আমি শুরুতেই আমার পুরো পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করছি। একটু বেশি বড় হয়ে গিয়েছে লেখাটা এটার জন্য আমি দু:খিত।
আমি একজন মুসলিমা, হানাফি মাযহাব অনুসরণ করি।আমার বাবা মারা গেছেন ১বছর হলো, এবং পরিবারের দায়িত্ব নিতে আমার মা ও আমি চেষ্টা করছি।
আমি ২০ বছর বয়সী, আমার এক বোন ও এক ভাই রয়েছে। ভাই সবার ছোট।আমার বড় খালু যিনি আমার দুধ বাবা সম্পর্কে, তিনি আমাদের সবকিছু পারিবারিক বিষয় দেখাশোনা করেন, আমার চাচা, মামারা সবাই বাইরের দেশে সেটেল। দেশে আত্মীয় বলতে শুধু বড় খালামনির পরিবারই আছে৷ নানা,নানু, দাদা, দাদী সবাই মারা গিয়েছেন।
বুঝতেই পারছেন আমাদের সেভাবে দেখা শোনা করার কেউ নেই। বাবার রেখে যাওয়া সহায় সম্পত্তি আছে কিন্তু দেখাশোনা করার মানুষ নেই। ভাইটা অনেক ছোট। আমিই সবার বড় ভাই বোনদের মধ্যে
আমার মা আমার বিয়ের বিষয়ে চাপে রেখেছেন।আমার মায়ের ইচ্ছা আমি এমন একজন প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিকে বিয়ে করি, যিনি আমাদের পরিবারকে এবং আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারবেন।
কিন্তু আজ থেকে ৪বছর আগে ২০২০ সালের রমাদানে আমি একজনকে পরিবারের অমতে বিয়ে করেছি।তার বয়স বর্তমানে ২২। তখন আমরা দুজনেই সদ্য দ্বীনে ফিরেছি৷ বয়স কম থাকায় কেউই বুঝে উঠতে পারিনি পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে। আমাদের পরিকল্পনা ছিলো সে কিছুটা সেটেলড হয়ে আমার বাড়িতে প্রস্তাব দেবে। মূলত হারাম থেকে বাঁচতেই তখন আমরা এমনটা করেছিলাম।
আমরা আর্থিক ভাবে উচ্চ মধ্যবিত্তের কাতারে পড়ি কিন্তু তার পরিবার আর্থিকভাবে খুবই সাধারণ। সে পড়াশোনার পাশাপাশি একটা স্কুলে চাকরি করে এবং টিউশনি করে যাতে আমার দায়িত্ব নিতে পারে। আমি তার সঙ্গে খুশি, কিন্তু আমার মায়ের ইচ্ছার কারণে আমাদের সম্পর্ক সমাজ বা পরিবারের কাছে প্রকাশ করা কঠিন। আমাদের দুজনের ফ্যামিলিই বিয়ের ৭ দিনের দিন সব জেনে যায়। একদিকে মাকে খুশি রাখা এবং পরিবারকে সাহায্য করা, অন্যদিকে আমার নিজের স্বামীকে নিয়ে সুখী থাকা—এ দুইয়ের মধ্যে আমি কীভাবে ভারসাম্য রাখব?
আমার প্রশ্নগুলো:
ইসলামের দৃষ্টিতে এই মুহুর্তে আসলে আমার করণীয় কী?
আমার মায়ের কথা শুনে কি অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে করা উচিত, নাকি স্বামীকে নিয়ে ধৈর্য ধরে থাকা উচিত?
