আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
25 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (10 points)
মুহতারাম মুফতি সাহেব,
আসসালামু আলাইকুম ।
আমার অনেকগুলো প্রশ্ন ছিল ।  যথাসম্ভব  গুছিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি ।  তারপরেও আমার সীমাবদ্ধতাজনিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে আমি আগাম ক্ষমাপ্রার্থী ।
১.
অনেক দোকানের ব্যাগ, প্যাকেট, কার্ড ইত্যাদির উপরে বাংলায় 'বিসমিল্লাহ' অথবা বাংলায় পুরো তাসমিয়াহ লেখা থাকে ।
এখানে আশংকার বিষয় হল, সচরাচর যেটা ঘটে, ঐ প্যাকেট বা ব্যাগ বা এ জাতীয় বস্তু ব্যবহারের পরে ক্রেতারা তা ময়লার ঝুড়িতে /  যেখানে সেখানে ফেলে দেয় ৷
এক্ষেত্রে,
প্যাকেট/ ব্যাগের উপরে দু'আ কালাম লেখার ফলে দোকান কর্তৃপক্ষ কী আল্লাহর কালাম অবমাননার জন্য দায়ী হবে না কী ঐ ক্রেতা দায়ী হবে যে ব্যাগ/ প্যাকেটটা ফেলে দিয়েছে? না কী উভয়ই দায়ী হবে কারণ দোকানি না ছাপালে  ক্রেতা তো সুযোগই পেত না প্যাকেট টা ফেলে দেওয়ার ? না কী এর ফলে কারোরই কোন গুনাহ হবে না?

২.
উপরের (১) নং ঘটনার ক্ষেত্রে অনেক সাধারণ মানুষকে বলতে শোনা যায়,
" আরবীতে তো আর দু'আ লেখা নেই ।  বাংলা/ ইংরেজিতে দু'আ লেখা ব্যাগ/ প্যাকেট / লিফলেট / পোস্টার ফেলে দিলে কী আর সমস্যা হবে? "

এক্ষেত্রে,  দু'আ আরবী বা অন্য কোন ভাষায় লেখার ক্ষেত্রে কী মাস'আলায় কোন তারতম্য হবে?
৩.
মোহাম্মদপুর এলাকার নাম বলার সময়ে তা মুহাম্মাদপুর হিসেবে উচ্চারণ করা হয় না সাধারণত ।  আবার 'হা' এর উচ্চারণ এর সময়ে  ح - এর উচ্চারণও করা হয় না ।
আরবী তাজবীদের নিয়ম মেনে উচ্চারণ করলে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই রিকশাওয়ালা বা বাসের হেল্পাররা বুঝতে পারেন না যে কোন স্থানের নাম বলা হচ্ছে ।  তখন আবার তাদের বোধগম্য উচ্চারণ  করে যেমন বাংলায় যেভাবে মোহাম্মদপুর   বলা হয় সেভাবে বলতে হয় ৷ বাংলা  উচ্চারণে বলতে খারাপ লাগে কারণ  ح - এর উচ্চারণ ঠিক না হলে শব্দের অর্থও তো পরিবর্তন হয়ে যায় ।
এভাবে বাংলা উচ্চারণে বলার ফলে কী আমাকে গুনাহগার হতে হবে?  যদি গুনাহ হয় তবে আমার করণীয় কী?

৪.  
ইসলামের ঐতিহ্য,  ইতিহাস বা অনেকক্ষেত্রে ইসলামের বিভিন্ন শি'আর এর সাথে সংশ্লিষ্ট লেখা অথবা ছবি বিভিন্ন পণ্যের প্যাকেটে, লিফলেটে, খবরের কাগজে ইত্যাদিতে দেখা যায় ।  কিছু উদাহরণ দেওয়া  হলঃ

ক)

 বিভিন্ন ক্যালেন্ডারে মসজিদের ছবি থাকে ৷ বছর শেষে ক্যালেন্ডারগুলো ফেলে দিলে মসজিদ অথবা ইসলাম অবমাননা হবে কী না?
যদি অবমাননা হয় তবে বছর শেষে ক্যালেন্ডারগুলো কী করা উচিত?

খ)
অনেক ইসলামী পণ্যের উপরে মসজিদের ছবি থাকে ।  কখনো একটা অবয়ব বোঝানো হয় মসজিদের আবার কখনো কখনো বাইতুল্লাহ শরীফ এর অথবা কোন মাসজিদের স্পষ্ট ছবি থাকে ।  এক্ষেত্রে ব্যবহারের পরে পণ্যের প্যাকেটগুলো আমরা কী করতে পারি? মাসজিদের ছবিগুলোর বিষয়ে  কী  করা উচিত?

