আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
580 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (45 points)

1) কালেমা আসলে কিভাবে নির্ধারিত হয় কারণ কোরআন শরীফে কালেমা তাইয়্যেবা দুইটা অংশ দুই জায়গায় রয়েছে এবং তাছাড়া আরও অনেক ধরনের কালেমা রয়েছে এগুলোতো কোরানের এই আয়াত সে ক্ষেত্রে এগুলোকে আলাদা করে কালেমা কেন বলা হয়?

 

2) আল্লাহ অনেক বিষয়ে অঙ্গীকার করেছেন কোরআনে পাওয়া যায় যেমন তিনি জান্নাত জাহান্নাম বিষয় অঙ্গীকার করেছেন এবং আরও অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোতে তিনি শপথ নিয়েছেন আসলেই এগুলো তাৎপর্য কি অথবা এগুলো আসলে কি বুঝানো হচ্ছে ? 

 

3) ফেইসবুক এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকে এমন ধরনের ছবি দেয় যাতে সে আগে  খারাপ ছিল তখন তাতে কিছু খারাপ পোশাক পরিধান করে এবং পরে কিছু ভালো পোশাক পরিধান করে দেখা গেছে ভালো হয়েছে এর দ্বারা কি কোনো রকম রিয়া প্রকাশ পাচ্ছে বা এই ধরণের ছবিকে আসলে facebook-এ দেওয়া উচিত

1 Answer

0 votes
by (596,370 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
 আমাদের দেশে ইসলামী ঈমান-আকীদার বিবরণের ক্ষেত্রে ‘পাঁচটি কালিমা’র কথা প্রচলিত আছে। এছাড়া ঈমানে মুজমাল ও ঈমানে মুফাস্সাল নামে দুইটি ঈমানের কথা আছে। কায়েদা, আমপারা, দ্বীনিয়াত ও বিভিন্ন প্রচলিত বই পুস্তকে এই কালিমাগুলি রয়েছে। এগুলিকে অত্যন্ত জরুরী মনে করা হয় এবং বিশেষভাবে মুখস্থ করা হয়। এই বাক্যগুলির অর্থ সুন্দর। তবে সবগুলি বাক্য এভাবে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয় নি। এগুলিকে সব কুরআনের কথা বা হাদীসের কথা মনে করলে ভুল হবে। 

 (১) কালিমায়ে শাহাদত কুরআন ও হাদীসে ইসলামী ঈমান বা বিশ্বাসের মূল হিসাবে দু ইটি সাক্ষ্য প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের দেশে ‘কালিমা শাহাদত’ হিসাবে পরিচিত। এই কালিমায় আল্লাহর তাওহীদ এবং মুহাম্মাদ (সা) এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্র দান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে একমাত্র কালিমা শাহাদতই হাদীস শরীফে ঈমানের মূল বাক্য হিসাবে উল্লে খ করা হয়েছে। সালাতের (নামাযের) ‘তাশাহ্ হুদের’ মধ্যে বাক্যদ্বয় এভাবে একত্রে বলা হয়েছে: 
 أَشْهَدُ أَنْ لا إلا الله و أَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عََبْدُهُ وَ رَسولُهُ 
 আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ (উপাস্য) নেই এবং আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” এই ‘কালিমা’ বা বাক্যটি দুইটি বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম বাক্য: أَشْهَدُ أَنْ لا إلا الله “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবূদ (উপাস্য) নেই।” এ প্রথম বাক্যটির ক্ষেত্রে কোনো কোনো হাদীসে বলা হয়েছে: لا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيْكَ لَهُ “আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই।” দ্বিতীয় বাক্য: و أَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عََبْدُهُ وَ رَسولُهُ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আযানের মধ্যে এ বাক্যদ্বয়কে পৃথকভাবে উল্লে খ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যটির ক্ষেত্রে কোনো কোনো হাদীসে (أشهد) অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি’ কথাটি পুনরাবৃত্তি না করে শুধুমাত্র ( وَ أَنَّ ) ‘এবং নিশ্চয়’ বলা হয়েছে। কোনো কোনো হাদীসে বাক্যদ্বয়ের শুরুতে (أشهد) বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে: لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ দ্বিতীয় বাক্যটির ক্ষেত্রে অনেক হাদীসে ( أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ) ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ কথাটির পরিবর্তে ( أَنَّ مُحَمَّدًا عََبْدُهُ وَ رَسولُهُ) ‘মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল’ - বলা হয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো হাদীসে ‘সাক্ষ্য প্রদান’ শব্দের পরিবর্তে ‘বলা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন হাদীসে আমরা এ কালেমাটিকে নিম্নের বিভিন্ন রূপে দেখতে পাই (বুখারী, আস-সহীহ, ১/১২, ২৯, ৩/১২৬৭; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৪৫, ৪৭, ৫৭, ৬১) : 

  1.  (১) প্রথম রূপ: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ و أَشْهَدُ أَنِّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ 
  2.  (২) দ্বিতীয় রূপ: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ و أَنِّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ
  3. (৩) তৃতীয় রূপ: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ و رَسولُهُ 
  4. (৪) চতুর্থ রূপ: لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ و أَنِّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ 
  5. (৫) পঞ্চম রূপ: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ و رَسولُهُ বিভিন্ন হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, সাহাবায়ে কেরাম ইসলাম গ্রহণের সময়ে এ উপরে উল্লিখিত এ সকল বাক্যের কোনো একটি পাঠ করে ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করতেন। (বুখারী, আস-সহীহ ১/১৭৬, ৩/১২১১; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৩০২, ৩/১৩৮৬; নাসাঈ, আস-সুনান ১/১০৯)

