আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
53 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (46 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
নিশ্চয়ই নামাজ সকল গুনাহ পাপাচার থেকে মানুষকে বিরত রাখে। এই আয়াতে বিরত রাখে বলতে কি বুঝানো হয়েছে? উদাহরণস্বরূপ কি এরূপ হতে পারে কি?

প্রশ্ন (১) একজন যুবক ছেলে কয়েকটি মেয়েকে টিউশনি করাচ্ছেন মেয়েগুলি বোরকা পরা ভালোভাবে হিজাব অবস্থায় রয়েছে। তার মনে খারাপ কাজ করার  কামনা বাসনা হৃদয়ে জাগলো কিন্তু সেই কাজ করতে তার মনে আবার  আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হলো, মনের ভিতর সেই পাপ কাজটি করতে আগ্রহ হারালো। এই যে তার মনে অনাগ্রহ সৃষ্টি হলো আবার তার মনে যদি কুমন্ত্রণা জাগে এবং পাপ কাজটি করে ফেলে কিন্তু পূর্বে তার হৃদয়ে  যে পাপ কাজ করতে বাধা এসেছিলো এইভাবে কি বিরত রাখে?
প্রশ্ন (২) সঠিকভাবে নামাজের মত নামাজ পড়লে তার মনে কুমন্ত্রণা আসতে পারে কিন্তু ঐ পাপ কাজটি করবে না এরূপ  বোঝায় কি অর্থাৎ এইভাবে বিরত রাখে কি?
আমরা অনেক সময় দেখি অনেক ভালো আমলধারী মানুষ পাপ কাজ করতে  দেখি বা শুনে থাকি। বিষয়টি খুব সহজ করে ভালো করে  দয়া করে বোঝাবেন।
প্রশ্ন (৩) কিছু মানুষ দেখি তারা নামাজ ঠিকমতো পড়ে না কিন্তু সুদ খেতে ভয় পায় এটা কিভাবে হয়? মানুষের ঈমানও কি মাঝে মাঝে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে কি?
প্রশ্ন (৪) সুদখোর ব্যক্তি কি মুসলমান থাকে?
আল্লাহ আপনাকে জান্নাত দান করুক আসসালামু আলাইকুম।

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-

اِنَّ الصَّلٰوةَ تَنْهٰی عَنِ الْفَحْشَآءِ وَ الْمُنْكَرِ.

নিশ্চয়ই সালাত অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। -সূরা আনকাবূত (২৯) : ৪৫

ইমাম তবারী, ইবনে কাসীর, কুরতুবী, আলূসীসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকারের মত অনুসারে আয়াতের মর্ম হল, তাকবীর, তাসবীহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সিজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে সালাত। এ কারণে সালাত যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ করো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানী করো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এরপরও যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত  হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন্ স্তরে নেমে আসে সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) 
রুহুল মাআনী, ১০/৪৮২

আল্লাহর নবী হযরত শুআইব আ. যখন তাঁর জাতিকে তাওহীদের দাওয়াত দিলেন এবং মাপে কম দেয়াসহ সকল প্রকার অনাচার পরিহার করে পূত-পবিত্র জীবন যাপনের আহ্বান জানালেন তখন তাঁর অবাধ্য সম্প্রদায় তার প্রতি আপত্তি জানিয়ে বলল-

اَصَلٰوتُكَ تَاْمُرُكَ اَنْ نَّتْرُكَ مَا یَعْبُدُ اٰبَآؤُنَاۤ اَوْ اَنْ نَّفْعَلَ فِیْۤ اَمْوَالِنَا مَا نَشٰٓؤُا  اِنَّكَ لَاَنْتَ الْحَلِیْمُ الرَّشِیْدُ.

