আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
47 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামুয়ালাইকুম।আমি টানা অনেকদিন মৃত্যু নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম।আমি পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছি, এক্সিডেন্টে মারা যাচ্ছি এরকম। প্রতিবার মৃত্যুর সময় আমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে পারি এবং মৃত্যুতে কোনো কষ্ট হয়না।আর টানা স্বপ্নে মৃত নানুকে দেখতাম। মাঝে মাঝে সাধারণ দেখতাম,কখনো অসুস্থ দেখতাম। এরপর নানুর নামে কিছু সাদাকা করেছি।

একবার দেখলাম একটা এক্সিডেন্টে অনেক মানুষ মারা গেছে।আমিসহ অল্প কয়েকজন বেঁচে আছে, প্রত্যেকের পরনে কাফন।আমারটা বোরকার মতো পুরো শরীর ঢাকা,শুধু মুখ খোলা।পাশে একটা পোড়া রুম যেখানে লাশগুলো রাখা হচ্ছিলো।যারা লাশ রাখতে যাচ্ছিলো তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পাওয়া যাচ্ছিলো না।তখন একজন বললো তাদের মৃত্যু ওই ঘরেই লিখা ছিলো

তারপর দেখলাম একজন ফেমাস গায়ক মসজিদে আজান দিচ্ছেন বসে বসে আর মুসল্লিরা তার থেকে অটোগ্রাফ নিচ্ছে।আমি দাঁড়িয়ে ভাবছি এগুলো কেমন আচরণ।একদিকে আজান অন্যদিকে অটোগ্রাফ।তখন ভাবছি আমিও তো এমন একদিকে গান শুনি,অন্যদিকে নামাজ পড়ি।এরপর মিউজিক ছাড়ার চেষ্টায় আছি

আজকে দেখি আমি গান শুনছিলাম,সিরিয়াল দেখছিলাম।এরপর একটা হারাম ভিডিও অন করার পর মালাকুল মউত এসে আমার ডানপাশে বসেন।আমি ভিডিও বন্ধ করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু হচ্ছিলো না।উনি আমার রুহ ধরে টান দেন আর আমি ভয়ে দোয়া দুরুদ এবং কালিমা পড়তে শুরু করি

দ্বিতীয় অংশে দেখলাম একজন ব্যক্তি দোষ ছাড়াই আমাকে অনেক অপমান করেছে আর আমি প্রতিশোধ নেওয়ার নিয়ত করেছি।তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তাই ওনাকে দেখতে পাইনি।তবে উনি অনেক জীর্ণ পোশাক পরিহিত ছিলেন।উনি জিজ্ঞেস করার পর আমি বললাম আমি একজন থেকে প্রতিশোধ নিতে চাই,সে আমার হক নষ্ট করেছে,আমি মাফ করতে পারবোনা।তখন উনি বললেন ব্যক্তিগত ইগোর কারনে প্রতিশোধ নেওয়া ঠিক না, আল্লাহর জন্য ছেড়ে দাও, আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দাও।আমি রাজি হচ্ছিলাম না।বললাম সে আমার উপর জুলুম করেছে।তখন উনি বললেন তুমি কি আল্লাহর হক নষ্ট করোনি,নিজের ব্যপারে জুলুম করোনি? আল্লাহ কি তোমাকে প্রতিশোধ নিয়েছেন? আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দেননি?মনে হলো উনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন
উল্লেখ্য আমি সহজে কাউকে ক্ষমা করতে পারিনা আর আমি গত এক মাসে অনেকবার দুরুদে ইব্রাহিম আর ইস্তিগফার পড়েছি

এখন আমার করনীয় কি?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

ইসলামী দৃষ্টিতে স্বপ্ন তিন প্রকার। 
,
১. যা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাহকে দেখানো হয় যা কল্যানকর হয়।

২. শয়তানের পক্ষ হতে দেখানো হয় যাতে মানুষ খারাপ, মন্দ ভয়ংকর কিছু দেখে থাকে।

তবে শয়তান স্বপ্ন দেখানোর দ্বারা মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারেনা।
,
 ভয়ংকর স্বপ্ন দেখলে দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই। শয়তান মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলার জন্যই এমন সব আজব আজব জিনিস দেখায়। এমনটা দেখলে ঘুম থেকে জেগে বাম দিকে থুথু ফেলে আস্তাগফিরুল্লাহ বলতে হয়। 

৩. মানুষের কল্পনা। অর্থাৎ মানুষ যা কল্পনা করে স্বপ্নে তা দেখতে পায়। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عُمَرَ الْمَكِّيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ الثَّقَفِيُّ، عَنْ أَيُّوبَ السَّخْتِيَانِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا اقْتَرَبَ الزَّمَانُ لَمْ تَكَدْ رُؤْيَا الْمُسْلِمِ تَكْذِبُ وَأَصْدَقُكُمْ رُؤْيَا أَصْدَقُكُمْ حَدِيثًا وَرُؤْيَا الْمُسْلِمِ جُزْءٌ مِنْ خَمْسٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ وَالرُّؤْيَا ثَلاَثَةٌ فَرُؤْيَا الصَّالِحَةِ بُشْرَى مِنَ اللَّهِ وَرُؤْيَا تَحْزِينٌ مِنَ الشَّيْطَانِ وَرُؤْيَا مِمَّا يُحَدِّثُ الْمَرْءُ نَفْسَهُ فَإِنْ رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يَكْرَهُ فَلْيَقُمْ فَلْيُصَلِّ وَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا النَّاسَ "
মুহাম্মাদ ইবনু আবূ উমার আল-মাক্কী (রহঃ) ..... আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন যুগ ও সময় (কিয়ামাতের) সন্নিকটে হয়ে আসবে তখন প্রায়শ (খাঁটি) মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা ও ভ্রান্ত হবে না। তোমাদের (মাঝে) অধিক সত্যভাষী লোক সর্বাধিক সত্য (ও বাস্তব) স্বপ্নদ্রষ্টা হবে। আর মুসলিমের স্বপ্ন নুবুওয়াতের পয়তাল্লিশ ভাগের এক ভাগ। আর স্বপ্ন তিন (প্রকার)- ভাল স্বপ্ন আল্লাহর তরফ হতে সুসংবাদ (বাহক)। আর (এক ধরনের) স্বপ্ন শাইতানের পক্ষ হতে দুর্ভাবনা তৈরি করে। আর (এক ধরনের) স্বপ্ন যা মানুষ তার মনের সাথে কথা বলে (এবং ভাবনা-চিন্তা করে) তা থেকে (উদ্ভূত)।

