আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
96 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম। আমি আলহামদুলিল্লাহ দ্বীন মেনে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করি। আমার ফ্যামিলি আলহামদুলিল্লাহ দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করে। আমার ছোট থেকেই যেকোনো জিনিস বিস্তারিত জানার প্রতি কিউরোসিটি অনেক বেশি থাকে। আমি দ্বীন মেনে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও আমার একটা বড় ধরণের সমস্যা হচ্ছে বহুবিবাহ জিনিসটা আমি মেনে নিতে পারিনা। একারণে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বহুবিবাহ নিয়েও আমি অনেক দ্বিধায় ছিলাম,বারবার মনে হতো রাসূল (সাঃ) এতোগুলো বিবাহ কেন করেছিলেন? পরে জেনেছিলাম নবী (সাঃ) প্রয়োজনেই বিবাহ করতেন। তারপরেও শয়তান বিভিন্ন কুমন্ত্রণা দিতো। কিন্তু এখন আর সেটা নিয়ে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু এখন সমস্যা হলো আরেকটা জিনিস নিয়ে, আমি নিজেও জানি নবী (সাঃ) এর বৈবাহিক জীবন নিয়ে দ্বিধা পোষণ করা কতোটা জঘণ্য কাজ!  কিন্তু আমি নিজেকে বোঝানোর জন্য হলেও এই একটা জিনিসের উত্তর চাই,নয়তো শয়তান হয়তো আমাকে আরোও দ্বিধায় ফেলে ক্ষতির পথে নিয়ে যাবে। 

 

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীদের সংখ্যা ঐতিহাসিক বর্ণনামতে ১১ থেকে ১৩ জনের মধ্যে বলে উল্লেখ করা হয়। সাধারণভাবে ১১ জন স্ত্রী নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। আর বাকি দু'জন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে (রাইহানা বিনতে জায়েদ ও মারিয়া কিবতিয়া) সম্পর্ক ছিল, তবে তারা স্ত্রী নাকি দাসী ছিলেন, এ বিষয়ে বিতর্ক আছে।

 

আমার প্রথম প্রশ্ন হলো কেন মহানবী (সাঃ) ১১ জন স্ত্রী থাকা সত্যেও আরও দুজনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন?তারা দু'জন তো ইতিহাসে তেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেননি,আমার জানা মতে।আর যদি এটাও বলতেন মহানবী (সাঃ) এর বহুবিবাহ এর কারণ, তাহলে আমার মধ্যে আর কোনো সংশয় কাজ করতো না।

 

আমার এবারের প্রশ্ন হলে আমাদের সমাজ নিয়ে। আমাদের সমাজ রেগুলার বহুবিবাহকে প্রচুর সহজ লভ্য করে তুলেছে,কিন্তু আদৌও কি সেটি সঠিক? রেগুলার দেখা যায় স্বামী যে-কোনো একজন স্ত্রীর প্রতি বেশি ঝুঁকে যাচ্ছেন। কিংবা ভরনপোষণ ঠিকঠাক মতো দিলেও, একজন স্ত্রীকে অন্য জনের থেকে বেশি সময় দিচ্ছেন,বেশি ভালোবাসেন (যদিও এটি মনের উপর নির্ভরশীল,তাই এটিকে তেমন ফলাও করে দিখছি না, আমি এটি দ্বারা বোঝাতে চেয়েছি একজনের বেশি কেয়ার করছেন,খেয়াল রাখছেন, সময় দিচ্ছেন ইত্যাদি,অন্যদিকে আরেকজন স্ত্রীকে তেমনভাবে ভালোবাসেন না)।আমার কথা হচ্ছে, একজন স্বামীর উচিত তার স্ত্রীকে ভালবাসা,তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা (যদি স্ত্রী ভালো হয়)। কিন্তু দেখা গেলো একজন স্বামীর স্ত্রী মারা গেলো মাসও ফুরায়নি সে বিয়ে করেছে,তার মৃত স্ত্রীর কথা ভুলেই গেলো৷ অথচ তার কি উচিত ছিলো না তার মৃত স্ত্রীর জন্য দুয়া করা?এটা করা কি তার ঠিক হয়েছে? (সেটা অন্য কথা যদি স্ত্রী ভালো না হয়ে থাকে এটা একটা প্রশ্ন)

 

এখন এটা থেকে আমার বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে।

 

১.কোনো স্বামী যদি উপরে বর্নিত আচরণ করে থাকে তার স্ত্রীর সাথে সেটা কি ঠিক?

