আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
42 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ।
আমি বিয়ে করেছি ৫.৫ মাস। আমার আহলিয়া এবং আমি পরিপূর্ণ দ্বীন মানার চেষ্টা করি। আমি ৩ চিল্লা দিয়েছি, সুন্নাতি লেবাস, অতি প্রয়োজন ছাড়া বেগানা মহিলাদের সাথে কথা বলিনা, নজরের হেফাজত করি এবং আমার আহলিয়া খাস পর্দা করেন, মাহরাম মেইনটেইন করে। আমরা দুইজনই জেনারেল ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্ট + আইওএম এর আলিম কোর্সের স্টুডেন্ট।
আমার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন পরিপূর্ণ দ্বীনদার না তবে দ্বীন মানার চেষ্টা করে, ভালো সম্মানী পরিবার, সম্পদের পরিমান ভালোই কিন্তু আমাদের থেকে একটু কম। এবং দ্বীনের ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করে। আমার শ্বশুড় ভালো, ভদ্র আর সৎ মানুষ, আমার শ্বাশুড়িও নরম স্বভাবের। কিন্তু আমার পরিবার সম্পদশালী হলেও বেদ্বীন, অসামাজিক এবং পড়ালেখাও করেনি। বিশেষ করে আমার বাবা মা এবং আমার জেঠী। উনারা ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে, গালি দেয়, মান সম্মানের ভয় নেই। কিন্তু আমি আমার পরিবার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা প্রকৃতির মানুষ। আর আমার আহলিয়ার সাথে আমার বংশগত, সামাজিক দিক থেকে কুফু মিলেনি কিন্তু দুইদজনের মতের মিল, দ্বীনের পালন বাকি সার্বিক দিক থেকে কুফু মিল থাকায় অর্ধেকদ্বীন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিয়ে হয়েছে।
আমার আহলিয়ার খাশ পর্দা এটা আমার ফ্যামিলি  ভালো চোখে দেখে না শুরু থেকেই। তারা চাইতো আমার আহলিয়া হিজাব পরে আমার চাচা, ভাই, চাচাতো ভাই, ফুফা সবার সাথে কথা বলুক, সবার সামনে যাক, তাদেরকে খাবার পরিবেশন করুক, আমার মায়ের ঘরের রান্না ঘরে যেয়ে রান্না করুক, পুরা বাড়ি ঘুরে বেড়াক। কিন্তু আমার আহলিয়া বিয়ের আগে থেকেই মাহরাম মেইনটেইন করে এবং সে পর্দাকে ভালোবাসে, প্রচুর গায়রত তার৷ ইচ্ছা/অনিচ্ছাকৃত তাকে কেউ দেখে ফেললে সে অনেক কষ্ট পায়। আমার ভয়ে আমার পরিবার আমার আহলিয়াকে নন মাহরামের সামনে যেতে বাধ্য করতে পারেনি।

আমি বিয়ের সময় বেকার ছিলাম, চাকরি/ব্যবসা করে পরে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বাবা মা আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করিয়েছে। এবং বলেছে তোর বউ, সন্তান আমরা পালবো আর বিয়ের পর তোরে ৫ লাখ টাকা দিব, নিজের মতো সংসার চালাবি, তোর বউয়ের আমাদের কাজ করতে হবেনা। আমার জন্য রান্নাঘর, ওয়াস্রুম সব এটাচ করে দিয়ে বিয়ে করিয়েছে। কিন্তু আমার আহলিয়ার বর্ত্মান ঠিকানা ঢাকায় হওয়ার পছন্দ করেনি, কিন্তু স্থায়ী ঠিকানা আমার পাশের জেলায়। আর তাদের অন্য মেয়ে পছন্দ ছিল কিন্তু সে দ্বীনদার, পর্দাও করেনা তাই আমি রাজি হইনি। এই বিয়ের ক্ষেত্রে আমার পরিবার অনেকভাবে আটকাতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। ফিরা নায়রের দিন আমার মা আমার শ্বাশুড়ির সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। তৃতীয় পক্ষ আমার মা কে ভুল বুজিয়েছিল বিধায় সেদিন আমার মা ঝামেলা করেছে, পরে আমার শ্বশুড় সব বুঝিয়ে পরিস্থিতি ঠিক করেছে। কিন্তু  আমার বাবা মা আমার শ্বশুড়কে পছন্দ করেনা, তাদের সাথে আমার সুসম্পর্ক ও পছন্দ করেনা।

