ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মদিনার জীবনে নিয়মিত প্রতি
রমজানে ইতিকাফ করতেন। এক রমজানে কোনো কারণে ইতিকাফ ছুটে গেলে পরবর্তী রমজানে ২০ দিন
ইতিকাফ করে তা পূরণ করে নিয়েছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৬৩)
ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির নিয়তে যে ব্যক্তি মাত্র একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ
তায়ালা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি পরিখার সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। প্রতিটি
পরিখার দূরত্ব হবে আসমান-জমিনের মধবর্তী দূরত্বের সমান।’
রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া।
অর্থাৎ মহল্লার মসজিদে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি ইতিকাফ করে তাহলে পুরো মহল্লাবাসী
দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর নারীদের জন্য ইতিকাফ করা মুস্তাহাব।
মহিলাদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল; মসজিদ নয়। তারা ঘরে নামাজ
পড়েও পুরুষদের মসজিদে নামাজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হন বলে সহিহ হাদিস দ্বারা
প্রমাণিত। যেন নারী বেশি সওয়াব হাসিল করার আশায় মসজিদে আসার জন্য উদগ্রীব না হয়।
এ অর্থে নারীদের ঘর মসজিদের সদৃশ বলে পরিগণিত। তাই নারী ঘরে তাদের নামাজ
আদায়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান
নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নিবেন। এরপর সেখানে
ইতিকাফ করবেন। (উমদাতুল ক্বারী ১১/১৪৮; মিরকাতুল
মাফাতীহ ৪/১৪৪৬; হেদায়া ১/২৩০; মাবসূতে সারাখসী ৩/১১৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/১১৩; ফাতাওয়া
আলমগীরী ১/২১১; আওজাযুল মাসালিক ৫/৪৬১-৪৬৬; ফাতাওয়া দারুল উলূম যাকারিয়া ৪/৬৯৯)
নারীরা তাদের ইতিকাফের স্থান পর্দা দিয়ে ঢেকে নিবেন। যেন ঘরে কোনো বেগানা
পুরুষ লোক আসলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে না হয়।
বিবাহিত নারী ইতিকাফ করতে চাইলে স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি
ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। আর স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত ও গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের
ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ করে দেওয়া। এতে উভয়ই সওয়াব পাবেন। (রদ্দুল
মুহতার ২/৪৪১; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)
স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা
দিলেও সে বাধা গ্রহণযোগ্য নয় এবং স্ত্রীর জন্য তা মানাও জরুরি নয়। (রদ্দুল মুহতার ২/৪৪১;
ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)
স্বামী ও সন্তানের দেখাশোনার প্রয়োজন হলে
যে নারীর স্বামী বৃদ্ধ বা অসুস্থ কিংবা তার ছোটছোট ছেলে-মেয়ে রয়েছে এবং
তাদের সেবা-শুশ্রূষা করার কেউ নেই, সে মহিলার জন্য ইতিকাফ করার চেয়ে তাদের সেবাযত্ন
করা উত্তম।
ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতিকাফ
মহিলাদের ঋতুস্রাব অবস্থায় ইতিকাফ করা সহিহ নয়। কেননা এ অবস্থায় রোজা রাখা
যায় না। আর সুন্নত ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪; ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১)
ইতিকাফ অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হলে
ইতিকাফ শুরু করার পর ঋতুস্রাব শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। পরে শুধু
একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৫০২)
ইতিকাফের স্থান থেকে বের হওয়া
মহিলারা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা তাদের ক্ষেত্রে
মসজিদের মতোই গণ্য হবে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না।
প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে ঘরের অন্যত্র গেলেও ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়া আলমগীরী ১/২১১; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৮২)
মাসয়ালা: প্রাকৃতিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, পেশাব-পায়খানা। সুতরাং ইতিকাফ
অবস্থায় মহিলারা পেশাব-পায়খানার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন। ওজুর জন্য
বাইরে যেতে পারবেন। আর যদি এসবের জন্য ইতিকাফ-কক্ষের ভিতরেই রুচিসম্মত সংযুক্ত বাথরুম
থাকে তাহলে এর জন্য বাইরে যেতে পারবেন না। (আংশিক সংগৃহীত)
আরো জানুন:
https://ifatwa.info/71419/
https://ifatwa.info/14359/
https://ifatwa.info/73275/