আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
শায়েখ,হিংসা বিষয়ক একটা মাসায়ালা জানার ছিলো।
আমার কোন ফ্রেন্ড কোন ভালো কিছু পেলে(যেমন এক্সামে ভাল রেজাল্ট করা,ভালো পুরুস্কার পাওয়া) মনের মধ্যে হিংংসা কাজ করে।যেমন ঃও ভালো করলো, আমি করতে পারলাম না।

মাঝে মাঝে ওর এই জিনিসটার অবনতি হোক এমন চিন্তা মনে  আসে।

আমি বুঝতে পেরে ওর জন্য দুয়া করি,আল্লাহ যেনো আরও বারাকা দেয়।

মনের মধ্যে এমন চিন্তার উদয় হওয়ার জন্য কি গুনাহগার হবো?

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَدَّ كَثِیْرٌ مِّنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ لَوْ یَرُدُّوْنَكُمْ مِّنْۢ بَعْدِ اِیْمَانِكُمْ كُفَّارًا   حَسَدًا مِّنْ عِنْدِ اَنْفُسِهِمْ مِّنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ.

আহলে কিতাবদের অনেকেই তাদের নিকট সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও হিংসাবশত কামনা করে তোমাদের ঈমান আনার পরও যদি তারা তোমাদের কাফের  অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারত! সূরা বাকারা (২) : ১০৯

আরেকজনের কোনো নিআমত দেখে তা বিলুপ্তির কামনা করা হিংসার প্রথম ধাপ।  এর পরের ধাপ হচ্ছে, মনে যখন কারও প্রতি হিংসা জন্ম নেয় তখন এর চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা। তা হতে পারে তার কোনো ক্ষতি করার মধ্য দিয়ে, হতে পারে তার কোনো ক্ষতিতে আনন্দ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এসব যেহেতু তার কর্ম। তাই এর কারণে সে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শিখিয়েছেন হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা

وَ مِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ.

এবং (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে। Ñসূরা ফালাক (১১৩) : ৫

আরবী ভাষার উক্তি

الحاسد يحترق بنار الحسد.

অর্থাৎ হিংসুক হিংসার আগুনে জ্বলে। কারণ হিংসা কারও কোনো ক্ষতি করতে পারে না। যাকে এগিয়ে যেতে দেখে কেউ হিংসা করছে, সে তো এগিয়েই যায়। হিংসা তার এগিয়ে চলার গতি রোধ করতে পারে না। 

কারও মনে সৃষ্ট হিংসা যদি অন্য কারও নিআমতকে বিনাশ করতে পারত, তাহলে তো জগতের কেউই ভালো কিছু হাছিল করতে পারত না। দাঁড়াতে পারত না কারও সম্মান প্রতিপত্তি সুনাম যশ খ্যাতি সুসন্তান অর্থ বিদ্যাবুদ্ধি দ্বীনদারী পরহেজগারি কিছুই। 

হিংসাকে অগ্রাহ্য করে প্রতিনিয়ত যখন কেউ এগিয়ে চলে তখন বাড়তে থাকে হিংসার আগুন। সে আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে থাকে হিংসুকের অন্তর। কথা হল, হিংসার আগুন কি শুধু হিংসুকের অন্তরকেই জ্বালায়? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস থেকে আমরা এর উত্তর পাই

إِيّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النّارُ الْحَطَبَ أَوْ قَالَ الْعُشْبَ.

তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ হিংসা নেক আমলসমূহকে গ্রাস করে নেয়, যেভাবে আগুন গ্রাস করে লাকড়ি (অথবা ঘাস)। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৫

শুকনো ঘাস আর লাকড়ি যেমন আগুনের সামনে অসহায়, হিংসার আগুনের সামনে মানুষের নেক আমলও তেমনি অসহায়। হিংসার আগুন গ্রাস করে নেয় ব্যক্তির যাবতীয় নেক আমল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক হাদীসে হিংসাকে তুলনা করেছেন পানির সঙ্গে। দুই হাদীসের দুই উপমা বাহ্যত বিপরীতমুখী মনে হলেও এ বিবেচনায় তো অবশ্যই এক আগুন যেমন লাকড়ি আর ঘাসকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়, পানিও তেমনি আগুনকে নিভিয়ে দেয় মুহূর্তেই। আগুনের সামনে লাকড়ি আর ঘাসের প্রাচুর্য যেমন কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, পানির সামনেও আগুনের বিশালতা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। হাদীসের ভাষ্য এমন

إِنّ الْحَسَدَ يُطْفِئُ نُورَ الْحَسَنَاتِ.

সন্দেহ নেই, হিংসা নেক আমলসমূহের নূর ও আলোকে নিভিয়ে দেয়। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৬

হিংসা তাই সর্বাবস্থায় পরিত্যাজ্য। এ হিংসা কোনো মুমিনের চরিত্র হতে পারে না। হাদীসের বক্তব্য এমনই

لَا يَجْتَمِعَانِ فِي قَلْبِ عَبْدٍ الْإِيمَانُ وَالْحَسَدُ.

কোনো বান্দার হৃদয়ে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না। সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৩১০৯

অবশ্য হিংসার একটি রূপ এমনও, যেখানে কারও অমঙ্গল কামনা নেই। কারও ভালো কোনো কিছু দেখে তার বিনাশ নয়, বরং নিজের জন্যেও অর্জিত হোক অনুরূপ ভালো ও কল্যাণ এই কামনা রয়েছে সেখানে।

★প্রথমটিকে আরবীতে বলে ‘হাসাদ’ আর পরেরটিকে বলা হয় ‘গিব্তা’, বাংলায় যাকে আমরা বলি ‘ঈর্ষা’। 

এই ঈর্ষা দোষণীয় কিছু তো নয়ই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে প্রশংসনীয়ও। ঈর্ষা অনেক সময় আমলের আগ্রহ সৃষ্টি করে। নেক কাজে উদ্ধুদ্ধ করে। ভালো কাজে ও কল্যাণকর ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।

মুমিন বান্দা যখন কাউকে বারবার হজ্ব-উমরা পালন করতে দেখে কিংবা অল্প বয়সে কাউকে বায়তুল্লাহ যিয়ারতের সৌভাগ্য হাসিল করতে দেখে, সে তখন আবেগে আপ্লুত হয়, তার মনে ঈর্ষা জন্ম নেয়।

এ সৌভাগ্য যদি আমারও হাসিল হতো! এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

لاَ حَسَدَ إِلاَ عَلَى اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْكِتَابَ وَقَامَ بِهِ آنَاءَ اللّيْلِ وَرَجُلٌ أَعْطَاهُ اللهُ مَالاً فَهْوَ يَتَصَدّقُ بِهِ آنَاءَ اللّيْلِ وَالنّهَار.

হিংসা (অর্থাৎ ঈর্ষা) কেবল দুই ব্যক্তিকেই করা যায়Ñআল্লাহ যাকে কুরআন হিফ্জ করিয়েছেন আর সে রাতের বিভিন্ন প্রহরে নামাযে দাঁড়িয়ে তা তিলাওয়াত করে, আর যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা দিনে-রাতে দান করে। সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০২৫

لاَ تَقَاطَعُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَحَاسَدُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا.

তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, একে অন্যের পেছনে লেগে থেকো না, একে অন্যের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও, পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৩৫

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ওর এই জিনিসটার অবনতি হোক এমন চিন্তা মনে আসাই সবচেয়ে খারাপ বিষয়। 

এটির কারনেই মূলত আপনার হিংসার গুনাহ হবে। আপনি তার জন্য দোয়া করবেন,তাকে বেশি বেশি আগে আগে সালাম দিবেন,আল্লাহর কাছে তওবা করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...