বিয়ের আগে থেকেই দ্বীনে ফেরার পর আমার দাড়ি, টুপি নিয়ে তারা কুটুক্তি করতো, কিন্তু এত ঝগড়া -ঝামেলা করতো না, আমার কথা শুনতো। বিয়ের পর তারা আমাকে যা যা ওয়াদা দিয়েছিল পূরণ করেনি, উলটো বলেছে যে,,"আমাদের কথামতো তুই আর তোর বউ চললে টাকা দিব, নইলে দিবোনা।" আর আমার চাকরি/ব্যবসার ব্যবস্থাও করে দেয়নি। যাতে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে৷ আমার শ্বশুড়বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পছন্দ করেনা। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মিথ্যাচার করে আমার আহলিয়ার নামে এবং আমার শ্বশুড়বাড়িতে বিচার দেয়, তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে।
আমার আহলিয়া বাসার রান্নাবান্না করতে চেয়েছে কিন্তু ২ তলায় বাসা হওয়ার সে চেয়েছি বারান্দায় পর্দা দেয়া হোক। কারণ জেলা সদরে বাসা হওয়ার আশেপাশে বিল্ডিং কম, বাইরে থেকে দেখা যায় বারান্দা দিয়ে কেও আশা যাওয়া করলে। কিন্তু আমার মা এই কথায় নারাজ, সে বলে পর্দা দিলে আমার ঘর অন্ধকার হয়ে যাবে, তোর বউয়ের কাজ করা লাগবেনা। আমি কান্না করে করে বলেছিলাম, "দ্বীন মানতে চাই তোমরা বাবা মা হয়ে আমাকে সহযোগিতা না করলে কে করবে"! কিন্তু তারা উল্টো আমাকে, আর আমার আহলিয়াকে গালিগালাজ করে, বারান্দায় আমার রুমের সামনের কিছু অংশে পর্দা দেয়া ছিল সেগুলা আর মা খুলে ফেলে সেদিন। আর বলে, " কিসের পর্দা, বা** এর পর্দা, আমার বাড়িতে কোন পর্দা চলবেনা" আরও অনেক গালি দেয় আমাকে আর আমার আহলিয়া জোরে চিল্লায় চিল্লায় আশেপাশের মানুষকে শুনায়া গালি দেয়। আমার শ্বশুড়বাড়িতেও বিচার দেয়।
আর আমার জেঠী ছোট ছোট বিষয় নিয়ে আমার আহলিয়াকে কথা শুনায় অনেক বাজেভাবে, আমার শ্বশুড়বাড়িতে যেয়েও খারাপ ব্যবহার করেছে তাদের সাথে।  আমার আহলিয়া প্রতিবাদ করেনা কখনো, কারণ আমার শ্বশুর ঝগড়া পছন্দ করেন না, মানায় নিতে বলেন, আর শ্বশুড়বাড়িতে বিচার দিবে এই ভয়েও কোন প্রতিবাদ করেনা। ভালো কথা বল্লেও হাসিমুখে কথা বলে খারাপ কথা বল্লেও,,,কিন্তু আমার কাছে অভিযোগ দেয়, দু:খ প্রকাশ করে। কিন্তু আমার সামনে জেঠি কিছু বললে আমার অনেক রাগ উঠে যায়, আমি তাদের কথার উচিত জবাব দিলে তারা আমার সাথে ঝগড়া করে। এতকিছুর পরেও আমার আহলিয়া আমার মায়ের ঘরে যেয়ে রান্নার কাজ করে মোটামুটি। কিন্তু তবুও তারা বলে কোন কাজ করেনা। আমার আহলিয়া তাদের কাজ করতে বাধ্য না এটা তারা মানেনা। তবুও কাজ করে  পরে নিজের রুমে চলে আসে, ওই রুমে কাজ ছাড়া বেশি যায়না। কারণ আমার বাবা রুমে বসে সিগারেট খায়,  গন্ধ হয়ে থাকে আর রুমে অনেক মাছি বয়, নোংরা করে রাখে। আমার বাবা আমার আহলিয়ার সাথে কথা বলেনা। কিন্তু আমার আহলিয়া আমার বোন, মা, জেঠাতো বোন, ছোট ভাগ্নিদের সাথে মিশে, কথা বলে। তারা আমার রুমে এসে গল্প করে আমার আহলিয়ার সাথে। বলা বাহুল্য আমার আহলিয়া অনেক মিশুক, কিন্তু রুম থেকে বের হতে চায়না, কারণ বাইরে পর্দা দেয়া নাই। তবুও তারা বলে আমার আহলিয়া কারো সাথে মিশেনা। মিথ্যা অপবাদ দেয়।

