আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
66 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম
একজন ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ভাইয়ের জন্য জানতে চাওয়া,

বছর খানেক আগে ভাই টি পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেন। বিয়ে হয় কিন্তু মেয়ে মেয়ের বাসায় আর ছেলে ছেলের বাসায় থাকত, মূলত আমাদের সমাজে প্রচলিত কাবিন করে রাখা বলতে যা বুঝায়।
প্রায় তিন মাস আগে তাদের কথা কিছু বিষয়ে বনিবনা ঠিক মত না হওয়ায় মেয়ে ছেলেকে তালাক দিতে চায়। ছেলে তালাকের পক্ষে ছিল না, সে মেয়ে টিকে নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু মেয়ে রাজি হয় না।
তারপর মেয়ে কাজি অফিসের মাধ্যমে ছেলের বাসায় খোলা তালাকের নোটিশ পাঠায়। ছেলে অভিমানে তালাকের নোটিশে সিগ্নেচার করে দেয়। কিন্তু মুখে কোনো তালাক উচ্চারণ করে নি।


এখন মেয়েটি আবার পুনরায় ছেলের কাছে ফিরে আসতে চাচ্ছে।
প্রশ্ন টা হলো, এখন কি ফিরে আসা সম্ভব?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব:-

https://ifatwa.info/77041/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

তালাক হচ্ছে স্বামীর অধিকার। স্বামী তালাক দিলেই তালাক সংঘটিত হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُكَيْرٍ حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ عَنْ مُوسَى بْنِ أَيُّوبَ الْغَافِقِيِّ عَنْ عِكْرِمَةَ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ سَيِّدِي زَوَّجَنِي أَمَتَهُ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنِي وَبَيْنَهَا قَالَ فَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَا بَالُ أَحَدِكُمْ يُزَوِّجُ عَبْدَهُ أَمَتَهُ ثُمَّ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَهُمَا إِنَّمَا الطَّلَاقُ لِمَنْ أَخَذَ بِالسَّاقِ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার মনিব তার বাঁদীকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে। এখন সে আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে আরোহণ করলেন, অতঃপর বলেনঃ হে লোকসকল! তোমাদের কারো এরূপ আচরণ কেন যে, সে তার গোলামের সাথে তার বাঁদীর বিবাহ দেয়, অতঃপর তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়? নারীর ঊরু স্পর্শ করা যার জন্য বৈধ, তালাকের অধিকার তার। (সুনানে ইবনে মাজাহ ২০৮১.বায়হাকী ৯/১৫৭, ইরওয়াহ ২০৪১।)

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  মহিলা নিজের উপর কেবল তখনি তালাক পতিত করতে পারবে, যদি স্বামী তাকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকে। এটি নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে হ্যাঁ লেখার মাধ্যমেই হোক,বা পরবর্তীতে মৌখিক বা লিখিত ভাবেই হোক।

আরো জানুনঃ- https://ifatwa.info/36539/

শরীয়তের বিধান হলো স্বামী যদি জেনে শুনে নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেয়, অথবা সেখানে কাজী সাহেব বা অন্য কেহ হ্যাঁ লিখে দেয়,আর স্বামী তাহা জেনে শুনে নিচে স্বাক্ষর দেয়,আর এই নিকাহ নামা বিবাহের ইজাব কবুল হওয়ার পরে যদি লেখা হয়,তাহলে স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা পাবে।

তবে যদি এমনটি না হয়,স্বামী যদি না জেনেই নিচে সাইন করে,সে যদি তালাকের ক্ষমতা প্রদানের এই বিষয় সম্পর্কে স্বীকার না করে যে এটার তারই লেখা,অথবা এই নিকাহ নামা যদি বিবাহের ইজাব কবুল হওয়ার আগে লেখা হয়,তাহলে স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা পাবেনা।

كُلُّ كِتَابٍ لَمْ يَكْتُبْهُ بِخَطِّهِ وَلَمْ يُمِلَّهُ بِنَفْسِهِ لَا يَقَعُ بِهِ الطَّلَاقُ إذَا لَمْ يُقِرَّ أَنَّهُ كِتَابُهُ كَذَا فِي الْمُحِيطِ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)

