আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
26 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (11 points)
আসসালামু আলাইকুম হযরত

আমি একদিন আমার আহলিয়া কে বলেছিলাম তোমার চোখ তোমার মায়ের চোখের মতন। তার মা মারা গেছেন কিছুদিন আগে। একদিন সে তার মায়ের ফটো দেখতেছিল, আমিও সাথে ছিলাম, তাই বলেফেলেছি, বুঝতে পারিনি। এতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে আমাদের বিবাহে।

জাযাকুমুল্লাহু খাইরান

1 Answer

0 votes
by (70,170 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব:-

সম্মানিত ফিকাহবিদগণ যিহার এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,

تشبيه الزوج زوجته في الحرمة بمحرمه

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনও মাহরাম নারীর সাথে সাদৃশ্য দেওয়াকে যিহার বলা হয়।”

অথবা تشبيه المنكوحة بمن تحرم عليه “বিবাহিত স্ত্রীকে এমন মহিলার সাথে সাদৃশ্য দেওয়া যে তার জন্য হারাম।”

উদাহরণ: কোনও পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলে যে, তুমি আমার জন্য হারাম যেমন আমার মা আমার জন্য হারাম বা যেমন আমার বোন আমার জন্য হারামবা এ জাতীয় বাক্য তাহলে এটাকে যিহার বলা হয়। এর বিভিন্ন রূপ আছে এবং সংজ্ঞার ক্ষেত্রেও কিছু ভিন্নতা আছে-যেগুলো ফিকহের কিতাব সমূহে সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে।

যিহার প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَائِهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ ۖ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُورًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ

তোমাদের মধ্যের যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ (মায়ের মত হারাম বলে ঘোষণা করে) করে- তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মা তো কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনা কারী, ক্ষমাশীল।” [সূরা মুজাদিলা: ২]

ইসলামে যিহার একটি অন্যায় আচরণ এবং হারাম কাজ। কেউ এমনটি করলে তার জন্য কাফফারা আদায় করা আবশ্যক। কাফফারা আদায়ের পূর্বে স্বামী-স্ত্রী মিলন হারাম।

তাফসিরে কুরতুবিতে এসেছে,

وذلك كان طلاق الرجل امرأته في الجاهلية

জাহিলি যুগে এটাই স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তালাক ছিলো।” কিন্তু ইসলাম তা স্থায়ী হারামের পরিবর্তে অস্থায়ী হারামে রূপান্তরিত করেছে। অর্থাৎ কোনও স্বামী তার স্ত্রীর সাথে যিহার করলে কাফফারা প্রদান করলে তা হালাল হয়ে যাবে।

যিহারের কাফফারা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِن نِّسَائِهِمْ ثُمَّ يَعُودُونَ لِمَا قَالُوا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مِّن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۚ ذَٰلِكُمْ تُوعَظُونَ بِهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ - فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ مِن قَبْلِ أَن يَتَمَاسَّا ۖ فَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ فَإِطْعَامُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ۚ ذَٰلِكَ لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ

যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে ফেলে, অতঃপর তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা হল, একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দিবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর। যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে ধারাবাহিকভাবে দু মাস রোজা রাখবে। যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন মিসকিনকে আহার করাবে। এটা এজন্যে, যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণা দায়ক শাস্তি।” [সূরা মুজাদিলা: ৩ ও ৪]

অর্থাৎ যিহারের কাফফারা রমজান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাসের কাফফারার অনুরূপ। তা হল:

১. একটি মুমিন দাস মুক্ত করা। কিন্তু বর্তমান যুগে দাস-দাসী প্রথা প্রচলিত না থাকার কারণে তা প্রযোজ্য নয়।

২. এটি সম্ভব না হলে ধারাবাহিকভাবে দু মাস রোজা থাকা। ঈদ উপলক্ষে রোজা রাখা নিষিদ্ধ দিনগুলোতে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকবে। অত:পর ঈদে রোজা রাখা নিষিদ্ধ দিনগুলো অতিবাহিত হলে যথারীতি রোজা রাখা শুরু করবে।

৩. তাও সম্ভব না হলে ৬০ জন মিসকিন (দরিদ্র-অসহায় মানুষ) কে এক বেলা খাবার খাওয়ানো অথবা খাদ্য দ্রব্য দান করা।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

যিহার হওয়ার জন্য স্ত্রীকে বা তার এমন কোন অঙ্গ যা তার পূর্ণ সত্তাকে বুঝায় সেটিকে মাহরাম আত্মীয় কারো সাথে বা এমন কোন অঙ্গের সাথে উপমা দেয়া জরুরী, যে অঙ্গ দেখা হারাম। এখানে এমন কিছুই হয়নি।  (রদ্দুল মুহতার : ১২৫-১২৬)

সুতরাং উপরোক্ত কথার দ্বারা যিহার হবে না। তাই পেরেশান হবার কিছু নেই। আরা জানুন: https://www.ifatwa.info/24616/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...