পরশুদিন ইফতারের পর আমার আহলিয়া অসুস্থ হয়ে শুয়ে ছিল কম্বল গায়ে দিয়ে, সে সদ্য প্রেগন্যান্ট হয়েছে। সবাইকে জানানো হয়নি কারণ সেদিনই টেস্ট করা হয়েছিল। আমার জেঠী তখন রুমে আসায় আমার আহলিয়া উঠে বসে, উনাকে ঘরে আসতে বলে। তখন আমার জেঠাতো বোন আর তার ছোট ৩ জন বাচ্চাও ছিল রুমে। জেঠী ঘরে না এসেই আমার আহলিয়াকে অনেক জোড়ে জোরে ধমকাতে থাকে বলে, "তোমার মাথায় ওড়না কই, বাইরে আল্লাহ আছে, ঘরে আল্লাহ নাই? তোমার কিসের পর্দা এইটা। আমার সামনে, আমার মেয়ের সামনে তুমি মাথায় ওড়না দেওনাই কেন?  আর একদিন যদি ওড়না ছাড়া দেখি তাইলে তোমার জামাইয়ের সামনে তোমারে অপমান করে আমি তোমারে উচিত শিক্ষা দিমু।" এছাড়া আরও অনেক কথাই বলে শাসাতে থাকে আমার আহলিয়াকে। আমার আহলিয়া প্রতিবাদ করেনি। কিন্থ অনেক কষ্ট পেয়ে আমাকে কল দিয়ে বলে। আমি বাসায় এসে জিজ্ঞেস করি আমার আহলিকে কি বলছেন,, আমার রুমের মধ্যে সে কিভাবে থাকবে এটা আমার ব্যাপার,, সে অসুস্থ শুয়ে আছে, সে তো বাইরে যায়না, রুমেই থাকে, আর তার রুমে তো কোন পুরুষ আসেনা৷ আমার পরিবারের ব্যাপারে কথা বলার আপনি কে?? আমার জেঠী আর জেঠাতো বোন রেগে যায় এসব শুনে আমার জেঠী আমার আহলিয়া ধমকায় যে তুমি প্যাচ লাগাইছো কেন, জামাইরে সব কথা কেন বলা লাগে, তোমারে আমি কি এমন কইছি। " পরে আমার আহলিয়া সেদিনই প্রথম প্রতিবাদ করে বলে যে, "আমিতো বলিনাই আপনি খারাপ বলছেন, কিন্তু আমাকে ধমকাচ্ছেন, সবসময় রুমে এসেই ভালমন্দ কিছু না বল ধমকাতে থাকেন ছোটছোট বিষয়ে। কথা বলার তো একটা ধরন থাকে, আপনি আমাকে শিক্ষা দিবেন, অপমান করবেন এসব বলছেন, ভালোভাবে তো কথা বলা যায়, আপনি যখন রুমে আসেন আমাকে ধমকান, আমিতো কখনো কিছু বলিনা। নরম পাইছেন দেখে সবসময় এমন করবেন??""
তারপর আমার জেঠী আমার সাথে আরও জোরে জোরে কথা বলে ঝগড়া করে আমাকে মারতেও আসে। অথচ সে নিজে পর্দা করেনা। এরপরে আমার মা আসে, আর অনেক গালিগালাজ করে চিল্লায় চিল্লায়ে আমার আহলিয়াকে। আমার বাবাও গালিগালাজ করে। আমার রুমের সামনের পর্দা গুলা আবার টেনে খুলে ফেলে, আর আমাকে মারতে চায়, আমার আহলিয়াকে বলে, সে নাকি কাজ না করার জন্য পর্দার নাটক করে, সে নাকি পর্দা করেনা, বিয়ের আগে প্রেম করছে, ঘুইরা বেড়াইছে ছেলে নিয়ে, বেজরমা, ফকিন্নি। আরও অনেক গালি দেয়, মিথ্যা অপবাদ দেয়। জেঠি চিল্লাতে থাকে, জেঠাতো বোনও। পরে আমার বাবা-মা দুইজনই আমাকে মারতে চায়, আর আমাকে লাটি দিয়ে বারি দেয় আর থাপ্পড় দেয় আমার মা। বলে, "তরে আজকে মেরে ফেলবো, তোর নামে মামলা করবো"। পরে আমিও রেগে যাই আর বলি "আজকে আমি মরবো, নয়তো তোরা মরবি, আমি নিজে মরে তোদের ফাসায় দিব"। আমার বাবা বলে "আমার বাড়ি থেকে তুই বের হয়ে যা"। পরে আমি রুমে চলে আসি, কিন্তু তারা অনেক গালি দিতে আমাকে, আমার আহলিয়াকে আর আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে। আমিও রাগের মাথায় তাদের দুই এক টা গালি দেই। আমার আহলিয়া আমাকে বাইরে যেতে দেয়না, বারবার চুম রাখার চেষ্টা করে। এরপর আমার জেঠাতো ভাই, আমার