 

২.কোনো স্বামী কি তার স্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিবাহ করতে পারেন?

 

৩.কোনো স্বামী যদি সমতা বজায় রাখতে না পারে এবং উপরে বর্ণিত আচরণ করার সম্ভবনা থাকে তাহলে কি সে বহুবিবাহ করতে পারবে?

 

৪. আমি নিজে যেহেতু একজন মেয়ে এবং আমি যে বহুবিবাহ পছন্দ করি না (কেউ যদি একান্ত প্রয়োজনে বিবাহ করে যেমন: স্ত্রী মারা গিয়েছে,বাচ্চা পালনের জন্য কাউকে প্রয়োজন ইত্যাদি সেসব ঠিক আছে। কিন্তু বিধবাকে সাহায্য করা সহ অন্য যে সকল কারণ আছে সে-সব আমি ঠিক মানতে পারি না।)  এতে কি আমার গুনাহ হচ্ছে? হলে আমার করণীয় কি?আমাকে বহুবিবাহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বলবেন দয়া করে যাতে আমি আমার চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে পারি

৫.কেউ যদি ২য় বিবাহের সময় আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলে সে সমতা রক্ষা করতে পারবে,কিন্তু বিয়ের পর দেখা গেলো সে সমতা রক্ষা করতে পারছে না তাহলে তার করণীয় কি?

by (16 points)
আপু, এগুলো পড়ুন, সব সংশয় চলে যাবে ইংশাআল্লাহ। 

বিবাহ সম্পর্কিত:
১. https://response-to-anti-islam.com/show/রাসূল-(সা)-এর-বৈবাহিক-জীবন-সংক্রান্ত-বিভিন্ন-অভিযোগের-অপনোদন-/153
২. https://response-to-anti-islam.com/show/যে-বিয়ে-আকাশে-হয়েছিল-/60
৩. https://response-to-anti-islam.com/show/নবী(ﷺ)-কি-৯-বছর-বয়সে-আয়েশা(রা.)-এর-সাথে-সহবাস-করেন--/326
৪. https://response-to-anti-islam.com/show/আয়িশাহ-(রা.)-এর-মতে-তিনি-৯-বছর-বয়সে-প্রাপ্তবয়স্কা-ছিলেন-/321
by (2 points)
+1
জাজাকুমুল্লাহি খইরন বোন। আমি পড়েছি আলহামদুলিল্লাহ। সত্যিই উপকৃত হয়েছি,জাজাকুমুল্লাহি খইটন,আমাকে এগুলো বের করে দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়া’লা আওনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।

1 Answer

0 votes
by (591,570 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://www.ifatwa.info/6683 নং ফাতওয়ায় বর্ণিত রয়েছে ,
শরীয়তের বিধান মতে একাধিক স্ত্রীর মাঝে যদি ইনছাফ করতে পারে,তাহলে প্রয়োজনের স্বার্থে একাধিক বিবাহ করতে পারবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন
فانكحوا ما طاب لكم من النساء مثنى وثلاث ورباع 
তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)।(সুরা : নিসা, আয়াত-৩)

দ্বিতীয় বিয়ে করার ইসলামী শর্ত বেশ কঠিন অনেক কড়া। আগের স্ত্রীর সব ধরনের হক আদায়ের পর নতুন বিয়ের পরেও সমান তালে সব অধিকার পালন করার আত্মবিশ্বাস থাকলেই কেবল যৌক্তিক কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায়।
قال اللہ تعالی:فإن خفتم ألا تعدلوا فواحدة الآیة (سورہ نسا، آیت:۳)
 আল্লাহতায়ালা বলেন, একাধিক বিয়ের সুবিধা যাদের আছে, তারা যদি সম অধিকার বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভীত হও, তাহলে এক বিয়ে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক। 
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/6683

