আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
85 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। লেখাটা বড় হবে বিধায় আফওয়ান। দয়া করে সদুপদেশ দিবেন ইনশাআল্লাহ।

আমি এবছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আল্লাহ তায়ালার দয়ায় দ্বীনের বুঝ পাওয়ার পর থেকেই ভাবতাম যেহেতু আমি একজন স্টুডেন্ট এবং আমার অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় পড়াশুনায়,সেহেতু এমন কিছু নিয়ে পড়াশুনা করা উচিত যাতে পড়াও হবে,আর এর জন্য সাওয়াবও হবে। পাশাপাশি একজন নারী হিসেবে উম্মাহর জন্য কিছু করা সম্ভব হবে। সেই থেকেই দ্বীন নিয়ে পড়াশুনা করার অনেক ইচ্ছা হতো,এখনো আছে আলহামদুলিল্লাহ। যাইহোক,আমি কখনোই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কথা চিন্তাও করিনা। সহশিক্ষায় আল্লাহর দয়ায় কখনো যাই নি,আর কোনোদিন যেতেও চাই না। কিন্তু পরিবার থেকে সেভাবে প্রেশার না দিলেও মাঝেমাঝে খুব করে চেপে ধরে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য। নানা ধরনের ভয় দেখাচ্ছে,অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের ভয় দেখাচ্ছে,কিন্তু আমি আমার কথায় অনড় আছি আলহামদুলিল্লাহ। সামনে হয়তো আরো প্রেশার আসতে পারে। আমি আইওএমে এ বছর ভর্তি হয়েছি। যদিও এখানে আপনারা সাজেস্ট করেন যে একদম জেনারেলের পড়াশুনা ছেড়ে না দিতে, তবুও আমার ইচ্ছা এখান থেকে আলিম শেষ করে এখান থেকেই দাওরাহ কমপ্লিট করার, আল্লাহ তায়ালা যদি চান। এটা ছাড়াও আরো বড় পরিসরে দ্বীনি ইলম হাসিলের পরিকল্পনা আছে,আল্লাহ চাইলে হবে। সরাসরি মাদ্রাসায় ভর্তি হতে গেলে তা খুব সহজেই পরিবার মানবে না কারণ সেখানে ছোট ক্লাস থেকে শুরু করতে হবে অর্থাৎ ইয়ার গ্যাপ যাবে। যাইহোক, আমি আমার সম্পূর্ণ ফোকাস এদিকেই রাখতে চাই। কারণ এ ৪ বছরে আমি নিজের ব্যাপারে যতটুকু দেখেছি,প্রত্যক্ষভাবে দ্বীনি ইলম অর্জনে নিয়োজিত না হলে আমার ফরজ ইলম কখনোই অর্জন হবেনা। কারণ জেনারেল লাইনের পড়াশুনার দিকে ফোকাস দিতে হয় ভালো করে, যার কারণে অন্য দিকে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয়না। পাশাপাশি আমার সহবত,সারাউন্ডিংস,পরিস্থিতির জন্য বড় পরিসরে ইলম অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর এ জন্যই দ্বীনে ফেরার ৪ বছর হলেও আমার সেভাবে উল্লেখযোগ্য ভাবে ইলম অর্জিত হয়নি। আমি এখন সম্পূর্ণভাবে দ্বীনি ইলম নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই।
এখন আমার প্রশ্ন হলো,আমি কি বাড়াবাড়ি করছি দ্বীন নিয়ে কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছি অথবা বাস্তবতা দূরে ঠেলে দিচ্ছি? আমি সহশিক্ষাযুক্ত ভার্সিটির চিন্তা সম্পূর্ণভাবে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আমি যদি ফিতনাময় পরিবেশে নিজেকে কন্ট্রোল করতেও পারি, তবুও এভাবে হারাম কিছুতে যেয়ে দু:সাহস দেখাতে পারবো না।  এখন আমার পরিবার আমাকে প্রেশার দিলেও হয়তো ইনশাআল্লাহ আমি নিজের জেদ ধরে রাখতে পারবো। তাছাড়া কিছুদিন আগে মহিলা ভার্সিটিতে ভর্তি হবো এমনটা ভাবছিলাম। এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে ইস্তেখারা করেছি। আমি জানিনা আসলে এটা নেগেটিভ সাইন কিনা,কিন্তু সত্যি বলতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ কাজ করছেনা মহিলা ভার্সিটির জন্যও। এখন আমি জানতে চাই,আসলেই কি আমি বাস্তবতা উপেক্ষা করছি নাকি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল থাকবো?