শ্বশুড়কে ফোন দিয়ে মিথ্যাচার করে, আমার বাবা, মা,  জেঠী এরাও মিথ্যাচার করে। আমার শ্বশুড় নিতান্তই ভদ্র মানুষ, উনি কথার উত্তর দেয়ার সুযোগ ই পাচ্ছিলোনা। এরপর তারা আমার শ্বশুড়কে বলে আপনার মেয়েকে নিয়ে যান। আমার শ্বশুড় আমাকে কল দিলে বলে," তোমার বাবা মায়ের কাছে আমার মেয়ে বোঝা হয়ে গেছে,  আমার মেয়েকে তুমি দিয়ে যাও। চাকরি নেও, বাড়ির পরিবেশ ঠিক করো এরপর নিয়ে যাইও তোমার বাড়িতে৷"
আমি আমার শ্বশুড়কে জানাই,, আমার আহলিয়াকে আমিই খাওয়াবো পড়াবো, আর এই বাড়িতে রাখবোনা।
উল্লেখ্য: আমি ২ সপ্তাহ ধরে একটা চাকরি পেয়েছি,একটা ফ্যামিলি চলার মতো ইনকাম। এটা আমার শ্বশুড় জানে। কিন্তু আমার বাড়ির লোক জানে না। কারণ প্রথমবার পর্দা টেনে খুলে ফেলার পর থেকে প্রায় ২ মাস আমি আমার মায়ের সাথে কথা বলিনা৷ আমার বাবার সাথে কথা বলতাম, কিন্তু সে ১৮/২০ দিন আগে আমার সাথে ঝগড়া করে আর বলে দেয় আমাকে কোন টাকা পয়সা দিবেনা, তার কথা না শুনলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। এরপর থেকে আমি তার সাথেও কথা বলিনা। তারাও বলেনা। কিন্তু আমার আহলিয়া কথা বলে তাদের সাথে।
তো রাত ১ টা পর্যন্ত তারা সবাই চিল্লা চিল্লি করতে থাকে,  গালিগালাজ করতে থাকে। আর আমি আমাদের জেলা মারকাজের মুরুব্বির সাথে পরামর্শ করি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার জন্য, উনি বলেন উনার বাড়িতে আসতে।। এরপর গতকাল সকালে কাউকে না জানিয়েই আমি আমার  আহলিয়াকে নিয়ে বের হয়ে আসি বাড়ি থেকে।
আমার পরিবারে সবার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছি। আমি আর চাইনা তাদের সাথে থাকতে, আলাদা থাকতে চাই।
তাদের সাথে সম্পর্কও রাখতে চাইনা, কারণ তারা দ্বীন নিয়ে কুটুক্তি করে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এখন আমার ক্ষেত্রে কি এটা জায়েজ হয়ে??  আর দ্বীন নিয়ে কুটুক্তি করায় তাদের কি ইমান আছে? এবং এক্ষেত্রে তাদের শাস্তি কি। আর তাদের গালিগালাজের কারণে আমিও রেগে গিয়ে তাদের দুই/একটা গালি দিয়েছি, এক্ষেত্রে আমার কি শাস্তি হবে? আমি কি অবাধ্য সন্তান হিসেবে গন্য হয়ে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবো??
আর আমার আহলিয়াও যদি তাদের সাথে সম্পর্ক না রাখে তাহলে কি তারও গুনাহ হবে?? আমাদের অনাগত সন্তানকে যদি তাদের দেখতে না দেই তাহলে কি গুনাহ হবে?? আমরা চাই আমাদের সন্তানকে দ্বীনি পরিবেশ দিতে। কিন্তু আমার পরিবার খুবই উঘ্র, আমি তাদের আগেও অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি, দ্বীনের পথে আনার চেষ্টা করেছি কিন্ত তারা উলটা আমাকেই গালি দিত। আমার মা কথায় কথায় গালি দেয়, খারাপ খারাপ গালি দেয়, বাচ্চাদের সাথেও তার আচরণ ভালোনা, ছোট্ট বাচ্চাদেরও মজার ছলে জোরে জোরে থাপ্পড় মারে, আমার বাবা আমার ২ বছরের ভাগ্নাকে টিভিতে গান বাজিয়ে নাচায়,  একদম নবজাতক অবস্থ্যা থেকেই আমার ভাগ্নেকে তার মায়ের থেকে নিয়ে বাইরে বাইরে ঘুড়তো। আমার বাবা মা বাচ্চা পছন্দ করে কিন্তু তাদের সাথে ভালো আচরণ করেনা, ভালো শিক্ষাও দেয়না, উলটা খারাপ গালি শেখায়।  