অতএব তোমাদের কেউ যদি এমন কিছু (স্বপ্ন) দর্শন করে- যা সে পছন্দ করে না, তাহলে সে যেন (ঘুম থেকে) উঠে দাঁড়ায় এবং সলাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করে আর মানুষের নিকট সে (স্বপ্নের) কথা গোপন রাখে।
(মুসলিম ৫৭৯৮, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭০৮, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৪০)

خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا سَلَمَةَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا قَتَادَةَ يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلميَقُوْلُ الرُّؤْيَا مِنْ اللهِ وَالْحُلْمُ مِنْ الشَّيْطَانِ فَإِذَا رَأٰى أَحَدُكُمْ شَيْئًا يَكْرَهُه“فَلْيَنْفِثْ حِينَ يَسْتَيْقِظُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ وَيَتَعَوَّذْ مِنْ شَرِّهَا فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّه“وَقَالَ أَبُو سَلَمَةَ وَإِنْ كُنْتُ لأَرَى الرُّؤْيَا أَثْقَلَ عَلَيَّ مِنَ الْجَبَلِ فَمَا هُوَ إِلاَّ أَنْ سَمِعْتُ هٰذَا الْحَدِيثَ فَمَا أُبَالِيهَا.

আবূ ক্বাতাদাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, আর মন্দ স্বপ্ন হয় শয়তানের তরফ থেকে। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে যা তার কাছে খারাপ লাগে, তা হলে সে যখন ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন সে যেন তিনবার থুথু ফেলে এবং এর ক্ষতি থেকে আশ্রয় চায়। কেননা, তা হলে এটা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। 

আবূ সালামাহ বলেনঃ আমি যখন এমন স্বপ্ন দেখি যা আমার কাছে পাহাড়ের চেয়ে ভারি মনে হয়, তখন এ হাদীস শোনার ফলে আমি তার কোন পরোয়াই করি না। [বুখারী ৫৭৪৭ মুসলিম পর্ব ৪২/হাঃ ২২৬১, আহমাদ ২২৭০৭] 
,
ومن رای انہ مات…………ان رای شیئا من ہیئۃ الاموات کالغسل والکفن فذالک زیادۃ فی نقص دینہ (تعطیر الانام ۲۹۱؍ج۲؍باب المیم،موت،مطبوعہ مصر)

যার সারমর্ম হলো কেহ স্বপ্নে দেখে যে সে মারা গিয়েছে,,বা মৃতদের হালত,কাফন গোসল ইত্যাদি  দেখে,তাহলে সেটি নিজের দ্বীনের কমতি মনে করতে হবে।
,
ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ তে এসেছে যে স্বপ্নে মৃত মানুষ দেখা এটি কবরের কথা স্বরন করে দেওয়ার জন্য।
(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ ২৯/১৬০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার আমল বাড়িয়ে দিতে হবে,দ্বীনদার লোকদের সাথে উঠাবসা করতে হবে,পবিত্র হালতে থাকতে হবে,অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। 
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার,ফরজ সহ নফল নামাজ পড়তে হবে। 
স্বপ্নের কথা কাউকে বলা যাবেনা।
,
চাইলে সাধ্যমতো দান সদকাহ করতে পারেন।

স্বপ্নে রাসূল সাঃ কে তেমন দেখতে পাওয়া যায়, যেমন ব্যক্তির ঈমান ও আমলের অবস্থা হয়ে থাকে। যদি রাসূল সাঃ এর অবস্থা ভাল দেখে স্বপ্নে, তাহলে স্বপ্ন দেখাকারী ব্যক্তির ঈমান ও আমল ভাল হওয়ার দলীল এটা। আর যদি খারাপ অবস্থায় রাসূল সাঃ কে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে যে দেখছে তার ঈমান বা আমলে সমস্যা আছে।

তেমনি কেউ যদি রাসূল সাঃ কে সুন্দর অবয়বে দ্বীনী কাজ করতে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে লোকটির ঈমানী কাজে আগ্রহ আছে। এক কথায় রাসূল সাঃ কে যে অবস্থায় পরিদৃষ্ট করবে স্বপ্নে, নিজের ঈমান ও আমলের হালাত তেমনি মনে করে নিবে।

★সুতরাং আপনার আমলে ত্রুটি আছে বা কমতি আছে বলে স্বপ্নে ইশারা রয়েছে।
তাই আপনার আমল বাড়িয়ে দিতে হবে,আরো বিশুদ্ধ ভাবে আমল করার পরামর্শ থাকবে।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...