(২) কালিমায়ে তাইয়েবা আমাদের দেশে কালিমা তাইয়েবা বা ‘পবিত্র বাক্য’ বলতে বুঝানো হয় তাওহীদ ও রিসালাতের একত্রিত ঘোষণা: لا إله إلا الله محمّدٌ رسول اللهِ কুরআন কারীমে এরশাদ করা হয়েছে: “তুমি কি দেখ নি, কিভাবে আল্লাহ একটি উদাহরণ পেশ করেছেন: একটি ‘কালিমায়ে তাইয়েবা’ বা পবিত্র বাক্য একটি পবিত্র বৃক্ষের মত, তার মূল প্রতিষ্ঠিত এবং তার শাখা-প্রশাখা আকাশে প্রসারিত।” (সূরা ইবরাহীম: ২৪) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) ও অন্যান্য মুফাস্সির থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে ‘কালিমা তাইয়েবা’ বলতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তাওহীদের এ বাক্যটিকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসির ইবনে কাসির) কিন্তু (লা ইলাহা ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) দুইটি বাক্য একত্রিতভাবে কোনো হাদীসে কালিমা তাইয়েবা হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা দেখেছি যে, কালিমা শাহাদাতকে অনেক সময় “শাহাদাত” শব্দ উহ্য রেখে নিম্নরূপে বলা হয়েছে: لا إِلَهَ إِلَّا اللهُ و أَنِّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ কিন্তু মাঝখানে (وَ أَنَّ) বাদ দিয়ে উভয় অংশ একত্রে لا إله إلا الله محمّدٌ رسول اللهِ এভাবে ‘কালিমা’ হিসাবে সহীহ হাদীসে কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায় না। কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, এভাবে এ বাক্যদ্বয় একত্রে আরশের গায়ে লিখা ছিল। এ হাদীসগুলি অত্যন্ত দুর্বল বা বানোয়াট। কোনো কোনো হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) -এর ঝাণ্ডা বা পতাকার গায়ে লিখা ছিল: لا إله إلا الله محمّدٌ رسول اللهِ এ অর্থের হাদীসগুলির সনদে দুর্বলতা আছে। (হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৫/৩২১) 

 এখানে উল্লেখ্য যে, কালিমা তাইয়িবার দুটি অংশ পৃথকভাবে কুরআন কারীমে ও হাদীস শরীফে উল্লে খ করা হয়েছে। উভয় বাক্যই কুরআনের অংশ এবং ঈমানের মূল সাক্ষ্যের প্রকাশ। উভয় বাক্যকে একত্রে বলার মধ্যে কোনো প্রকারের অসুবিধা নেই । তাবেয়ীগণের যুগ থেকেই কালিমা শাহাদতের মূল ঘোষণা হিসাবে এ বাক্যটির ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। কুরআন কারীমে ‘কালিমাতু তাকওয়া’ ‘তাকওয়ার বাক্য’ বলা হয়েছে (সূরা ফাতহ: ২৬) । এর ব্যাখ্যায় তাবিয়ী আতা আল-খুরাসানী (১৩৫ হি) বলেন: কালিমায়ে তাকওয়া হলো (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) ( তাফসিরে তাবারী)  (সংগৃহিত)
    
 (২)কথার গুরুত্ব ও দৃঢ়তা বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ তা'আলা কসম খেয়েছেন।

(৩) ছবি হারাম। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-2253 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন! 
ছবি তুলা গোনাহ।চায় মুবাইল দ্বারা তুলা হোক বা হাতে অঙ্কিত ছবি হোক। সবগুলোই হারাম ও নাজায়েয। শুধুমাত্র শরয়ী প্রয়োজনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছবির অনুমোদন রয়েছে। পরিচয়ের স্বার্থে দ্বীনী ভঙ্গিমায় প্রফাইলে ছবি দেয়া যায়,এটা রিয়া হবে না। বিশেষ জরুরত ছাড়া ছবি অঙ্কন করা বা ছবি তুলা হারাম।পাসপোর্ট বা শিক্ষা প্রতিষ্টান কিংবা চাকুরী ইত্যাদির জন্য ছবি তুলাকে কেরাম জায়েয বলেন।তাছাড়া দ্বীন প্রচারের স্বার্থে যদি কেউ ভার্চুয়াল জগতে কোনো একাউন্ট খুলে,তাহলে ভেরিফাইড একাউন্ট করার জন্য প্রুফাইল পিকচার হিসেবে দ্বীনদ্বারি ও নমনীয় ভঙ্গিমায় একটা ফটো দিতে পারবে।এমনটাই অনেকে বলে থাকেন।অবশ্যই এ অনুমতি পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।এবং বারংবার ছবি পরিবর্তন করা যাবে না। অন্যথায় সকল প্রকার ছবিই হারামের অন্তর্ভুক্ত।লাইক কমেন্ট পাওয়া বা সেলিব্রেটি হওয়ার জন্য ছবি আপলোড করা কখনো জায়েয হবে না। জানুন- 3635 
 সুতরাং দ্বীনী ভঙ্গিমায় আপলোড করা ছবি রিয়া হবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...