ঈমান ভঙ্গের অন্যতম মৌলিক কারণগুলোঃ-
★আল্লাহর ইবাদতের ক্ষেত্রে কাউকে শরিক করা।
শিরক দুই প্রকার: এক. শিরকে জলী, দুই. শিরকে খফী।
শিরকে খফি করলে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়না। সে কাফের হয়ে যায়না। তবে শিরকে জলী করলে ঈমান ভঙ্গ হয়ে যায়।
শিরকে জলী সবচেয়ে মারাত্মক। শিরকে জলীর অনেক প্রকার রয়েছে।
যেমন ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হক, তাতে আল্লাহ ছাড়া কাউকে শরীক করা, উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ে গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, উপায়-উপকরণকে উপায়-উপকরণের সৃষ্টিকর্তার মান দেওয়া, গাইরুল্লাহকে উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতাধারী মনে করা,গায়রুল্লাহকে সেজদাহ করা, ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা নবীকে সতর্ক করে বলেছেন-
وَ لَقَدْ اُوْحِیَ اِلَیْكَ وَ اِلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَىِٕنْ اَشْرَكْتَ لَیَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.
নিশ্চয় আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি এই ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, যদি আপনি শিরক করেন তাহলে অবশ্যই আপনার সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। -সূরা যুমার (৩৯) : ৬৫
অন্যত্র আল্লাহ আরো বলেছেন-
اِنَّهٗ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَیْهِ الْجَنَّةَ وَ مَاْوٰىهُ النَّارُ.
আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। -সূরা মায়েদা (৫) : ৭২
আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-
اِنَّ اللهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدِ افْتَرٰۤی اِثْمًا عَظِیْمًا.
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। এবং যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে এক মহাপাপ করে। -সূরা নিসা (৪) : ৪৮
আরো জানুনঃ-
★দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা।
কুরআনের কোনো আয়াত,মহান আল্লাহর নাম,রাসুলুল্লাহ সাঃ, হাদীস, ও শরীয়তের কোনো জরুরি বিধান নিয়ে হাসি ঠাট্রা,গালি গালাজ করলে ঈমান চলে যায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ، لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ
‘আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, ঈমান আনার পর তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ’ (তওবা ৬৫-৬৬)।
فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ
‘সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি’ (ইউনুস ১১)।
এ ধরনের লোকদের সাথে উঠাবসা, চলাফেরা ত্যাগ করতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা উক্ত আচরণ পরিত্যাগ না করে।
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا-
‘আর কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)।
আরো জানুনঃ-
★জাদু করা বা কুফরি কালাম করা।
★নবি (সা.)’র ফয়সালার তুলনায় অন্য কারও ফয়সালাকে উত্তম মনে করা।
★মুহাম্মাদ (সা.) আনীত কোনো বিধানকে অপছন্দ করা।
★কুরআন, হাদীস,আল্লাহ,রাসুলুল্লাহ সাঃ কে নিয়ে হাসি ঠাট্রা করা।
★কুরআনের কোনো আয়াত অস্বীকার করা।
একমাত্র আল্লাহ আল্লাহ তাআলা কুল মাখলুকের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। সৃষ্টির অস্তিত্ব ও বিলুপ্তি তাঁরই হাতে।
মানুষের জীবন-মৃত্যু, সুস্থতা-অসুস্থতা, সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা, উন্নতি-অবনতি, এককথায় সকল কল্যাণ ও অকল্যাণ একমাত্র আল্লাহ তাআলার হাতে। তাঁর ইচ্ছায় সব কিছু হয়, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই হয় না। তাঁর কোনো সহযোগী নেই এবং তিনি কোনো উপায়-উপকরণের মুখাপেক্ষী নন।
কারণ পৃথিবীর সকল বস্তু ও বস্তুগুণ তাঁর সৃষ্টি, জীবন ও জীবনোপকরণ তাঁর সৃষ্টি, প্রকৃতি ও প্রকৃতির নিয়ম তাঁরই সৃষ্টি। গোটা জাহান তাঁর মাখলুক এবং কুল মাখলুক তাঁরই আদেশের অধীন।
এই সর্বময় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। কোনো মাখলুকের তাতে বিন্দুমাত্র অংশীদারিত্ব নেই। তদ্রূপ উপায়-উপকরণ ছাড়া কাজ করার ক্ষমতা আল্লাহ তাআলা অন্য কাউকে দান করেননি।
মাজার বা মাজারে শায়িত ব্যক্তি সম্পর্কে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করা সম্পূর্ণ শিরক। ফিকহের কিতাবে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, ‘কোনো মৃত ব্যক্তিকে তাসাররুফ ক্ষমতার অধিকারী (অর্থাৎ গায়বী ক্ষমতা-বলে কার্যসম্পাদনে সক্ষম) মনে করা কুফরী।-আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮
কেউ যদি গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সেজদা করে, গায়রুল্লাহর নামে কোরবানী করে, গায়রুল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নাম জপতপ করে, মানবীয় ক্ষমতার উর্ধ্বের কোনো বিষয় গায়রুল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, কোনো মাযার বা দরগাহ এর উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহর মতো তীর্থযাত্রা করে, হারাম শরীফের মতো দরগাহ ও তার চারপাশের অঞ্চলকে তীর্থস্থান মনে করে, মাযার-দরগাহর তওয়াফ করে এবং দরগাহর দেয়ালে ভক্তিভরে চুম্বন করে, মোটকথা, যেসব কাজ আল্লাহ তাআলা তাঁর উপাসনার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা গায়রুল্লাহর জন্য করে তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ শিরক। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন : তাসাওউফ : তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ, পৃষ্ঠা : ২১২-২২৯
শরীয়তের বিধান হলো কেউ যদি গায়রুল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সেজদা করে, গায়রুল্লাহর নামে কোরবানী করে, গায়রুল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য তার নাম জপতপ করে, মানবীয় ক্ষমতার উর্ধ্বের কোনো বিষয় গায়রুল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, মাযার-দরগাহর তওয়াফ করে, মোটকথা, যেসব কাজ আল্লাহ তাআলা তাঁর উপাসনার জন্য নির্ধারণ করেছেন তা গায়রুল্লাহর জন্য করে তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ শিরক।
এবং যে ব্যাক্তি মাযার বা মাযারে শায়িত ব্যক্তি সম্পর্কে অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করে,সে শিরক করলো।
,
সুতরাং কেহ যদি সত্যিকার অর্থেই এহেন আকিদা, বিশ্বাস মনে প্রানে পোষন করে মাজারে সেজদাহ ইত্যাদি করে,তাহলে সে কুফরী করলো।
তাকে নতুন করে কালেমা পড়ে ঈমান আনতে হবে। খালেছ দিলে তওবা করতে হবে।