আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
21 views
in পবিত্রতা (Purity) by (3 points)
১০ দিন নিয়তে ইত্তেকাফে বসার পরে মাঝখানে হায়েজ শুরু হয়ে কিছু দিন চলে আবার রমজান মাসেই ভালো হয়ে যায় এক্ষেত্রে ভালো হওয়ার সাথে সাথে বাকি দিন গুলোতে কি আবার বসে যেতে হবে? নাকি অন্য সময় একসাথে কাজা করে নিতে হবে?
★★ আমি ১০ দিনের জন্য নিয়ত করে ভুলে একদিন আগে থেকেই বসে যাই অর্থাৎ ১৯ তম রোজার আসরের পর থেকে, জানতে পারার পরেও আমি ইত্তেকাফ ছেড়ে উঠে যাই নি, এমন অবস্থায় একজন আলেমকে জিগ্যেস করলে তিনি বলেন  ১ দিন বেশি হলে হোক ১০ দিন তো পুরা হয়ে যাবে, ১১ দিন রেখে দিলে অসুবিধা নাই। কিন্তু সেই রাত ইত্তেকাফে থাকার পরের দিনি মানে ২০ তম রোজায় বেলা ১২ টায় আমার হায়েজ শুরু হয়ে যায়, এবং রমজান মাসেই ভালো হয়ে যায়, এখন কাজা কিভাবে করবো

1 Answer

0 votes
by (70,170 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

 

জবাবঃ-

হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺯَﻭْﺝِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻌْﺘَﻜِﻒُ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮَ ﺍﻷَﻭَﺍﺧِﺮَ ﻣِﻦْ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﻮَﻓَّﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ، ﺛُﻢَّ ﺍﻋْﺘَﻜَﻒَ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻪُ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ

রাসূলুল্লাহ সাঃ ইহকাল ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত রমজানের শেষ দশে এ'তেক্বাফ করতেন।অতঃপর উনার বিবিগণ এ'তেক্বাফ করেন। (সহীহ বোখারী-২০২৬,সহীহ মুসলিম-১১৭২)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে-

وَالْمَرْأَةُ تَعْتَكِفُ فِي مَسْجِدِ بَيْتِهَا إذَا اعْتَكَفَتْ فِي مَسْجِدِ بَيْتِهَا فَتِلْكَ الْبُقْعَةُ فِي حَقِّهَا كَمَسْجِدِ الْجَمَاعَةِ فِي حَقِّ الرَّجُلِ لَا تَخْرُجُ مِنْهُ إلَّا لِحَاجَةِ الْإِنْسَانِ كَذَا فِي شَرْحِ الْمَبْسُوطِ لِلْإِمَامِ السَّرَخْسِي

মহিলা চাইলে রমজানের শেষ দশে এ'তেকাফে বসতে পারবে।যখন সে তার ঘরের মসজিদে এ'তেকাফে বসে যাবে,তখন এই জায়গা তার জন্য মসজিদের সমতুল্য হয়ে যাবে,যেভাবে পুরুষদের জন্য জামে মসজিদ রয়েছে।সে প্রাকৃতিক প্রয়োজন ব্যতীত ঐ জায়গা থেকে আর বের হতে পারবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২১১)

وَلَيْسَ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تَعْتَكِفَ فِي غَيْرِ مَوْضِعِ صَلاَتِهَا مِنْ بَيْتِهَا.

وَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهَا فِي الْبَيْتِ مَكَانٌ مُتَّخَذٌ لِلصَّلاَةِ لاَ يَجُوزُ لَهَا الاِعْتِكَافُ فِي بَيْتِهَا، وَلَيْسَ لَهَا أَنْ تَخْرُجَ مِنْ بَيْتِهَا الَّذِي اعْتَكَفَتْ فِيهِ اعْتِكَافًا وَاجِبًا عَلَيْهَا

ঘরের মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে এ'তেক্বাফ করা নারীদের জন্য জায়েয নয়।যদি ঘরে নামায পড়ার মত কোনো কামরা বা পরিবেশ না থাকে,তাহলে এ'তেক্বাফ করা নারীদের জন্য বৈধ হবে না।নারী যে ঘরে এ'তেক্বাফ শুরু করবে,সেই ঘর থেকে সে বের হতে পারবেন না।(মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ-৫/২১২)

وليس لها أن تعتكف في غير موضع صلاتها من بيتها وإن لم يكن فيه مسجد لا يجوز لها الاعتكاف فيه ولا تخرج من بيتها إذا اعتكف فيه قال - رحمه الله - (ولا يخرج منه إلا لحاجة شرعية كالجمعة أو طبيعية كالبول والغائط) لما روينا من الأثر عن عائشة - رضي الله عنها - ولما روي عنها أنها قالت «كان النبي - صلى الله عليه وسلم - لا يدخل البيت إلا لحاجة الإنسان إذا كان معتكفا» متفق عليه تريد البول والغائط هكذا فسره الزهري

ঘরের মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র এ'তেক্বাফ করা নারীদের জন্য জায়েয নয়।যদি ঘরে কোনো মসজিদ না থাকে তথা নামাযের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকে।তাহলে উক্ত ঘরে এ'তেক্বাফ করা জায়েয  হবে না। যখন মহিলা কোনো কামরায় এ'তেকাফ শুরু করে দিবে তখন সে মহিলা আর ঐ কামরা থেকে বাহিরে যেতে পারবে না।তবে শরয়ী প্রয়োজনে যেমনঃ জুম্মার সালাত(এটা তখনকার বিধান যখন ফিৎনা ছিলনা), এবং প্রকৃতিগত প্রয়োজন যেমন প্রস্রাব পায়খানা ইত্যাদির জন্য ঐ কামরা থেকে বাহিরে যাওয়া যাবে।

যেমন হয়রত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃ এ'তেক্বাফ অবস্থায় জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে ঘরে আসতেন না।জরুরী প্রয়োজন বলতে প্রস্রাব-পায়খানা উদ্দেশ্য। (তাবয়ীনুল হাক্বাঈক্ব-১/৩৫০)

وأما الصمت فالمراد به صمت يعتقده عبادة وهو منهي عنه وعن علي عن النبي - صلى الله عليه وسلم - أنه قال «لا يتم بعد احتلام ولا صمات يوم إلى الليل» رواه أبو داود وهو صوم أهل الكتاب فنسخ ويلازم قراءة القرآن والحديث والعلم والتدريس وسير النبي - صلى الله عليه وسلم - وقصص الأنبياء - عليهم الصلاة والسلام - وحكايات الصالحين وكتابة أمور الدين وأما التكلم بغير الخير فإنه يكره لغير المعتكف فما ظنك بالمعتكف

'তেক্বাফ অবস্থায় চুপ থাকা মানে এমন চুপ নয় যা নিষিদ্ধ। যেমন হযরত আলী রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে।তিরি বলেন,বালিগ হওয়ার পর কেউ ইয়াতিম থাকেনা।এবং পূর্ণ একদিন চুপ থাকার কোনো নিয়মও ইসলামে নেই।(সুনানু আবি-দাউদ)পূর্ণ একদিন চুপ থেকে রোযা রাখা মূলত আহলে কিতাবদের নিয়ম।এটা আমাদের জন্য মানসূখ হয়ে গেছে।

'তেক্বাফকারী ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত,হাদীস পাঠ,জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া, এবং নবীজী সাঃ এর জীবনী, আম্বিয়ায়ে কেরামদের ঘটনাবলি, হেকায়াতে ছাহাবা ও হেকায়তে সালেহীন সহ বিভিন্ন দ্বীনী বই কিতাব এ'তেক্বাফে বসে অধ্যায়ন করা হবে। অযথা বেহুদা বকওয়াস সবার জনই মাকরুহ।সুতরাং বেহুদা কথাবার্তা এ'তেক্বাফ কারীর জন্য উত্তমরূপে মাকরুহ হবে।(তাবয়ীনুল হাক্বাঈক্ব-১/৩৫১)