আমার যেহেতু বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই এবং আর্থিকভাবে স্বাধীনতা নেই, তাহলে কীভাবে আমি নিজের ও পরিবারের দায়িত্ব পালন করব? (উল্লেখ্য, যদি তার কাছে চলে যাই এই আশংকাতে আমাকে সবসময় কড়া নজরদারিতে রাখা হয়)আমার মা চায় আমি ইনকাম করি। পরিবারের হাল ধরি। সত্য বলতে আমার বাবা যা রেখে গিয়েছেন (মার্কেট ও দোকান ভাড়া আমাদের ইনকাম সোর্স) তাতে আমাদের খুব ভালো ভাবেই সংসার চলে যায়৷ কিন্তু আমার মা মানি ম্যানেজমেন্ট বোঝেন না। ফলস্বরূপ এই একবছরেই বাজে ভাবে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। আমাদের জায়গা জমি থাকলেও আমরা যেখানে সেটেলড হতে চাচ্ছি এখানে আমাদের কোনো বাড়ি নেই। তো আমাদের একটা বাড়ি বানাতে হবে এটা নিয়েও মায়ের একটা পেরেশানি আছে৷
উস্তায আমি সত্যিই দ্বীনের উপর থাকতে এবং আল্লাহকে খুশি করতে চাই। এই ৪বছরে আমি ইমানে আমলে ভিতরে বাহিরে সব দিক থেকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছি৷
সবসময় আমি খুবই পেরেশানিতে থাকি। পরিবারের কাছে আমি একটা বোঝা এছাড়া কারোর কাছে আমার কোনো সম্মান নেই। এই অপমানের জীবন আমার জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমার না বাক স্বাধীনতা আছে না কোনো বিষয়ে স্বস্তি আছে। ছোট ভাইটা পর্যন্ত আমাকে সহ্য করতে পারে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে সে কথা বলে না।
এছাড়া আমার স্বামীর সাথে আমার পরিবার আমাকে যোগাযোগ রাখতে দেয় না। আমাকে খুবই লুকোচুরি করে তার সাথে যোগাযোগ করতে হয়।
আমি তার সাথে কথা বলে তার পরিবারকে আমার বাড়িতে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আসার পর আমার ফ্যামিলি খুব বাজে ভাবে তাদেরকে অপমান করে৷ এবং তাদের সাথে এটা নিয়ে কোনো আলোচনায়ই করেনি৷
একদিন সে আমার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য কল দিলে আমার মা প্যানিক অ্যাটাক করে।(উল্লেখ্য আমার মা মারাত্মক ভাবে প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত। এবং তিনি রুকইয়াহও করাতে চান না)
ফ্যামিলির সবাই বলে দিয়েছে আমার জন্য মায়ের কিছু হলে কেউ আমাকে ক্ষমা করবে না। এমনকি বাবার মৃত্যুর জন্যও আমাকে দায়ী করে। অথচ তার মৃত্যুর সাথে কিঞ্চিৎ ভাবেও আমার কোনো যোগসাজশ নেই এটা তারা নিজেরাও জানে।
আমার মা এবং পরিবারের একটাই কথা, "বাবা মায়ের জন্য কত সন্তান স্বামী এমনকি বাচ্চাকাচ্চা ফেলে চলে আসে। তুমি সেখানে সামান্য বিয়ে করেছো"
এই চারবছরে আমরা বিচ্ছিন্ন ভাবে ৭দিন একসাথে থেকেছি এছাড়া আমাদের একসাথে থাকার বা দেখা করার সুযোগ হয় নি। আমার বাড়ির বাইরে যাওয়ার কোনো অনুমতি নেই। সব সময় আমাকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়।
আমি ইসলামের সীমার মধ্যে থেকে আমার মা এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে চাই।
আমার স্বামীর সঙ্গে আমি সুখী, তবে তার আর্থিক অবস্থা নিয়ে পরিবারের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
আমার পরিবারের ছোট থেকে বড় এমন কোনো ব্যক্তিই নেই যিনি আমার পক্ষে। এবং এই দুইয়ের মাঝে মধ্যস্ততা করবে এমন কোনো ব্যক্তিও পরিবার বা পরিবারের বাইরে নেই। আমার বান্ধবী একবার বোঝাতে চেষ্টা করেছিলো যে,"আন্টি আজ এত বছর হয়ে গেলো মেনে কি নেওয়া যায় না?"