একাধিক স্ত্রীর মাঝে দুই বিষয়ে সমতা রক্ষা করা অতীব প্রয়োজন। স্ত্রীদের সঙ্গে রাতযাপন ও ভরণ-পোষণ। 

এ দুই অধিকার সব স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমানভাবে স্বামীকে পালন করে যেতে হবে। কোন স্ত্রী সুন্দর বা অসুন্দর, আর কোনটি কুমারী বা বিধবা তা পার্থক্য করা যাবে না। 

কিন্তু কোনো স্ত্রীর প্রতি মনের ভালোবাসা বেশি হওয়া, আবার অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হওয়া তা সমতার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, এটি মনের বিষয়, আর মনের ওপর কারও কোনো অধিকার নেই। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে শুধু রাতযাপন ও খরচাপাতি এ দুই বিষয়ে সমতা ধর্তব্য। এটাই হলো একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষার ইসলামি শরিয়তের বিধান। 

হাদিসে আছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে পালাবণ্টন করতেন এবং ন্যায়বিচার করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি-সামর্থ্যানুযায়ী পালাবণ্টন করলাম। সুতরাং যাতে শুধু তোমার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমার শক্তি নেই। কাজেই তাতে তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করো না। (তিরমিজি : ১১৭০, আবু দাউদ : ২১৩৬)।

কোনো ব্যাক্তির যদি একাধিক বিবাহ বাস্তবেই খুবই প্রয়োজন হয়, বর্তমান স্ত্রী দ্বারা যদি তার শারিরীক চাহিদা ও অন্যান্য আবশ্যকীয় হক আদায় না হয়,আর সেই একাধিক স্ত্রীর চাহিদা পূরন করতেও সক্ষম হয়,তাদের ভরনপোষণ এর ব্যপারেও পূর্ণ সক্ষম হয়,আর একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শরীয়তের শর্তাবলী পূর্ণ ভাবে মানার উপরেও সক্ষম হয়,তার জন্য একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলাম অনুৎসাহিত নয়।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন,
(০১)
এটা ঠিক নয়। 
মৃত স্ত্রীর জন্য অবশ্যই দুয়া করতে হবে।

তবে বিবাহ না করলে গুনাহ হওয়ার আশংকা থাকলে সেক্ষেত্রে এভাবে দ্রুত বিবাহ করা নাজায়েজ নয়।

(০২)
এমতাবস্থায় ইসলামের দেয়া যাবতীয় শর্তাবলী মেনে চলতে পারলে এবং একাধিক বিবাহ তার জন্য অতি আবশ্যকীয় হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে সে বিবাহ করতে পারে।

(০৩)
না,পারবেনা।

(০৪)
নারী হিসেবে এমন ভাবনা স্বাভাবিক হিসেবে কারো মনের মধ্যে আসতে পারে।

তবে ইসলামিক শরীয়তের সমস্ত শর্তাবলী মেনে বিবাহ করার পর সে বিবাহকে নাজায়েজ মনে করা বা ঘৃণার চোখে দেখা এটা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করার পরামর্শ থাকবে। 

ইসলাম ধর্মে শর্তসাপেক্ষে একাধিক বিয়ে (চারটির কম) অনুমোদিত হওয়ার পেছনে কী কী যুক্তি রয়েছে—তার মধ্য হতে কয়েকটি বর্ণনা করা হলোঃ

