ভাড়াগ্রহীতা থেকে ভাড়া চুক্তির সময় অগ্রিম কিছু অর্থ গ্রহণের দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
১. ভাড়াদাতা জামানত হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে একটি অংকের অর্থ গ্রহণ করে থাকে। ভাড়া-চুক্তি শেষে তা আবার ভাড়াগ্রহীতাকে ফেরত দিয়ে দিতে হয়। যাকে সিকিউরিটি মানি বলে।
২. ভাড়ার অগ্রিম হিসেবে ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং প্রতি মাসেই এর থেকে কিছু কিছু করে ভাড়া কাটা হয়। যাকে এ্যাডভান্স বলে।
সিকিউরিটি মানি তথা জামানত হিসেবে যে অর্থ ভাড়াদাতার নিকট জমা রাখা হয় তা বন্ধক হিসেবে থাকে। আর বন্ধকী বস্তু ব্যবহার করা জায়েয নয়। তা ব্যবহার করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার নিকট এক ব্যক্তি একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে। আমি এতে আরোহন করেছি। (এর কী হুকুম?) তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তুমি এর পিঠ থেকে (আরোহন করে) যে উপকৃত হয়েছ তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। ( মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৫০৭১)
বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯)
সুতরাং ভাড়াদাতার জন্য সিকিউরিটি মানি ব্যবহার করা কোনোভাবেই জায়েয নয়।
আর এক্ষেত্রে সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে ঋণ হিসেবে নিলে তা ব্যবহার করা যাবে বলে অনেকে বলে থাকে,তা ঠিক নয়। কেননা সিকিউরিটি মানির টাকাকে ঋণ ধরা হলে যেক্ষেত্রে সিকিউরিটি মানির কারণে ভাড়া কম নেওয়া হবে সেক্ষেত্রে ঋণের কারণে ভাড়া কম নেওয়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। আর ঋণের কারণে কোনো সুবিধা ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া এভাবে একটি চুক্তির সাথে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করে কারবার করাও নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
তাই সিকিউরিটির টাকা ভাড়াগ্রহীতা থেকে করয হিসাবে নেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। বরং ভাড়াদাতা নিজে ব্যবহারের জন্য ভাড়াগ্রহীতা থেকে এককালীন কিছু অর্থ নিতে চাইলে তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়া হিসাবে নিতে পারবে। যা চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া হিসেবে কর্তিত হবে।
(মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬২৮; শরহুল মাজাল্লা, খালিদ আতাসী ৩/১৪৫, ১৯৬; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৩৫, ২১/১০৮)
তবে এক্ষেত্রে এ্যাডভান্স তথা অগ্রিম ভাড়ার পদ্ধতিটি গ্রহণ করা জায়েজ।
এতে করে দোকান বা বাড়ির মালিক একত্রে বেশি টাকাও নিতে পারে এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধও বটে।
প্রশ্নে উল্লেখিত শুরুতে উক্ত এডভান্সের টাকা হতে যদি প্রতি মাসেই ভাড়ার টাকা হিসেবে কাটা হয় তাহলে সেই অ্যাডভান্সের টাকা নেওয়া আপনাদের জন্য জায়েজ আছে এবং তা খরচ করাও আপনাদের জন্য জায়েজ আছে।
তবে যদি এটি সিকিউরিটি মানি হয়, অর্থাৎ দোকান ভাড়ার সময় কিছু টাকা দেওয়া হয় হলো, দোকান ছেড়ে দিলে তখন এই পুরো টাকাটা ফেরত দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে এই টাকা আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন না। এটা পরিপূর্ণভাবে আপনাদের কাছে বন্ধক রেখে দেওয়া টাকা। আর বন্ধকি বস্তু হতে কোন উপকৃত হওয়া শরীয়তের দৃষ্টিকোণ হতে জায়েজ নেই।