ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
জবাব,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজের
গুরুত্ব অনেক বেশি। আর ফজরের নামাজের জামাতের গুরুত্ব তার চেয়েও বেশি। মানুষ সাধারণত
এ দুই সময়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে জামাতে শরিক হতে যথেষ্ট অবহেলা
ও গাফিলতি হয়ে থাকে।
এ জন্য হাদিসে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা
হয়েছে। এশার নামাজ জামাতে আদায়ের সওয়াব ও ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এখানে পাঠকদের জানার জন্য কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।
যে নামাজে অর্ধেক রাত ইবাদতের সওয়াব
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি
ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৫৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ
নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত,
তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও
তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭)
উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (সা.) আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে
জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল,
নেই। তারপর আরেকজনের নাম
নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল,
নেই। তিনি বলেন, এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা
যদি জানতে যে এই দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব আছে,
তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে
হলেও তাতে শরিক হতে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫৪)
রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে ওঠার পর তাহাজ্জুদ পড়া সবচেয়ে উত্তম। তবুও এশার নামাজের
পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। আর এতে তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভ
হয়। কেননা তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় এশার নামাজের পর থেকেই শুরু হয়ে যায়, যদিও
উত্তম সময় হলো ঘুম থেকে ওঠার পর।
আমরা অনেকেই শেষ রাতে উঠতে না পারার কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতের এই দুর্বলতার প্রতি সদয় হয়ে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে
‘তোমরা এশার নামাজের পর শোয়ার আগেই তাহাজ্জুদের নিয়তে দু-চার রাকাত নামাজ পড়ে নেবে।’
হাদিস শরিফে এসেছে, সাউবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
(সা.) ইরশাদ করেন, ‘‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই
তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতর পড়বে, তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে
নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো,
অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল
লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে।’’ (সুনানে দারেমি, হাদিস
: ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা,
হাদিস : ১১০৬; তাহাবি, হাদিস
: ২০১১)
এশার পর চার রাকাত নফলের বিশেষ সওয়াব রয়েছে। হাদিসে এসেছে, কাব
(রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
‘যে ব্যক্তি
ভালোভাবে অজু করে এশার জামাতে অংশগ্রহণ করবে,
অতঃপর এশার নামাজের পর চার রাকাত
(নফল) নামাজ পড়বে, যাতে কিরাত-রুকু-সেজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, তার
জন্য শবেকদরের মতো সওয়াব লেখা হবে।’ (নাসায়ি,
হাদিস : ৪৯৫৫)
তা ছাড়া ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদিস, যেখানে
তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার উদ্দেশে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনিন
মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে রাতে মেহমান হয়েছিলেন,
ওই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর
শোয়ার আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়ার আমলও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস
: ১১৭)
তাই আমরা যারা অনেক চেষ্টা করেও রাতের শেষ ভাগে উঠতে পারি না, তাদের
উচিত কমপক্ষে এশার সুন্নাতের সঙ্গে উল্লিখিত নফল নামাজগুলো পড়ে নেওয়া। ইনশাআল্লাহ এর
বিনিময়ে মহান আল্লাহ আমাদের তাহাজ্জুদের ফজিলত দান করবেন। তবে আল্লাহর প্রেমে রাতের
শেষ ভাগে বিছানা ত্যাগ করার মন-মানসিকতা,
অভ্যাস ও পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের
মর্যাদা মহান আল্লাহর দরবারে বাড়িয়ে দেবে। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসগুলো
প্রমাণসহ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।