১। একাধিক বিয়ের বিষয়টি ইসলামই প্রথম বিশ্বের সামনে নিয়ে আসেনি। এর নজির বিশ্বে বহু আগে থেকে রয়েছে। পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যেও প্রচলিত ছিল। আগের আসমানি কিতাবগুলোতে একাধিক বিয়ের কথা আছে। কয়েকজন নবী একাধিক নারী বিবাহ করেছিলেন। হজরত সুলাইমান (আ.)-এর ৯০ জন স্ত্রী ছিলেন। রাসুল (সা.)-এর সময় এমন কিছু ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, যাঁদের আটজন অথবা পাঁচজন স্ত্রী ছিলেন। রাসুল (সা.) তাঁদের চারজন স্ত্রী রেখে বাকিদের তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

২। প্রত্যেক দেশেই পুরুষের তুলনায় নারীদের শক্তি দ্রুত বার্ধক্যের শিকার হয়ে থাকে। যেখানে পুরুষের যৌবন পুরোপুরি অটুট থাকে এবং নারী বুড়ি হয়ে যায়, সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে করা এত জরুরি হয়ে দাঁড়ায়, যেমন আগে প্রথম স্ত্রী বিবাহ করা আবশ্যক হয়েছিল। যে আইন একাধিক স্ত্রী নিষিদ্ধ হওয়ার কথা বলে, প্রকারান্তরে সে আইন ওই সব পুরুষকে নিজ কামশক্তি ব্যভিচারের মাধ্যমে প্রয়োগের ইঙ্গিত করে, যাদের যৌনশক্তি সৌভাগ্যক্রমে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত অটুট থাকে। এমন আইন কিভাবে সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুকূলে হতে পারে?

৩। পুরুষদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যাদের মধ্যে প্রবল শারীরিক চাহিদা বিদ্যমান, যাদের জন্য একজন স্ত্রী যথেষ্ট নয়। যদি এমন একজন ব্যক্তির জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তাকে বলা হয় যে তোমার জন্য একাধিক স্ত্রী রাখা অনুমোদিত নয়, তাহলে এটি তার জন্য কঠিন কষ্টের কারণ হবে এবং তার জৈবিক চাহিদা তাকে হারাম পথে পরিচালিত করবে।

[sb ]৪। একজন স্ত্রী হয়তো বন্ধ্যা হতে পারে অথবা অসুস্থ হওয়ার কারণে তার সঙ্গে তার স্বামী দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। অথচ একজন স্বামীর সন্তানের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, আর এর একমাত্র উপায় হলো অন্য একজন স্ত্রীকে বিয়ে করা।

৫। নারী সব সময় এমন থাকে না যে স্বামী তার সঙ্গে সহাবস্থানে থাকতে পারে। প্রথম কারণ, প্রত্যেক নারীর জন্য মাসের কোনো এক সময় এমন অতিবাহিত হয় যখন তাকে পুরুষ থেকে দূরে থাকতে হয়। দ্বিতীয়ত, গর্ভকালীন অবস্থা। অর্থাৎ নারীকে নিজ ও নিজের সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষার তাগিদে কয়েক মাস ধরে স্বামীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হয়।একজন নারীর প্রতি মাসে ঋতুস্রাব (হায়েজ) হয়, আর যখন তিনি সন্তান প্রসব করেন তখন তার ৪০ দিন পর্যন্ত রক্তপাত (নিফাস) হয়। সে সময় একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করতে পারে না। কেননা হায়েজ ও নিফাসের সময় সহবাস করা হারাম এবং এটি যে ক্ষতিকারক তা মেডিক্যালি প্রমাণিত। এসব সময় নারীর জন্য কুদরতি প্রক্রিয়ায় স্বামীর সংস্পর্শ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে স্বামীর জন্য স্ত্রীর সংস্পর্শে যেতে কোনো বাধা-নিষেধ থাকে না। তখন যদি কোনো পুরুষের কামভাব চরমে পৌঁছে যায়, তাহলে একাধিক স্ত্রী ছাড়া তার জন্য কী-ই বা উপায় থাকে?তাই ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হলে একাধিক বিবাহ করা অনুমোদিত।

