আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
37 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম। আমার অনেকগুলো প্রশ্ন আছে।দয়া করে উত্তর দিবেন।

১।ফজরের সালাতের পর জায়নামাযে বসে যিকির করতে করতে যখন সূর্য উঠে তখন ইশরাকের সালাত আদায় করতে হয়। কিন্তু যারা স্টুডেন্ট /হাউজ ওয়াইফ,তারা কি ফজরের সালাতের পর পড়াশোনা /রান্না করতে পারবে?তারপর যখন ইশরাকের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হবে তখন কি সালাত আদায় করলে পূর্ণ সওয়াব পাবে? রান্নার ফাঁকে ফাঁকে যিকির কএয়া গেলেও পড়তে বসলে যিকির করা আর সম্ভব হয় না।সেক্ষেত্রে করণীয় কি?

২।সুরা মুলক ঘুমানোর আগে পড়লে কবরের আযাব মাফ হয়।মাগরিবের পর সুরা মুলক পড়লেও কি কবরের আযাব মাফ হবে?মৃত কারোর জন্য যদি আরেকবার পড়ি সুরা মুলক সেক্ষেত্রে কি তার কবরের আযাব মাফ হবে?আমি আমার মৃত দাদু,দাদি,নানু, আর আন্টির জন্য পড়তে চাই।সেক্ষেত্রে ৪ বার পড়তে হবে?

৩।মৃত মানুষদের জন্য কি কি আমল করলে তাদের কবরে সওয়াব পৌঁছাবে?
৪।কুরআন এর এক পাতা পড়ার পর পরেরদিন যদি আবার পড়ি তাহলে কি বিসমিল্লাহ বলে সেই জায়গায় পড়া শুরু করব নাকি আবার সূরা ফাতিহা,বাকারার ৭ আয়াত পড়ে তারপর পড়া শুরু করব?

৫।বুখারী,মুসলিম,তিরমিজি, সুনানে ইবনে নাসাঈ,মিসকাত,মুসলিম,দাউদ এগুলো কি সহীহ হাদিস?

৬।সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন পড়ার সুযোগ পাই,এ নিয়ে কি আল্লাহর কাছে দু'আ করা যাবে?যেহেতু সহশিক্ষা হারাম।

৭।বিয়ের ক্ষেত্রে অমুকরে সাথে দ্বীন, দুনিয়া,আখিরাতের কল্যাণের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দাও।এভাবে কি দু'আ করা জায়েজ?উত্তম অনুত্তম না,জায়েজ কি না সেটা জানতে চাচ্ছি।

৮।আমি খুব অল্পতেই কষ্ট পাই।দেখা যাচ্ছে একজন লোক অনেক খারাপ,জালিম,কাফির।কিন্তু তাও যখন তাকে শাস্তি দেয়া হয় আমার খারাপ লাগে। এতে কি ইমানের সমস্যা হবে?

৯।কারোর সাথে বিয়ের কথা চললে দ্বীনের ক্ষেত্রে তাকে কতটুকু ছাড় দেয়া উচিত?ফরয ইবাদতগুলো পালন করে।আবার কিছু হারাম কাজ যেমন গান শোনা,ছবি তোলা,মুভি দেখা এসব করে।মূলত এই কয়েকটি হারাম কাজ করে।সেক্ষেত্রে কি কথা আগানো উচিত? ইস্তেখারা করা হয়েছে।
১০।মনের যিনা কোনগুলো? কাউকে নিয়ে বাজে চিন্তা আসেনা। কিন্তু বিয়ে হলে এরকম হবে ওরকম হবে,এটা করব ওটা করব,এখানে ঘুরব একসাথে, এভাবে সাজব তার সামনে এসব কি মনের যিনাহ?(এসব আমি না ভাবার চেষ্টা করি,কিন্তু তাও চলে আসে।

১১।রাস্তাঘাটে পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেই।কিন্তু অনেক মেয়ের পোশাক বাহ্যিক সাজ দেখে বুঝতে পারিনা সে হিন্দু নাকি মুসলিম।এক্ষেত্রে সালামের বিধান কি?

১২।অপরিচিত ননমাহরামকে সালাম দেই না।কিন্তু ননমাহরাম শিক্ষক, আত্মীয়,পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক এমন মানুষদের সালাম দিতে হয়।এক্ষেত্রে কি গুনাহ হবে আমার?(ফিতনার আশঙ্কা নেই)
 ১৩।কেউ গীবত করছে কিন্তু আমি থামাতে পাচ্ছি না,আবার সেখান থেকে উঠে যাওয়াও সম্ভব না।কিন্তু আমি মনে মনে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ি। এক্ষেত্রে কি গুনাহ হবে আমার?

১৪।অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় আমার পরিচিতরা আমার সাথে তাদের কষ্টের কথা শেয়ার করে।তাদের শ্বাশুড়ি,আত্মীয় কিভাবে কষ্ট দেয় সেসব বলে।তারা তাকে কি কি কথা শোনায়, কিভাবে ট্রিট করে সেগুলো শোনায় আমাকে হালকা হওয়ার জন্য। এসব কি গীবত?তারা আমাকে এসব বলছে তাতে কি তাদের বা আমার গুনাহ হচ্ছে?

