খুশুখুজু সহকারে নামাজ পড়তে হবে।
বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্থির রাখতে হবে। যেমন হাত, পা এবং শরীরকে নামাযের বাইরের কোনো কাজে ব্যবহার না করা। অনর্থক নড়াচড়া থেকে বিরত থাকা।
এদিক সেদিক না তাকানো ইত্যাদি।
,
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রাঃ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন,
عن عائشة أم المؤمنين قالت سَأَلْتُ رَسولَ اللَّهِ ﷺ عَنِ الِالْتِفاتِ في الصَّلاة فَقالَ هو اخْتِلاسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطانُ مِن صَلاةِ العَبْدِ
অর্থাৎ এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে।
সূত্রঃ বুখারী হাদিস-৭৫১
পাশাপাশি আরব শায়খ বিন বায রঃ বলেন-
يتوجه المصلي الي القبلة وهي الكعبة اينما كان بجميع بدنه
অর্থাৎ নামাজী ব্যক্তি যেখানেই থাকুক প্রতিটি অঙ্গ কিবলার দিকে রাখবে।
সূত্রঃ মাজমুউল ফাতাওয়া খঃ১১ পৃঃ৮
উপরন্তু নবিজি সঃ বলেন-
فإذا صَلَّيتُم فلا تَلتَفِتوا فإنَّ اللهَ يَنصُبُ وجهَه لوجهِ عبدِه في صلاتِه ما لم يَلتفِتْ
অর্থাৎ যখন নামাজ পড়ো তখন এদিক-সেদিক তাকাবে না। কারণ যতক্ষন পর্যন্ত বান্দা তার চেহারা (কাবার দিক থেকে) ফিরিয়ে না নেয়, ততক্ষন আল্লাহ আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর চেহারা বান্দার দিক থেকে ফিরিয়ে নেন না।
সূত্রঃ তিরমিযি হাদিস-২৮৬৩
সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের নবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন সাতটি (অঙ্গের) উপর সিজদা করে এবং নামাযে চুল বা কাপড় না গুটায়।-সুনানে আবু দাউদ ২/১৪, হাদীস : ৮৮৬
নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে, বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন মনে হত একটি কাঠ মাটিতে গেড়ে দেওয়া হয়েছে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৭৩২২
প্রখ্যাত তাবেয়ী আ’মাশ রাহ. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. যখন নামাযে দাঁড়াতেন তাকে দেখে মনে হত যেন একটি পড়ে থাকা কাপড়।-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৩৩০৩
,
আমলে কাছির সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ
যদি সেজদায় এক তাসবীহের পরিমাণ পা মাটিতে রাখে (চাই কেবলমাত্র একটি আঙুল মাটিতে রাখে) তবে এই সালাতে পা উঠার কারণে নামায বাতিল হবে না।
إنہ لم یضع شیئًا من القدمین لم یصح السجود (شامي زکریا: ۲/۱۳۵) (ہندیہ: ۱/۷۰) ولو وضع أحدہما جاز مع الکراہة إن کان بغیر عذر (ہندیة: ۱/۷۰)
পুরো সেজদার সময় যদি পায়ের একটি আঙুলও মাটিতে না রাখা হয় তবে সেজদা আদায় করা হয়নি বলে নামায হবেনা।
,
'وكمال السنة في السجود وضع الجبهة والأنف جميعاً ولو وضع أحدهما فقط إن كان من عذر لا يكره، وإن كان من غير عذر فإن وضع جبهته دون أنفه جاز إجماعاً ويكره، إن كان بالعكس فكذلك عند أبي حنيفة رحمه الله، وقالا : لا يجوز، وعليه الفتوى''۔(2/26)
সারমর্মঃ সেজদার ক্ষেত্রে পূর্ণ সুন্নাত হলো কপাল এবং নাক উভয়ের উপরেউ সেজদাহ করা।
যদি কোনো একটির উপরে সেজদাহ করা হয়,তাহলে ওযর বশত হলে কোনো ভাবেই নেই।
তবে ওযর ছাড়া এমনটি হলে মাকরুহ হবে।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি কিছু সময় পুরোপুরি সেজদায় থাকার পর ওযর ছাড়াই এমনটি হয়,তাহলে মাকরুহ হবে।
তবে নামাজ হয়ে যাবে।
,
ওযর বশত এমনটি হলে মাকরুহ হবেনা।
۔
(০২)
ইমাম সুরা ফাতেহা না পড়ে চুপ থাকলে নামাজ হবেনা।
(০৩)
মুজতাহিদ হল কুরআন সুন্নাহ, সাহাবাদের ফাতওয়া, কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ঐক্যমত্বে এবং যুক্তির নিরিখে কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা বেরকারী গবেষক দলের নাম। যারা নিষ্ঠার সাথে বিভিন্ন মূলনীতি নির্ধারণ করে কুরআন সুন্নাহর বাহ্যিক বিপরীতমুখী মাসআলার মাঝে সামাঞ্জস্যতা এনেছেন। কুরআন সুন্নাহর একাধিক অর্থবোধক শব্দের নির্ধারিত পালনীয় অর্থকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। নতুন উদ্ভূত মাসআলার শরয়ী মূলনীতির আলোকে সমাধান বরে করেছেন। সেই সাথে নতুন নতুন মাসআলার কোন মূলনীতির আলোকে হুকুম আরোপিত হবে যার বিধান সরাসরি কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত নেই, সেই মূলনীতিও নির্ধারিত করেছেন। মূলত সেই গবেষক দলের নাম হল মুজতাহিদ। আর তাদের উদ্ভাবিত মূলনীতির আলোকে বের হওয়া মাসআলার নাম মাযহাব।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
যখন বাহ্যিক বিপরিত মুখি আয়াত ও হাদীস হয়,বা বাহ্যিক বিপরিত মুখি দুই হাদীস হয়,বা কুরআন হাদীসে স্পষ্ট আকারে বিধান না পাওয়া যায়,ইত্যাদি সময়েই ইজতিহাদ করে ইমাম গন মাসয়ালা পেশ করে থাকেন।
,
যদি প্রশ্নে উল্লেখিত মাসয়ালার ক্ষেত্রে বাহ্যিক বিপরিত মুখি আয়াত ও হাদীস হয়,বা বাহ্যিক বিপরিত মুখি দুই হাদীস না হতো,তাহলে উভয় মাযহাবে কোনো মতবিরোধ হতোনা।
,
এক্ষেত্রে ইজতিহাদে কাহারো ভুল হলেও ছওয়াব আছে।
মুজতাহিদ ভুল করলেও একটি সওয়াব।
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ فَأَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ فَأَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম বলতে গিয়ে ইজতিহাদ করে, আর তার ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদে ভুল হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৭৬}
(০৪)
শরীয়তের বিধান হলো লাহনে জলি (অর্থ পরিবর্তন) হয়, এমন ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
,
সুতরাং প্রশ্নে যেই ভুল উল্লেখ করা হয়েছে,এটার কারনে নামাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
,
সকলের উক্ত নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।
,
যে কয় নামাজে এমন ভুল পড়া হয়েছে,সমস্ত নামাজ নষ্ট হয়ে গেছে।
সকলের উক্ত নামাজগুলো পুনরায় আদায় করতে হবে।
,
যেহেতু উক্ত ইমাম নিয়মিত এমন ভুল পড়ে,তাই অনতিবিলম্বে তাকে বাদ দিয়ে ছহীহ তিলাওয়াত করতে এমন কাউকে নিয়োগ দিতে হবে।