৬। একাধিক বিয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
এটি জানা কথা যে শুধু বিয়ের মাধ্যমেই সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় এবং একাধিক বিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত বংশধরদের সংখ্যা একজন স্ত্রীকে বিয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত বংশধরদের সংখ্যার চেয়ে বেশি হবে। আর বংশধরদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে শক্তিশালী করা যায় এবং উম্মাহর কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়, যা তাদের অর্থনৈতিক মান উন্নয়ন করতে সক্ষম, যদি রাষ্ট্র মানবসম্পদের উন্নয়নে যথাযথভাবে কাজ করে। আর হ্যাঁ, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কখনো কখনো কিছু সংকট দেখা যায়। এটি মূলত রাষ্ট্রের অপব্যবস্থাপনার কারণে এবং সম্পদের সুষম বণ্টন না থাকার কারণে। উদাহরণস্বরূপ চীনকে দেখুন। বাসিন্দাদের সংখ্যা অনুপাতে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতি এবং এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং অন্য দেশগুলো চীনকে বিপর্যস্ত করার আগে কয়েকবার চিন্তা করতে বাধ্য। আর এটি বিরাট শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি। এর কারণ হলো, তারা তাদের জনসংখ্যার আধিক্য দেখে ভয় পায়নি, বরং মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

৭। গোটা বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারীদের সংখ্যা পুরুষদের সংখ্যার চেয়ে বেশি।
যদি প্রত্যেক পুরুষ শুধু একজন নারীকে বিয়ে করে, তাহলে তার অর্থ এই দাঁড়াবে যে কিছু নারীকে স্বামী ছাড়াই থাকতে হবে, যা তার ওপর এবং সমাজের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করবে। এটি তার জীবনকে সংকীর্ণ করার পাশাপাশি তাকে বিপথগামিতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। এবং এর মাধ্যমে সমাজে অনাচারের পথ প্রশস্ত হতে পারে।

৮। পুরুষরা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়, যা তাদের জীবননাশের কারণ হয়ে থাকে
কারণ তারা সাধারণত বিপজ্জনক পেশায় কাজ করে থাকে। কখনো কখনো যুদ্ধ ক্ষেত্রে লড়াই করে। এবং এতে নারীদের তুলনায় পুরুষরা বেশি সংখ্যায় নিহত হয়ে থাকে। এটি হলো স্বামীবিহীন নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর তার একমাত্র সমাধান হলো একাধিক বিয়ে।

৯। এমনটি হতে পারে যে একজন নারী একজন ব্যক্তির আত্মীয়া এবং তার দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই এবং সে একজন অবিবাহিত নারী অথবা একজন বিধবা নারী। ওই নারীর জন্য এটি একটি উত্তম ব্যবস্থা যে তাকে প্রথম স্ত্রীর পাশাপাশি দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে নিজের পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া, যেন সে ওই নারীকে পবিত্র রাখতে পারে এবং তার জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারে। তাকে একাকী ছেড়ে দেওয়া এবং তার জন্য শুধু অর্থ ব্যয় করার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ করার চেয়ে এ পন্থা অধিক উত্তম।

১০। ইসলামী শরিয়ত একটি শক্তিশালী সমাজকাঠামো দেখতে চায়। এ ক্ষেত্রে পরিবারগুলোর মধ্যকার বন্ধন শক্তিশালী হওয়া, অথবা কোনো নেতার সঙ্গে কিছুসংখ্যক লোক বা জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক শক্তিশালী হওয়ার বৃহত্তর স্বার্থ থাকতে পারে। যেমনটা দেখা যায়, মহানবী (সা.)-এর জীবনে। তাঁর কোনো কোনো বিয়ে ছিল এ ধরনের বৈরী লোকদের সঙ্গে বংশীয় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে সন্ধি স্থাপনের নিমিত্তে। আর অন্যতম একটি উপায় হলো একাধিক বিয়ে করা।
(সংগৃহীত)

(০৫)
এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই সমতা বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েই যেতে হবে।

অন্যথায় হাদীসে বর্ণিত শাস্তি তার ভোগ করতে হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...