আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
122 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (17 points)
السلام عليكم و رحمة الله و بركاته

এক বোনের প্রশ্ন,

এত বড় প্রশ্নের জন্য খুবই আফওয়ান। মেহেরবানী করে বিস্তারিত উত্তর দিবেন শায়েখ।

আমি আসলে একটা হারাম রিলেশনে ছিলাম দীর্ঘদিন। কয়েক বছরের হারাম রিলেশন। এরপর আমি যখনই হিদায়াত পাই, সাথে সাথে বের হয়ে আসি হারাম থেকে। ওই মানুষটা অনেক ট্রাই করতো আমাকে ফেরানোর। আমি ফিরতাম না। এরপর সে একসময় আমাকে পাগল করে ফেলে যেমন প্রতিনিয়ত মেসেজ করতে থাকতো, ব্লক করা সত্ত্বেও ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিতো। আমি আমার ফ্যামিলির ভয়ে তাকে থামিয়ে রাখতে মাঝে মাঝে রিপ্লাই করে বুঝাতাম। এরপর ফুল্লি সরে আসি আবার। বাট অনেক অ্যাটাচমেন্ট ছিল। এরপর সে ফোর্স করতে শুরু করে যে সেও তওবা করবে হারামের জন্য আমি তো প্রতিনিয়ত করতাম। করে সে বিয়ের প্রপজাল দিবে বাসায়। তবে আমার ফ্যামিলি এই বয়সে বিয়ে দিবে না তাদের জন্য আমার ক্যারিয়ার ই সব। তাই সে আগায় নি। আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়ে আমার মত একাই থাকি। কিন্তু সে হাল ছাড়তো না। কথা হতো না কখনো ফোনে তারপরও সে মেইল করতো। আমি সিন করে ফেলে রাখতাম। আল্লাহর উপর ভরসা করে তার কাছে ফিরে যাইনি আর। হুট করে আমি বাসার ঝামেলায় পাগল পাগল লাগছিল। এক্সাম দিতে গিয়ে এতটা অসুস্থ লাগছিল যে হলে না গিয়ে বাইরে বসে ছিলাম। বাসায় এক্সাম দেইনি বলার সাহস পাইনি এতটা ভয় পাই উনাদের। ফেইস করতে ভয় পাচ্ছিলাম। রাস্তায় বসেই কাদছিলাম। আমার ওই মানুষটাকে আমি নিজেই ডেকেছিলাম। সে তার ফ্যামিলির মতামতে আমাকে ওইদিন বিয়ে করে। (তার মা আমার কথা জানতো আগে থেকে) কিন্তু আমার মাথায় কিছু ছিল না সেদিন। এমন প্ল্যানও ছিল না।

এরপর আমার বাসায় জানানোর পর আমাকে তাজ্য করে দেয় ফোনে। আমি কথা বলিনি শুধু শুনেছি। কিন্তু আমার কিছু বান্ধবী জানতো আমি হারাম থেকে বের হয়েছিলা আর অনেক যুদ্ধ করেছি তাকে আটকানোর। তাই ওরা ভেবেছিল আমাকে ফোর্স করে বিয়ে করেছে। ওরা বাসায় বলে আমাকে ফেরত আনতে। এরপর আমার ফ্যামিলি পুলিশ আর নিজেরা চেষ্টা করে আমাকে ফেরত আনে। আর ফেরত আনার টাইমে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আমাকে ফেরত আনার টাইমে আমার বাবা মা, ভাই ডিভোর্সের পেপার্স নিয়ে যায়। ওইখানে আমাকে দিয়ে সাইন করিয়ে আমাকে বাসায় নিয়ে আসা হয় আর ওই ফ্যামিলিকে অনেক থ্রেট করা হয়। যে ছেলেকে মেরে ফেলবে। আমি উনার ফ্যামিলি বা আর্থিক অবস্থা নিয়ে অবগত ছিলাম না। আমার ফ্যামিলির মতে তাদের কুফু আমাদের থেকে অনেক নিম্নমানের যা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবেনা। আর আমি ভয়ে কথা বলতে পারিনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। এতটা অসুস্থ যে আমার সেন্স বারবার হারিয়ে ফেলছিলাম। তাই অনেক দ্রুত আমার হাত দিয়ে আমার আম্মুই সাইন করে। পরবর্তীতে আমাকে একটু সুস্থ করে বাকি সাইন করানো হয়।বাট ছেলে রাজি ছিল না। সে বার বার বলছিল সে তালাক দিবে না আর আমাকে নাকি তালাকের রাইট সে দেয় নি। আমার ফ্যামিলি বিয়েটাকেই মানে নি। তারা তেমন খেয়ালও করেনি যে ছেলের সাইন নেওয়া হয়নি। আমার অসুস্থতার জন্য মূলত তাড়াহুড়ো করে আমাকে নিয়ে আসে। অথচ তার সাইন নেয় নি। কিচ্ছু করানো হয়নি তাকে দিয়ে।
এখন ছেলে আমাকে আমার কাজিনের মাধ্যমে জানিয়েছে যে, সে কয়েকজন আলেমের থেকে খোজ নিয়েছে যে তালাক নাকি হয় নি। ছেলের ফ্যামিলি জানে তালাক হয়নি। তারপরও তারা ছেলেকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে এখনই যেনো আমাকে ভুলে যায় (যেহেতু আমার ফ্যামিলি তাদের অনেক ভাবে ইনসাল্ট করেছে,সেই রাগে তারা ছেলেকে বিয়ে দিতে চায়) কিন্তু ছেলে রাজি না। সে কোনোভাবেই রাজি না। আর আমার বাসায় জানেনা যে ডিভোর্স সম্পূর্ণ হয় নি। জানলে ছেলেকে মেরে সাইন করাবে আর ছেলে জানিয়েছে তাকে মেরে ফেলা হলেও সে সাইন করবেনা। অলরেডি সেদিন তাকে মারা হয়েছে সবার সামনে ডিভোর্স দিবেনা বলায়।

