আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
115 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
আমার, পাত্রের প্যারেন্টসদের দীনের বুঝ নেই।
১)আমার আম্মু যদি আমার বিয়ের দিন বা বিয়ের পর  শশুরের সাথে পর্দা ছাড়া দেখা দেন,  কথা  বলেন, এতে কি আমার বা আমার হাসবেন্ডের গুনাহ হবে?
এই বিয়েতে কি আল্লাহর বরকত, রহমত থাকবে না
এমন হলে?কি করনীয়, বিস্তারিত জানতে চাই। কিভাবে কি করলে বিয়েটা বরকতময়,আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে
হবে?
২) বিয়ের সময় যদি আত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়া হয়, বিয়েতে যদি ফ্রি মিক্সিং পরিবেশ  সৃষ্টি হয়,যেহেতু দীনের বুঝ নেই তাদের, এতে কি বিয়েতে পাত্র-পাত্রীর গুনাহ
হবে?এই বিয়েতে বরকত থাকবে না? এক্ষেত্রে ফ্যামিলিকে কিভাবে ম্যানেজ করবো, ফ্রি মিক্সিং যেন না হয় এজন্য কি কি ব্যাবস্থা করতে  হবে বিস্তারিত জানাবেন দয়া করে৷ কিভাবে বুঝালে তারা বুঝবে, কিভাবে কি করতে হবে বিস্তারিত জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব,

https://ifatwa.info/7278/  নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

গায়ে হলুদ সম্বন্ধে সংসদ বাংলা অভিধান বলছে, গায়ে-হলুদ, বিবাহের অব্যবহিত পূর্বে পাত্রপাত্রীকে হলুদ মাখাইয়া স্নান করানর হিন্দু সংস্কার বিশেষ। পৃ. ১৬৯।

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ:: ” الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ব্যক্তি [কিয়ামতের দিন] তার সাতে থাকবে যাকে সে মোহাব্বত করে। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-৬১৬৮, ৫৮১৬}

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১}

সুতরাং প্রশ্ন উল্লেখিত গায়ে হলুদ করা জায়েজ নেই। 

কেউ কেউ প্রথম সারীর সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর হলুদ বর্ণ সংশ্লিষ্ট ঘটনা দ্বারা প্রচলিত গায়ে হলুদ প্রথাকে বৈধ বলতে চেষ্টা করেন।

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর ঘটনাটি নিম্নরূপ :

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তাঁর দেহে হলুদ সুগন্ধির চিহ্ন ছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার আব্দুর রহমান ! তখন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল ! আমি এক আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯৩৭)

উপরোক্ত ঘটনার আলোকে প্রচলিত গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানকে বৈধতা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রচলিত গায়ে হলুদ প্রথার সাথে উক্ত ঘটনার সামান্যতম সম্পর্ক নেই। কারণ,

১। সাহাবীর গায়ে লেগে থাকা দ্রব্যটি ছিলো মূলত সুগন্ধি দ্রব্য, যেটা জাফরান বা জাফরান ও অন্যান্য দ্রব্যের সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হতো।

২। হাদীসে যে হলুদ বর্ণের উল্লখ রয়েছে তা ছিলো মূলত এ জাফরান ও অন্যান্য সুগন্ধি দ্রব্যের চিহ্ন।

৩। হলুদ সুগন্ধির ব্যবহারটা ছিলো বাসর রাতকেন্দ্রিক।

৪। জাফরান সংশ্লিষ্ট এ সুগন্ধি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. নিজে ব্যবহার করেন নি। বরং সেটা তাঁর স্ত্রীর ব্যবহার করা রং থেকে তাঁর দেহে বা পোষাকে লেগেছিলো। কারণ হাদিসে পুরুষের জন্য জাফরান রং ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সহীহ মুসলিম, হাদিস ২১১০।

প্রথম সারির একজন সাহাবী নববী নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করবেন তা কল্পনাও করা যায় না। ইমাম বদরুদ্দীন আইনী রহ.ও এ বক্তবটি উল্লেখ করেছেন। উমদাতুল কারী ১৭/২৩৮

৫। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ দীর্ঘস্থায়ী বিবাহিত জীবন, বংশবিস্তার, নবদম্পতির সুখ-শান্তি কামনা এবং অপশক্তির প্রভাব দূর করতে ধর্মীয় আবশ্যকীয় রীতি হিসেবে এ গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। যা স্পষ্ট শিরক।

৬। বস্তুত হিন্দুধর্মালম্বী ও আদিবাসী উপজাতীদের থেকেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের উৎপত্তি হয়েছে। সেখান থেকে মুসলিম সমাজে এর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মুসলিম সংস্কৃতিতে গায়ে হলুদের অবস্থান কোনো কালেই ছিলো না। সুতরাং গায়ে হলুদ কোনো ভাবেই জায়েজ নয়।

(০২) কিছু ইসলামী স্কলারগন বলেছেনঃ   আজকাল অধিকাংশ বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে  গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বেপর্দা ব্যাপক। তাই এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করাই কর্তব্য।

তবে দাওয়াতকারী যদি এমন নিকটাত্মীয় হয় যে, তার দাওয়াতে অংশগ্রহণ না করলে সে অধিক মনক্ষুণ্য হবে বা আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট হবে সেক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর জন্য যদি গুনাহের কাজ থেকে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় তাহলে প্রতিবাদের উদ্দেশ্যে তাতে অংশগ্রহণ করা যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ করা সম্ভব না হলে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। এক্ষেত্রে নিজ থেকে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে।

(হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/৪৪৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৭৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৩)

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে গায়ে হলুদে তো অংশ গ্রহন কোনোভাবেই জায়েজ হবেনা। তবে আত্মীয়তার সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনার কারনে পর্দা মেনে শরয়ী খেলাফ কার্যক্রম থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হলে সেখানে গিয়ে খানা খাওয়া যাবে।

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. আপনার আম্মুর জন্য আপনার শশুরের সাথে বেপর্দা দেখা করা জায়েয নেই। এতে তারা উভয়ে গুনাহগার হবেন। তাদের গুনাহের শাস্তি তাদের উপর বর্তাবে। তবে আপনারা স্বামী স্ত্রী স্বীয় পিতামাতাকে বুঝাবেন যে, তারা যেন বেপর্দা সাক্ষাৎ না করেন। যদি আপনারা নিজেরা দ্বীনের উপর অটল থাকেন তাহলে আপনাদের দাম্পত্য জীবন বরকতময় হবে ইনশাআল্লাহ।

২.সাধারণত আমাদের সমাজে ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে গায়ে হলুদ হয়, গা-বাজনাসহ বিভিন্ন বিজাতীয় হিন্দুওয়ানি সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যেই অনুষ্ঠানগুলো হয় তা সম্পূর্ণ হারাম। সুতরাং  শুধু নিজের পরিবারের সদস্য দের নিয়ে পর্দার সহিত কোনো প্রকারের গান-বাজনা ছাড়া হলেও এমন অনুষ্টানের কোনো বৈধতা নাই। এটা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। বিধায় বিবাহে বরকত লাভের জন্য যেকোন উপায়ে উক্ত পরিবেশ যেন আপনাদের বিয়েতে না হয় সেক্ষেত্রে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...