গ)
ব্যক্তিগত কার্ডের উপরে বা কোন দোকানের কার্ডের উপরে সংশ্লিষ্ট  নাম, ঠিকানা তো লেখাই থাকে ।  যেমন:
'মারইয়াম' ফার্মেসি,
প্রোপ্রাইটর : 'মুহাম্মাদ ইবরাহীম আলী', 'নবীনগর', সাভার, ঢাকা ।
অথবা,

  'মুসলিম' সুইটস, 'আল্লাহ করীম মসজিদ' মার্কেট, 'মোহাম্মদপুর', ঢাকা ।
অথবা,
সাত 'মসজিদ' রোড, 'শহীদ তাজউদ্দীন' সরণি,  বীরশ্রেষ্ঠ 'মতিউর রহমান' ,  'নূর মোহাম্মদ' পাবলিক স্কুল ও কলেজ, মুন্সী 'আব্দুর রউফ' স্কুল ও কলেজ...
এরকম আরো অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে আল্লাহর নাম, নবীগণের নাম, মারইয়াম, শহীদ, দীন,  মসজিদ এই শব্দগুলো এসেছে প্রত্যক্ষ  অথবা পরোক্ষভাবে ।

 অনেক দুনিয়াবী বইয়ের সূচনায় লেখা থাকে, 'মহান আল্লাহর অসীম রহমতে বইটি প্রকাশিত হল । ' অথবা কোন দু'আ লেখা থাকে ।  বইগুলো একটু  পুরানা হলে কেউ বিক্রি করে দেয় আর পরে  অধিকাংশ ক্ষেত্রে বইয়ের কাগজ দিয়ে ঠোংগা,  প্যাকেট এগুলো বানানো হয় ।
বই বিক্রি করে/ কোন ছাত্রকে দান করে দিলে তারপরে আল্লাহর নাম লেখা কাগজ দিয়ে ঠোংগা প্যাকেট বানানোর  কাজ যে করবে তার গুনাহের দায়ভার কী আমার উপরে পড়বে?


ঘ)

৪ -এর (গ) নং -এর ক্ষেত্রে আমি প্যাকেট / পেপার / বই থেকে ইসলামী শব্দগুলো কেটে রেখে দেই ।  তারপরে অবশিষ্ট অংশটুকু ফেলে দেই ।  দু'আ লেখা অংশগুলো পরে পুড়িয়ে ফেলি / পরিষ্কার পানিতে ফেলে দেই ।
আমার এ কাজটি কী ঠিক হচ্ছে না কী আমার বাড়াবাড়ি হচ্ছে?
৫.  সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ প্রশ্ন:

২৫শে ফেব্রুয়ারি,২০২৫ তারিখে আমি মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনে আনি ।
মিষ্টির প্যাকেটে তাদের বিভিন্ন ব্রাঞ্চের ঠিকানা দেওয়া থাকে ৷  তিনটি প্যাকেটের মধ্যেই কয়েকটি ব্রাঞ্চের ঠিকানা হিসেবে মোহাম্মদপুরের নাম লেখা আছে ।
আমি  আমার স্ত্রীকে প্যাকেটগুলা ফেলে দিতে নিষেধ করি।  কারণ, প্যাকেটগুলো থেকে আমি মোহাম্মদপুর  শব্দটি কেটে রেখে দিব (যেহেতু, মোহাম্মদপুর এলাকার নাম প্রিয় নাবী মু'হাম্মাদ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এঁর নামানুসারে রাখা হয়েছে) ।
আমার স্ত্রীও জানে যে,  আমি প্যাকেট থেকে ইসলামী শব্দগুলো কেটে রাখি অবমাননা হবার ভয়ে ৷  এটি আমার প্রায় দেড় যুগের অভ্যাস ।
কিন্তু, আমার স্ত্রী আমার এই কাজকে বাড়াবাড়ি মনে করে, পাগলামীও মনে করে । তার মতে, বাংলায় লেখা আছে, কী সমস্যা হবে ফেলে দিলে?
আমার এই কাজে সে খুবই বিরক্ত ।
তো ২৫ তারিখে সে নিষেধ করা সত্ত্বেও প্যাকেটগুলা পলিথিনের ব্যাগে ভরে ফেলেছে ।  আমি এটা দেখে বলি যে, তুমি এভাবে রেখেছো কেন? যদি এটা ময়লার ড্রামে যায় তবে আমি ড্রাম থেকে তুলে এনে কাগজ কেটে রাখবো ।
আমি নিজেই প্যাকেট থেকে লেখা কাটতে চেয়েছিলাম কিন্তু,  দেখি সেই প্যাকেট কাটতে বসেছে আর রাগে বকাবকি করছে ।  তার আর আমার  কয়েকটি কথা ছিল এরকম:
সে বলল, মোহাম্মদপুর লেখার মধ্যেও তোমার সমস্যা?
আমি বললাম, মু'হাম্মাদ নাম তো আছে ।
সে বলল, মুহাম্মাদ আর মোহাম্মদপুর একই কথা না ।  এখানে, পুর আছে, এটি জায়গার নাম ৷
আমি বললাম, তাহলে ইবরাহীম খলিল রোড তো রাস্তার নাম,  ইবরাহীম খলিল কে তাহলে? (নামের মর্যাদা দিতে হবে বলে এভাবে বলেছি) ।
সে বলল, "বাংলায় লেখা তাও তোমার সমস্যা । 'তারছিঁড়া' কোথাকার । আমি কোথাও এরকম দেখিনি কাউকে কাগজ কাটে রাখতে । তাহলে তো আরবদেশে কেউ কিছুই ব্যবহার করতে পারত না ।  সবারই আরবী নাম, ওরকম নাম । "

