আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
58 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (53 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাজ।

আমার  বোন, তার স্বামী থেকে দূরে অন্য একটি শহরে ৪/৫ বছর ধরে থাকে, মাঝে  মাঝে স্বামীর বাসায় আসা যাওয়া করে।  গত ২ দিন আগে স্বামীর বাসায় থাকা অবস্থায়, স্বামী মারা যান। এখন আমার  বোন কি ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত স্বামীর বাসায় থেকেই পালন করতে হবে ( উল্লেখ্য, স্বামীর বাসায় পর্দার পরিবেশ নেই,  রান্না বান্নার কষ্ট, এবং তাদের একটি মেয়ে রয়েছে, যে মেয়েটি মা এর সাথে দূরবর্তী শহরে পড়াশোনা করে) ৪ মাস এই বাসায় থাকলে পড়াশোনায় ও ব্যাঘাত ঘটবে।

প্রশ্ন: ১: ইদ্দত কি স্বামীর বাসায় ই করবে?
২: শোকপালনের জন্য এমন কিছু করতে হবে কিনা যাতে বুঝা যাবে উনি বিধবা?

1 Answer

0 votes
by (58,740 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/10353/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

শরীয়তের বিধান হলো কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে তার স্বামীর বাড়িতে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করতে হবে। 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।


তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলার জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। বিশেষ ওজর ব্যতীত স্বামীর বাড়ি ছাড়া বাবার বাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত পালন করা জায়েয নেই।

সুরা আত ত্বলাকের ০১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

৬৫:১ یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَطَلِّقُوۡهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَ اَحۡصُوا الۡعِدَّۃَ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ رَبَّکُمۡ ۚ لَا تُخۡرِجُوۡهُنَّ مِنۡۢ بُیُوۡتِهِنَّ وَ لَا یَخۡرُجۡنَ اِلَّاۤ اَنۡ یَّاۡتِیۡنَ بِفَاحِشَۃٍ مُّبَیِّنَۃٍ ؕ وَ تِلۡکَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَعَدَّ حُدُوۡدَ اللّٰهِ فَقَدۡ ظَلَمَ نَفۡسَهٗ ؕ لَا تَدۡرِیۡ لَعَلَّ اللّٰهَ یُحۡدِثُ بَعۡدَ ذٰلِکَ اَمۡرًا ﴿۱

হে নবী, (বল), তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে, তখন তাদের ইদ্দত অনুসারে তাদের তালাক দাও এবং ‘ইদ্দত হিসাব করে রাখবে এবং তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের বাড়ী-ঘর থেকে বের করে দিয়ো না এবং তারাও বের হবে না। যদি না তারা কোন স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর এগুলো আল্লাহর সীমারেখা। আর যে আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমারেখাসমূহ অতিক্রম করে সে অবশ্যই তার নিজের ওপর যুলম করে। তুমি জান না, হয়তো এর পর আল্লাহ, (ফিরে আসার) কোন পথ তৈরী করে দিবেন।


তবে স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।


হযরত ফাতেমা বিনতে কায়স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছি, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে এখন আমি আমার সাথে ব্যভিচারের ভয় করছি। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্থানান্তর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৯১৬৮)

,

একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক মহিলার স্বামী ইন্তেকাল করলে সে রাসূলুল্লাহ -এর নিকট নিজের পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চায়। তখন রাসূলুল্লাহ তাকেও অনুমতি দেন নি; বরং তাকে বলেছিলেন, امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ তুমি ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার (স্বামীর) ঘরেই অবস্থান কর। ( তিরমিযী ১২০৪)

,

খুসাইফ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম,যে মহিলার স্বামী মারা গেছে সে (ইদ্দত অবস্থায়) কি ঘর থেকে বের হতে পারবে? তিনি বললেন,না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯১৯৮


সুতরাং বিনা ওজরে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া জায়েয হবে না। আর শরীয়তের হুকুমের লঙ্ঘন করাই পাপ। আর পাপ বলতেই ঈমানের উন্নতির পথে বাধা এবং আখেরাত ও কবরের যিন্দেগী সুখময় হতে বাধা। মুমিনের জন্য শুধু এতটুকু কথাই কোনো ফরয-ওয়াজিব বিধান পালনের জন্য যথেষ্ট।

অবশ্য জীবিকা কিংবা অন্য কোনো মানবিক প্রয়োজনে দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শেষ হওয়ার পর আবার বাড়িতে ফিরে আসা জরুরি। আর দিনে কোনো বিশেষ ওজরে বের হলেও রাতে অবশ্যই নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে। (ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬-১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬)


আরো উল্লেখ রয়েছে যে,

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (3/ 536:

"(وتعتدان) أي معتدة طلاق وموت (في بيت وجبت فيه) ولا يخرجان منه (إلا أن تخرج أو يتهدم المنزل، أو تخاف) انهدامه، أو (تلف مالها، أو لا تجد كراء البيت) ونحو ذلك من الضرورات فتخرج لأقرب موضع إليه

সারমর্মঃ স্বামীর বাড়ির লোকেরা যদি তাকে বের করে দেয়,বা ঘর ভেঙ্গে যায়,বা ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা হয়, ইত্যাদি প্রয়োজনের কারনে অন্যত্রে যাওয়া জায়েজ আছে। 


ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে,

الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا تَخْرُجُ نَهَارًا وَبَعْضَ اللَّيْلِ وَلَا تَبِيتُ فِي غَيْرِ مَنْزِلِهَا كَذَا فِي الْهِدَايَةِ.

স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত হলে স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতেই অবস্থান করবে। বিশেষ প্রয়োজন হলে দিনে ও রাত্রের প্রাথমিক অংশে বাহিরে যেতে পারবে। উক্ত বাড়ি ছাড়া অন্যত্রে রাত্রি যাপন করতে পারবেনা। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৫৩৪)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!


১. শরীয়তের বিধান হলো কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে তার স্বামীর বাড়িতে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করতে হবে। তবে স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।


২. সাজসজ্জা পরিত্যাগঃ স্বামীর মৃত্যু বা তিন তালাক/এক তালাকে বায়েন এর ইদ্দত হলে, স্ত্রী খোশবু ও সাজসজ্জাকে পরিহার করবে। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৫৩৪

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/86437/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...