قَالَ قَاضِي خَانْ فِي فَصْلِ الْمَسْجِدِ وَيُكْرَهُ أَنْ يَخِيطَ فِي الْمَسْجِدِ لِأَنَّ الْمَسْجِدَ أُعِدَّ لِلْعِبَادَةِ دُونَ الِاكْتِسَاب وَكَذَا الْوَرَّاقُ وَالْفَقِيهُ إذَا كَتَبَ بِأَجْرٍ أَوْ الْمُعَلِّمُ إذَا عَلَّمَ الصِّبْيَانَ بِأَجْرٍ وَإِنْ فَعَلُوا بِغَيْرِ أَجْرٍ فَلَا بَأْسَ بِهِ وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سَلَمَةَ إذَا قَعَدَ الرَّجُلُ فِي الْمَسْجِدِ خَيَّاطًا يَخِيطُ فِيهِ وَيَحْفَظُ الْمَسْجِدَ عَنْ الصِّبْيَانِ وَالدَّوَابِّ لَا بَأْسَ بِهِ. اهـ.

কাযীখান রাহ মসজিদের ফযিলত সম্পর্কে বলেন,মসজিদে সিলাই কাজ করা মাকরুহ।কেননা মসজিদকে কাজের জন্য বানানো হয়নি।বরং ইবাদতের জন্য বানানো হয়েছে।যদি হস্তলিপি লিখক বা কোনো ফকিহ মসজিদে বসে বিনা পারিশ্রমিকে মুসহাফ লিখেন বা শিক্ষাপ্রদান করেন তাহলে জায়েয,নতুবা সেটা মাকরুহ হবে।(হাশিয়াতুশ শিলবি-তাবয়ীনুল হাক্বাঈক্ব-১/৩৫২)

আল্লামা কা'সানি রাহ বলেন,

وَلَوْ حَاضَتْ الْمَرْأَةُ فِي حَالِ الِاعْتِكَافِ فَسَدَ اعْتِكَافِهَا

যদি এ'তেকাফ অবস্থায় মহিলার হায়েয চলে আসে তাহলে তার এ'তেকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। (বাদায়ে সানায়ে-২/১১৬)

রমজানের শেষ দশে মহিলাদের জন্য এ''তেকাফ করা মুস্তাহাব। (কিতাবুল-ফাতাওয়া-৩/৪৫৯)

নারীদের ইতিকাফে বসার আগেই তাদের ঋতুস্রাবের দিন-তারিখ হিসাব করে বসা উচিত, যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে না যায়। ইতিকাফ শুরু করার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। পরে শুধু এক দিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। এই এক দিন কাজা করার নিয়ম হলো-রমজান মাসের পর কোনো একদিন সূর্যাস্তের আগে ইতিকাফ শুরু করতে হবে এবং পরের দিন রোজা থাকতে হবে। সেদিন সূর্যাস্তের পর ইতিকাফ শেষ হবে।

এভাবে একদিন রোজাসহ ইতিকাফ করলেই কাজা আদায় হয়ে যাবে। পুরো দশ দিনের ইতিকাফ কাজা করতে হবে না। তবে কারও রমজানের শেষ দশকে ঋতুস্রাব হওয়ার নিয়ম থাকলে তিনি ঋতুস্রাব শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতে পারবেন। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৭; বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭৪; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫০২)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার উপরে ইতিকাফের কাযা করা আবশ্যক নয়। কারণ, ২০তম রোজার দিন আপনার ইতিকাফ নফল ছিল। নফল ইতিকাফ ভেঙ্গে গেলে কাযা করা আবশ্যক নয়। তবে ঐ দিন সন্ধ্যার পরে হায়েয শুরু হলে কাযা করতে হতো। উপরে বিস্তারিত বলা হয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...