আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
96 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (9 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম উস্তায।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ কাউকে বুঝানোর সময় কিভাবে বুঝাবো যে, বোরকা-নিকাব পরলেও সহশিক্ষা হারামই থেকে যায়? কেননা, ইসলামের বিধান অনুযায়ী শুধু বোরকা-নিকাব পরিধানের নাম তো পর্দা নয় বরং নারী ও পুরুষ কোথাও অবস্থান করলে সেখানে প্রাচীর/বোর্ড/পর্দা দিয়ে পৃথকীকরণ করে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন হচ্ছে-

১. সহশিক্ষা হারাম হওয়ার মূল কারণ কি নারী এবং পুরুষের সহাবস্থান? সেক্ষেত্রে সহাবস্থানের সংজ্ঞা কি? অর্থাৎ নারী-পুরুষ নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় পর্দাসহ/পর্দাহীনভাবে একাকার হয়ে অবস্থান করলে সেটাকে সহাবস্থান বলা হবে?

২. একটি রুমের ডানপাশে নারীদের সারি আর বামপাশে পুরুষদের সারি, এভাবে অবস্থান করলে এটা কি সহশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে?

৩. আমরা জানি, নামাজের ক্ষেত্রে নারীদের কাতার পেছনে থাকলে এবং পুরুষদের কাতার সামনে থাকলে সেক্ষেত্রে মাঝখানে পর্দা দিয়ে আলাদা করা না থাকলেও নামাজের অনুমতি আছে। এ থেকে কি বলা যায়, কোনো সেমিনারে নারী-পুরুষের সারি ডান-বাম সিস্টেমে পাশাপাশি থাকলে সেটা নাজায়েজ হবে কিন্তু নারীদের সারি পেছনে ও পুরুষদের সারি সামনে থাকলে সেটা জায়েজ হবে?

৪. বোরকা পরে সহাবস্থান করলেও সহশিক্ষাকে নাজায়েজ বলা হলে সেক্ষেত্রে বাসায় মেহমান এলে আবদ্ধ ড্রয়িং রুমের সোফায় এক পাশে বোরকা-নিকাব পরিহিতা নারী এবং অপরপাশে পুরুষদের অবস্থান করা কিংবা আবদ্ধ বাসের মধ্যে পর্দাবৃত নারী এবং পুরুষের অবস্থানের বিধান কি?

৫. সূরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াত অনুযায়ী পুরুষরা নারীদের থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাওয়ার যে বিধান রয়েছে, এখানে কি বুঝানো হয়েছে ঘরে অবস্থানরত বোরকা-নিকাব পরিহিতা নারীদের সাথে একই ঘরে পুরুষদের অবস্থান নিষেধ? অর্থাৎ ঘরের ভেতরকার নারীদের কাছে কিছু চাইলে ঘরের বাইরে থেকে চাইতে হবে? নাকি নারীরা নিকাব পরিহিতা থাকলে নির্জনতা না হওয়া সাপেক্ষে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেও তাদের সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার সুযোগ রয়েছে?

৬. একটা আবদ্ধ রুমে সকল নারী বোরকা এবং নিকাব পরিহিতা অবস্থায় থাকলে সেখানে কি কোনো পুরুষ শিক্ষক সরাসরি তাদেরকে শিক্ষাদান করতে পারবে? নাকি সূরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াত অনুযায়ী সেই শিক্ষক এবং পর্দাবৃত নারী শিক্ষার্থীদের মাঝে আলাদা পর্দা/বোর্ড দিয়ে পুরুষ শিক্ষক এবং নারীদের পৃথকীকরণ করে দেওয়া জরুরী?

৭. নারী-পুরুষের সহাবস্থান নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টা কি শুধু আবদ্ধ জায়গার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? সেক্ষেত্রে শরীয়তের আলোকে আবদ্ধ জায়গার সংজ্ঞা প্রদান করলে উপকৃত হতাম। অর্থাৎ কোনো জায়গা আবদ্ধ কিংবা উন্মুক্ত হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য কি কি শর্ত প্রযোজ্য?