আর আমাদের বাড়ি রেলওয়ে স্টেশনের সাথেই  অই এলাকাও ভালোনা। আশেপাশের অনেক মানুষ নেশা করে, উগ্র মেজাজী, ঝগড়াঝাটি, পারিবারিক কলহ লেগেই থাকে। সুস্থ- মান সম্মানী মানুষের এই পরিবেশে থাকা অনেক কঠিন। আমি ছোট থেকেই চুপচাপ, হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছি বিধায় বেশি প্রভাব পরেনি, কিন্তু আমিও বিপথে চলে গিয়েছিলাম করোনাতে এলাকায় এসে কিন্তু ক্যাম্পাসের তাবলীগের সাথীদের সাথে থেকে আল্লাহর ইচ্ছায় দ্বীনে ফিরেছি। আমাকে এলাকার সবাই সম্মান করে, ভালোবাসে, বলা চলে এলাকার সবথেকে ভালো ছেলে। আমার শুত্রুদেরকে কেউ জিজ্ঞেস করলেও আমার ব্যপারে খারাপ বলেনা। বাইরে থাকলে আমার মন মেজাজ ভালো থাকে, কিন্তু আমার বাড়িতে আসলেই আমার ভালো লাগেনা তাদের ব্যবহারের কারণে,, এজন্য বাড়ির মানুষের সাথে ভালোভাবে কথাও বলতে পারিনা ,, তারা এমন এমন কথা বলে প্রচুর রাগ উঠে যায়, ঝগড়া হয়ে যায়। তাদের কথার জবাব দেইনা বেশিরভাগ সময়, তখন তারা নিজে নিজেই গালি দিতে থাকে,, আর কখনো যদি উত্তর দেই তাহলে বড় ঝগড়া শুরু করে দেয়। ওদের থেকে দূরে থাকলে আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারি একদম নরম হয়ে যাই, যেটা বাড়ির বাইরের সব মানুষই পছন্দ করে। বাড়ির বাইরের কেউ আমাকে মারলেও আমি সহ্য করতে পারি, আল্লাহর জন্য চুপ থাকি। কিন্থ আমার বাবা- মা একদমই ভিন্ন জগতের মানুষ, তারা খুটায় খুটায় ঝগড়ার কারণ খোজে, তারা এখন ভালো তো মুহূর্তেই উন্মাদ হয়ে যায়, উগ্র হয়ে যায়। আমার এলাকার মানুষও আমার জন্য দু:খ করে,, আর আমার বাবা মা কে পছন্দ করেনা।  কারণ তারা সবার সাথেই উগ্র আচরণ করে আর গালি দেয়। আমার বংশধর উচ্চবংশের না, নিম্নবংশের,, তাদের অতীত অভাব অনটন, অবৈধ ইনকামের মধ্যেমে কাটছে, নিম্ন পরিবেশে থেকে, পড়ালেখাও করেনি। এখন আমার বাবা হঠাৎ বড়লোক হইছে ব্ল্যাকে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে। এখন কোন কাজ করেনা, নামাজ পরে শুধু কিন্তু আগের মতোই অসামাজিক রয়ে গেছে।
আমার আহলিয়া ভালো ফ্যামিলির মেয়ে, ঢাকায় ভালো এলাকায় থেকে বড় হইছে তার সাথে এই পরিবেশ মানায় না। সে মাঝে মাঝে খুব আফসোস করে, কষ্ট পায়, আমার কাছে অভিযোগ করে। সে চেয়েছিল আমাদের সন্তানকে দ্বীনি এবং সুস্থ পরিবেশ দিতে। এখন আমরা যেখানে আছি সেখানে পরিবেশ আগের তুলনায় ভালো।
তো দ্বীনের জন্য এবং সন্তানকে ভালো পরিবেশ দেয়ার জন্য বাবা মায়ের থেকে আলাদা থাকা আমাদের জন্য কি গুনাহের কারণ হবে?? যদি আমরা তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ না করে কম কম যোগাযোগ করি, খোজ খবর রাখি তাহলে কি জায়েজ হবে?? আর তাদের দ্বীন নিয়ে কুটুক্তি করায় যদি আমি, আমার আহলিয়া এবং আমার শ্বশুড়- শ্বাশুড়ি তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করি তাহলে কি তা জায়েজ হবে???
এক্ষেত্রে আমাদের ঠিক কি কি করা উচিত জানালে এবং পরামর্শ দিলে খুবই উপকার হতো ইনশাআল্লাহ।

