আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
71 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

আমার মৃত বাবার একটি দোকান রয়েছে,যার ওয়ারিশ আমরা ৪ ভাই,১ বোন এবং আমাদের মা।দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়া দ্বারা আমার মা ই সাংসারিক খরচ করেন।আমরা এখনো সেই ভাড়া ভোগ করিনা।

উক্ত দোকানের ভাড়াটিয়া থেকে জামানত বা এডভান্স বাবদ ২৫ লাখ টাকা নিয়ে আমার বড় ভাই একা সম্পূর্ণ টাকা খরচ করে ফেলেন। দ্বিতীয় দফায় ভাড়াটিয়ার সাথে চুক্তির সময় আমরা বাকি ৩ ভাই আরো ১৫ লাখ টাকা জামানত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই এবং এই টাকা ৫ লাখ করে সমান ৩ ভাগে ভাগ হবে বলে সিদ্ধান্ত নেই।যেহেতু বড় ভাই আগে ভোগ করেছে,তাই তার অংশ নেই। মা এবং বোনের পক্ষে জামানত ফেরত দেওয়া সম্ভব হবেনা মনে করে তাদের ভাগ রাখা হয়না। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে পুরো ১৫ লাখ টাকা আমার মেঝো ভাইয়ের ব্যবসায় ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ করবো এবং প্রতি মাসে সে লাভ,ক্ষতি অনুযায়ী আমার সেঝো ভাই এবং আমাকে লাভ দিবে।

কিন্তু সে আমাদের সাথে যোগাযোগ না করায় এবং বিনিয়োগ  চুক্তিতে গড়িমসি করায় আমি আর আমার সেঝো ভাই সিদ্ধান্ত নেই যে তার ব্যবসায় বিনিয়োগ করবোনা,আমরা আমাদের ১০ লাখ টাকা দিয়ে আলাদা ব্যবসা করবো।কিন্তু মেঝো ভাই এতে রাজি হয়না,পুরো টাকাটাই সে চায়। আমাদের সাথে মনোমালিন্য করে,এবং আমাদের সাথে কোনো কথা বলা কিংবা চুক্তি ছাড়াই নিজের ৫ লাখ ও আমাদের ৫ লাখ মোট ১০ লাখ টাকা নিজের একাউন্টে নিয়ে নেয়।আমাদের ফেরত দিতে রাজি হয়না।পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত নেই,যেই ৫ লাখ সে নিয়েছে,সেই ৫ লাখ মেঝো ভাইয়ের ব্যবসায় বিনিয়োগ করবো এবং বাকি ৫ লাখ আমরা দুইজন ব্যবসা করবো।

এখন ওই ৫ লাখ থেকে আমাদের বঞ্চিত করার জন্য সে দাবি করছে আমাদের বন্টন সঠিক হয়নি।কোনো আলেম তাকে বলেছে,আমাদের মা আর বোনকেও সমান ভাগ দিতে হবে। আমার প্রশ্ন হলো,

১।দোকানের জামানত বাবদ নেওয়া এই টাকাও কি মীরাস অনুযায়ী সব ওয়ারিশের মাঝে ভাগ করতে হবে? তাহলে আমার বড় ভাই যে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছে,সেখান থেকে তো আমরা ১ পয়সাও পাইনি। আমার মা দোকানের মাসিক ভাড়া পান।মা আর বোনের জন্য জামানতের এই টাকা ফেরত দেওয়া কষ্টকর হবে ভেবে আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে ভাগ দেওয়া হয়নি,এটা কি ভুল ছিলো?

২।মীরাস অনুযায়ী মা,বোনকে ভাগ দিতে হলে আমার ও সেঝো ভাইয়ের কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু মেঝো ভাই বলছে,তাকে আলেম বলেছে, ভাগ হবে সমান।একারণে সে ভাগ করেছে,আমি,আমার সেঝো ভাই,সে নিজে,আমার মা এবং বোন ৫ জন সবার আড়াই লাখ করে মোট সাড়ে বারো লাখ টাকা এবং বাকি আড়াই লাখ বাড়ির কাজের জন্য থাকবে।

কিন্তু আমি জানি,মীরাস অনুযায়ী ১ ভাই যা পায়,বোন তার অর্ধেক পাবে।মীরাস অনুযায়ীই বন্টন করতে হলে এই সাড়ে ১২ লাখ টাকার বন্টন কিভাবে করতে হবে, অনুগ্রহ করে জানাবেন।

৩।যদি মীরাস অনুযায়ী বন্টন করা বাধ্যতামূলক না হয়,তাহলে আমাদের অনুমতি ছাড়া,কোনোপ্রকার চুক্তি ছাড়া আমার ও আমার সেঝো ভাইয়ের যেই ৫ লাখ টাকা মেঝো ভাই নিজের মনে করে ব্যবহার করছে,এটা কি তার জন্য হালাল হবে,নাকি হারাম,অনুগ্রহ করে জানাবেন।

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
https://ifatwa.info/64796/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
ভাড়াগ্রহীতা থেকে ভাড়া চুক্তির সময় অগ্রিম কিছু অর্থ গ্রহণের দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে।

১. ভাড়াদাতা জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে একটি অংকের অর্থ গ্রহণ করে থাকে। ভাড়া-চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহীতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়। যাকে সিকিউরিটি মানি বলে। 

২. ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং প্রতি মাসেই এর থেকে কিছু কিছু করে ভাড়া কাটা হয়। যাকে এ্যাডভান্স বলে।

সিকিউরিটি মানি তথা জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার নিকট এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি এতে আরোহন করেছি। (এর কী হুকুম?) তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তুমি এর পিঠ থেকে (আরোহন করে) যে উপকৃত হয়েছ তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। ( মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৫০৭১)

বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯)

সুতরাং ভাড়াদাতার জন্য সিকিউরিটি মানি ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়েয নয়। 

আর এক্ষেত্রে সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঋণ হিসেবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে বলে অনেকে বলে থাকে,তা ঠিক নয়। কেননা সিকিউরিটি মানির টাকাকে ঋণ ধরা হলে যেক্ষেত্রে সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কম নেওয়া হবে সেক্ষেত্রে ঋণের কারণে ভাড়া কম নেওয়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। আর ঋণের কারণে কোনো সুবিধা ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত।

তাছাড়া এভাবে একটি চুক্তির সাথে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করে কারবার করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

তাই সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে করয হিসাবে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বরং ভাড়াদাতা নিজে ব্যবহারের জন্য ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ নিতে চাইলে তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়া হিসাবে নিতে পারবে। যা চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া হিসেবে কর্তিত হবে।
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬২৮; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮)

তবে এক্ষেত্রে এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়ার পদ্ধতিটি গ্রহণ করা জায়েজ।

এতে করে দোকান বা বাড়ির মালিক একত্রে বেশি টাকাও নিতে পারে এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধও বটে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উক্ত জামানতের টাকা আপনাদের কাছে মূলত বন্ধক হিসেবে আছে।
তাহা আপনারা কেহই বন্টন করতে পারবেননা,কেহই খরচ করতে পারবেননা।
স্পষ্ট হারাম।

আপনার বড় ভাই যে ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছেম,এটিও তার জন্য হারাম হয়েছে,আপনারা ৩ ভাই যে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে খরচ করছেন বা ব্যবসা করতে চাচ্ছেন,সবই হারাম।

(০২)
এটা তো ভাগ করাই যাবেনা,ব্যবহার করাও যাবেনা। সুতরাং ওয়ারিশদের মাঝে বন্টনের কথাই আসতে পারেনা।

এই টাকার মালিক সেই দোকানের ভাড়াটিয়া।
আপনারা কেহই এর মালিক নন।

সুতরাং অন্যের টাকা আপনারা বন্টন করে নিবেন কেনো?

(০৩)
এটিও হারাম,তার ৫ লাখ টাকা নেওয়াও হারাম। সবই হারাম।

আপনারা কেহই এক টাকাও এভাবে সেই জামানতের টাকা হতে বন্টন করে নিতে পারবেননা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
edited
১।ভাড়াগ্রহীতার থেকে যদি জামানত বা সিকিউরিটি মানি গ্রহণের সময়ই জানানো হয় যে,তার থেকে নেওয়া এই অর্থ ভাড়াদাতা ব্যবহার করবেন এবং এতে তার সায় থাকে,এবং সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কম ধরা না হয়,তাহলেও কি এই অর্থ ব্যবহার হারাম হবে?
২।মূলত এই টাকা আমরা এডভান্স বা অগ্রিম ভাড়া হিসেবেই নিচ্ছি।তাহলে কি এই অগ্রিম ভাড়া আমাদের ভাই বোনের মধ্যে মীরাস অনুযায়ী ভাগ করে নিতে হবে? নাকি সব ভাই বোন সমান ভাগ পাবে?
৩।ভাড়াগ্রহীতাকে এডভান্স বা অগ্রিম ভাড়া ফেরত দেওয়ার সঠিক নিয়ম কোনটি হবে?মাসিক ভাড়া হিসেবে কেটে দেওয়া?
ভাড়া থেকে সম্পূর্ন এডভান্স কেটে দেওয়া পর্যন্ত যদি ভাড়াগ্রহীতা না থাকতে চায়,তাহলে কিছু অগ্রিম টাকা দিয়েও পরিশোধ করা যাবে?

by (607,050 points)
(০১)
ওই জামানতের টাকা হতে যদি প্রতি মাসের ভাড়া কাটা না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে সেটি বন্ধকের হুকুমে এক্ষেত্রে ভাড়া টিয়া যদিও অনুমতি দিক তবুও সে টাকা ব্যবহার করা যাবে না।

(০২)
আপনি একবার বললেন জামানতের টাকা। আবার বলতেছেন অগ্রিম ভাড়া। বিষয়টি অস্পষ্ট।

এতে কি প্রতি মাসে আপনার সেই টাকা হতে তার ভাড়া কাটা যাচ্ছে কিনা, সেটা স্পষ্ট করুন।

(০৩)
চুক্তির সময় এটা বলে নিতে হবে যে এখানে হতে মাসিক ভাড়া কেটে নেওয়া হবে।

অগ্রিম ভাড়া যে টাকা তারা দিয়েছিলেন সে টাকার মধ্যে থেকে প্রতিমাসের ভাড়া কেটে নিতে নিতে যদি সে টাকা শেষ হওয়ার পূর্বেই ভাড়া গ্রহীতা চলে যায় সে ক্ষেত্রে অবশিষ্ট ভাড়ার টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...