.

জাযাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

+1 vote
by (574,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন, 
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন  কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গের শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১;
,
সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 

বেগানা নারী-পুরুষ খালওয়াত তথা নির্জনে একাকী অবস্থান করতে পারবে না। হাদীসে একে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে.......

ﻻَ ﻳَﺨْﻠﻮﻥَّ ﺭَﺟُﻞٌ ﺑِﺎﻣْﺮَﺃﺓٍ ﺇِﻻَّ ﻭَﻣَﻌَﻬﺎ ﺫُﻭ ﻣَﺤْﺮَﻡ ) 

কোনো পুরুষ কোনো মহিলার সাথে মহিলার মাহরাম না থাকা অবস্থায় নির্জনে একাকী বসবাস করতে পারবে না।(সহীহ বুখারী-৫২৩৩;সহীহ মুসলিম-১৩৪১)

ﻣﺎ ﺧﻼ ﺭﺟﻞ ﺑﺎﻣﺮﺃﺓ ﺇﻻ ﻛﺎﻥ
ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺛﺎﻟﺜﻬﻤﺎ " – ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ( 2165 ) ﻭﺻﺤﺤﻪ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ ( 1758

তরজমাঃ-কোনো পুরুষ যদি কোনো মহিলার সাথে নির্জনে একাকী বসবাস করে,তাহলে তাদের সাথে তৃতীয়জন আরেকজন হল শয়তান।অর্থাৎ শয়তান সর্বদাই তাদেরকে খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
সহাবস্থানের সংজ্ঞা হলো এক সাথে অবস্থান। অর্থাৎ নারী-পুরুষ যেকোনো জায়গায় পর্দাসহ/পর্দাহীনভাবে অবস্থান করলে সেটাকে সহাবস্থান বলা হয়।

গায়রে মাহরাম নারীর সাথে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এর সহাবস্থান জায়েজ নেই 
তবে জরুরত বশত অনেক ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে এর অনুমোদন রয়েছে।

(০২)
এটাও সহশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হবে।

(০৩)
এভাবে নামাজ পড়ার অনুমতিও তো নেই।
জামাতে নামাজ পড়াই তো মহিলাদের জন্য মাকরুহে তাহরিমি। 

(০৪)
বিশেষ জরুরতে অনেক ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে এর অনুমোদন রয়েছে।

(০৫)
নারীরা পর্দার আড়াল থাকলে (চেহারা, হাত পা সহ পুরো শরীর ঢেকে অথবা পর্দা লটকিয়ে পর্দার আড়াল থেকে) নির্জনতা না হওয়া সাপেক্ষে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করেও তাদের সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার সুযোগ রয়েছে।

তবে শর্ত হলো ফিতনার আশংকা থাকা যাবেনা। অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবেনা।
অতিরিক্ত কথা বলা যাবেনা।
(নারীরা যথাসম্ভব কণ্ঠস্বর মোটা করার চেষ্টা করবে।)

(০৬)
সেই শিক্ষক এবং পর্দাবৃত নারী শিক্ষার্থীদের মাঝে আলাদা পর্দা/বোর্ড দিয়ে পুরুষ শিক্ষক এবং নারীদের পৃথকীকরণ করে দেওয়া হলে সেটা উত্তম স্তরের পর্দা হবে।

অন্যথায় ফিতনার আশংকা না থাকা ও বেশ কিছু শর্ত সাপেক্ষে সেখানে কোনো পুরুষ শিক্ষকের সরাসরি তাদেরকে শিক্ষাদান করার অনুমতি কিছু ইসলামী স্কলারগন দিয়েছেন।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০৭)
নারী-পুরুষের সহাবস্থান নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টা শুধু আবদ্ধ জায়গার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

অপ্রয়োজনে ইচ্ছাকৃতভাবে উন্মুক্ত জায়গাতেও নারী-পুরুষের সহাবস্থান জায়েজ নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

+2 votes
1 answer 5,924 views
...