সারমর্মঃ প্রত্যেক ঐ লেখা,যেটা নিজ হাত দিয়ে লিখেনি, নিজের মন সেদিকে ঝুকেওনি,তাহলে তালাক পতিত হবেনা। যদি সে এটা স্বীকার না করে যে এটার তারই লেখা।   

সুতরাং  যদি স্বামীর দস্তখত করার সময় জানা থাকে যে, কাজী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়েছে মর্মে উপরে লিখে দিয়েছে, একথা জানার পরও যদি স্বামী উক্ত কাগজের নিচে সাইন করে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে বলে সাব্যস্ত হবে। সেই হিসেবে স্ত্রী যদি পরবর্তীতে নিজের উপর তালাক পতিত করে থাকে, তাহলে তালাক পতিত হয়ে যায়।

আরো জানুনঃ https://www.ifatwa.info/16747/

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন/ভাই!

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনাদের কাবিননামায় যেহেতু তালাকের অধিকার দেয়া লেখা রয়েছে, সেক্ষেত্রে ১৮ নং ধারার বিষয় না জেনে না শুনে আপনার স্বামী সাইন করে থাকলে আপনি তালাকের অধিকার পাবেননা।

হ্যাঁ যদি তিনি ১৮ নং ধারার বিষয় জেনে শুনেই নিচে সাইন করে,এক্ষেত্রে জানতে হবে যে কাবিননামায় তিনি আসলেই ইজাব কবুলের আগে সাইন করেছিলেন না কি ইজাব কবুলের পরে? বিষয়টি স্বামী থেকে জেনে নিতে হবে।

স্বামী মনে করতে না পারলে তিনি উক্ত বিবাহের সাক্ষীদের সহায়তা নিবেন,তারাও মনে করতে না পারলে সেখান আর যারা উপস্থিত ছিলো কাজী সাহেব সহ সকলের সহায়তা নিবে।

তারা যেটি বলবে,সেটির উপরেই নির্ভর করবে যে আপনি তালাকের অধিকার পেয়েছেন কিনা? যদি ইজাব কবুলের পর আপনার স্বামী ১৮ নং ধারার বিষয় জেনে শুনেই নিকাহনামায় সাইন করে থাকে,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তালাক পেপার এর কপি যেখানে লিখা আছে তালাকে তফইউজ গ্রহণ করার কথা। এই লিখার নিচেই সাইন করার দরুন আপনার উপর এক তালাক পতিত হয়েছে।

আর যদি আপনার স্বামী ১৮ নং ধারার বিষয় না জেনে না শুনেই নিকাহনামায় সাইন করে থাকে,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি বিবাহের সময় তালাক অধিকার প্রাপ্ত হননি। তাই প্রশ্নে উল্লেখিত তালাক হয়নি। আপনাদের বিবাহ বহাল রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যে নোট আকারে লিখেছেনঃ-

নোট:এরপর আমার সন্দেহ হওয়াতে ডিভোর্স এর ২ বছর পর ছেলে কে কল দিয়ে আমি নিজের নফস এর উপর তালাক গ্রহন করেছি। কিন্তু সে কোনো রিপ্লাই দেয় নি শুধু বলেছে "তোমার ইচ্ছা হলে দেও আমি দিবো না"।ছেলে ডিভোর্স পেপারে সাইন করলেও সে ভাবে ডিভোর্স হলেও আবার চাইলে সংসার করা যাবে।তাই সে বলে আমি তালাক শব্দ ব্যবহার করবো না তুমি ইচ্ছে হলে তালাক দাও।এই কথাটা কিছুদিন আগে বলেছে। উপরোক্ত কথার দরুন আপনি তালাকের অধিকার প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছেন। এক্ষেত্রে এরপরে যদি আপনি নিজেকে নিজে তালাক প্রদান করে থাকেন,সেক্ষেত্রে তালাক হবে। নতুবা নয়।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

স্বামী যেহেতু ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছে তাই তালাক হয়ে যাবে। তবে দেখার বিষয় হলো, যদি পেপারে এক বা দুই তালাকে রজঈ লেখা থাকে তাহলে ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। বিবাহের প্রয়োজন নেই। কিন্তু পেপারে যদি এক তালাকে বায়েন লেখা থাকে তাহলে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং তিন তালাক লেখা থাকলে তারা পরস্পরে হারাম হয়ে যাবে। তাদের জন্য সংসার করা জায়েয নেই। আরো জানুন: https://ifatwa.info/87948/ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...