আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,467 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (15 points)
closed by
আসসালামুয়ালাইকুম
আনেক সময় কোন কাজ করতে ব্যংক লোনের প্রয়োজন হয় এবং ব্যাংক লোন পরিশোধে সুদ দিতে হয়। এ সম্পর্কে জানতে চাই।
closed

1 Answer

0 votes
by (741,060 points)
selected by
 
Best answer

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আলহামদুলিল্লাহ!

সুদের আদান-প্রদাণ হারাম। তবে অবস্থাভেদে হুকুমে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।


মানুষের প্রয়োজন তিন প্রকারের হতে পারে,

  • (১) জরুরত (এমন প্রয়োজন যা না হলে নয়) : এমন এক ধরনের প্রয়োজন, যা ছাড়া জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়। যেমন, মরুভূমিতে ক্ষুধার্ত একজন মানুষ, যার কাছে কোনো খাবার নেই। (এই পরিস্থিতিতে মানুষটি জীবন বাঁচানোর তাগিদে হারাম বস্তুও ভক্ষণ করতে পারবে)।


  • (২) হাজত (এমন প্রয়োজন যা না হলে অত্যাধিক কষ্ট হবে) :  কষ্ট বা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে যা করা হয়ে থাকে। (এখানে কষ্ট বা যন্ত্রণা বলতে জীবনের জন্যে হুমকিস্বরূপ বোঝাচ্ছে না) যেমন- একজন সাওম পালনকারী ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে খাওয়া-দাওয়া করতে পারে। ফরজ সাওম হলেও এ ক্ষেত্রে তা ঐ ব্যক্তির জন্যে ভাঙার অনুমোদন রয়েছে।বা মেয়ের বিয়েতে টাকার প্রয়োজন।

 

  • (৩) তাহসিন (পছন্দনীয় ও সুশোভিতকরণ) : এ ধরনের প্রয়োজনীয়তাগুলো মানুষের পোশাক-আশাক ও আচার-আচরণের পরিশুদ্ধতা ও পরিপূর্ণতার জন্যে এবং জীবনের মান উন্নয়নের জন্যে দরকারি। যেমন, একজন মানুষের শারীরিক অবস্থা ঠিক রাখার জন্যে মাছ, মাংস ও ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন।


প্রথম অবস্থায় সুদ গ্রহণ জায়েয। এবং তৃতীয় অবস্থায় সুদ গ্রহণ জায়েয হবে না। আর দ্বিতীয় অবস্থার ব্যাখ্যা এরূপ যে,অভাব অনটনের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ের যে,খানাপিনা এবং চিকিৎসা ইত্যাদি মত মৌলিক প্রয়োজনাদিকে পূর্ণ করা সুদ ব্যতীত প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সুদ গ্রহণ করা বৈধ হবে।(জাদীদ ফেকহী মাসাঈল-৪/৫২)


এমন পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য করে বিশিষ্ট হানাফি ফিকহ বিশারদ আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ, লিখেন

ﻭَﻓِﻲ اﻟْﻘُﻨْﻴَﺔِ ﻭَاﻟْﺒُﻐْﻴَﺔِ: ﻳَﺠُﻮﺯُ ﻟِﻠْﻤُﺤْﺘَﺎﺝِ اﻻِﺳْﺘِﻘْﺮَاﺽُ ﺑِﺎﻟﺮِّﺑْﺢِ (الأشباه والنظائر- ص:٧٩،الفن الأول،النوع الأول،القاعدۃ الخامسة،ط:دار الكتب العلمية)

নিঃস্ব মুখাপেক্ষী মানুষের জন্য সুদের বিনিময়ে ঋণ গ্রহণের রুখসত রয়েছে। (আল-আশবাহ ওয়ান-নাযায়ের-১/৭৯;,বাহরুর রায়েক-৬/১৩৭;গ)


وفي غمز عيون البصائر:

"قوله: يجوز للمحتاج الاستقراض بالربح، وذلك نحو أن يقترض عشرة دنانير مثلا، ويجعل لربها شيئا معلوما في كل يوم ربحا." (ص:٢٩٤،ج:١،الفن الأول،النوع الأول،القاعدۃ الخامسة،ط:دار الکتب العلمية)



বিঃদ্র:

এ বিধান শুধুমাত্র উপরোক্ত পরিস্থিতির(প্রথম ও দ্বিতীয়) সম্মুখীন ব্যক্তিদের জন্যে।সবার বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। (জদীদ ফেকহী মাসাঈল ৪/৫৫)


হ্যা আমাদেরকে অবশ্যই স্বরণ রাখতে হবে যে,যেহেতু শরীয়ত প্রয়োজন পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছে,বিধায় রুজি-রোজগারের অন্য কোনো উপায় না থাকাবস্থায় প্রয়োজন পর্যন্তই সুদের বিনিময়ে ঋণ গ্রহণ করা যাবে। 

এবং আমাদেরকে এটাও স্বরণ রাখতে হবে যে,কাউকে ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করা জরুরতের আওতাভুক্ত নয়। কেননা এক্ষেত্রে তার কাছে কিছু টাকা তো অবশ্যই বিদ্যমান আছে।অন্য কিছু না থাকলেও অন্ততপক্ষে মূলধন দিয়ে তো সে তার প্রয়োজনকে পূর্ণ করতে পারবে।


আমাদের অনুসন্ধান মতে ব্যাংক লোন সাধারণত তৃতীয় (পরিস্থিতির)প্রকারের মানুষগণই নিয়ে আসেন।তাই এমনটা হলে ব্যাংক লোন কখনো জায়েয হবে না।


মোটকথা,

সাধারণত সুদের বিনিময়ে ঋণ গ্রহণ নাজায়েয ও হারাম। হাদীসে সুদে ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তির উপর লা'নত এসেছে। তবে যদি কেউ টাকার অভাবে খিদায় মরতে বসে, অথবা মানসম্মান বিনষ্টের সমূহ সম্ভাবনা থাকে,এবং সুদে ঋণ গ্রহণ ব্যতিত সমস্ত চেষ্টা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। যেমন ঐ ব্যক্তির নিকট গহেণা বা বিক্রয়যোগ্য কোনো জিনিষ না থাকে, এবং শতচেষ্টার পরও সুদ ব্যতিত ঋণ কোথাও পাওয়া না যায়,তাহলে এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি মা'যুর হিসেবেই গণ্য হবে। তখন জরুরত পর্যন্ত ঐ ব্যক্তির জন্য সুদে ঋণ গ্রহণের রুখসত বা সুযোগ থাকবে। (জদীদ ফেকহী মাসাঈল ৪/৫৫)


কিন্তু যদি উপরে বর্ণিত জরুরত না হয়, বরং দুনিয়াবী কোনো সাধানণ জরুরত বা ব্যবস্যা বাণিজ্যর জন্য হয় কিংবা সুদ থেকে বাঁচার কোনো রাস্তা ঐ ব্যক্তির নিকট থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় সুদে ঋণ গ্রহণ জায়েয হবে না। তখন সুদে ঋণ গ্রহণ কবিরা গোনাহ হিসেবে বিবেচিত হবে। 


ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে 

’’سوال : زید کو روپیہ کی اشد ضرورت پیش آئی اور اس نے بہ امر مجبوری اپنی جائیدادرہن رکھ کرسود پر روپیہ قرض لے لیا، ایسی حالت میں جب کہ سخت مجبوری کی حالت میں سود پر روپیہ لیا جائے تو اس کے لیےحکم کیا ہے اور کیا زید بحالت مجبوری اس فعل سے گناہ گار ہوگا یا نہیں ؟‘‘


الجواب حامدا ومصلياً:

’’سود دینا حرام ہے ، ایسے شخص پر حدیث شریف میں لعنت آئی ہے، حرام کا ارتکاب اضطرار کی حالت میں معاف ہے، پس اگر جان کا قوی خطرہ ہے، یا عزت کا قوی خطرہ ہے، نیز اور کوئی صورت اس سے بچنے کی نہیں ، مثلاً: جائیداد فروخت ہو سکتی ہے، نہ روپیہ بغیر سود کے مل سکتا ہے تو ایسی حالت میں زید شرعاً معذور ہے،اور اگر ایسی ضرورت نہیں بلکہ کسی اور دنیوی کاروبار کے ليے ضرورت ہے، یا روپیہ بغیر سود کے مل سکتا ہے، یا جائیداد فروخت ہو سکتی ہے تو پھر سود پر قرض لینا جائز نہیں ، کبیرہ گناہ ہے ۔ فقط واللہ اعلم۔‘‘( ’’فتاویٰ محمودیہ‘‘ص:٣٠٥،ج:١٦، كتاب البيوع،باب الربوا،ط:ادارۃ الفاروق)


وفيه ايضا:

’’ البتہ اگر انسان کے پاس کھانے پینے کو کچھ نہ رہے اور بے حد درجے کی پریشانی ہو، اور بلا سود قرض نہ ملتا ہو تو بقد ر ضرورت سودی قرض لینے کی گنجائش ہے، ہر حالت میں خداوند قدوس کی طرف متوجہ ہونے کی ضرورت ہے، اس پر بھروسہ ہونا چاہیئے ، بجوز للمحتاج الاستقراض بالربح . كذافي الأشباه والنظائر، ص:١١٥۔‘‘(ص:٣٠٧،ج:١٦،كتاب البيوع،باب الربوا،ط:ادارۃ الفاروق)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

সুদের মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ হারাম। তবে জরুরত অনেক নিষিদ্ধ জিনিষকে প্রয়োজন পর্যন্ত সিদ্ধ/বৈধ করে দেয়। তাই যদি কারো অন্য কোনো উপায় না থাকে,শত চেষ্টা করেও কোনো উপায় বের করতে না পারে,তাহলে বিলাশীতা পরিহার করে স্বাভাবিক জীবন পরিচালনার জন্য  ইস্তেগফারের সাথে লোন গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। 



বিঃদ্র:

এ বিধান শুধুমাত্র ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে কিনা সাধারণ জীবনযাপন করতে পারছে না।এবং তার নিকট এছাড়া অন্য কোনো রাস্তাও নেই।তাই সবার বেলায় তা প্রযোজ্য হবে না। (জদীদ ফেকহী মাসাঈল ৪/৫৫)


আমাদেরকে স্বরণ রাখতে হবে যে,যেহেতু শরীয়ত ঐ ব্যক্তিকে প্রয়োজন পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছে,বিধায় রুজিরোজগারের কোনো উপায় না থাকার শর্তে প্রয়োজন পর্যন্ত ই সুদের বিনিময়ে ঋণ গ্রহণ জায়েয হবে।সুতরাং কাউকে ঋণ দিয়ে সুদ গ্রহণ করা জরুরতের আওতাভুক্ত নয়। কেননা এক্ষেত্রে তার কাছে কিছু টাকা আছে, অন্য কিছু না থাকলেও অন্ততপক্ষে মূলধন তো অবশিষ্ট রয়েছে।


সুদের বিকল্প পদ্ধতি

ব্যাংক যদি টাকা না দিয়ে গ্রাহককে বাকীতে পণ্য দেয়, বাজার মূল্য থেকে যার মূল্য বেশী থাকে, এবং ব্যাংক কিস্তিতে ঐ মূল্য বাবৎ টাকা প্রদানের সুযোগ দেয়,তাহলে এটা জায়েয হবে।যেমন আরব বিশ্বের কিছু ব্যাংকে এমনটা রয়েছে। আল্লাহ-ই ভালো জানেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...