন করা।
(খ)
মহল্লার যে সমস্ত লোকজন মসজিদে জুম্মা পড়তে পারেন নাই, তারা নিজ বাসার বৈঠকখানা বা বাসার বাহিরের কোনো রুমে চার বা পাঁচ জন মিলে জুম্মার নামায আদায় করবেন।
যদি এর অধিক জমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সবাইকে সাথে নিয়ে জুম্মা আদায় করা হবে।
যদি সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে এই চার-পাঁচ জন মিলে জুম্মার নামায আদায় করবেন।
(গ)
যারা নিজ বাসা বাড়িতে চার-পাঁচ জন মিলে জুম্মা পড়তে পারেনন নাই তারা জুম্মার স্থলে যোহরের নামায পড়বেন।
তবে যেহরের নামায পড়ার ক্ষেত্রে ব্যখ্যা হলো-
(ঘ)
যে সমস্ত স্থানে জুম্মার শর্ত সমূহ বিদ্যমান থাকার কারণে অতীত থেকে জুম্মার নামায হয়ে আসছে, তারা যদি বর্তমানে জুম্মার নামায পড়তে না পারেন।তাহলে যোহরের নামাযকে পৃখক পৃথক ভাবে আদায় করে নেবেন।
আর যে সমস্ত এলাকায় জুম্মার শর্ত সমূহ অনুপস্থিত থাকায় অতীত থেকে জুম্মার নামায প্রচলিত নয়,সে সকল স্থানে বর্তমানে জুম্মার স্থলে যোহরের নামায জামাতের সাথে পড়া যাবে।
ومن لا تجب عليهم الجمعة من اهل القرى والبوادي لهم ان يصلوا الظهر بجماعة يوم الجمعة بأذان و إقامة (الفتاوى الخانية على هامش الهندية ،كتاب الصلاة ،باب صلاة الجمعة ،١: ١٧٧ ،ط المطبعة الكبرى الأميرية ،بولاق،مصر)
(واما في مصر ) اما في حق اهل السواد فغير مكروه ،لأنه لا جمعة عليهم ،(حاشية الطحطاوي على الدر ،١: ٣٤٦ مكتبة الاتحاد ،ديوبند)
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, Iom.
পরিচালক
ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