১৫।ঘুমানোর আগের আমলগুলো করার পর কথা বললে,ফোন চালালে,গল্প করলে কি পুনরায় আমল করতে হবে?
দয়া করে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর জানাবেন।নিকটস্থ কোনো আলেমের কাছে যাওয়া সম্ভব না।তাই এখানে প্রশ্ন করা।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
https://ifatwa.info/36609/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

হযরত আনাস রাযি,থেকে বর্ণিত

(مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ ، كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ ، وَعُمْرَةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍ ، تَامَّةٍ)

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামায পড়বে,অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকবে,তারপর দু'রাকাত নামায পড়বে,তাহলে সে একটি হজ্ব ও একটি উমরার সওয়াব পাবে।এরপর তিনি তাকিদ করে বলেন,হ্যা পূর্ণ হজ্ব ও উমরার সওয়াব সে পাবে।(সুনানু তিরমিযি-৫৮৬)

( أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ جَلَسَ فِي مُصَلَّاهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَسَنًا )
রাসূলুল্লাহ সাঃ ফযরের নামাযের পর পরিপূর্ণ সূর্যোদয়ের পর্যন্ত মুসল্লায় বসে থাকতেন।(সহীহ মুসলিম-৬৭০)


★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
মহিলারা যদি ঘরে নামাজ আদায় করে নামাজ আদায়ের স্থানেই বসে থেকে যিকির আযকার কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকে ,কথাবার্তা,খাওয়া দাওয়া /দুনিয়াবি কাজ কর্মে লিপ্ত না হয়,সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থেকে, তারপর দু'রাকাত নামায পড়ে,তাহলে তারাও একটি হজ্ব ও একটি উমরার সওয়াব পাবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
ফজরের সালাতের পর পড়াশোনা /রান্না করা যাবে। নাজায়েজ নয়।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ফজর নামাজের পর এভাবে পড়াশোনা, রান্নাবান্না,  দুনিয়াবি কাজ করার পর সূর্য ওঠার ২০/১৫ মিনিট পর ইশরাকের নামাজ আদায় করলে ইশরাক নামাজ আদায় হবে ঠিকই। এক্ষেত্রেও অনেক ফজিলত পাওয়া যাবে।

তবে হাদীসে বর্ণিত পূর্ণ ফজিলত পেতে ফজরের সালাত আদায়ের স্থানে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত বসে থেকে যিকর আযকার,তিলাওয়াত করে ইশরাক আদায় করতে হবে।

পড়তে গেলে বা রান্না করতে গেলে উভয় ক্ষেত্রেই যেহেতু স্থান চেঞ্জ করতে হয়,সুতরাং এমতাবস্থায় হাদীসে বর্ণিত পূর্ণ ফজিলত পাওয়া সম্ভব নয়।

(০২)
নিয়মিত প্রই রাতে মাগরিবের পর সুরা মুলক পড়লেও কবরের আযাব মাফ হবে।

মৃত কারোর জন্য যদি সুরা মুলক আরেকবার পড়েন,সেক্ষেত্রে তার কবরের আযাবও কিছুটা মাফ হবে,ইনশাআল্লাহ। 

আপনি আপনার মৃত দাদু,দাদি,নানু, আর আন্টির জন্য পড়তে চাইলে সেক্ষেত্রে ৪ বার পড়তে হবেনা,এক বার পড়াই যথেষ্ট। 

(০৩)
ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ

মৃতের নামে সদকা করা।
কুরবানী করা।
মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।
মৃতের জন্য দুআ করা।
ইস্তিগফার করা।
হজ্ব করা।

৭, যেকোনো নফল ইবাদত করা।

ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।

আরো জানুনঃ 

শরীয়তের বিধান হলো কুরআন কারীম তেলাওয়াত করে বা ছদকাহ করে ঈসালে ছওয়াব করা যাবে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১/৩৭৫)

বিস্তারিত জানুনঃ 

(০৪)
আউযু বিল্লাহ,,,,, আর বিসমিল্লাহ,,,, বলে সেই জায়গায় পড়া শুরু করবেন।

(০৫)
বিজ্ঞ স্কলারদের মতে বুখারী মুসলিমের সব হাদীসই সহীহ।

তবে প্রশ্নে উল্লেখিত বাকি হাদীস গ্রন্থ গুলোর সব হাদীস সহীহ নয়।
অনেক গুলো সহীহ,আবার অনেক গুলো হাসান,অনেক গুলো হাসান লি গাইরিহি,অনেক গুলো জয়ীফ আছে। 

তবে কোনো হাদীস মওযু' নেই।

(০৬)
শরীয়তের শর্তাবলী মেনে পড়াশোনা করার নিয়তে দোয়া করা যাবে।

এ সংক্রান্ত জানুনঃ- 

(০৭)
এভাবে দোয়া করা জায়েজ নেই। 

(০৮)
এতে ঈমানের সমস্যা হবেনা।

(০৯)
ইস্তেখারা পজিটিভ হলে আগাতে পারেন।

(১০)
বিবাহের কাগে তাকে নিয়ে অশ্লীল চিন্তাভাবনা করলে,কুচিন্তা করলে অন্তরের যেনা হবে।

(১১)
এমতাবস্থায় সালাম দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।

(১২)
বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষকে সালাম দেয়া জায়েজ নেই।

প্রয়োজনে সালাম দিলে সেক্ষেত্রে ফিতনার আশংকা না থাকলে অনুমতি থাকবে।

অন্যথায় জায়েজ নয়।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(১৩)
এক্ষেত্রে গীবত শুনলে আপনার গুনাহ হবে। 

যেভাবেই হোক,আপনাকে সেখান হতে উঠে যেতেই হবে।

(১৪)
এসব গীবত।
এগুলো শোনা জায়েজ নেই।

(১৫)
পুনরায় আমল করতে হবেনা।
তবে এভাবে আমল করার পর আমল গুলোর ফজিলত না পেলে সেক্ষেত্রে পুনরায় আমল করতে হবে।

(বুযুর্গানে দ্বীনেরা বলেন, এসব আমলের পর যবানে কোনো কথা উচ্চারণ করা যাবেনা। যবান দিয়ে কোনো কাজ করা যাবেনা।

তাহলে পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যায়।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...