আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
55 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (8 points)
১.

আমাদের মসজিদে আমি একাই ইতেকাফ  বসব ইনশাআল্লাহ ,এখানে এক্সট্রা কোন দায়িত্ব আসবে কি না যেহেতু আমাদের এক মসজিদ থেকে একজনও যদি ইতেকাফ এ না বসে তাহলে গুনাহগার হবে অথবা একজন বসলেই সেটা ফরজ কেফায়া এর মত আদায় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ইতেকাফ অর্থবহ করতে কোন কোন দিক খেয়াল রাখতে হবে ?
২.

আমার কালো জাদু  এবং জাদু এর সমস্যা আছে যেহেতু মসজিদে একা থাকব আর কেউ নেই  বাসা থেকে মানা করা সত্ত্বেও একটা দায়িত্ব এর মত হয়ে গেছে যদি আমি না বসি তাহলে ফরজ কেফায়া আদায় হবে না এজন্য আমি  হেফাজতের জন্য এক্সট্রা কি কি আমল করতে পারি যাতে ভয় না পাই এবং নিজে সুরক্ষিত থাকতে পারি   ?

1 Answer

0 votes
by (70,170 points)
edited by

জবাবঃ

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করে প্রতিবছরই ইতিকাফ করতেন। ইমাম যুহরি বলেন, ‘ইতিকাফের মতন গুরুত্বপূর্ণ আমলকে লোকদের ছেড়ে দেয়া দেখলে আমি অবাক করি, অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) মাঝেমধ্যে অন্যান্য আমল বাদ দিলেও, মদিনায় হিজরতের পর আজীবন মসজিদে নববিতে ইতিকাফ করেন।’

সিরাতের কিতাবে পাওয়া যায় যেই বছর নবী (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় নেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেন। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর নবী (সা.) প্রত্যেক রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। সুতরাং যে বছর তার মৃত্যু হয়, সে বছর তিনি ২০দিন ইতিকাফ করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২০৪৪)

ইতিকাফে করণীয়

বেশ কিছু করণীয় আমল রয়েছে ইতিকাফে। আমল-ইবাদতে সময় কাটানো ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য। সে ক্ষেত্রে কিছু আমল ও ইবাদত অবশ্যই করা উচিত। তন্মধ্য থেকে কিছু আমল উল্লেখ করা হলো-

নিয়ত করা

নিয়ত ছাড়া কোনো আমলই শুদ্ধ হয় না। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। করলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে মনে মনে করা ভালো।

নিয়ত এভাবে করা যেতে পারে যে, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ১০দিন সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে/ নারী হলে কক্ষে অবস্থান করছি।’ অথবা যদি এমন নিয়ত না করেন তাহলে আবাসনের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে বা কক্ষে ইতিকাফ ব্যক্তির প্রবেশটাই নিয়তের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।

নফল নামাজ

 

যত পারা যায় নফল নামাজ পড়া। যেমন ইশরাক, চাশত, আওয়াবিন ও তালাতুত তাওবা ইত্যাদি। কারণ রমজানে এক একটি নফলের জন্যে তো এক একটি ফরজের সাওয়াব দেওয়া হয়। তাই তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এখনই তার সময়। সামনে কোথায় থাকি তার ঠিকঠিকানা নেই। মাটির উপরে, নাকি তার নীচে।

উমরি কাজা

ফরজ ও ওয়াজিব নামাজ যাদের অনেক কাযা রয়েছে, তারা সেইসব নামাজের কাজা আদায় করতে পারেন ইতিকাফে। এটি তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ।

কোরআন তেলাওয়াত

রমজান কোরআনের মাস। কোরআন তেলাওয়াত এই মাসের দাবি। প্রতিদিন ১ পারা ও ১০ পৃষ্ঠা। যারা কোরআনের হাফিজ, তারা এক খতম বা ১৫ পারা এভাবে আমল করতে পারেন। তবে যারা তেলাওয়াত করতে পারেন না, তারা অন্তত বিজ্ঞ কারো কাছে বসে পূর্ণমনোযোগিতার সঙ্গে কোরআন শ্রবণ করতে পারেন।

প্রতি অক্ষরে ১০ নেকি। আর রমজানে ৭০ গুণ নেকি! তাহলে অগণিত নেকির ভাগি হচ্ছেন ইতিকাফরত ব্যক্তি। শায়খ আবদুর রহিম রায়পুরি (রহ.) প্রায় পুরোরাত তিলাওয়াতে অতিবাহিত করতেন। এমনকি তিনি রামজানে ২৪ ঘণ্টায় ১ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতেন না। (আকাবির কা রমজান, পৃষ্ঠা : ২৯)

জিকির

যারা তেলাওয়াত পারেন না, শ্রবণের মতো তেমন কোনো ব্যক্তিও যদি পাওয়া না যায়, তা হলে শুধু কুরআন শরিফের প্রতি লাইনে লাইনে হাত বুলিয়ে যাবেন তিনি, আর পরিতাপের সাথে মনে মনে বলবেন ‘আমি কতইনা হতভাগা, আল্লাহ্, আমাকে মাফ করেন!’ আল্লাহ তাকে নেকি থেকে বঞ্চিত করবেন না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ আলিম সমাজ, ইনশাআল্লাহ।