অনেক বড় করে লেখার জন্য আফওয়ান। বিষয়গুলা জটিল লাগে আমার তাই অনেক বিস্তারিত লিখতে হলো।

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


https://ifatwa.info/18346/ ফতোয়ায় উল্লেখ রয়েছেঃ 
আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা নাজায়েজ,এক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাঃ অনেক কঠোরভাষা ব্যবহার করেছেন।

হাদীস শরীফে এসেছে  

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

.(বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫), আবূ দাঊদ ১৬৯৬, তিরমিযী ১৯০৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০ সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪, মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫, আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭।)

আরো জানুনঃ 

দারুল উলুম  দেওবন্দ এর 178050 নং ফতোয়াতে এসেছে যে কোনো মুসলমানের সাথে হিংসা ইত্যাদির কারনে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। 
তবে সে যদি দীনের লাইন থেকে দূরে সরে যায়,মদ খায়,জুয়া খেলে,যেনা করে,সুদ খায়।
বুঝানোর পরেও বুঝেনা,ইসলাম মানেনা।
,
তাহলে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ আছে। 
তবে  স্থায়ীভাবে নয়,সাময়িক ভাবে। 
(ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ ৮/২৭০)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
প্রশ্নের বিবরণ মতে যারা দ্বীন নিয়ে কটুক্তি করেছে, তাদের সাথে আপনারা সাময়িক ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেন। 
তবে স্থায়ী ভাবে নয়।

যদি তারা কখনো তওবা করে পূর্ণ দ্বীন মানা শুরু করে,সেক্ষেত্রে তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন।

দ্বীনের জন্য এবং সন্তানকে ভালো পরিবেশ দেয়ার জন্য বাবা মায়ের থেকে আলাদা থাকা আপনাদের জন্য জায়েজ হবে,এতে কোনো গুনাহ আপনাদের হবেনা।

আরো জানুনঃ- 

যদি আপনারা তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ না করে কম কম যোগাযোগ করি, খোজ খবর রাখেন, তাহলে এটিই সবচেয়ে ভালো হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...