আল্লাহ তাআলা বলেন,
ظَہَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَہُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ ﴿۴۱﴾
“জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (সুরা রূম : ৪১)
আমাদের বিপদাপদ যদিও পাপের কারণে হয়, কিন্তু দয়াময় আল্লাহ তাআলা আমাদের সব গুনাহের পরিণামে শাস্তি দেননা। পদেপদে আমরা যেভাবে গুনাহ করছি, আল্লাহ তাআলা যদি আমাদের সব গুনাহের শাস্তি দিতেন তবে তো আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতেই পারতাম না। আল্লাহ তাআলা আমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং শাস্তি বাতিল করেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ مَاۤ اَصَابَکُمۡ مِّنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فَبِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ یَعۡفُوۡا عَنۡ کَثِیۡرٍ ﴿ؕ۳۰﴾
“তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। আর অনেক গুনাহ তিনি (আল্লাহ) ক্ষমা করে দেন।” (সুরা শুরা : ৩০)
সুতরাং বুঝা গেল আমরা যে পরিমাণ গুনাহ করি আল্লাহ সে অনুযায়ী শাস্তি দেন না; বরং অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
বান্দার কিছু বিপদ পূর্বে থেকেই নির্ধারিত যা আল্লাহ তাআলা বান্দার পরীক্ষার জন্য দিয়ে থাকেন। কখন, কিভাবে, কোথায় ও কী পরিমাণ শাস্তি হবে তা আগে থেকেই লিপিবদ্ধ। এরূপ বিশ্বাসের ফলে বিপদের কারণে বান্দার দুঃখবোধ হয়না। পক্ষান্তরে বিপদ থেকে মুক্তি পেলে অহংকার প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকেনা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَاۤ اَصَابَ مِنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ نَّبۡرَاَہَا ؕ اِنَّ ذٰلِکَ عَلَی اللّٰہِ یَسِیۡرٌ ﴿ۚۖ۲۲﴾
لِّکَیۡلَا تَاۡسَوۡا عَلٰی مَا فَاتَکُمۡ وَ لَا تَفۡرَحُوۡا بِمَاۤ اٰتٰىکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرِۣ ﴿ۙ۲۳﴾
“পৃথিবীতে এবং তোমাদের ব্যক্তিগতভাবে যে বিপদ আসে তা আমার জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। আর এটা এজন্য যে, যাতে তোমরা যা হারাও তার জন্য দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদের যা দেন তার জন্য উল্লসিত না হও। আর আল্লাহ তাআলা কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” (সুরা হাদীদ : ২২,২৩)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
“আল্লাহ তাআলার নির্দেশ ব্যতীত কেনো বিপদ আসেনা, আর যে আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ তাআলা সব বিষয়ে জানেন।” (সুরা তাগাবুন : ১১)
হাদীসে এসেছে, “আল্লাহ্ তা'আলা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে যাবতীয় তাকদীর নির্ধারণ করে নিয়েছেন”। [মুসলিম: ২৬৫৩]
আলোচ্য আয়াত দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তাকদীরে বিশ্বাসী মুমিন যখন বিপদে পতিত হয়, তখন তার অন্তরকে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে স্থির বিশ্বাস স্থাপন করে দেন যে, যা কিছু হয়েছে, আল্লাহ তাআলার অনুমতি ও ইচ্ছায় হয়েছে। যে বিপদ তাকে স্পর্শ করেছে, তা অবধারিত ছিলো। কেউ একে ফেরাতে পারত না। আর যে বিপদ থেকে সে মুক্ত রয়েছে, তা থেকে মুক্ত থাকাই তার জন্য অবধারিত ছিলো। (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন, সংক্ষেপিত, পৃ.-১৩৭৮)
আপনার বাবা যে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বিদেশে থেকে এভাবে দেশে টাকা পাঠিয়েছেন, আপনার বাবার হয়তোবা কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে, যার কারণে এত বড় অন্যায় কাজ আপনার চাচারা করতে সাহস পেয়েছে।
এক্ষেত্রে আল্লাহর থেকে নিরাশ হওয়ার কোন সুযোগ নেই, সর্বোপরি আল্লাহই তো আপনাদের সাহায্য করবেন,তিনি সৃষ্টি কর্তা তার উপর অবশ্যই ঈমান রাখতে হবে, ভরসা রাখতে হবে।
আপনারা আপনার চাচার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন, পাশাপাশি আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে সাহায্য চাইবেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সাহায্য অবশ্যই করবেন।