ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব:-
প্রত্যেক জীবের
মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর মুহুর্তটি একজন মানুষের জন্য স্পর্শকাতর। এ সময় মানুষের ঈমান
ও বিশ্বাসের ওপর নির্ধারিত হবে তার চিরস্থায়ী ও পরকালের জীবন। এই মুহুর্তটিতে আল্লাহ
তায়ালাকে সন্তুষ্ট করে যেতে পারে একজন মুমিনের জন্য সৌভাগ্যের। মৃত্যুর সময় যিনি আল্লাহ
তায়ালার ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ হতে বিরত থাকতে পারবেন এবং পাপ থেকে তওবা করতে পারবেন,
নেকীর কাজ ও ভাল কাজ বেশি বেশি করার
তাওফিক পাবেন। তিনি সন্তোষজনক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন বলে ধরা হবে। এবং এই অবস্থায়
মারা গেলে তা ভালো মৃত্যুর আলামত বলে বিবেচিত।
এ বিষয়ে এক
হাদিসে হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, `আল্লাহ যদি কোনো বান্দার কল্যাণ চান তখন তাকে (ভাল) কাজে লাগান।’ সাহাবায়ে কেরাম
বললেন, কীভাবে আল্লাহ বান্দাকে (ভাল) কাজে লাগান? তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর আগে তাকে ভাল কাজ করার তাওফিক দেন।’ (মুসনাদে আহমাদ. হাদিস,
১১৬২৫,
তিরমিজি,
হাদিস,
২১৪২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যদি কোনো বান্দার কল্যাণ চান তখন সে বান্দাকে
‘আসাল’ করেন। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, আসাল কি? তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে বিশেষ একটি ভাল কাজ করার
তাওফিক দেন এবং এই আমলের উপর তার মৃত্যু ঘটান। (সহিহ আহমাদ,
হাদিস,
১৭৩৩০)
ভাল মৃত্যুর
বেশ কিছু আলামত আছে। এর মধ্যে কোনো কোনো আলামত শুধু মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি নিজে বুঝতে
পারে এবং কিছু আলামত অন্যান্য মানুষও জানতে পারে। এখানে এমন কিছু আলামত তুলে ধরা হলো-
মৃত্যুকালে
বান্দার নিকট তার ভাল মৃত্যুর যে আলামত প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে- বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি
ও অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
‘নিশ্চয় যারা বলে,
আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ,
অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে,
তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং
বলে, তোমরা ভয় পেও না, চিন্তিত হইও না এবং তোমরা প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর।’ (সূরা ফুসসিলত,
আয়াত,
৩০)
এ বিষয়ে আম্মাজান
আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে ভালবাসে আল্লাহও তার সাক্ষাতকে ভালবাসেন। যে ব্যক্তির
কাছে আল্লাহর সাক্ষাত প্রিয়, আল্লাহর নিকটও তার সাক্ষাত প্রিয়। আমি বললাম,
হে আল্লাহর নবী! আপনি কি মৃত্যুর কথা
বুঝাতে চাচ্ছেন? আমরা তো সবাই মৃত্যুকে অপছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
না, সেটা না। মুমিন বান্দাকে যখন আল্লাহর রহমত, তার সন্তুষ্টি, তার জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তিনি আল্লাহর
সাথে সাক্ষাত করাকে ভালবাসেন। আর কাফের বান্দাকে যখন আল্লাহর শাস্তি,
তার অসন্তুষ্টির সংবাদ দেয়া হয় তখন
সে আল্লাহর সাক্ষাতকে অপছন্দ করে এবং আল্লাহও তার সাক্ষাতকে অপছন্দ করেন। (সহিহ বুখারি,
সহিহ মুসলিম)
ইমাম নববী
রহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদিসের অর্থ হচ্ছে- যখন মানুষের মৃত্যুর গড়গড়া শুরু হয়ে যায়,
যে অবস্থায় আর তওবা কবুল হয় না,
সে অবস্থার পছন্দ-অপছন্দকে এখানে উদ্দেশ্য
করা হয়েছে। মুমূর্ষু ব্যক্তির কাছে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে পড়ে,
তার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে সেটা তার
সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।
ভাল মৃত্যুর
অনেক আলামত রয়েছে। আলেমগণ কোরআন-হাদিসের আলোকে এই আলামতগুলো বের করার চেষ্টা করেছেন।
এই আলামতগুলোর মধ্যে রয়েছে-মৃত্যুর সময় ‘কালেমা’ পাঠ করা।
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির সর্বশেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস, ৩১১৬)
মৃত্যুর সময়
কপাল থেকে ঘাম বের হওয়া: বুরাইদা বিন হাছিব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, ‘মুমিন কপালের ঘাম নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ,
হাদিস,
২২৫১৩),
জামে তিরমিজি,
হাদিস,
৯৮০,
সুনানে নাসায়ি,
হাদিস,
১৮২৮)
জুমার রাতে
বা দিনে মৃত্যুবরণ করা: নবীজি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে বা রাতে মৃত্যুবরণ করেন আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে নাজাত
দেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ৬৫৪৬, জামে তিরমিজি, হাদিস, ১০৭৪)
বে কোন ব্যক্তির ব্যাপারে
এ নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না যে, তিনি জান্নাতি। শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যাদের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন তারা ছাড়া। যেমন চার খলিফার ব্যাপারে তিনি নিশ্চয়তা
প্রদান করেছেন।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
মৃত্যুর ৪০দিন পূর্বে প্রশ্নেল্লিখিত আলামতগুলো
পাওয়া যাবে মর্মে কুরআন ও হাদীসে কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে এমতাবস্থায়
অধিকহারে ইস্তিগফারের সাথে সাথে বেশী বেশী নেক আমল করতে হবে। নেককার ব্যক্তিদের সাথে
উঠাবসা করতে হবে। এবং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে, যা আপনি নিচের লিংকে
পাবেন ইনশাআল্লাহ:- https://ifatwa.info/56193/