আমি বললাম, আরবী লেখা ফেলতে সমস্যা নেই ।  ইসলামী শব্দ ফেলে দেওয়া যাবে না ।  নিজের ঈমানের ভয় করো । যে প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে,  বুঝে শুনে তোমার কথা বলা উচিত ।
সে বলল, কার কাছে শুনেছো ফেলে দেওয়া যাবে না? দেখাও আমাকে মাস'আলা । কোথায় কাগজ কাটার কথা বলা আছে ।
আমি বললাম, যদি মাস'আলায় এভাবে কাগজ কেটে রাখার কথা আসে তখন?
সে বলল, আমি কাগজ কাটে থাকতে পারবো না ।  (অর্থাৎ,  এরকম কাগজ কাটা নিয়ে চিন্তিত থাকলে আমি যেন কাগজ নিয়েই থাকি, সে আমার সাথে থাকতে পারবে না) ।
এখন, এভাবে বলার দ্বারা তার ঈমানের কোন ক্ষতি হয়েছে কী না? এর আগেও এরকম দুই একবার বলেছিল, তখনও সতর্ক করেছিলাম । আমি তার ঈমানের বিষয়ে আশংকায় আছি ।
যদি তার ঈমানের বিষয়ে ভয়াবহ কিছু ঘটে যায় তবে করণীয় কী?

বি:দ্র: আমার স্ত্রীর ঐদিন বাসাবাড়ির কাজে খুব চাপ গিয়েছিল এবং তার হায়েয অবস্থার (সম্ভবত) আজকেই (২৫ তারিখ) শেষ দিন (হবে) । এগুলো তার মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ বলে আমার কাছে মনে হয় ।  যদিও যেই কারণে আমি কাগজ কেটে রাখি তা সে আগে থেকেই বরাবরই খুব বিরক্তিকর, অপ্রয়োজনীয় কাজ ও পাগলামি মনে করে ।
দ্রুত সমাধান জানিয়ে আমাকে বাধিত করার বিনীত অনুরোধ রইল ।

1 Answer

0 votes
ago by (68,010 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/30482/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

যেখানে সেখানে আল্লাহর নাম, রাসুলুল্লাহ সা. এর নাম লেখা ঠিক নয়। আল্লাহর নাম, রাসুলুল্লাহ সা. এর নাম লিখিত কাগজের  প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা চাই।  

,

হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয রাহ. দেয়ালে “বিসমিল্লাহ” লেখার কারণে স্বীয় পুত্রকে প্রহার করেছেন। অনুরূপ আরেকটি বর্ণনা বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. সম্পর্কেও উদ্ধৃত হয়েছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা/৪৬২৩, ৪৬২২)

,

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার জন্য করনীয় ছিলো উক্ত কাগজের সম্মান বজায় থাকে, এমন স্থানে সেটি রেখে দেওয়া। সেটি কোনো বই/খাতার ভিতরে হেফাজতে রাখতে পারেন। চাইলে উঁচু কোনো স্থানে রাখতে পারেন। চাইলে সেটি মানুষ চলাচল করেনা, এমন স্থানে পুতে রাখতে পারেন। চাইলে নদিতে রেখে আসতে পারেন।

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

,

১. যেখানে সেখানে আল্লাহর নাম, রাসুলুল্লাহ সা. এর নাম লেখা ঠিক নয়। আল্লাহর নাম, রাসুলুল্লাহ সা. এর নাম লিখিত কাগজের  প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা চাই। ইচ্ছা করে এমন কাগজ বা ব্যাগ (আল্লাহ ও রাসূলের নাম লেখা) যেখানে সেখানে ফেলে দিলে গোনাহ হবে।

২ ও ৪. বাংলায়ও আল্লাহ ও তার রাসূলের নাম বা বিসমিল্লাহ লেখা থাকলে তার সম্মান করতে হবে। যেখানে সেখানে ফেলে দিলে গোনাহ হবে।

৩. স্থানের নাম এভাবে বলতে পারবেন।

৫. মসজিদ বা মাদ্রাসার ছবি মাটিতে পড়াতে কোনো গোনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।

আর বাকী মাসআলা নিকটস্ত ইফতা বিভাগ থেকে জেনে নিবেন ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...