বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে ফরিয়াদ করা অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দুআ করা শির্ক
আল্লাহ তাআলা সূরা ইউনূসের ১০৬ নং ১০৭ নং আয়াতে বলেনঃ
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺪْﻉُ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻚَ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻙَ ﻓَﺈِﻥْ ﻓَﻌَﻠْﺖَ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺇِﺫًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ ﻭَﺇِﻥْ ﻳَﻤْﺴَﺴْﻚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻀُﺮٍّ ﻓَﻠَﺎ ﻛَﺎﺷِﻒَ ﻟَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ﻭَﺇِﻥْ ﻳُﺮِﺩْﻙَ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻓَﻠَﺎ ﺭَﺍﺩَّ ﻟِﻔَﻀْﻠِﻪِ ﻳُﺼِﻴﺐُ ﺑِﻪِ ﻣَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻣِﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩِﻩِ ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﻐَﻔُﻮﺭُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ
‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন মাবুদকে ডেকোনা, যে তোমার উপকার করতে পারবেনা এবং ক্ষতিও করতে পারবেনা। তুমি যদিএমন কর, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তাহলে কেউ তাঁর অনুগ্রহকে প্রতিহত করতে পারেনা। স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান, তাকেই তিনি স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন; তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু’’।
ব্যাখ্যাঃ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ ﺍﻻﺳﺘﻐﺎﺛﺔ ইস্তেগাছাহ অর্থ হচ্ছে, গাউছ তলব করা। অর্থাৎ বিপদাপদ দূর করার জন্য সাহায্য চাওয়া ও ফরিয়াদ করা। আর ﺍﻻﺳﺘﻌﺎﻧﺔ ইস্তেআনাহ অর্থ হচ্ছে সাহায্য চাওয়া।
ব্যাখ্যাকার বলেনঃ ইস্তেগাছা এবং দুআর মধ্যে উমুম খুসুস মুতলাকের সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ বিপদাপদে পতিত ব্যক্তি যখন ফরিয়াদ করে তখন, তাতে দুআ এবং ইস্তেগাছা উভয়টিই একত্রিত হয়। আর দুআ সাধারণতঃ প্রার্থনা ও চাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দুআ বিপদাপদে পতিত ব্যক্তি ছাড়া অন্যের কাছ থেকেও হয়ে থাকে। আর ইস্তেগাছার মধ্যে দুআর যে অর্থ রয়েছে তা শুধু বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্যই হয়ে থাকে। সাধারণ দুআ এবং বিপদাপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যকে আহবান করতে নিষেধ করা হয়েছে। সামনে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আসবে, ইনশা-আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
ﻭَﺃَﻥَّ ﺍﻟْﻤَﺴَﺎﺟِﺪَ ﻟِﻠَّﻪِ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺪْﻋُﻮﺍ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ
‘‘মসজিদসমুহ আল্লাহর এবাদত করার জন্যই। অতএব তোমরা আল্লাহ্র সাথে অন্য কাউকে ডেকোনা’’। যে কেউ আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছে এমন কিছু প্রার্থনা করবে, যার উপর তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ক্ষমতাবান নয়, যেমন বিপদে পড়ে মৃত ও অনুপস্থিত ব্যক্তিদেরকে আহবান করা। এটি সেই শির্কের অন্তর্ভূক্ত যা আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন না। কুরআন ও সুন্নায় এ ব্যাপারে অসংখ্য দলীল রয়েছে।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ আল্লাহ ছাড়া এমন মাবুদকে ডেকোনা, যে তোমার উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে নাঃ এ আয়াতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ক্ষতি বা উপকারের মালিক নয়।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তুমি যদি এমন কর, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হবেঃ এ আয়াতে যুলুম বলতে শির্ক উদ্দেশ্য। লুকমান (আঃ) স্বীয় পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ
ﻳَﺎ ﺑُﻨَﻲَّ ﻟَﺎ ﺗُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻟَﻈُﻠْﻢٌ ﻋَﻈِﻴﻢٌ
‘‘হে বৎস! আল্লাহ্র সাথে শরীক করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র সাথে শরীক করা মহা যুলুম’’। (সূরা লুকমানঃ ১৩)
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আর আল্লাহ যদি তোমাকে বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবেনাঃ বিপদাপদে পতিত হয়ে ফরিয়াদকারী সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ এখানে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনিই একমাত্র বিপদাপদ দূর করেন। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা করতে পারেনা।
আর আল্লাহ যদি তোমার কল্যাণ করতে চান, তাহলে তাঁর কল্যাণকে প্রতিহত করার মত কেউ নেইঃ কল্যাণ প্রার্থী ও তা অর্জনে আগ্রহী প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এখানে খবর দিয়েছেন যে, তিনিই কেবল প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। আল্লাহ যার উপর অনুগ্রহ করেন, কেউ সে অনুগ্রহকে প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখেনা। তিনিই দানকারী এবং তিনিই প্রতিহতকারী। তিনি যা দেন কেউ তা বারণ করতে পারেনা। আর তিনি যা থেকে কাউকে বঞ্চিত করেন, কেউ তাকে তা দিতে পারেনা। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদীছে এ বিষয়টিই বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে বলেছেনঃ
ﻭَﺍﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻥَّ ﺍﻷُﻣَّﺔَ ﻟَﻮِ ﺍﺟْﺘَﻤَﻌَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻮﻙَ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻮﻙَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻗَﺪْ ﻛَﺘَﺒَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﻚَ ﻭَﻟَﻮِ ﺍﺟْﺘَﻤَﻌُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻀُﺮُّﻭﻙَ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻟَﻢْ ﻳَﻀُﺮُّﻭﻙَ ﺇِﻻَّ ﺑِﺸَﻰْﺀٍ ﻗَﺪْ ﻛَﺘَﺒَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ
‘‘জেনে রাখ! দুনিয়ার সকল মানুষ মিলেও যদি তোমার উপকার করতে চায়, তথাপিও তারা শুধু তোমার ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে দিয়েছেন। আর যদি তারা মিলিত হয়ে তোমার ক্ষতি করতে চায়, তথাপি তারা শুধু সেই পরিমাণ ক্ষতিই করতে পারবে,যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে দিয়েছেন। আর যদি তারা মিলিত হয়ে তোমার ক্ষতি করতে চায়, তথাপি তারা শুধু সেই পরিমাণ ক্ষতিই করতে পারবে, যা আল্লাহ তাআলা তোমার উপর লিখে দিয়েছেন’’।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
যদি কেউ হঠাৎ বিপদে পড়ে "ও মা" "ও বাবা" বলে ওঠে,তাহলে সেটা শিরিক বা কুফরী হবে না।কেননা এটা সাহায্য চাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে না। তবে সাহায্য চাওয়ার জন্য বলা হলে,সেটা অবশ্যই কুফরী হবে।