আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী পর্দা করেন না। তিনি বাড়ি এবং বাড়ির বাইরে ওড়না ছাড়াই চলাফেরা করেন, এবং ওড়না থাকলেও সেটা নামেমাত্র গলার সাথে ঝুলিয়ে রাখেন। আমরা একই বাড়িতে থাকি। তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার দিকে মাঝে মাঝে চোখ পড়েই যায়। আমার ভাই তাকে মনের ভুলেও পর্দা করার কথা বলেন না। তিমি নিজেই সতর (উপরে নিচে দুইদিকেই) অনাবৃত রেখে বাড়ি এবং বাড়ির বাইরে চলাফেরা করেন। সেদিন তো একটা জাঙ্গিয়ার মতো পোশাক পরে বাড়ি এবং বাড়ির বাইরে ঘুরে এলেন। তার আর তার স্ত্রীর জন্য চোখ তুলে কোনোদিকে তাকানো যায় না। এ নিয়ে আমি আমার আব্বু আম্মু এবং ভাইকে অনেকভাবে বুঝিয়েছি, আব্বু আম্মু নিজেদের অপারগতা প্রকাশ করেন (যা একদম মিথ্যা) আর ভাইয়া তো বরং নিজের স্ত্রীকে সাজিয়ে গুছিয়ে অন্যকে দেখাতে পারলে গর্ববোধ করেন। তো গতকাল কথাপ্রসঙ্গে আমি খুব রাগান্বিত হয়ে ভাইয়াকে বলেছে, "তুমি নিজেও নগ্ন থাকো, তোমার বউকেও নগ্ন রাখো (অথবা তোমার বউও নগ্ন থাকে, ঠিক স্মরণ নেই) আর সবকিছু নগ্ন রাখতে চাও। পারলে তুমি আইন পাশ করতা যে সবাইকে সবসময় নগ্ন থাকতে হবে।" পাশের রুমে বসে তার স্ত্রীও আমি যা বলেছি তা শুনেছেন। এজন্য কি আমাকে ভাইয়া ও তার স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে? ক্ষমা না চাইলে কি আমি গুনাহগার হবো?

একটি সম্পূরক প্রশ্ন, সুন্নাহর আলোকে ভাইয়ার সাথে কি আমার আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা উচিৎ হবে? না কি আমি তার সাথে শুধু ইনসাফ, ইহসান আর দাওয়াতী সম্পর্ক রাখবো?

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/6996/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  
দাইয়ুস সে ব্যক্তিকেই বলা হয়, যে তার পরিবার পরিজনকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করেন না।
অর্থাৎ-যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেপর্দা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকেও দাইউস বলা হয়। 

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে, “আল্লাহ তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম করেছেন। মাদকাসক্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য এবং দাইউস, যে তার পরিবারের মধ্যে ব্যভিচারকে প্রশ্রয় দেয়”[ মুসনাদে আহমাদ: ২/৬৯ ]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন : 
‘দাইউস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)! দাইউস কে? উত্তরে রাসুলূল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পরিবারে আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোন তৎপরতা অবলম্বন করে না বরং উপেক্ষা করে চলে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ‘দাইউস হল সে, যে তার পরিবারে বেহায়পনার বাস্তবায়নে সন্তষ্ট ও পরিতুষ্ট।’ (মুসনাদে আহমদ)

কোরআনে আল্লাহ বলেন, 
“তোমরা নিজেরা জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা কর এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর; যার উপর নিয়োজিত রয়েছেন কঠোর হৃদয় সম্পন্ন ফিরিশতাগণ, তারা আল্লাহ যা নির্দেশ করেন তা বাস্তবায়নে অবাধ্য হোন না, আর তাদের যা নির্দেশ প্রদান করা হয়, তা-ই তামিল করে’’।( সূরা আত-তাহরীম: ৬)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,

“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক কথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে”।[ বুখারী : ৭১৩৮; মুসলিম: ১৭০৫ ]

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻭَﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺒﺮِّ ﻭَﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯ ﻭَﻻَ ﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻹِﺛْﻢِ ﻭَﺍﻟْﻌُﺪْﻭَﺍﻥِ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍْ ﺍﻟﻠّﻪَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﺍﻟْﻌِﻘَﺎﺏ

ِতরজমাঃ সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। সূরা মায়েদা-২

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَجَاءٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، ح وَعَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ أَخْرَجَ مَرْوَانُ الْمِنْبَرَ فِي يَوْمِ عِيدٍ فَبَدَأَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا مَرْوَانُ خَالَفْتَ السُّنَّةَ أَخْرَجْتَ الْمِنْبَرَ فِي يَوْمِ عِيدٍ وَلَمْ يَكُنْ يُخْرَجُ فِيهِ وَبَدَأْتَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلَاةِ . فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ مَنْ هَذَا قَالُوا فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ . فَقَالَ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ رَأَى مُنْكَرًا فَاسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ "
.
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘ঈদের দিন মারওয়ান ঈদের মাঠে মিম্বার স্থাপন করে সলাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করায় জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেন, হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাত বিরোধী কাজ করলে। তুমি ‘ঈদের দিন বাইরে মিম্বার এনেছো এবং সলাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করেছো। অথচ ইতিপূর্বে (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খুলাফায়ি রাশিদীনের যুগে) কখনো এমনটি করা হয়নি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কে? লোকজন বললো, অমুকের পুত্র অমুক। তিনি বললেন, সে তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোন গর্হিত (শারী‘আত বিরোধী) কাজ সংঘটিত হতে দেখলে তাকে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। এরূপ করতে অক্ষম হলে তা কথার দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি এতেও অক্ষম হয় তাহলে সে তা অন্তরে ঘৃণা করবে (বা তা দূর করার উপায় অন্বেষনে চিন্তা-ভাবনা করবে)। তবে এটি হচ্ছে দুর্বলতম ঈমানের পরিচায়ক।
(মুসলিম , ইবনু মাজাহ  হাঃ ১২৭৫,  হাঃ ৪০১৩), আহমাদ (৩/১০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি আপনার ভাইকে যাহা বলেছেন,তাহা বলা জরুরী ছিলো।
আপনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, এটা ঈমানের দাবী।

এক্ষেত্রে আপনার কোনো গুনাহ হবেনা,কাহারো কাছে ক্ষমা চাইতে হবেনা।

বরং ঈমানের দাবী অনুযায়ী প্রতিবাদ করায় আপনি মহান আল্লাহর কাছে প্রশংসিত হবেন।

আপনার দাওয়াত তিনি না মানলে এবং তার স্ত্রীকে আগের মতোই চলতে দিলে সেক্ষেত্রে আপনি ভাইয়ার সাথে আপাতত শুধু ইনসাফ, ইহসান আর দাওয়াতী সম্পর্ক রাখবেন।
তবে কোনোক্রমেই কথা বলা বন্ধ করে দিবেননা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...