দরুদ পাঠ

শুয়ে, হাটতে আর বসতে দরূদ পাঠ করতে পারি। প্রতিবার দরূদে পাঠকারীর নাম নবির রাওয়াতে পেশ করা হয়। আল্লাহর রহমত ১০গুণ করে তার জন্য হয় আর ফেরেশতারাও তার জন্য দোআ করেন। যে ব্যক্তি যতবেশি দরুদ পড়বে, সে ব্যক্তি ততবেশি হাশরের মাঠে [নবী (সা.)-এর] কাছে থাকবে। হাদিসে এমনটাই বলা হয়েছে।

অন্য স্থানে আছে যে ব্যক্তি ১০০বার দরূদ পড়বে তার দুইচোখের মাঝে লিখে দেওয়া হবে, সে জাহান্নাম ও মুনাফেকি থেকে মুক্ত! আপনি যেকোনো দরূদ পড়তে পারেন। ছোট আকারে ৩টি দরূদ বলছি

১) ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’

২) ‘আল্লাহুম্ম ছল্লি আ’লা মুহাম্মদিন’

৩) ‘জাযাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদিন’

লাইলাতুল কদর

শবে কদর বেজোড় (২১,২৩,২৫,২৭,২৯ তারিখ) রাতে তালাশ করা। পারলে এই রাতগুলোতে জেগে ইবাদত করা। হাদিসে এই রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করতে বলা হয়েছে। সহজে শবে কদর ও শবে বরাত ইত্যাদি বড় বড় রাতের ফজিলত যদি কেউ লাভ করতে চায় তাহলে অবশ্যই সেদিনের মাগরিব, এশা আর ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। অসুস্থ হলে ঘরে বা যেখানে থাকেন, এসব নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া সেখানে।

তালিম

ইতিকাফে ব্যক্তিদেত মধ্যে ভালো আলিম থাকলে হাদিসের তালিম করা যায়। যার সহজ মাধ্যম হল শায়খুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া (রহ.)-এর ‘ফাজায়েলে আ’মাল’ পাঠ। মুফতি আজম আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর ‘ফয়জুল কালাম’ও তালিমের তালিকায় রাখা যায়। তার সূচিপত্রটি বেশ উপকারী।

জীবন্তিকা জীবনী পাঠ

ওলি আল্লাহদের জীবনী পাঠ করা। তারা কীভাবে ইতিকাফে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করেছেন, কীভাবে দোআ আর মুনাজাত করেছেন আর কীভাবে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করেছেন এবং রাত জেগেছেন, তা ভালোভাবে শ্রবণ করে করে নিজের জীবনকে তাদের সঙ্গে মেলানো।

নামাজের প্রস্তুতি

আজানের অন্তত ১০মিনিট আগে পাক-পবিত্র হয়ে মসজিদে অবস্থান করা। নবাগত মুছল্লিদের যেন কোনো সমস্যা না হয়। যাতে ইতিকাফকারীর দিলও প্রশান্তি পায়। নামাজের অপেক্ষমাণ মুছল্লিদের জন্য ফিরিশতাগণ রহমতের ও মাগফিরাতের দোআ করেন এবং যদি নামাজের পর আরও বেশিক্ষণ থেকে আমলে মশগুল থাকেন নামাজি ব্যক্তি তাহলে ‘তার তাওবা যেন আল্লাহ পাক কবুল করেন’ সেই দোআও করেন ফিরিশতাগণ। ফিরিশতাদের দোআ আল্লাহ কবুল করেন।

তাহাজ্জুদ ও তাসবিহ

রহমতের আশা আর আযাবের ভয় নিয়ে তাহাজ্জুদ ও সালাতুত তাসবিহ আদায় করা। যত বেশি সম্ভব হয়। কারণ এসব নামাজ সবসময় পড়া হয় না ইতিকাফে এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া খুব দরকার। উক্ত দুই নামাজ আদায় করে বান্দা যা-ই চান, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাই দান করেন।

 

ঈদের রাত

ঈদের রাতে ইবাদত-বন্দেগির অনেক বেশি ফজিলত। হাদিসের কিতাবে উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির অন্তরকে আল্লাহ জীবিত রাখবেন (প্রশান্তি দান করবেন), যেদিন সমস্ত অন্তর মৃত্যুবরণ করবে। তাই ইতিকাফকারীদের কাছে অনুরোধ তারা যেন চাঁদ দেখার সাথে সাথে মসজিদ থেকে বের না হয়ে ঈদের দিন সকালে মসজিদ থেকে বের হন। যাতে করে ঈদের রাতের ফজিলত অর্জন করতে পারেন। আল্লাহ পাক সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। (সংগৃহীত)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. উপরে উল্লেখিত আমলগুলো করবেন ইনশাআল্লাহ।

২. রাতের বেলা আপনার সাথে ২/১জনকে থাকলে মুনাসিব হয়। নিজের হেফাজাতের জন্য লিংকে প্রদত্ত আমল করতে পারেন ইনশাআল্লাহ। https://ifatwa.info/77082/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...