দুনিয়াবি ইলমেরও দরকার আছে অবশ্যই এ জামানায়। কিন্তু দুনিয়ার ফিকির করতে গিয়ে আখিরাতের কথা যেনো বেমালুম ভুলে বসেছি। এমন তো না যে মাদ্রাসায় পড়লে বা ভার্সিটিতে না পড়লে দুনিয়াতে টিকতেই পারবো না। কিংবা যারা মাদ্রাসার স্টুডেন্ট অথবা দ্বীনি ইলম অর্জন করছেন,তারা এখন দুনিয়াতে সারভাইব করতে পারছেন না বা জাগতিক বিষয়ে অজ্ঞ থেকে যাচ্ছেন। এ জামানায় সারভাইব করার জন্য দুনিয়াবি ইলম দরকার,কিন্তু এই দরকারি ইলমের কথা ভাবতে ভাবতে ফরজ ইলম অর্জন হয়ে ওঠে না আমাদের। অথচ,আমাদের পূর্বপুরুষরা তো মেইন ফোকাসে রাখতেন দ্বীনকে,দুনিয়াবি জ্ঞানকে কেবল দুনিয়ার জন্যই সীমাবদ্ধ রাখতেন। আর দ্বীনি ইলমকে দুনিয়া, আখিরাত উভয়ের জন্যই বরাদ্দ রাখতেন। কিন্তু আমাদের ধ্যান ধারণা এখন দুনিয়াকে ঘিরেই!
আপনাদের ফতোয়া অনুযায়ী কিছু শর্তসাপেক্ষে পড়া জায়েজ। তবে,আমি ভার্সিটিতে যেটা নিয়েই পড়িনা কেন,সেটা না দেশের জন্য আর না দ্বীনের কোনো কাজে আসবে। এছাড়াও আমার ওয়াসওয়াসার তীব্র সমস্যা আছে যার কারণে এমন পরিবেশে অভ্যস্ত না থাকায় আমি মেন্টালি সিক হয়ে যাবো। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কারণ কলেজে কেবল কয়েকজন স্যারের আন্ডারে পড়াশুনা করার দরুন কয়েক মাস খুব বাজে অবস্থা হয়েছিলো আমার। আর অবশ্যই জরুরত হারামকে হালাল করে। কিন্তু,দ্বীন পালন করা এতোটাও তো সহজ নয়। না রাসূলের জামানায় ছিলো আর না এখন। তো আমি যদি এক্ষেত্রে হার মেনেই যাই,বাধ্য হয়ে সহশিক্ষায় পড়তেই যাই,তাহলে আমার স্যাক্রিফাইসটা হলো কোথায়? এছাড়া,বর্তমানে যারাই দ্বীনে নতুন ফিরে,তাদের এমন নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেই হিসেবে সবার জন্যই তো এসব পরিস্থিতি জরুরত হিসেবে গন্য হবে। তো এভাবে সবাই যদি জরুরত ভেবে হারামকে গ্রহণ করে নেয় এবং করতেই থাকে,দ্বীনের জন্য ত্যাগ হলো কোথায় আর দ্বীন সহিহভাবে পালন হবেই বা কিভাবে? অনেক কিছুই লিখেছি,বড় হওয়ার জন্য আবারো দু:খিত। আমার এই প্রশ্নগুলো একজন নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে। আমি এই হারাম থেকে বাঁচার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু আসলেই আমার সিদ্ধান্ত সঠিক কিনা তা জানতে চাচ্ছি ইনশাআল্লাহ ।

জাঝাকুমুল্লাহু খইর।

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/13774/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। 

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

★ একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন  কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।
ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১;

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
উপরোক্ত শর্ত পুরোপুরি ভাবে মেনে আপনার জন্য উক্ত ভার্সিটিতে পড়া জায়েজ আছে।

শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের নিয়ত মাথায় রাখবেন।
প্রয়োজনে নিজের সন্তান, ভাতিজি,ভাগ্নি ইত্যাদিদেরকে তো পড়াতে পারবেন।

সুতরাং আপাতত মুসলিম জাতীর খেদমতের নিয়ত মাথায় রাখবেন।
,
সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ 

পরামর্শঃ-
আপনি পাশাপাশি আমাদের অনলাইন মাদ্রাসায় পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন।
গুরুত্ব সহকারে নিজের পড়া ঠিক করবেন।
আপনি আপাতত এতো টেনশন না করে আগে আলিম কোর্স ভালোভাবে শেষ করুন,তারপর ভবিষ্যতে আলেমা হওয়ার হওয়ার বিষয় নিয়ে ভাববেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...