আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
29 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের মেয়েদের হলে কুরআন পড়ানোর জন্য একজন মুআল্লিমা নিযুক্ত আছেন। ওনার চাকরিটা সরকারি না, হল কর্তৃপক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া। অন্য হলগুলোতে এই পদটি নেই। কিন্তু ওনার কুরআন পড়া সহীহ না। এজন্য মেয়েরা তার কাছে কুরআন শেখে না, আগে দু-একজন শিখলেও সে সংখ্যা খুবই কম। প্রায় দু'বছর যাবত শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে পারে এমন কিছু বোন হলের নামাজঘরে কুরআন পড়াচ্ছেন। তাদের কাছে আল্লাহর রহমতে অনেক বোন কুরআন পড়া শিখছেন আলহামদুলিল্লাহ। এখন কর্তৃপক্ষ থেকে মুআল্লিমার পদটি বাতিল করার প্রশ্ন উঠেছে। ওনারা স্বামী-স্ত্রী দু'জন কুরআন পড়িয়েই কোনোভাবে চলেন এবং তাদের কোনো সন্তান নেই, দেখাশোনা করার মতো কোনো লোকও নেই। এজন্য দয়াপরবশ হয়ে এতোদিন ওনার চাকরিটা রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাই যারা কুরআন পড়াচ্ছে তাদের প্রতি মুআল্লিমা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে নানারকম অভিযোগ দিচ্ছেন। নানান বিদআতি আমল করে না বলে মক্তবের মুকাররিরাদেরকে শিক্ষার্থীদের সামনেই বকাবকি করছেন। অনেক ভুলভাল মাসআলা বলছেন। শিক্ষার্থীরা তার কথা শুনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। নানান সন্দেহ-সংশয়ে মুকাররিরাদের কথা আগের মতো বিশ্বাস করতে পারছে না। মজলিসে আসছে না। বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। সেই শুরু থেকেই কর্তৃপক্ষ কখনোই এই মজলিসকে ভালো দৃষ্টিতে দেখেনি। ভয় হচ্ছে, কুরআনের মজলিসটাই না বন্ধ হয়ে যায়! উল্লেখ্য,  মুআল্লিমার সাথে সর্বোচ্চ বিনয়ী এবং সম্মানজনক আচরণ করার চেষ্টা করি সবাই, যেহেতু বয়ষ্ক মানুষ। উনি আমাদের কাছে কুরআন শুদ্ধ করতে আগ্রহী না। আমাদের সাথে মজলিসে বসতেও রাজি না।

এখন প্রশ্ন হলো, কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আসা কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বিপদ এড়াতে আমরা কি তার চাকরিটা বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি? যেহেতু চাকরির জন্যই উনি এমন করছেন মনে হচ্ছে। চাকরি বাঁচানোর জন্য ওনার হাজিরা খাতায় মজলিসের ছাত্রীদের নাম ও হাজিরা লিখে দিলে সেটা কি মিথ্যাচার হবে? তারা ওনার ছাত্রী না, তবুও তাদের ছাত্রী হিসেবে দেখিয়ে চাকরি বাঁচালে সেই বেতন কি তার জন্য হালাল হবে? যদি হারাম হয়, তাহলে সে কাজে সাহায্য করা কি আমাদের জন্য জায়েজ হবে? এমতাবস্থায় আমরা কী করতে পারি?

অনুগ্রহ করে পরামর্শ দিবেন। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিক।

1 Answer

0 votes
by (574,410 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মিথ্যা কথা বলা শরীয়ত অনুমোদিত নয়। 
নিঃসন্দেহে মিথ্যা বলা হারাম। 
শরিয়তে সত্যকে সর্বত্রই উৎসাহিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস আনে।

পবিত্র কুরআন শরিফে এসেছে   
لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ [٣:٦١

তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী। {সূর আলেইমরান-৬১}

হাদিস শরিফে এসেছে,
 সাফওয়ান ইবন সুলাইম বলেন,
قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ : أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ جَبَانًا ؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ بَخِيلًا؟ فَقَالَ: ( نَعَمْ ) ، فَقِيلَ لَهُ: أَيَكُونُ الْمُؤْمِنُ كَذَّابًا ؟ فَقَالَ: ( لَا )
রসুলুল্লাহ ﷺ -কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কাপুরুষ হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি কৃপণ হতে পারে। তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞেস করা হয়েছে, মুমিন কি মিথ্যাবাদী হতে পারে? তিনি উত্তর দিলেন, না। (মুয়াত্তা মালিক ২/৯৯০) অর্থাৎ মুমিনের বিভিন্ন চারিত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে, তবু সে মিথ্যা বলতে পারে না।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}

