আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
53 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম। হুজুর আমার প্রশ্নের উওর দেওয়ার জন্য আপনার কাছে অনুরোধ রইলো।

প্রশ্ন: আমার গ্রামের অধিকাংশ লোক শিরক ও কুফরে লিপ্ত। আমার বাবা একজন গ্রামের মানুষ। তিনি অশিক্ষিত। তিনি বাংলা ও আরবি শিক্ষা পায়নি ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে। আমার দাদা, চাচা এবং বাবা মাজার পন্থী লোক ছিল। আমার দাদা, চাচা এবং বাবা ওনাদের পীরের পায়ে সেজদা করতো, পীরকে ওনারা মালিক মানতো। মাজারে গিয়ে পীরের নামে পশু জবাই করতো। পীরের কবরে সেজদা করতো। আমার দাদা, চাচা এবং বাবার বিশ্বাস ওনাদের বিপদে পীর সাহেবের চেহারা মনে করলেই ওনাদের সকল বিপদ চলে যায়।

আমার বাবা যুবক বয়সে আমার আম্মার সাথে বিয়ে হয় ১৯৯৫ এর দিকে। তালাক বললে যে তালাক হয় সেটা আমার বাবা সবসময় জানতো। ২০২০ সালে আমার মা বাবার মধ্যে ঝগড়ায় রাগে আব্বা তালাক বলে ফেলে। পরবর্তীতে তারা আবার একসাথে থাকা শুরু করে।

আমি কি আমার বাবার মিরাস নেওয়া জায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব,

মায়্যিতের রেখে যাওয়া হারাম সম্পদ তার সন্তান বা অন্য কোনো ওয়ারিস ভোগ করতে পারবে না। হারাম সর্বাবস্থায়ই হারাম। মায়্যিতের জন্য যেমন তা হারাম ছিল, ওয়ারিসদের জন্যও হারাম। ওয়ারিসদের কর্তব্য, হারাম অংশটুকু প্রকৃত মালিককে, কিংবা মালিক না পাওয়া গেলে মালিকের ওয়ারিসদের নিকট ফিরিয়ে দেয়া। যতক্ষণ মূল মালিক বা মালিকের ওয়ারিসদের পাওয়া যাবে, ততক্ষণ ভিন্ন কোনো সুযোগ নেই। মূল মালিক বা

ওয়ারিসদের পরিচয় জানা না থাকলে বা খুঁজে বের করা সম্ভবপর না হলে, ওই সম্পদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত শুধু হারামের দায়ভার থেকে মুক্তির উদ্দেশ্য মূল মালিকের পক্ষ হতে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত গরিবদের মাঝে সাদাকা করে দিতে হবে কিংবা মুসলিমদের জনকল্যাণমূলক কোনো কাজে বা জিহাদের কাজে ব্যয় করতে হবে। যাতে মালিক তার সম্পদ না পেলেও এর সওয়াবটুকু পেয়ে যান। মায়্যিতের ওয়ারিসদের মধ্যে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত গরীব অসহায় কেউ থাকলে প্রয়োজন পরিমাণ সেও রাখতে পারবে।

পক্ষান্তরে ওয়ারিসরা যদি এ হারাম সম্পদ নিজেরাই ভোগ করে, মালিক বা তার ওয়ারিসদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা না করে, তাহলে এ হারামের দায়ে আখিরাতে তাদেরকেও পাকড়াও করা হবে।

ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.)- এর মাজমুউল ফাতাওয়ায় এসেছে,

وسئل: عن رجل مراب خلف مالا وولدا وهو يعلم بحاله. فهل يكون المال حلالا للولد بالميراث؟ أم لا؟ .

فأجاب: أما القدر الذي يعلم الولد أنه ربا فيخرجه إما أن يرده إلى أصحابه إن أمكن وإلا تصدق به. –مجموع الفتاوى (29/ 307)

ইবনে তাইমিয়া রহ.কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এক সুদখোর ব্যক্তি কিছু সম্পদ ও সন্তান রেখে মারা গেছে। সন্তান তার পিতার সুদ খাওয়ার বিষয়টি জানত। সন্তানের জন্য মিরাস হিসেবে এ সম্পদ হালাল হবে কি?

তিনি উত্তর দেন, যতটুকু পরিমাণ সুদের বলে সন্তানের জানা আছে, ততটুকু পরিমাণ পৃথক করে ফেলবে। সম্ভবপর হলে মূল মালিকদের ফিরিয়ে দেবে। অন্যথায় সাদাকা করে দেবে।” -মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৯/৩০৭

ইবনে আবিদীন রহ. (১২৫২ হি.) বলেন,

وإن علم الوارث دين مورثه والدين غصب أو غيره فعليه أن يقضيه من التركة، وإن لم يقض فهو مؤاخذ به في الآخرة، وإن لم يجد المديون ولا وارثه صاحب الدين ولا وارثه فتصدق المديون أو وارثه عن صاحب الدين برئ في الآخرة. –الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 283)، كتاب اللقطة

ওয়ারিসদের যদি জানা থাকে যে, আত্মসাৎ বা অন্য কোনো দেনা মায়্যিতের ঘাড়ে ছিল, তাহলে তাদের কর্তব্য; মায়্যিতের রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে তা পরিশোধ করে দেয়া। পরিশোধ না করলে আখিরাতে তাদেরকেও পাকড়াও করা হবে।

যদি দেনাদার বা তার ওয়ারিসরা পাওনাদার বা তার ওয়ারিসদের না পায়, তাহলে দেনাদার বা তার ওয়ারিসরা পাওনাদারের পক্ষ থেকে সাদাকা করে দিলে আখিরাতে দায়মুক্ত হয়ে যাবে।” রদ্দুল মুহতার: ৪/২৮৩

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আপনি যদি নিশ্চিত ভাবে জানতে পারেন যে, অন্যায় ভাবে কারো সম্পদ আপনার পিতা ভোগ করেছে তাহলে সন্তান হিসেবে আপনার দায়িত্ব উক্ত ব্যক্তির নিকট তার হক পৌঁছে দেওয়া। এছাড়া আপনার বাব দাদারা তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। তাদের গুনাহের শাস্তি তাদের উপর বর্তাবে। মীরাস হিসেবে তার হালাল সম্পদ আপনি গ্রহণ করতে পারবেন। তবে আপনি আপনার অন্তরের প্রশান্তির জন্য ইচ্ছা করলে উক্ত সম্পদ সদাকাও করতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...