জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআনে বলা হয়েছে,
قال اللّٰہ تعالیٰ: {وَاِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوْا لَہُ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّکُمْ تُرْحَمُوْنَ} [الأعراف: ۲۰۴]
"যখন কোরআন পাঠ করা হয় তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো, এতে তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে"।
,
অর্থাৎ কোরআন কারো সামনে পাঠ করা হলে বা কোরআন পাঠের আওয়াজ কারো কানে পৌছলে তার জন্য কোরআন তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর নির্দেশ পালন করা ফরয। অর্থাৎ কেউ যদি কোরআন তেলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ না করে তবে সে ফরয ছেড়ে দিল যা শক্ত গোনাহ ।
কোরআনের যে আয়াত স্পষ্টভাবে কোনো কিছুর নির্দেশ দেয় তা ব্যাখ্যার দাবি রাখেনা।
,
এর লঙ্ঘন করলে পরিণামে কী হবেঃ
১) মাইকে এই তেলাওয়াতের আওয়াজ অনেক দূর থেকে শোনা যায় বলে দুনিয়াবী অনেক ধরণের ব্যস্থতার কারণে প্রায় সব মানুষই এই কোরআন তেলাওয়াত শ্রবণে মনোযোগ দিতে পারেনা। এরা না শোনার কারনে গুনাহগার হবে। তেলাওয়াত কারী অনেক মানুষকে গুনাহগার বানালেন। এর দায়ভার সম্পূর্ণরুপে তেলাওয়াত কারীর।
২) প্রশ্রাব-পায়খানার জায়গায় কোরআন তেলাওয়াত করা এবং শ্রবণ করা দুইটাই হারাম। মাইকের আওয়াজতো ওখানেও যায়। অতএব, এখানে তেলাওয়াত কারী মানুষকে গুনাহ করতে বাধ্য করছেন।
৩) এতে মানুষ বিরক্ত হলে কোরআনের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ণ হলো, এর পেছনে তেলাওয়াত কারীই দায়ী।
,
★দ্বিতীয়তঃ একে যদি আমরা নাগরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি তবে মাইক যোগে কোরআন খতম করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
কারণ,
১) আশে পাশে অনেক রুগী থাকতে পারে যাদের ভীষণ কষ্ট হবে মাইকের আওয়াজে।
২) আশ-পাশের বাড়ির মানুষের ঘুমের বা স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটবে।
৩) জোর করে মানুষের উপর ধর্মীয় একটা কাজ চাপিয়ে দেয়া হলো আর এই রকম চাপিয়ে দেয়াটা ইসলাম সমর্থন করেনা।
৪) আশ-পাশে অনেক শিক্ষার্থী-পরীক্ষার্থী থাকে যাদের পড়া-শোনায় ভীষণ ব্যাঘাত ঘটে।
,
হাদীস শরীফে এসেছে
عن الحسن أن النبي صلی اللّٰہ علیہ وسلم کان یکرہ الصوت عند ثلاث عند الجنازۃ، وإذا التقی الزحفان، وعند قراء ۃ القرآن۔ (المصنف لابن أبي شیبۃ ۷؍۲۰۲ رقم: ۱۱۳۱۶)
রাসুল সাঃ উচ্চ আওয়াজ করা ০৩ জায়গায় নিষেধ করেছেন,জানাযা নামাজের সময়,স্ত্রীর সাথে সহবাস করার সময়,কুরআন তেলাওয়াত করার সময়।
وکذا قولہم بکفرہ، إذا قرأ القرآن في معرض کلام الناس، کما إذا اجتمعوا فقرأ فجمعناہم جمعًا، ولہ نظائر کثیرۃٌ في ألفاظ التکفیر کلہا ترجع إلی قصد الاستخفاف، بہ قال قاضیخان الفقاعی إذا قال عند فتح الفقاع للمشتري صل علی محمد ، قالوا: یکون آثمًا۔ (الأشباہ والنظائر ۱۰۴ زکریا)
যার সারমর্ম হলো কুরআনের অসম্মান হয়,অবমাননা হয়,এহেন জায়গায় কুরআন তেলাওয়াত করা গুনাহ।
আরো জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
রোযার সময় যে কাফেলা করা হয়,এই কাফেলার অর্থ হলোঃ-
রমজানে রোজাদারদের ডেকে তোলার কাফেলার হাঁকডাক ও গজলের প্রথা
একসময় এই দুটির প্রচলন অনেক ছিলো।
রমজান মাসের মধ্যরাত হতে দূর থেকে মাইকে বেজে উঠতো ‘উঠুন, উঠুন। সময় হয়েছে সেহরির। তাড়াতাড়ি উঠুন, সেহরি খান, রোজা রাখুন। ‘সেহরির সময় হয়ে গেছে, আপনারা উঠুন, আপনারা উঠুন।’
পবিত্র রমজান মাসে সেহরির ঘণ্টাখানেক আগে রিকশা কিংবা ভ্যানে মাইক লাগিয়ে অথবা হাতে টিনের চোঙা নিয়ে এভাবে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে সেহরির সময় হয়ে গেছে বলে সেহরির জন্য ডাক দিতো কয়েকজন যুবকের কাফেলার দল।
সঙ্গে সুললিত কণ্ঠে চলতো হামদ, নাত, গজলের সুর। গলায় সুর তুলে হাঁক দিয়ে এভাবেই হেঁটে যেতো রমজানে রাত জাগানিয়ার দলের সেই কাফেলাটি।
মাথায় টুপি, ওড়না আর হাতে থলে নিয়ে শিশুরাও পাড়ায় পাড়ায় দল বেঁধে রমজানের উপর গজল পাঠ করতো। মানুষজন তাদের বকশিশ ও চাল, আটা দিতেন।
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শরীয়তের বিধান হলো মাইকে/লাউডস্পিকারে এভাবে সেহরীতে মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্য গজল,বারবার ডাকাডাকি, কাওয়ালি বা বক্তৃতা ইত্যাদির ক্যাসেট বাজানো নিষিদ্ধ, যা মানুষকে জাগিয়ে তোলে।
এটি বন্ধ করা আবশ্যক এবং বাধ্যতামূলক।
তবে, যদি পবিত্র মাসে, উদাহরণস্বরূপ, সেহরি খাওয়ার এক ঘন্টা আগে এবং একইভাবে, সেহরির টাইম শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে, সময়টি কেবল একবার ঘোষণা করা হয়, যাতে যারা সেহরি খায় এবং যারা এটি প্রস্তুত করে তাদের জন্য এটি সুবিধাজনক হয়,তাহলে এটি জায়েজ।
যদি এ ঘোষণাও নামাজী বা মা'যুর ব্যক্তিদের অসুবিধার কারণ হয়, তবে তা করা উচিত নয়।
প্রতি দশ মিনিটের ব্যবধানে সময় বলে দেয়াটাও জায়েজ নেই।