আমি কাউকে কিছু বলতে পারছি না। আমি অনেক ভুল করেছি। তবে এখন প্রতিমুহূর্তে আমি আমার রবের কাছে মাফ চাচ্ছি। কিন্তু আমি জানিনা কেন, আমার কাছে এই বিয়ের সম্পর্কটা অনেক কিছু মনে হচ্ছে। আমার জন্য খুব কঠিন মনে হচ্ছে তাকে ছেড়ে দেওয়া। আবার ফ্যামিলির দিক থেকেও কষ্ট পাচ্ছি। শেয়ার করতে পারছিনা নিজের মায়ের সাথেও। আমার মা খুবই বেশি দুনিয়াবী একজন মানুষ (আল্লাহ তাকে হিদায়াত দান করুন) তাই তার কাছে দুনিয়ার সাফল্যই সব। তার মতে আমার ক্যারিয়ার গড়ে সো কল্ড সাক্সেসফুল উইমেন হতে হবে। সে আমাকে প্রতিনিয়ত বুঝাচ্ছে, লাইফে বিয়ে কিছুইনা। এসব কথা মনেও করা যাবেনা কাউকে শেয়ারও করা যাবেনা। বরং আমার ভুলে যেতে হবে আমার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু আমার অনুভূতি আমি আমার রব ছাড়া কারো সামনে প্রকাশ করতে পারছিনা আর কাউকে বুঝাতে গেলে নির্যাতনের শিকার হবো। ভয়ে চুপ করে সবর করছি।


এই মুহূর্তে আমার করণীয় কী? ছেলে যদি দ্বীনদার না হয় তাহলে ডিভোর্স দেয়াই কী উচিৎ নয়? আর যদি সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখা উচিৎ হয় তাহলে সেটা কীভাবে?

1 Answer

0 votes
by (596,520 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ عَنْ مُوسَى بْنِ أَيُّوبَ الْغَافِقِيِّ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ سَيِّدِي زَوَّجَنِي أَمَتَهُ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنِي وَبَيْنَهَا قَالَ فَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَا بَالُ أَحَدِكُمْ يُزَوِّجُ عَبْدَهُ أَمَتَهُ ثُمَّ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَهُمَا إِنَّمَا الطَّلَاقُ لِمَنْ أَخَذَ بِالسَّاقِ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার মনিব তার বাঁদীকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে। এখন সে আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে আরোহণ করলেন, অতঃপর বলেনঃ হে লোকসকল! তোমাদের কারো এরূপ আচরণ কেন যে, সে তার গোলামের সাথে তার বাঁদীর বিবাহ দেয়, অতঃপর তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়? নারীর ঊরু স্পর্শ করা যার জন্য বৈধ, তালাকের অধিকার তার।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ২০৮১.বায়হাকী ৯/১৫৭, ইরওয়াহ ২০৪১।)

★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  মহিলা নিজের উপর কেবল তখনি তালাক পতিত করতে পারবে, যদি স্বামী তাকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকে।
এটি নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে হ্যাঁ লেখার মাধ্যমেই হোক,বা পরবর্তীতে মৌখিক বা লিখিত ভাবেই হোক।
,  
সুতরাং স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করে,আর স্ত্রী স্বামী কর্তৃক তালাকে তাভবিজের ক্ষমতাবলে লিখিত বা মৌখিকভাবে নিজের নফসের উপর তালাক দিয়ে দিলে সেটি পতিত হয়ে যাবে।

আরো জানুনঃ 

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ
   
قال لھا: طلقي نفسک ولم ینو أو نوی واحدة فطلقت وقعت رجعیة الخ (الدر المختار مع رد المحتار، کتاب الطلاق، باب الأمر بالید، ۴: ۵۷۵، ط: مکتبة زکریا دیوبند)۔
সারমর্মঃ
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে,তুমি তোমার নিজের নফসকে তালাক দাও,কোনো নিয়ত না করে,অথবা এক তালাকের নিয়ত করে,অতঃপর স্ত্রী তালাক দেয়,তাহলে এক তালাকে রজয়ী পতিত হবে।     

رجل قال لامرأتہ خذي طلاقک، فقالت: أخذت، یقع الطلاق۔ (الفتاویٰ الہندیۃ، کتاب الطلاق / الفصل الثاني في إیقاع الطلاق ۱؍۳۵۹)
সারমর্মঃ
কোনো ব্যাক্তি যদি তার স্ত্রীকে বলে,তুমি তোমার তালাক গ্রহন করো।
স্ত্রী যদি বলে যে গ্রহন করলাম,তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে।    

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
স্বামীর বক্তব্য অনুপাতে তিনি যেহেতু আপনাকে তালাকের অধিকার দেননি,সুতরাং আপনার দেয়া তালাক পতিত হয়নি।

আপনি এখনো তার বৈধ স্ত্রী হিসেবেই আছেন।

এক্ষেত্রে পরিস্থিতি যেহেতু মারাত্মক পর্যায়ে চলে গিয়েছে,তালাক ছাড়া যেহেতু ফিরে আসার কোনো সুযোগ আপনার পরিবার আপনাকে দিবেনা,সুতরাং এমতাবস্থায় স্বামীকে বুঝিয়ে তার থেকে তালাক নেয়ার পরামর্শ থাকবে। 

অন্যথায় আদালতের শরণাপন্ন হয়ে খোলা তালাক নিতে পারেন।

তালাকের পর ইদ্দত পালনের পর দ্রুত অন্যত্রে বিবাহের পরামর্শ থাকবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...