তোমার ‘সালাত’ কি তোমাকে এই  নির্দেশই দেয় যে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের উপাস্য বস্তুকে ত্যাগ করব কিংবা আমরা বিরত থাকব আমাদের ধন-সম্পদ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা থেকে? তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান ও ধার্মিক লোক! [সূরা হূদ (১১) : ৮৭]

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত সুফিয়ান রাহ. বলেন, আল্লাহর শপথ, নিশ্চয়ই সালাত (ভালো কাজের) আদেশ এবং (মন্দ কাজ থেকে) নিষেধ করে। -তাফসীরে তবারী ১৮/৪০৯

★প্রকৃত অর্থেই সালাত মুসল্লিকে অন্যায় ও অশোভন কাজ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু তা কখন? এ ঘোষণার চূড়ান্ত ফল লাভ করার জন্য কোনো শর্ত রয়েছে কি না? এক্ষেত্রে মুসল্লিরও কিছু করণীয় ও বর্জনীয় আছে কি না? এটা অবশ্যই যথার্থ ও যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন। অনেক আয়াত ও হাদীস থেকেই এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়। এখানে শুধু একটি আয়াত ও একটি হাদীস উল্লেখ করা হচ্ছে। আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন-

فَوَیْلٌ لِّلْمُصَلِّیْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ،  الَّذِیْنَ هُمْ یُرَآءُوْنَ.

দুর্ভোগ ঐসকল মুসল্লির, যারা তাদের সালাত থেকে উদাসীন। যারা শুধু (মানুষদেরকে) দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে। -সূরা মাউন (১০৭) : ৪-৫

অতএব স্পষ্ট যে, মুল্লি মাত্রই সালাতের এই মহা সুফল লাভ করবে, বিষয়টি এমন নয়। সালাতের মধ্যে উদাসীনতা মুসল্লির জন্য সুফল নয়; বরং কুফল বয়ে আনে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللهُ عَلَى عِبَادِهِ مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ، فَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَسُجُودَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ كَانَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ فَلَيْسَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ، وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ.

আল্লাহ তাআলা বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে এবং যথাসময়ে সালাত আদায় করবে- এভাবে যে, রুকু-সিজদা ও খুশূ পূর্ণরূপে সম্পাদন করবে, তার জন্য আল্লাহ পাক ক্ষমার (অন্য বর্ণনায়, জান্নাতের) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর যে ব্যক্তি (এসব) করবে না তার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। ইচ্ছা হলে মাফ করবেন নতুবা শাস্তি দিবেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৭০৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২৫

নবীজীর এই পবিত্র ইরশাদ থেকে বোঝা যায়, সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে একটি ‘আহ্দ’ বা চুক্তি সম্পাদিত হয়। আর সে চুক্তিটি একটু বিস্তর। এর জন্য কিছু অপরিহার্য শর্ত রয়েছে, যার অন্যতম হল, সালাতে খুশূ-খুযূ অবলম্বন করা এবং রুকু-সিজদা ধীরস্থির ও যথাযথভাবে সম্পাদন করা।

মূলত সালাতের গুণগত মান হিসাবেই তা মুসল্লিকে পাপাচার ও অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

إِنّ الْعَبْدَ لَيُصَلِّي الصّلَاةَ مَا يُكْتَبُ لَهُ مِنْهَا إِلّا عُشْرُهَا، تُسُعُهَا، ثُمُنُهَا، سُبُعُهَا، سُدُسُهَا، خُمُسُهَا، رُبُعُهَا، ثُلُثُهَا نِصْفُهَا.

