আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
51 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আমার সামী নন মাহরাম মেনে চলে না এবং অর কলিক ফিমেইলকে ছোট কাপড়ের পিকে লাইক করে লাভ রিয়েকট দেই আর তাদের সাথে এমন ভাবে কথা বলে আমার সাথে এমন করে কথাও বলে না। বাকি নন মাহরাম আথীয়দের সাথেও ফুরতি করে বিয়ের আগে দীনদার ভেবে বিয়ে করেছিলাম প্রায়ই  বুঝ এও না বুঝতে ভান করে। আমার সাথে কাজের কথা ছাড়া কিছুই সামী স্ত্রীর কুনু আলাপ করে না আমি  যতেষ্ট পদা মেইন্টেইন করার চেষ্টা করি নজরের হেফাজত করি নিজেকে নন মাহরাম থেকে আর অন্যান্য হারাম কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি আর উনার মন জুগানুরও চেষ্টা করি উনার হক আদায় করার চেষ্টা করি আমার করনীয় কি কিভাবে উনাকে বুঝাতে পারি এটা হারাম এরকম চলা যাবে না।আমার কষ্ট হয় এগুলো সহ্য করতে না পেরে মাঝে মধে রাগ করি আমার আত্মসম্মানে লাগে আমি দীনে থাকার জন্য কতকিছু করতেছি আমার ভবিষ্যত ছেলে মেয়েদেরকে কি দীন শিক্ষা দিব তাদেরকে একজন দীনদার বাবা দিওয়ার হকটা আদায় করতে পারি নি তাদের সেই হকটা নষ্ট হচ্ছে ভেবেই আরও রাগ হচ্ছে কি করনীয় আমার। আমি কিভাবে কি করব বুঝতে পারতেছি না। আর আমার সামী বিদেশ থাকেন অইখানেই যাওয়ারও ব্যবস্থা চলতেছে।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব:-

প্রিয় বোন, ভালোবেসে হোক আর পারিবারিকভাবেই হোক একটি মেয়ের জীবনের পথচলার সঙ্গী হয়ে থাকে তার স্বামী। আর সে স্বামী ধীরে ধীরে আপনার চোখের সামনে দূরে হারিয়ে যাচ্ছে দেখে নিশ্চয় আপনি এক অব্যক্ত বেদনা দ্বারা প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছেন। এজন্য প্রথমেই আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আপনার বেদনা মুছে দেন এবং আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে যেন আপনার প্রতি পরিপূর্ণ আগ্রহী ও মনোযোগী করে দেন। আর আমরা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক এই অনাবিল ভালোবাসা কিন্তু আল্লাহর সৃষ্টি; বান্দা/বান্দীর প্রতি তাঁর বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ বলেন,

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

আর তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রুম ২১)

সুতরাং আপনার প্রতি আমাদের প্রধান উপদেশ এটাই যে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করুন। কেননা, একমাত্র তিনিই পারবেন আপনার কষ্ট দূর করতে; আপনার পেরেশানিকে শান্তি দ্বারা ভরপুর করে দিতে।

দুই. পাশাপাশি আপনার প্রতি আমাদের আরো পরামর্শ হল

১. আপনার স্বামীর জন্য একজন উপদেশদাতার প্রয়োজন। সুতরাং যদি সম্ভব হয়, আপনার পরিচিত কারো মাধ্যমে আপনার স্বামীকে একজন আমলধারী আলেমের শরণাপন্ন করান; যিনি আপনার স্বামীকে হেকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে কিছু নসিহত করবেন। হতে পারে, এর মাধ্যমে তিনি নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হবেন।

২. আপনার স্বামী নিশ্চয় একটা ফেতনার ভেতরে পড়ে গিয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। (বুখারি ৪৮০৮)

আর আপনি যেহেতু তার সবচেয়ে কাছের কল্যাণকামী, সেহেতু এই ফেতনা থেকে উত্তরণের জন্য তার জন্য আল্লাহর কাছে অধিকহারে দোয়া করুন। কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও করতে পারেন; ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনার স্বামীকে আপনার চোখের শীতলতা বানিয়ে দিবেন।

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন। (সূরা ফুরকান ৭৪)

৩. একটু ভেবে দেখুন তো, আপনার প্রতি আপনার স্বামী কর্তৃক স্থাপিত মুসিবতের পেছনে আপনিও কিছুটা দায়ী কিনা? কেননা, বিজ্ঞজনরা বলে থাকেন, যে স্ত্রীর যবান চলে বেশি, তার স্বামীর হাত চলে বেশি। যদি এমনটি হয় তাহলে যবান সংযত করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সচেষ্ট হোন। স্বামীর রাগ ওঠে এমন কথা ও কাজ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

