আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
84 views
in সালাত(Prayer) by (49 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায।

"যে ব্যক্তি এশার পর চার রাকাত নামায পড়ল, সে যেন কদরের রাত্রে চার রাকাত নামায পড়ল।" এই হাদীসটি মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা (হাদীস নং ৭১৬৫, ৭১৬৬, ৭১৬৭) তে আছে। হাদীসটির সনদ সহীহ।
এই হাদীসটি বেশ কয়েকজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. হযরত আয়েশা রাযি. হযরত বারা ইবনে আযেব রাযি. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. হযরত আনাস রাযি. সহ আরো বিভিন্ন সাহাবী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের সনদ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফের শর্তানুযায়ী সহীহ। এত বড় ফাযায়েল! প্রতিদিন এ আমলটি করার সুযোগ আছে।

যে ব্যক্তি এশার ফরয নামায পড়ল, এরপর দুই রাকাত সুন্নত পড়ল, এরপর সে চার রাকাত নফল পড়ল। এক সালামে পড়া উত্তম। তবে দুই সালামেও পড়ার সুযোগ আছে। অর্থাৎ দুই, দুই রাকাত করে পড়ারও সুযোগ আছে। যেভাবে সুবিধা হয় আমরা আমল করার চেষ্টা করি।

অনেক বেশি ফজিলতের বিষয়। এশার পরে কেউ চার রাকাত পড়লো, সে যেন কদরের রাত্রে চার রাকাত পড়ল। আর কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ১০০০ মাসে প্রায় ৩০০০০( ত্রিশ হাজার) রাত হয়। যে এশার পরে চার রাকাত পড়ল, সে যেন লাগাতার প্রায় ৩০০০০ (ত্রিশ হাজার) রাত প্রতি রাতে চার

রাকাত করে নফল পড়লো। এটা তো অনেক বড় বিষয়! এটা আল্লাহপাক জাল্লা জালালুহ আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ করে দিয়েছেন। অল্প সময়ে অনেক বেশি নেকী হাসিল করার সুযোগ। অনেক বড় সুযোগ, আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে কদর করার জন্য তৌফিক দান করেন।

এশার পরে কিছু নফল নামায পড়ার অভ্যাস করা চাই। সাধারণত দেখা যায় যে, মানুষ এশার ফরয পড়ে, এরপর দুই রাকাত সুন্নত পড়ে, এরপর বিতির পড়ে। শতকরা ৯০ ভাগ বা এরও বেশি লোক এরকম করে থাকে। এশার পরে নফল পড়ার অভ্যাস অনেকেরই একেবারেই কম। যাহোক এটা অনেক বেশি ফজিলতের আমল। এ আমল নিজেরা করার চেষ্টা করি, আর আমাদের প্রিয়জনদেরকে, ঘরওয়ালাদেরকে, অপর মুসলমান ভাইয়ের নিকট পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করি। অনেক ভাই আছেন আমল করার খুব আগ্রহ কিন্তু না জানার কারণে সে বিষয়টা আমল করতে পারেন না। তো এত বড় ফযিলতের আমল যা বহু মুসলমান জানেন না। এজন্য এর ব্যাপক প্রচার হওয়া দরকার। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে তৌফিক দান করেন।

যার হিম্মত কম সে দুই রাকাত পড়তে পারে। ৪ রাকাত পড়ার জন্য চেষ্টা করি, না পারলে দুই রাকাত পড়লেও ইনশাআল্লাহ তা'য়ালা পরিপূর্ণ ফাজাযেল না পাওয়া গেলেও, ফাজাযেল পাওয়া যাবে। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সকলকে তৌফিক দান করেন। আর নফল নামায বসে পড়ারও সুযোগ আছে। দাঁড়িয়ে পড়লে তো পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে।.....

...এটা কি সত্যি?রেফারেন্স টা জানানোর বিনীত অনুরোধ।

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব,

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর ফজরের নামাজের জামাতের গুরুত্ব তার চেয়েও বেশি। মানুষ সাধারণত এ দুই সময়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে জামাতে শরিক হতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে।

এ জন্য হাদিসে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। এশার নামাজ জামাতে আদায়ের সওয়াব ও ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এখানে পাঠকদের জানার জন্য কয়েকটি উল্লেখ করা হলো।

যে নামাজে অর্ধেক রাত ইবাদতের সওয়াব

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭৭)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৫৬)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার নামাজের চেয়ে অধিক ভারী কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭)

উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার মহানবী (সা.) আমাদের ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তিনি বলেন, এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে এই দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব আছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে শরিক হতে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫৫৪)

রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে ওঠার পর তাহাজ্জুদ পড়া সবচেয়ে উত্তম। তবুও এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত এই নামাজ পড়া যায়। আর এতে তাহাজ্জুদের ফজিলত লাভ হয়। কেননা তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় এশার নামাজের পর থেকেই শুরু হয়ে যায়, যদিও উত্তম সময় হলো ঘুম থেকে ওঠার পর।

আমরা অনেকেই শেষ রাতে উঠতে না পারার কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় উম্মতের এই দুর্বলতার প্রতি সদয় হয়ে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে ‘তোমরা এশার নামাজের পর শোয়ার আগেই তাহাজ্জুদের নিয়তে দু-চার রাকাত নামাজ পড়ে নেবে।’

হাদিস শরিফে এসেছে, সাউবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘‘রাত্রি জাগরণ কষ্টকর ও ভারী জিনিস, তাই তোমরা যখন (শোয়ার আগে) বিতর পড়বে, তখন দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে নেবে। পরে শেষ রাতে উঠতে পারলে ভালো, অন্যথায় এই দুই রাকাতই ‘কিয়ামুল লাইল’-এর ফজিলত লাভের উপায় হবে।’’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৬৩৫; সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১১০৬; তাহাবি, হাদিস : ২০১১)

এশার পর চার রাকাত নফলের বিশেষ সওয়াব রয়েছে। হাদিসে এসেছে, কাব (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে অজু করে এশার জামাতে অংশগ্রহণ করবে, অতঃপর এশার নামাজের পর চার রাকাত (নফল) নামাজ পড়বে, যাতে কিরাত-রুকু-সেজদা সঠিকভাবে আদায় করবে, তার জন্য শবেকদরের মতো সওয়াব লেখা হবে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৯৫৫)

তা ছাড়া ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদিস, যেখানে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার উদ্দেশে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা (রা.)-এর ঘরে রাতে মেহমান হয়েছিলেন, ওই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শোয়ার আগে চার রাকাত নফল নামাজ পড়ার আমলও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ১১৭)

তাই আমরা যারা অনেক চেষ্টা করেও রাতের শেষ ভাগে উঠতে পারি না, তাদের উচিত কমপক্ষে এশার সুন্নাতের সঙ্গে উল্লিখিত নফল নামাজগুলো পড়ে নেওয়া। ইনশাআল্লাহ এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ আমাদের তাহাজ্জুদের ফজিলত দান করবেন। তবে আল্লাহর প্রেমে রাতের শেষ ভাগে বিছানা ত্যাগ করার মন-মানসিকতা, অভ্যাস ও পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের মর্যাদা মহান আল্লাহর দরবারে বাড়িয়ে দেবে। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসগুলো প্রমাণসহ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...