নিশ্চয়ই বান্দা সালাত সম্পন্ন করে আর তার জন্য লেখা হয় সালাতের দশ ভাগের এক ভাগ (প্রতিদান) অথবা নয় ভাগের এক ভাগ অথবা আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ অথবা সে পায় সালাতের অর্ধেক (প্রতিদান)। এক বর্ণনায় এসেছে অথবা সে পায় সালাতের পূর্ণ প্রতিদান ও সুফল। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৮৮৯৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৭৯৬

অর্থাৎ যদি সালাতটি আদায় করা হয় পূর্ণ খুশূ-খুযূর (হৃদয়ের একাগ্রতা ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের স্থিরতার) সাথে এবং তিলাওয়াত ও তাসবীহসমূহও পাঠ করা হয় যথাযথভাবে। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও আদবসমূহও সম্পাদন করা হয় উত্তমরূপে। তবে সেই মুসল্লিকে আখেরাতে পূর্ণ প্রতিদান ও সওয়াব দান করা হবে এবং দুনিয়াতে তা মুসল্লিকে মন্দ ও অশোভন কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। পক্ষান্তরে যে সালাত হয় অন্তঃসারশূন্য আনুষ্ঠানিকতা, যা সীমাবদ্ধ থাকে নিছক অঙ্গ-প্রতঙ্গ সঞ্চালনের মধ্যে, যাতে রুকু-সিজদা, কিরাত-কিয়াম যথাযথভাবে সম্পাদন করা হয় না সেই সালাত কীভাবে মুসল্লিকে অন্যায় ও অশোভন কাজ থেকে বাঁচাবে? তার সালাত তো তাকে সালাতরত অবস্থাতেই অশোভন কাজ ও চিন্তা থেকে ফিরাতে পারছে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন-

قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ، الَّذِیْنَ هُمْ فِیْ صَلَاتِهِمْ خٰشِعُوْنَ.

সফলকাম সেসকল মুমিন, যারা সালাতে খুশূ-খুযূ অবলম্বন করে। -সূরা মুমিনূন (২৩) : ১-২

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের পরিচয় দিতে গিয়ে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

سِیْمَاهُمْ فِیْ وُجُوْهِهِمْ مِّنْ اَثَرِ السُّجُوْدِ.

তাদের লক্ষণ তাদের মুখম-লে সিজদার প্রভাব পরিস্ফুট থাকবে। -সূরা ফাত্হ (৪৮) : ২৯

এখানে কেউ কেউ সন্দেহ করে যে, অনেক মানুষকে সালাতের অনুবর্তী হওয়া সত্বেও বড় বড় গুনাহে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। এটা আলোচ্য আয়াতের পরিপন্থী নয় কি? 

এর কয়েকটি জওয়াব দেয়া হয়। 

এক. প্রকৃত সালাত আদায়কারীকে সালাত অবশ্যই অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখবে। হাসান ও কাতাদাহ বলেন, যার সালাত তাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখল না সে সালাত দ্বারা আল্লাহ থেকে দূরেই রয়ে গেল। [তাবারী] 

দুই. ইবন কাসীর বলেন, এর অর্থ যারা নিয়মিত সালাত আদায় করবে, তাদের এ অবস্থাটি তৈরী হবে। হাদীসে এসেছে, এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, অমুক লোক রাতে সালাত আদায় করে, আর সকাল হলে চুরি করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অচিরেই তার সালাত তাকে তা থেকে নিষেধ করবে। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৪৪৭]

নামাজকে হক অনুযায়ী আদায় না করার কারনে বা নামাজের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করার কারনে কাহারো নামাজ তাকে পাপ কাজ হতে বিরত রাখেনা। 

(কিছু তথ্য সংগৃহিত)

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
এক্ষেত্রে তার নামাজ তাকে পাপ কাজ হতে বিরত রাখেনি। 

মূলত নামাজকে হক অনুযায়ী আদায় না করার কারনে বা নামাজের শিক্ষা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ না করার কারনে তার নামাজ তাকে পাপ কাজ হতে বিরত রাখেনি। 

(০২)
এক নং প্রশ্নের জবাব দ্রষ্টব্য।

(০৩)
আল্লাহর ভয়ের দরুন এমন হয়।

(০৪)
সুদ খাওয়ার দরুন কাহারো ঈমান চলে যায়না।
সে ব্যাক্তি মুসলমানই থাকে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...