আমার মায়ের উত্তর ছিলো, "ওকে জীবিত পুতে ফেলবো তাতেও আমার কষ্ট কম হবে কিন্তু আমার যাকে পছন্দ না তার কাছে কখনোই আমি দিবো না। ওর সব স্বাধীনতা আমি দিয়েছি। কিন্তু বিয়ে তাকেই করবে যাকে আমরা পছন্দ করবো"
আমার স্বামী আমাকে কোনোভাবেই তালাক দিতে রাজি না। বিয়ের সাতদিনের থেকে আমি তার কাছে তালাক চাই। এটা নিয়ে আমাদের প্রচুর ঝগড়া অশান্তি হয়৷ কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অনড়। সে সারাজীবন আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবে কিন্তু আমাকে তালাক দিবে না। আর আমি যদি তালাক নিই সে আমার উপর থেকে অধিকার কখনোই ছাড়বে না। যতবারই আমি তার কাছে পরিস্থিতি বুঝিয়ে তালাক চেয়েছি সে এটাই জানিয়েছে। তার পরিবারেও অনেক ঝামেলা হয় কিন্তু সে কোনোভাবেই আমাকে ছাড়তে রাজি না।
আমার মা এবং পরিবারের ইচ্ছার সম্মান রেখে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়?
এই পরিস্থিতিতে আমার দায়িত্ব কী?
কীভাবে আমার স্বামী, মা এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে জীবন যাপন করা সম্ভব?
ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী এই মুহুর্তে আমার ঠিক কি করা উচিত?
আমার কি মায়ের কথা শুনে তালাক নেওয়া উচিত! নাকি আমার স্বামীর কাছে চলে যাওয়া উচিত?
(উল্লেখ তার কাছে যেতে হলে আমাকে বাড়ি থেকে লুকিয়ে যেতে হবে। সামনাসামনি সমঝোতা সম্ভব না। খুবই বাজে রকমের অশান্তি করবে আমার ফ্যামিলি। এছাড়া আমার নিজেরও একটা মান সম্মান আছে। যদিও সে চাই না আমি এভাবে যাই। সে সসম্মানে আমার বাড়িতে এসে আমাকে নিয়ে যেতে চায়।)
আমার পরিবার যদি আমাদের বিয়েকে মেনে নিতে না চায়, তাহলে আমি কী করব?
এ পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে দোয়া এবং করণীয় আমল কী হতে পারে?
আপনার দেওয়া পরামর্শ আমি গুরুত্বসহকারে মেনে চলতে চাই। ইসলামি শরিয়াহ মেনে চলা আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। দয়া করে আমাকে একটি পরিষ্কার এবং সহজ উপায় দেখান। আমি এভাবে আমার জীবনটা আর ধ্বংস হতে দেখতে পারছি না। আমি একটা সহজ সুন্দর জীবন চাই। এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চাই৷
(বি:দ্র: আমি তালাক নেওয়ার বিষয়ে টানা সাতদিন ইস্তিখারা করেছিলাম। ইস্তিখারা করার পূর্বে আমার অন্তর তালাকের দিকে ঝুকে ছিলো। কিন্তু ইস্তিখারা করার পর থেকে আমার মন এটা থেকে সরে এসেছে। এবং আমি আমার স্বামীর প্রতি বেশি টান অনুভব করছি। ইস্তিখারার পূর্বে তার সাথে আমার দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে মনোমালিন্য চলছিলো। কিন্তু ইস্তিখারার পর এগুলো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।)
(
https://www.facebook.com/reel/1051503133310446?mibextid=UuH66acrLgeVUPia
আমার মা ও পরিবার আমাকে সারাদিন এই ফতোয়া শোনায়৷ দয়া করে আমাকে সঠিকটা জানানোর বিনীত অনুরোধ রইল উস্তায।)