৪. অনেক সময় পুরুষ তার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সুতরাং তিনি বিশেষ কাজে আহবান করলে আপনার সম্মতি যেন থাকে। প্রয়োজনে কৃত্রিমভাবে হলেও আপনি এবিষয়ে আগ্রহ বেশি দেখাবেন। দেখবেন, এটাও তার রাগ প্রশমনে খুব দ্রুত কাজ করবে।

৫. আপনি অবশ্যই মুসিবতে আছেন। কিন্তু আপনার চাইতেও বেশি মুসিবতে আছে, এ দুনিয়ায় এমন স্ত্রীও আছে। এমন নরপশুও তো আছে, যে স্ত্রীর সঙ্গে কেবল খারাপ আচরণ করে না; বরং যৌতুকের দাবি নিয়ে স্ত্রীর পরিবারের জীবনকেও বিষিয়ে তোলে। মাতাল হয়ে এসে স্ত্রীর হাত পা ভেঙ্গে দেয়। এদের কথা ভাবুন, আপনার দুঃখ কিছুটা হলেও হালকা হবে। রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ : إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ ، فَكَانَ خَيْرًا لَهُ

মুমিনের অবস্থা ভারি অদ্ভুত। তাঁর সমস্ত কাজই তাঁর জন্য কল্যাণকর। মুমিন ব্যাতিত অন্য কারো জন্য এ কল্যাণ লাভের ব্যাবস্থা নেই। তাঁরা আনন্দ (সুখ শান্তি) লাভ করলে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, তা তাঁর জন্য কল্যাণকর হয়, আর দুঃখকষ্টে আক্রান্ত হলে ধৈর্যধারণ করে, এও তাঁর জন্য কল্যাণকর হয়। (মুসলিম ৭২২৯)

৬. আপনার স্বামী যতই খারাপ হোক না কেন; নিশ্চয় তার মাঝে কিছু ভালো গুণও আছে। যেমন, আপনি বলেছেন যে, তিনি নামাযী। কিংবা অন্য কোনো গুণও তার মাঝে থাকতে পারে। সেগুলো দেখুন এবং সেগুলোর প্রশংসা করুন। প্রশংসা করার সময় নিজেকে বিশেষভাবে পরিপাটি রাখুন। এতে কিছুটা হলেও ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হওয়া ভালোবাসা পুনরজ্জীবিত হবে-ইন শা আল্লাহ।

৭. ওলামায়ে কেরাম লিখেছেন, আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে (اَلْوَدُوْدُ) ‘আল-ওয়াদুদু’ ( অর্থ-প্রকৃত বন্ধু) একটি। এ পবিত্র নামের আমলে স্বামী-স্ত্রী অমিল ও দূরত্ব কমে যায়। সুতরাং অধিকহারে পড়ুন- ‘ইয়া ওয়াদুদু’।

৮. কোনো কোনো আলেম বলেন, শুক্রবার অর্ধরাত অতিবাহিত হবার পর অজু করে নিম্নোক্ত দুআটি তিনবার পড়লে স্বামীর ভালবাসা পুনরায় তৈরি হবে

فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

প্রিয় বোন, যদি আপনি উক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন এবং পাশাপাশি আল্লাহর কাছেও দোয়াও অব্যাহত রাখেন তাহলে আমরা আশা করছি যে, তখন আল্লাহর রহমত আসবে। ফলে আপনার স্বামীর মনুষ্যত্ব জেগে উঠবে এবং তিনি আপনার প্রতি সদয় হবেন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, দাম্পত্যজীবনের সমস্যাগুলো খুব দ্রুত সমাধানে আসে না। বরং ছেলে-মেয়ে বড় হতে হতে সমস্যা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে। সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। বেশি হারে ইস্তেগফার পড়ুন। রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

مَنْ لَزِمَ الاِسْتِغْفَارَ جَعَلَ اللَّهُ لَهُ مِنْ كُلِّ ضِيقٍ مَخْرَجًا وَمِنْ كُلِّ هَمٍّ فَرَجًا وَرَزَقَهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِب

যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)

পরিশেষে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনাদেরকে সুখময় দাম্পত্যজীবন দান করেন। (সংগৃহীত)

প্রশ্নকারী সম্মানিত দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রিয় বোন উপরে উল্লেখিত নসীহাগুলো পালন করার চেষ্টা করবেন এবং স্বামীকে দ্বীনদার বানানোর জ্ন্য সবর, হেকমত ও ভালাবাসার সাথে চেষ্টা করতে হবে ও দোয়ার আমল চালিয়ে যেতে হবে। সেই সাথে যতদ্রুত সম্ভব স্বামী-স্ত্রী একত্রে অবস্থান করার চেষ্টা করুন, ইনশাআল্লাহ অনেক সমস্যাই দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের দাম্পত্য জীবনে পরিপূর্ণ কল্যাণ ও বরকত দান করুন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...