আবুল ফরয ইবনুল জাওযী রাহ বলেনঃ

ﻭﺿﺎﺑﻄﻪ ﺃﻥ ﻛﻞ ﻣﻘﺼﻮﺩ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻻ ﻳﻤﻜﻦ ﺍﻟﺘﻮﺻﻞ ﺇﻟﻴﻪ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻜﺬﺏ، ﻓﻬﻮ ﻣﺒﺎﺡ ﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻤﻘﺼﻮﺩ ﻣﺒﺎﺣﺎ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻭﺍﺟﺒﺎ، ﻓﻬﻮ ﻭﺍﺟﺐ 

প্রত্যেক ঐ ভালো উদ্দেশ্য যে পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় ব্যতীত পৌছা  প্রায় অসম্ভব, সেখানে মিথ্যা বলা বৈধ।মাকসাদ(উদ্দেশ্য) মুবাহ হলে,মিথ্যা বলা মুবাহ।মাকসাদ ওয়াজিব হলে মিথ্যা বলা ওয়াজিব
(ফাতাওয়া দারাল ইফতা আল-মিছরিয়্যাহ)

★ব্যাখ্যাঃ
 কোন সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যার আশ্রয় ব্যতিরেকে সাধন সম্ভবপর হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া বৈধ নয়। পক্ষান্তরে সে সৎ উদ্দেশ্য যদি মিথ্যা বলা ছাড়া সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা বৈধ। পরন্তু যদি বাঞ্ছিত লক্ষ্য বৈধ পর্যায়ের হয়, তাহলে মিথ্যা বলা বৈধ হবে। 

আর যদি অভীষ্ট লক্ষ্য ওয়াজেবের পর্যায়ভুক্ত হয়, তাহলে তা অর্জনের জন্য মিথ্যা বলাও ওয়াজেব হবে। যেমন কোন মুসলিম এমন অত্যাচারী থেকে আত্মগোপন করেছে, যে তাকে হত্যা করতে চায় অথবা তার মাল-ধন ছিনিয়ে নিতে চায় এবং সে তা লুকিয়ে রেখেছে। এখন যদি কেউ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয় [যে তার ঠিকানা জানে], তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে গোপন [ও নিরাপদ] রাখার জন্য তার পক্ষে মিথ্যা বলা ওয়াজেব। 

অনুরূপভাবে যদি কারো নিকট অপরের আমানত থাকে, আর কোন জালেম যদি তা বলপূর্বক ছিনিয়ে নিতে চায়, তাহলে তা গোপন করার জন্য মিথ্যা বলা ওয়াজেব। অবশ্য এ সমস্ত বিষয়ে সরাসরি স্পষ্টাক্ষরে মিথ্যা না বলে ‘তাওরিয়াহ’ করার পদ্ধতি অবলম্বন করাই উত্তম।

‘তাওরিয়াহ’ হল এমন বাক্য ব্যবহার করা, যার অর্থ ও উদ্দেশ্য শুদ্ধ তথা তাতে সে মিথ্যাবাদী নয়; যদিও বাহ্যিক শব্দার্থে এবং সম্বোধিত ব্যক্তির বুঝ মতে সে মিথ্যাবাদী হয়। 

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আসা কোনো নিষেধাজ্ঞা বা বিপদ এড়াতে আপনারা তার চাকরি বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারেন।

তবে তার চাকরি বাঁচানোর জন্য কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেয়া জায়েজ হবেনা।

প্রশ্নে উল্লেখিত পন্থা মিথ্যাচার এর অন্তর্ভুক্ত, বিধায় এমনটি করা জায়েজ হবেনা।

হাজিরা খাতায় তো শিক্ষার্থীদের নাম দেয়া যাবে,তবে এভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হাজিরা দেয়া যাবেনা।

তার ক্লাশ চালু রাখতে হবে,আর সেই ক্লাশে অল্প সময়ের জন্যেও কিছু শিক্ষার্থীর হাজির থাকতে হবে।

সেই শিক্ষার্থীদের হাজিরা দেয়া যাবে।

অথবা অন্য কোনো বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...